Those Days Part Twelve
Those Days Part Twelve
এই সাংঘাতিক ঘটনার পরে সকলের জীবনেই অনেকরকম পরিবর্তন হয়। স্যাম জিনি সঞ্জয় লালটু গোগা রাজাদের এগেইনস্টে রিপোর্ট লেখায় রোহিত অভিষেক অর্ণব রা। আরুষি আর পিউএর সাথে ওই দৃশ্য দেখার পর বিকাশ সেনের হাজার চাপাচাপিতেও এই বিষয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ করে না তারা। বেশী প্রেশারাইজ করলে মিডিয়ায় খবর চলে যেতে পারে বলে হুমকি দেয় অভিষেক। তার অনেক কন্ট্যাকটস আছে। বিকাশ সেনও চুপ করতে বাধ্য হন। রোহিত অবশ্য খুব ভাল জানে তার পক্ষে ভাল উকিল লাগিয়ে জিনিকে বের করে নেওয়া কিছুদিনের ব্যাপার। তবু রিপোর্ট লেখানো তো হোক। বাকিগুলো অন্তত জেলে পচুক!
রিপোর্ট লিখিয়ে যখন বাড়ি ফিরল, তখন রোহিতেরও বড্ড শ্রান্ত লাগছে। মনটাও বিধ্বস্ত। দিদিকে কি কি হয়েছে জানিয়ে শুতে চলে গেল। ভাল করে কিছু খেলোও না।
পরের দিনটা ছিল রবিবার। রোহিতের বাড়িতে সকলে মিলে ফেস্টের পর একটা গেটটুগেদার করার কথা ছিল। তার বদলে কি হল! আরুষির সকালে যেন আর ঘুম থেকে উঠতেই ইচ্ছা হয় না। একদম বিষন্ন লাগছে মন, ওঠায় এনার্জি পাচ্ছে না যেন! মনে হচ্ছে আরো অনেক্ষণ শুয়ে থাকে। তার উপর এমন ঘটনায় তার দাদা বেশ ক্ষেপেই রয়েছে, মা কে জানিয়ে দিয়েছে। বলেছে বাজে বন্ধুবান্ধবদের সাথে মিশে এই কান্ড হতে যাচ্ছিল তার। কাল রাতে ফোনে অনেক্ষণ কথা হয়েছে তার মার সাথে.. তিনিও পই পই করে বলে দিয়েছেন না মিশতে তাকে অমন বন্ধুদের সাথে। আরুষি অনেক চেষ্টা করেও তাদের আসল সত্যিটা বোঝাতে পারেনি।।
রোহিত আর পিউএর জন্য খুব মনকেমন করছে তার। অনেক ভেবেচিন্তে পিউকে একটা ফোন লাগালো। ও প্রান্তে ফোন ধরল পিউএর বাবা..
"ইয়েস?"
"পিউ আছে?"
"হু ইস স্পিকিং?"
"আমি ওর কলেজ ফ্রেন্ড আরুষি বলছি।"
"কি দরকার?"
থতমত খেয়ে গেল আরুষি। দরকার আবার কি? সে তো এমনিই তার খবর নেওয়ার জন্যেই ফোন করেছে।
"না এমনিই কথা বলার জন্য।"
"পিউ আর ওই কলেজে যাবে না। তাই এরপর থেকে আর এখানে ফোন করার কোনো দরকার নেই!"
কেটে গেল ফোনটা। হাঁ করে কিছুক্ষণ বসে রইল আরুষি। যদিও তার বাড়ির থেকেও তাকে একই কথাই বলা হচ্ছে, তবুও পিউ আর কখনো কলেজেই আসবেনা, এতোটা বোধহয় আশা করেনি সে। মনটা একদম ভেঙে গেল। পিউকে ছাড়া কলেজ যেন ভাবতেই পারছেনা।
হতভম্ব আর মনমরা হয়ে বসেছিল, ফোনটা বেজে উঠল। এবার রোহিত....
"হ্যাঁ বলো"
"একবার আসবে আমার বাড়িতে, অর্ণব আর জিকোও আসছে.. কিচ্ছু ভালোলাগছেনা.."
"এখন.. কি করে আসবো?"
"আমি নিতে আসছি.. বাকিরাও কিচ্ছুক্ষণে আসছে। পিউকেও নিতে গেছিলাম.. আঙ্কল কথা বলতেই দিল না!"
"জানি, আমিও ফোন করেছিলাম। ঠিক আছে আমি আসছি, তোমায় আসতে হবে না। আই উইল টেক আ ক্যাব!"
বৌদিকে বলে কোনোমতে চুপিচুপি বেরিয়ে এল। দাদা এখনো ঘুমাচ্ছে। তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে কথা দিল।
রোহিতের বাড়িতে কলিং বেল টিপতেই সিঞ্জিনি দরজা খ
ুলল। দিদির হাসিতে একচুলও পরিবর্তন হয় নি, সেই আগের মতোই ওয়েলকামিং। তাকে একটা ছোট্ট হাগ দিয়ে বলল..
"যা, সকলে ওপরে আছে।"
আরুষি উপরে এসে দেখল অর্ণব আর জিকো চলে এসেছে। তাকে দেখে সবাই হাই করল। কিন্তু সেই আগের জোশ যেন নেই কারুরই। সকলেই বেশ একটু মনমরা। রোহিত তাকে দেখা মাত্রই এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরল। সারা রাত খুব কষ্ট হচ্ছিল তার। তার আর পিউএর কি হয়েছে বা হতে যাচ্ছিল ভেবে। স্যাম সঞ্জয় জেল থেকে না বেরোলেই সে সবথেকে খুশি। আরুষিও তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই ফেলল। তার নিজের বাড়ির অবস্থার কথা বলল, সবাই খুব রেগে আছে। বৌদি আর গোগোল ছাড়া মা আর দাদা বিশেষ কথাই বলছেনা তার সাথে।
জিকো বলল তাদের বাড়ির অবস্থাও তথৈবচ। জিনির গ্রেপ্তারে জিকোর কিছুটা ভূমিকা আছে জানতে পেরে বিকাশ সেনের সাথে ভাই বিলাস সেনের ভালোই ঝামেলা বেধে গেছে। তাদের পারিবারিক ব্যবসা আলাদা হয়ে যাওয়ার উপক্রম। বিকাশ সেন বড়ো উকিলের সাথে যোগাযোগ করেছেন। কয়েকদিনেই জিনিকে বের করে আনবেন। জিকো জানালো তার জেঠু জিনিকে বাইরে পাঠানোর প্ল্যান করছেন, এখানে আর পড়াশুনা করাবেন না। কানাডায়.. জিনি যেতে চায়না, তবে জেঠু বলেছে যখন যেতেই হবে। তার বাবা মা তাকে বিশেষ ভুল বোঝে নি, বরং সে এমন কাজ করেছে বলে বেশ গর্বিত বোধ করছেন তারা।
পিউএর ও যে বাড়িতে খুব খারাপ অবস্থা, তা আঙ্কলের হাবভাব দেখেই বেশ বোঝা যাচ্ছে। এমনিই তার বাড়ি খুব রক্ষনশীল। অর্ণব নাকি কাল রাতে অন্তত তাকে দশবার ফোন করেছে, একটাও তোলেনি। মেসেজ করেছে, কোনো উত্তর নেই। সারারাত ঘুমোতে পারেনি সেও।
অর্ণবের বাড়িতে এখনো কেউ কিচ্ছু জানে না। খালি কাল রাতে মায়ের সাথে কথা বলার সময় বুঝি তাকে জিগ্যেস করেছিল..
"কিরে কি হয়েছে রে তোর, গলাটা কেমন অন্যরকম লাগছে?"
"কই, না না, কিছু হয়নি তো!"
বলে কোনোভাবে এড়িয়ে গেছে সে। মা-রা বোধহয় সব বুঝতে পারে! আজ মার জন্য কেমন যেন মনকেমন করে ওঠে তার। পিউ যদি কলেজে আর না আসে, তবে তার সাথে কি ভাবে যোগাযোগ হবে? কি করে দেখা হবে, কথা বলবে??
রোহিতের অবস্থা বোধহয় এদের মধ্যে সবথেকে ভাল। কারণ কিছুটা তার এতোদিনের সবকিছুতে আর সর্বত্র সুনাম আর কিছুটা তার দিদি সিঞ্জিনির জন্য। বাবাকে সেই সবকিছু খুলে বলে। তার মুখটা একটু গম্ভীর হয়ে উঠলেও বিশেষ কিছু বলেন নি তিনি। মা হারা তার ছেলে মেয়ে দুটিই যে বড্ড ভাল, এটা তিনি বেশ ভালোই জানতেন।
একদিন আগেও সবকিছু কতো ভাল কতো সুন্দর ছিল, ভাবল তারা। আর একদিনের মধ্যেই সবকিছু পালটে কতো অন্যরকম হয়ে গেল, ভাবাই যায়না। সকলের বাড়িতেই কেমন এক অস্বস্তিময় পরিবেশ। আরুষি খালি বকা খাচ্ছে বাড়িতে, জিকোর বাড়িতে দুটো পরিবার কেমন এক ছাদের তলাতেই আলাদা হয়ে গেছে, আর পিউএর সাথে তো কথাই বলতে দেওয়া হচ্ছে না। একটুখানি হিংসার বশে জিনি এ কি করে ফেলল। আর কি কখনো এই সমস্যা মিটবে তাদের? এই অবস্থার পরিবর্তন হবে?? আবার কি তারা আগের মতোন আনন্দমধুর দিনগুলো ফেরত পাবে??? কে দেবে এই প্রশ্নের উত্তর? সকলের মনের আকাশে আজ বিষাদঘন কালো মেঘ!
ক্রমশ