Those Days Part Thirteen
Those Days Part Thirteen
হঠাৎ করেই রোহিত, আরুষি, পিউ, অর্ণব, জিকোদের জীবনগুলো কেমন যেন বদলে গেল।
স্যাম অর্থাৎ শ্যামসুন্দরের বাবা মা পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে তাদের গ্রাম থেকে চলে এসেছিলেন। হতবাক হয়ে গেছেন তারা। ছেলের এতোটা পরিবর্তন তারা একদম আশা করেন নি।
রোহিত আর আরুষি এর মধ্যে মাত্র দুবারই দেখা করতে পেরেছে, কোনোরকমে লুকিয়ে.. একবার রোহিতের বাড়িতেই আরেকবার একটা ক্যাফেতে। আরুষির মা এসেছেন এখানে.. তাকে শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। অনেক রাগারাগি কান্নাকাটি তেও তা আটকানো যায়নি।
পিউ অলরেডি তাদের থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। মধুসূদন আইয়ার মাদুরাই পোস্টিং নিয়ে পিউকেও নিয়ে চলে গেছেন। যাওয়ার আগে অনেক রিকোয়েস্টের পর তাদের সাথে একদিন দেখা করতে আসতে দিয়েছিলেন। সেই গ্যারেজেই মিট করল তারা।
জিনিকে বিকাশ সেন বের করে এনেছেন, পাঠিয়ে দিয়েছেন কানাডায়। গত পরশু চলে গেছে সে। জিকোর কাছ থেকে জানতে পারে সবাই। শত ঝগড়া সত্বেও বিকাশ সেন আর বিলাস সেন আলাদা হতে পারেন নি.. পারিবারিক ব্যবসা অনেকদিনের। কিন্তু জিকোর কথা অনুযায়ী বিকাশ সেন খুব চুপচাপ হয়ে গেছেন, আগের সেই দাপট আর নেই। কারুর সাথে দরকার ছাড়া বিশেষ একটা কথা বলেন না।
অনেকদিন পর সেই গ্যারেজে আগের মতোন আবার দেখা করল তারা। খুবই মনখারাপ সকলের। স্যাম আর জিনি শুধু নেই। কি ভালই যে ছিল আগের দিনগুলো। আবার যদি ফিরতে পারা যেত। একটা ঘটনার জেরে তাদের সকলের কেরিয়ারেও কতোটা প্রভাব পড়ে গেল। আবার একে অপরের সাথে ছাড়াছাড়িও হতে চলেছে।
পিউকে দেখতে পেয়েই আনন্দে আরুষি তাকে জড়িয়ে ধরল। দুই বন্ধুতে অনেক্ষণ আসন্ন বিচ্ছেদের আশঙ্কায় চোখের জল ফেলল। আরুষি একদিকে পিউ আর একদিকে রোহিতের হাতটা ধরে ছিল। বিষাদময় মুখে বলল....
"আমাকেও আর মনে হয় এখানে থাকতে দেবে না। অনেক চেষ্টা করলাম, ফল হল না। আগামী সোমবার ফ্লাইট। আবার কবে আমাদের দেখা হবে কিচ্ছু জানিনা! ভাবলেই কান্না পাচ্ছে আমার।"
রোহিত কি বলবে কিছু ভেবে পেল না। জিকো অস্থির হয়ে বলল..
"বল না এভাবে বছরের মাঝখানে গেলে পড়াশুনার ক্ষতি হবে। এক্স্যামের পরে যাবি। তার মাঝখানে অনেক সময় পাওয়া যাবে, তার মধ্যে কিছু একটা ভেবে নেওয়া যাবে!"
আরুষি একটু হাসল। জিকোটা সেই বাচ্চাই থেকে গেল।
"না রে, তা হয়না। আর যা হয়েছে, তাতে বলার মুখও খুব বেশী নেই। কলেজের মধ্যে অমন কান্ড!"
সকলেই সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লো। অর্ণব আর পিউও একসাথে বেশ কিছুটা সময় কাটালো। তাদেরও আবার কবে দেখা হবে কোনো ঠিক নেই। সকলে মিলে রোহিত আর পিউএর গানও শুনল।
রোহিত "ইয়ারো দোস্তি বড়ি হি হাসিন হ্যায়" গানটা গাইল আর তার সাথে বাকি সকলেই গলা মেলালো হাতে হাত রেখে। একসাথে গান করে আর সময় কাটিয়ে হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা কমল, কিন্তু বাস্তবটা বাস্তবই রইল। পরেরদিনই পিউ চলে গেল বাবা মার সাথে মাদুরাই। আর কয়েকদিনের মধ্যেই আরুষিকে নিয়েও তার মা রওনা দিলেন শিলিগুড়ি, তাদের বাড়িতে। এর মাসখানেক পর তাদের ফার্স্ট ইয়ার এক্সামের পর পরই, অর্ণবও আর এখানে থাকতে চায় না, ফিরে যায় আসানসোলে তার বাবা মায়ের কাছে। রয়ে যায় শুধু রোহিত আর জিকো। আর খাঁ খাঁ করে গ্যারেজটা, যেন এখনো কাদের হাসিমজা গানবাজনা আড্ডা হৃদয়ের মিলনের প্রত্যাশায় পথ চেয়ে বসে থাকে। আবার কি ফিরবে কখনো তারা? আমাদের মধ্যের সেই রোহিত, জিকো, অর্ণব, আরুষি, পিউদের কি আমরা অনেকদিন আগেই হারিয়ে ফেলেছি? আর কি ফিরে পাওয়া যাবে তাদের??
বছর দশেক পরে যদি এখানে এসে দাঁড়ায় তারা তাহলে কি এই গ্যারেজ চিনতে পারবে তাদের? তারাও খাপ খাওয়াতে পারবে এই পরিবেশের সাথে? তখনকার চিন্তাভাবনা আবেগ অনুভূতিগুলোর সাথে?? কে জানে!
দশ বছর পরঃ
সেই দিনটা যেদিন তারা একে অপরকে শেষবারের মতোন দেখেছিল,, তার পরে কেটে গেছে আজ দশটা বছর। তাদেরই কলেজে আজ পারফর্ম করতে আসা নামকরা সুপারস্টার গায়ক রোহিত ব্যানার্জি এই কথা ভাবছে। তার পুরোনো দিনের সব কথা যেন একটি চিত্রের পটভূমির মতোন একে একে আসছে তার মনে। আলাদা হয়ে যাওয়ার পর আর কারুর সাথেই কারুর তেমন যোগাযোগ ই ছিল না। এই কলেজ থেকেই গ্যাজুয়েট হয়ে রোহিত বাইরে চলে গেছিল মিউজিক নিয়ে পড়াশুনা করার জন্য। তারপরেও বেশ কিছু বছর বাইরেই ছিল। ওখানেই অনেক জায়গায় পারফর্মও করত। যেমন বাইরে অনেক জায়গায় পারফর্ম করত, তেমনি বাড়িতে বা ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশনে বাংলা বা হিন্দি গানও করত। দিদি সিঞ্জিনি গুছিয়ে সংসার পেতেছে ব্যাঙ্গালোরে, জবও করে ওখানে একটি নামকরা এড এজেন্সিতে। বর আই টি তে আছে। দুটো বাচ্চা, একটা ছেলে একটা মেয়ে।
এখানে ফেরার আর বিশেষ একটা ইচ্ছা নেই রোহিতের। ওখানে বসেই ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তার পুরোনো কলেজে স্টার সিংগার হয়ে গান করার অফারের লোভটা আর সামলাতে পারলোনা সে। বিশেষত যখন শুনল এটা একটা রি-ইউনিয়ন। খুব খুশি হল। এখনকার স্টুডেন্ট কয়েকজন দায়িত্ব নিয়ে সকলের সাথে যোগাযোগ করছে, যতোজনকে পাওয়া যায়!!
কাঁধে একটা হাত পড়তেই আবার বাস্তবে এসে পড়ল রোহিত। একটা বেশ গোলগাল পড়ুয়া পড়ুয়া মেয়ে একটা টাইট জিন্স আর টি পড়ে দাঁড়িয়ে তার সামনে আর তার চোখের সামনে অস্থির হাত নেড়ে হাই করছে....
"মাই গড, রোহিত.. ইউ আর নট এট অল চেঞ্জড.. লুক এট ইউ,, সো হ্যান্ডসাম!"
আগের রোহিত হলে হয়তো একটু লাল হত। এই রোহিত বাইরে অনেকগুলো বছর কাটিয়ে আর বয়সের সাথে আগের থেকে অনেক বেশী ম্যাচিওরড। তার থেকে অনেক বেশী সে এক্সাইটেড হয়ে উঠল তার কলেজ লাইফ বান্ধবী পিউকে দশ বছর পর আবার দেখে। জড়িয়ে ধরল আনন্দে! সাজপোশাক মড হলেও মুখটা এখনো ওইরকমই পড়ুয়া পড়ুয়া আছে, তাই চিনতে একটুকুও অসুবিধা হয়নি। মাদুরাই থেকে মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করে সে এখন কানাডার টরোন্টোতে রিসার্চ করছে। পাশাপাশি ওখানে একটি 'ফোক এন্ড ফিউসান' ব্যান্ডের সাথেও সে যুক্ত।
এতো গল্প করতে লাগলো ওরা দুজন যে বাকি পুরো দুনিয়ার কথা যেন ভুলেই গেল। ওকেও ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমেই যোগাযোগ করা হয়। ওরা দুজন ওই শো-টা করার পর বেশ কিছুটা পরিচিতি তো হয়েছিলই, তাই দুজনকে যোগাযোগ করতেই খুব একটা অসুবিধা হয়নি। এই কয়েক বছরে নিজেরা চাইলেও যে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতে পারতো না তা কিন্তু নয়, কিন্তু কেউই কষ্ট হলেও তেমন আগ্রহ দেখায় নি। আসলে দূরত্ব আর ব্যস্ততায় তাদের মনের মাঝে একটা বড়ো ফাটল ধরিয়েছিল.. কিন্তু তা যে একেবারে ছিন্ন করে নি, তা আজ এদের দুজনকে দেখলেই বেশ বোঝা যাচ্ছে।
কথা যেন আর শেষ হতে চায় না। পিউদের ওখানে রোহিতের মতোই একটা ইন্ডিয়ান গ্রুপ আছে। তারা প্রতি হপ্তায় দেখা করে গানবাজনা করে খুব আনন্দ করে। রোহিতও ব্যান্ডের সাথে সাথে ওখানে বেশ কয়েকটা মুভিতে প্লে-ব্যাকও করেছে সেই সব গল্প।
বেশ অনেক্ক্ষণ গল্পের পর, দুজনেই বেশ এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। তাদের মনের আশা বোধহয় একই.. আর কাউকে যদি দেখা যায়.. আর কেউ তাদের গ্রুপের.... কেউ কি আসবে আর?? পিউএর ই চোখ প্রথম পড়ল.. একপাশে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে একজন বছর তিরিশের লোককে ঘিড়ে ধরে কি বলছে.. আর সেও হাসতে হাসতে তাদের এগোনো বইতে টকাটক সই করে দিচ্ছে! বেশ চকচকে সপ্রতিভ.. বিশেষত চোখদুটো খুব ইন্টেলিজেন্ট। মুখটা.. মুখটা.... বড্ড চেনা.. হাসিখুশি.... এবারে পিউ লাফিয়ে উঠল.. অর্ণব.. তাদের অর্ণব মুখার্জি! দেখা মাত্রই ছুটল সেদিকে, পিছনে রোহিত। গিয়েই ওই ভক্তদের মধ্যেই গিয়ে জড়িয়ে ধরল। রোহিতও। অর্ণব তো পুরো থ! বাকিরাও হাঁ করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। একটু সম্বিত ফিরে পাওয়ার পরেই অর্ণব হো হো করে হেসে উঠল.. একদম সেই আগের দিনের মতোন।।
ক্রমশ