Those Days Part Seven
Those Days Part Seven
আরুষি বাইরে আসতেই স্যাম তার দিকে বেশ কিছুটা এগিয়ে এসে তার হাতটা ধরতে যেতেই আরুষি ছিটকে সরে গেল। ভ্রু তুলল একটু। স্যাম একটু হেসে বলল..
"অনেকদিন থেকে একটা কথা বলব বলব করে তোমায় বলা হচ্ছে না!"
"কি?"
"তোমায় না আমার খুব ভাললাগে.. অনেকদিন থেকেই.. তোমায় প্রথম দেখেছি তার পর থেকেই! কিছুতেই বলতে পারিনি, তুমি কি ভাববে!"
"তাহলে এখন বলে দিলে কেন?"
স্যাম একটু কিন্তু কিন্তু করল..
"আর, থাকতে পারলাম না! তুমি রাগ কোরো না প্লিজ"..
বলেই আবার আরুষির হাতটা ধরতে যাবে, আরুষি হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিল..
"দেখো স্যাম, একটা কথা পরিষ্কার তোমায় জানিয়ে রাখি, তোমায় আমার একদম ভালোলাগেনা, সো অন্যরকম সম্পর্কের তো প্রশ্নই ওঠেনা! একদম আর দ্বিতীয়বার আমায় বিরক্ত করার চেষ্টা করবে না। যদি করো তো রোহিতকে বলে দেব!"
"আরুষি প্লিজ শোনো"..
আরুষি আর দাঁড়ালো না, পিছন ফিরে তাকালোও না।
ধুর বাবা ভালোলাগেনা! এই গ্রুপটার সব যেন কেমন অদ্ভুত রোহিত আর পিউ ছাড়া! তবে এতোটা রুড ভাবে বলাটা বোধহয় ঠিক হয় নি। বাকি কেউ আর কিছু খেয়াল করল না। স্যামের চোখদুটো আরো জ্বলন্ত হয়ে রইল বাকি সময়টা, আগুন ঝরছে যেন। শরীরটা খারাপ লাগছে বলে সকলকে বাই করে সে একটু আগেভাগেই বেরিয়ে চলে গেল।
আজ রিহার্সালের পর রোহিত যখন বাকিদের বাই করে আরুষিকে পৌঁছে দেবে বলে গাড়িতে উঠতে যাবে, হঠাৎ জিনি কেমন আব্দারের ভঙ্গিতে বলল..
"রোহিত, আমিও যাব তোদের সাথে। আমার একটু ঘুরতে ইচ্ছে করছে, প্লিজ!"
রোহিত একটু অবাক হল, কিন্তু বুঝতে দিল না..
"হ্যাঁ চল, তাতে কি!"
জিকো সাথে সাথেই বলে উঠল..
"তাহলে আমিও যাব জিনি!"
জিনি কড়া চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল..
"না, তুই বাড়ি যা.. আন্টি চিন্তা করবে নয়তো!"
জিকো আর কিছু বলার সাহস পেল না, তারা তিনজন বেরিয়ে গেল গাড়িতে।
পিউএর বাড়ি ওখান থেকে হেঁটে মিনিট দশেক। শেষ গানটা গুনগুন করতে করতে অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটছিল..
হঠাৎ একটা শক্ত হাত তাকে বাধা দিয়ে রাস্তা আটকালো..
"একবার শুনবেন, একটু কথা ছিল আপনার সাথে!"
চমকে তাকালো পিউ। তাকিয়েই মুখটা তার বিরক্তিতে ভরে উঠল। ঈশশ, স্যামের বন্ধু সেই বিচ্ছিরি ছেলেটা না! এর আবার কি দরকার তার সাথে? কিন্তু পিউ নরম সরম আরুষির মতোন অমন কড়া কথা বলতে পারলো না। সে ঠিকই ধরেছিল, ওটা সঞ্জয় ছিল। সঞ্জয় কোনো উত্তর না পেয়ে আবার বলল..
"একটু কি কথা বলা যাবে?"
পিউ কি বলবে ভাবছে, এমন সময়ে হঠাৎ একটা কড়া গলা বলে উঠল..
"একদম না, রাস্তাচলতি সব মেয়েদের কে কি দাঁড় করিয়ে এই ভাবে কথা বলেন আপনি? একে কি ভদ্রতা বলে?"
পিউ পিছন ফিরে দেখল অর্ণব! ও এখানে? অবশ্য তাদের কলেজ থেকে তো এই গ্যারেজ বিশেষ কিছু দূরে আর নয়। সঞ্জয় মুহুর্তে ভ্যানিশ। সে স্যামের থেকেও অনেক বেশী বুদ্ধি রাখে, এখানে আর না থাকাটাই যে ভাল সেটা বলাই বাহুল্য। এমনিই তাকে পাড়ায় কেউ বিশেষ ভাল নজরে দেখে না।
পিউ এবারে অবাকভাবে বলল..
"তুমি এখানে কি করছ?"
"এই যে ম্যাডামকে বাঁচাচ্ছি!"
হো হো করে হেসে উঠল পিউ।
"তুমি বুঝি সবসময় এমনি করেই কথা বলো!"
"আর কি করব ম্যাডাম, আমি তো এইরকমই, সবসময় হাসিখুশি। কবিতা লিখি, গান গাই.."
"তুমিও গান গাও?"
"তুমি তো গাইছো ফেস্টে, সেদিনকে লিস্টে দেখছিলাম। তোমার মতোন ভালো না, ওই একটু আধটু!"
"তাহলে তুমিও তো আমাদের রিহার্সালে আসতেই পারো.. রোহিতকে বলব আমি। পারফরম্যান্স না থাকলেও আসতে পারো। আরুষি ও তো আসে!"
"ম্যাডাম বললে নিশ্চই আসবো। সেদিন তোমার বন্ধুর সাথে বসেই তো ইংলিশ ক্লাসটা করলাম। যা অন্যমনস্ক ছিল, আর একটু হলেই স্যার ক্লাস থেকে বের করেই দিয়েছিল, আর কি!"
দুজনেই হেসে উঠল।
ওদিকে রোহিতরা গাড়িতে গল্প করতে করতেই যাচ্ছিল। আরুষি একটু অস্বস্তি ফিল করছিল জিনির উপস্থিতিতে। কারণ সেদিনের পর জিনি বা জিকো কেউই তাদের দুজনের সাথে দরকার ছাড়া তেমন কথা বলছিল না।
জিনি হঠাৎ করে নিজের থেকেই অনেক বেশী করে ছোটবেলার থেকে তার আর রোহিতের কাটানো ভালো সময়গুলোর কথা শেয়ার করতে লাগলো। একে অপরের জন্মদিনে কি করত, কতো এনজয় করত, তার বাড়িতে এসে সকলকে রোহিত গান আর গীটার শোনাতো.... সেও তাদের বাড়িতে যেত, আঙ্কল এবং দিদির সাথে তারও খুব ভাব.. ইত্যাদি ইত্যাদি।
রোহিত কিছু টের পেল না, হাসছিল.. সেও কিছু ছোট ছোট ঘটনা, জিনির করা কিছু পাগলামি শেয়ার করছিল তাদের সাথে। তার কাছে জিনি খুব ভাল বন্ধু সেই ছোট্টবেলার বেস্ট ফ্রেন্ডের মতোন।
কিন্তু আরুষি খুব অকওয়ার্ড আউট অফ স্পেস ফিল করছিল সেই মুহুর্তে। বিশেষত আজ আর সে সামনে বসে নি, সে আর জিনি পিছনেই বসেছিল। তার মনে হচ্ছিল তাদের এই ছোটবেলার বন্ধুত্বের মধ্যে বুঝি সে এসে যাচ্ছে, ওইজন্যেই বোধহয় জিনি ওকে পছন্দ করেনা!
রাতের আড্ডা আজ একদম চুপচাপ। সবার মুড অফ। স্যাম, সঞ্জয়, লালটু, গোগা এবং আরো দু তিন জন। স্যামের চোখ পুরো লাল। ভালোই চড়িয়েছে আর কতোকটা রাগেও। এখনো গজরাচ্ছে....
"হাউ ডেয়ার শি টেল মি নো! হাঃ দ্যাট বিচ?? বেশি তেল হয়েছে! আবার বলে রোহিতকে বলে দেব? রোহিত কে রে বাল? ওর বাড়িতে থাকি বলে কি আমার গার্জেন হয়ে গেল নাকি??"
ওর কাঁধে হাত রাখে সঞ্জয়। এতো খেয়েছে, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছেনা। তপ্ত গলায় বলল..
"ঠিক বলেছো দোস্ত! মাগি আমাকেও না করেছে! মুখে বলেনি, মুখচোখ দেখলে তো বোঝা যায়। দুটোকে একসাথে পেলে একদিন এমন রগরাবো না...."
বলেই বিশ্রী শব্দ করে হেসে উঠল।
অর্ণবের কথাঃ পুরো নাম অর্ণব মুখার্জি। আসানসোল থেকে এসেছে এখানে পড়াশুনার জন্য। মামারবাড়িতে থাকে। বাবা ওখানে ডাক্তার আর মা শিক্ষিকা। পয়সার কোনো অভাব না থাকলেও এবং এক ছেলে হওয়া সত্বেও ছেলেটির স্বভাবটা খুবই ভাল। পড়াশুনা গান কবিতা গল্পের বই এসব নিয়েই থাকতে ভালবাসে। আরুষি আর পিউএর মতোন সেও ইংলিশ অনার্স ফার্স্ট ইয়ার। ভবিষ্যতে লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখে।।
ক্রমশ