Those Days Part Nine
Those Days Part Nine
#দোস #ডেস
নবম পর্ব
কলমেঃ দেবস্মিতা
১৫/০৮/২০২০
ক্লাসের পর আরুষি পিউ আর অর্ণব একসাথেই রিহার্সালে পৌঁছালো। পিউ আজ প্রথম একটা খুব সুন্দর লাল কুর্তি পড়ে এসেছে, চোখের কোণেও কাজল, ঠোঁটে লিপ গ্লসের ছোঁয়া। বেশ ভালোলাগছিল দেখতে। এই পরিবর্তনটা আরুষির নজর এড়ালো না। ভ্রু তুলে একবার একটা কনুইয়ের খোঁচা মেরে বলল..
"কি ব্যাপার??"
পিউ হেসে উড়িয়ে দিল..
"ধুর কিচ্ছু না!"
বাকিরা ছিলই আগে থেকে। স্যাম আজ একটু চুপচাপই ছিল, আরুষির সাথে বিশেষ একটা কথা বলছিল না। অর্ণবের সাথে বাকি সকলের পরিচয় করিয়ে দিল পিউ। কথামতোন একটা ডুয়েট তাদের দিয়ে গাওয়ানোর কথা ভেবেছিল রোহিত। গানটা ঠিকও করে নিয়েছিল.. বর্তমান সময়ের অতি পরিচিত হিন্দি মুভির গান.."মিলে হো তুম হমকো, বড়ে নসীবো সে"....
অর্ণবের গলা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা ছিল না রোহিতের। পিউএর মুখে শুনেছিল ভাল গান করে। আজ যখন গান শুনলো বেশ ভালো লাগলো তার। গীটারটাও বেশ ভালোই বাজায়। যদিও ফেস্টে তাকে বাজাতে হবে না, জিনি আর জিকোই বাজাবে।
জিনি আজ একদম অন্যরকম.. সকলের সাথে বেশ যেচেই কথা বলছে... এমন কি আরুষির সাথেও একটু আধটু। রোহিতের কাছে অলরেডি আরো বারদুয়েক ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে সেদিনের ওইরকম আচরণের জন্য।
রিহার্সালের ফাঁকে ফাঁকে রোহিত বারকয়েক তাকালো আরুষির দিকে তার মনের ভাব কতোকটা বোঝার জন্য, মোটামুটি হাসিখুশি মুখেই সে একপাশে বেঞ্চে বসে আছে। তার দিকে একবার চোখাচোখি হয়ে যেতেই আরুষি কেমন যেন লাল হয়ে উঠল।
সব কটা গানই বেশ কবার করে রিহার্সাল করে বেরোনোর পর আজ বেশ দেরিই হয়ে গেল। আরুষি বাড়িতে বলেই এসেছিল রাত হতে পারে ফিরতে। রোহিত যথারীতি তাকে পৌঁছানোর জন্য গাড়িতে উঠল। আজ আর জিনি কিছু বলল না। সকলেই সকলকে বাই করে যে যার মতোন বাড়ির পথে রওনা হল।
আজ আর রোহিত নিজেকে সামলাতে পারলোনা। যদিও ফেস্টের দিনই তাকে মনের কথা বলবে ভেবেছিল.. কিন্তু আরুষিকে একটু হাসিখুশি পেয়ে তার মত পরিবর্তন করল। গল্প করতে করতেই তার হাতটা ধরে বলল..
"একটা কথা তোমায় বলার ছিল.. যদি আমাকে ধরে না মারো তো বলি...."
আরুষি কতোকটা আন্দাজ করতে পেরেই বা আবার লাল হয়ে উঠল। রোহিত আবার বলল..
"তোমার ওই মুখের রঙটাই এখন আমার মনের রঙ! আই লাভ ইউ আরুষি!"
বলেই তার হাতটা নিজের হাতে নিল রোহিত..
"ফেস্টের দিনই তোমায় জানাবো ভেবেছিলাম.. তারপর মনে হল.. না আজই বলি। তোমার উত্তর যা হবে আমি তাই খুশিমনে এক্সেপ্ট করব,, ওকে?"
আরুষি একটু হেসে তার দিকে তাকালো, সেই হাসি একদম অন্যরকম, অপার্থিব। প্রথম আবীরের ছোঁয়া!
পিউ আর অর্ণব আজকের গানগুলো নিয়ে আলোচনা করতে করতে যাচ্ছিল। বিশেষত তাদের ডুয়েট গানটার কথা। তারা ঠিক করল কাল ক্লাসের আগে দুজনেই একবার রোহিতের বাড়ি গিয়ে তার সামনেই গানটা প্র্যাকটিস করে নেবে। হঠাৎ অর্ণব তার দিকে বেশ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল..
"তোমায় কিন্তু আজ বেশ দেখাচ্ছে.. এই রঙটায় বেশ মানিয়েছে তোমায়...."
"তাই?"
"অবশ্যই.. তোমায় দেখে ওই গানটা গাইতে ইচ্ছা করছে.. 'ওগো কাজলনয়না হরিণী'!"
বলেই হো হো করে হেসে উঠল।
"যাঃ তুমি না, সবকিছুতে ইয়ার্কি!"
বলেই একটা চিমটি কাটলো তার হাতে। পিউএর গালেও আবীরের রঙ!!
রাত তখন প্রায় দশটা হবে। জিনির বাড়ি থেকে স্যামের বাড়ি বিশেষ দূরে নয়। সে এসেছে স্যামের সাথে তাদের আড্ডায়। একটা স্লিভলেস টপ আর জিন্স পড়ে আছে। চোখে গাড় কাজল। সঞ্জয় আর লালটুও ছিল সেখানে।
জিনি বেশ বিধ্বস্ত ভাবেই এসছে সেখানে। তার চোখমুখ দেখে স্যামই অবাক হয়ে গেল! বাকিদের বলল..
"এটা আমার বন্ধু জিনি, কাছেই থাকে। আমরা কলেজে একসাথে পড়ি। আর এরা সঞ্জয় আর লালটু।"
জিনি সবার দিকে একবার সতর্ক চোখ বুলিয়ে নিল।
"বল এবার কি বলবি??"
জিনি একবার সঞ্জয়ের দিকে তাকালো.. ওর মনের ভাব কতোকটা বুঝেই স্যাম বলল..
"এরা সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত, তুই এদের সামনেই বলতে পারিস। প্রয়োজনে হেল্পও করে দেবে!"
জিনি দাঁতে দাঁত চেপে বলল..
"ডু সামথিং টু দ্যাট বিচ! ওকে আর সহ্য করতে পারছি না!"
"কার কথা বলছিস তুই?"
"আরুষি!!"
"কি!"
"হ্যাঁ। রোহিতকে আমি ভালোবাসি স্যাম, তাই আমার আর ওর মধ্যে যে ঢুকবে তাকে আমি ছাড়বো না! আমি আর রোহিত সেই ছোট্টবেলার বন্ধু আর ও আজ হঠাৎ করে এসে আমাদের মধ্যে ঢুকে যাবে? হাউ ডেয়ার শি?? আমি যদি তোর সত্যি ভাল বন্ধু হয়ে থাকি তো কিছু কর, প্লিজ! হেল্প মি!"
সঞ্জয় একটু বক্র হেসে স্যামের দিকে তাকালো। স্যাম জিনির মাথায় হাত দিয়ে তাকে ঠান্ডা করে বলল..
"ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়! তুই এখন ঠান্ডা মাথায় বাড়ি যা!"
জিনি চলে যাওয়ার পর লালটু জিভটা একবার চেটে নিয়েই বলল..
"মালটা কিন্তু হেব্বি ছিল, না?"
স্যাম ছ্যাঁক করে উঠল..
"তোরা কি কোনো মেয়েকে কখনো ছাড়িস? ও কিন্তু আমার ভালো বন্ধু!"
সঞ্জয় ইশারায় লালটুকে থামিয়ে বলল..
"এবার একটা কিছু করতে হবে দোস্ত! রোহিতের আর মেয়েদুটোর বাড়াবাড়ি এবার বন্ধ হওয়া দরকার। অনেক সর্দারি করেছে, আর নয়!"
স্যাম দাঁতে দাঁত চেপে বলল..
"একদম, চলো একটা প্ল্যান বানাই! আর জিনির হেল্প আমাদের লাগবে। তবে রোহিতকে কিছু করতে হলে জিনিকে কিন্তু সেটা বলা চলবে না! ও রোহিতকে সত্যি ভালোবাসে।"
(ক্রমশ)