STORYMIRROR

Dola Bhattacharyya

Fantasy Others

3  

Dola Bhattacharyya

Fantasy Others

তারার আলোয়

তারার আলোয়

14 mins
321


খুব ছোট বেলায় কারোও কাছে শুনেছিলাম, আকাশে নাকি দেবতারা থাকেন। পৃথিবীর অনেক ওপরে ওই আকাশটার মধ্যে স্বর্গ নামে একটা জায়গা আছে। সেখানে কোনও দুঃখ নেই। আছে শুধু আনন্দ আর আনন্দ। দেবতারা সেখানকার বাসিন্দা। শুনে আশ্চর্য লেগেছিল খুব। তারপর থেকেই সুযোগ পেলেই চেয়ে থাকতাম আকাশের দিকে। ঘন নীল আকাশের মধ্যে লুকিয়ে থাকা স্বর্গ টাকে খোঁজার চেষ্টা করতাম। রাতের আকাশের বুকে যখন ফুটে উঠত অসংখ্য তারা, মনে মনে ভাবতাম, ওরাই হয়তো দেবতা। আকাশের অলিন্দ থেকে মুখ ঝুঁকিয়ে দেখছে, কেমন এই মাটির পৃথিবী টা। একটু বড় হতে স্পষ্ট একটা ধারণা তৈরি হল। কোনটা সঠিক তথ্য আর কোনটা নিছকই কল্পনা বুঝতে শিখলাম। বাড়ল কৌতুহল। ওই আকাশ জুড়ে অসংখ্য নক্ষত্রের সমাবেশ মুগ্ধ এবং বিস্মিত করল আমাকে। 

ঠিক আমার মতই আরও বহু মানুষকে যুগ যুগ ধরে আকৃষ্ট করেছে রাতের তারা ভরা রজনীর সৌন্দর্য। মুগ্ধতা ছাপিয়ে তাদের মনে জেগে উঠেছে কৌতুহল।। মানুষের এই কৌতুহল নিরসনের জন্য বৈজ্ঞানিকরা নিরন্তর চেষ্টা করে গেছেন । সৃষ্টি হয়েছে অনেক গুলো মানমন্দির। সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে আছে এগুলো। অতীতে যে সময়ে কোনও মানমন্দির ছিল না, ছিল না মানুষের শিক্ষার প্রসার, সেই সময়েও তাদের মনে কৌতুহল কিছু কম ছিল না কালের স্রোতে নিরন্তর বয়ে চলা ওই আলোকপিন্ড গুলোর প্রতি। রাতের আকাশের পানে নির্নিমেষ চেয়ে থাকা মানুষ গুলো নিজেদের কল্পনা কে আশ্রয় করে বানিয়ে ফেলে এক একটা গল্প। সৃষ্টি হয় তারাদের নিয়ে নানা কাল্পনিক কাহিনী। একই তারকামন্ডল কে নিয়ে ভিন্ন দেশের মানুষের সৃষ্ট ভিন্ন স্বাদের গল্প। গল্প গুলোর মধ্যে সেইসব মানুষদের মনের নানা আশা আকঙ্খার কথা ধরা পড়েছে। আজও এইসব গল্প আমাদের মনকে স্পর্শ করে যায়। 

          ভরা সন্ধ্যায় একটুকরো সাঁঝের আকাশ আজ ধরা দিল আমার ছাদের একটি কোনায় ।পরিস্কার আকাশে ভেসে যাচ্ছিল হালকা মেঘের পালক ।দিবসের শেষ আলোর রেশ টুকু ছিল তখনও ।একটা দুটো করে ফুটে ওঠা তারার দল জানাল আমায় শুভ সন্ধ্যা ।পাঠক। ওই দেখুন, পশ্চিম দিকে জ্বলজ্বল করছে সন্ধ্যাতারা। আসুন। ওই সন্ধ্যাতারার গল্পই প্রথমে শোনাই আপনাদের। সন্ধ্যা বেলায় পশ্চিম আকাশে যে সন্ধ্যাতারাকে জ্বলজ্বল করতে দেখি আমরা, ভোরের বেলায় সেই আবার পুব আকাশে শুকতারা হয়ে উদিত হয়। শুকতারা হচ্ছে শুক্র গ্রহ। হিন্দু পুরাণে তার পরিচয় দৈত্য গুরু শুক্রাচার্য রূপে। সন্ধ্যা তারা ও শুকতারা যে একই গ্রহ, প্রাচীন মানুষেরা এই খবর রাখতেন না। শুকতারা ও সাঁঝ তারাকে তাঁরা দুটি ভিন্ন তারা মনে করতেন। এই প্রসঙ্গে নিউজিল্যান্ড এর গল্প টা স্মরণীয়। এটা মাউই দেবীর কাহিনী, যিনি মাছ ধরতে গিয়ে গোটা নিউজিল্যান্ড দেশটাই তুলে এনেছিলেন সমুদ্রতল থেকে। এই দেবীর দুটি ছেলে ছিল। অতি শৈশবেই তিনি তাদের হত্যা করেন। তারপর তাদের চোখ গুলো দিয়ে সৃষ্টি করেন সাঁঝতারা ও শুকতারা কে। কি নিষ্ঠুর কল্পনা! আর একটা কাহিনী আছে। ইউফ্রেটিস নদীর তীরে উরুক রাজ্য। এই রাজ্যের রাজা ছিলেন গিলগামেশ। গিলগামেশের অন্ধ প্রনয়িনী ছিলেন দেবী ইস্তার। গিলগামেশকে তিনি বিবাহ করতে চান। কিন্তু সম্মত হন না গিলগামেশ। গিলগামেশের জীবন দুর্বিষহ করে তোলেন দেবী ইস্তার। ওই আমাদের বাংলা সিরিয়ালের কাহিনী যেমন হয় আর কি। এই দেবী ইস্তার ই হলেন সন্ধ্যা তারা, প্রেমে প্রত্যাখ্যাতা স্বর্গ নারী।

শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা যা ই বলা হোক না কেন, সাধারণ মানুষের কল্পনায় বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে নি সে। তবে তার নিঃসঙ্গ মাধুরী আর ক্ষীণ নম্র আভা দিয়ে বিশ্বের কবিকুল কে আকর্ষণ করেছে সে বারবার। সৃষ্টি হয়েছে অনিন্দ্য সুন্দর কাব্য। 

এবার বলি শ্রবণা তারা ও আকুইলা মন্ডলের কথা। অলটেয়ার, অলসাইন ও টেরাজড এই তিনটি উজ্জ্বল তারা নিয়ে এই নক্ষত্র গঠিত। রাতের আকাশে খুব সহজেই শ্রবণা নক্ষত্র কে চেনা যায়।। 

ধনুরাশির একটু উত্তরে আকুইলা মন্ডলের অবস্থান ।জুলাই মাসের মাঝামাঝি রাত সাড়ে আটটা বা নটা নাগাদ দক্ষিণ দিকে মুখ করে আকাশের দিকে তাকালে নজর কাড়বে স্নিগ্ধ সাদা রঙের ছায়াপথ বা আকাশগঙ্গা, যা পূর্ব দক্ষিণ কোণ থেকে শুরু করে সারা পুব আকাশ চিরে চলে গেছে উত্তর দিকে। দক্ষিণ দিকে সোজা তাকালে দেখা যাবে বৃশ্চিকরাশির কাঁকড়া বিছে টা দিব্যি শুয়ে আছে পশ্চিম দিকে মুখ করে। তার লেজ ছাড়িয়ে পুব দিকে তাকালে দেখা যাবে টি পট আকৃতির ধনুরাশি কে। দক্ষিণে বৃশ্চিকের লেজ থেকে ছায়াপথ ধরে উঠে এলেই ধনুরাশির টি পট। তার উপরেই রয়েছে আকুইলা বা শোন মন্ডল। আকুইলা মন্ডলের তিনটি তারার মধ্যে মাঝেরটির নাম অলটেয়ার বা শ্রবণা। এই তারার গল্প টি ভারি চমৎকার। 

আকাশের রাজা সূর্য। তিনি প্রবল শক্তিমান ও নিয়মনিষ্ঠ। তানাবাতা বা চিহনু নামে তাঁর একটি মেয়ে ছিল। সারাদিন ধরে তারার ঝাড় দিয়ে সুন্দর সুন্দর পোষাক বুনত সে। একদিন চি-এন - নু নামে এক রাখাল ছেলের সাথে পরিচয় হল তার। চি-এন-নু র অপরূপ দেহ লাবণ্য মুগ্ধ করল তানাবাতা কে। তাদের মধ্যে গড়ে উঠল সুন্দর ভালবাসার সম্পর্ক। সুর্যদেব কোনো আপত্তি করলেন না। ভালবাসার সম্পর্ক বিবাহ বন্ধনে বাধা পড়ল। বিয়ের পর তাদের অলস সময় কাটে নিভৃত প্রেমালাপে। আস্তে আস্তে তাদের নিজেদের কাজে অবহেলা দেখা দিল। সূর্যদেব তাদের সতর্ক করলেন। আবার কাজ শুরু করল তারা। কিন্তু কয়েকদিন বাদে আবার যে কে সেই। সূর্যদেব এবার রেগে গিয়ে চি-এন-নু কে নির্বাসন দিলেন স্বর্গ নদীর ওপারে। তানাবাতা হলো ঘর বন্দী। অনেক কাকুতি মিনতি তে মন গলল সূর্যদেবের। বছরের সপ্তম মাসের সপ্তম দিনটিতে ওরা পরস্পরের সাথে দেখা করার অনুমতি পেল। কিন্তু নদী পেরোবে কি করে! নদী তে যে সেতু নেই। সূর্য বললেন, নদী পেরোবার উপায় খুঁজে বের করতে হবে তাদেরই। সপ্তম মাসের সপ্তম দিনে তানাবাতা ডাক দিলেন দোয়েল (ম্যাগপাই) পাখিদের। তারা এসে সবাই মিলে তাদের পাখনা দিয়ে একটা সাঁকো রচনা করল। সেই দোয়েল সাঁকোর ওপর মিলন হল তানাবাতা ও তার প্রেমিকের। বছরে এই একটি বার ই মিলতে পারত ওরা। চিন, জাপানের মানুষ রা বিশ্বাস করত যে, বছরের সপ্তম মাসের সপ্তম দিনটীতে সারা পৃথিবীতে একটাও দোয়েল বা ম্যাগপাই পাখির দেখা পাওয়া যায় না। সেদিন তারা সকলে স্বর্গ নদীর ওপর সেতু বাঁধতে চলে যায়। জাপানে ওইদিন নানা রকম উৎসব হত। কেউ কেউ নদীর জলে তানাবাতার নামে কবিতা লিখে ভাসিয়ে দিত। এই তানাবাতা ই হল শ্রবণা তারা। 

সপ্তর্ষি মন্ডল - এপ্রিল মাসের শেষ দিকে গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় উত্তরের আকাশে দেখা যায় সপ্তর্ষি মন্ডল কে। ভারতীয় রা একে সাতটি ঋষির নামে চেনে। এই সাত ঋষি হল যথাক্রমে - ক্রতু, পুলহ, পুলস্ত, অত্রি, অঙ্গিরা, বশিষ্ট ও মরীচি। প্রাচীন ভারতে এদের ঋক্ষ বলা হত। ঋক্ষ শব্দের অর্থ যেমন তারা, তেমন আবার ভাল্লুক ও হয়। আমাদের সপ্তর্ষিমন্ডল তাই পাশ্চাত্যের দেশ গুলোতে গ্রেট বিয়ার নামে পরিচিত। 

গ্রীসের কাহিনী টি এইরকম - দেবরাজ জিউস একবার ক্যালিষ্টো নামে পরমা সুন্দরী এক অপ্সরা কে দেখে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। জিউসের স্ত্রী হেরা কোনো ভাবে জানতে পারলেন সেকথা। যথারীতি তিনি প্রতিহিংসায় জ্বলে উঠলেন। একদিন হেরার সাথে দেখা হয়ে গেল ক্যালিষ্টোর। যাদুবলে ক্যালিষ্টোকে একটা ভাল্লুক বানিয়ে দিলেন হেরা। ভাল্লুক রূপী ক্যালিষ্টো নিবিড় বনের মধ্যে আশ্রয় নিল। ক্যালিষ্টোর ছেলে আরাকাস ছিল শিকারী। মায়ের এই অবস্থার কথা জানতে পারল না সে। শিকার করে ফেরার পথে সে দেখতে পেল, বনের ভেতর গাছের পাতার আড়াল দিয়ে একটা ভাল্লুক আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যেই তীর বিদ্ধ করে ভাল্লুক টিকে হত্যা করল আরাকাস। না জেনে নিজের মাকেই হত্যা করে বসল আরাকাস। মাতা ও পুত্রের এই করুণ পরিণতি দেখে বেদনার্দ্র হল জিউসের হৃদয়। তিনি আদেশ দিলেন, মাতৃহত্যা করেছে আরাকাস। তাই সেও ভাল্লুক হয়ে যাবে। তারপর এই দুই ভাল্লুককেই তিনি স্থাপন করলেন আকাশে, নক্ষত্রমন্ডলীর মাঝে। তাই উত্তর আকাশে গ্রেট বিয়ারের কাছেই উল্টো দিকে রয়েছে লঘু সপ্তর্ষিমন্ডল বা লিটল বিয়ার। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, বৃহস্পতির বড় চারটি উপগ্রহর মধ্যে একটির নাম ক্যালিষ্টো। আর বৃহস্পতি হচ্ছে জুপিটার। জুপিটারের গ্রীক প্রতিশব্দ হল জিউস। রোমানরা গ্রহটির নাম রেখেছিল পৌরাণিক চরিত্র জুপিটারের নামে। 

সপ্তর্ষি মন্ডল নিয়ে চিন দেশের কাহিনী টি হল - প্রাচীন কালে মহাচিনে কিউই নামে এক অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাঁর পান্ডিত্যের কথা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিউই এর রূপ ছিল অত্যন্ত কদাকার। তাই কোনো বন্ধু ছিল না তাঁর। লোকচক্ষুর আড়ালে একাকী জ্ঞানের সাধনায় নিমগ্ন থাকতেন তিনি। সেই সময়ে চিনের সম্রাট প্রতি বছর দেশের কোনো বিশেষ গুণসম্পন্ন ব্যক্তি কে উপঢৌকন সহ সম্মান প্রদর্শন করতেন। একবার সম্রাট ঠিক করলেন, সেবছর একটা সোনার গোলাপ দিয়ে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণী মানুষ টিকে বরন করবেন। সেবারে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণী মানুষ হিসেবে নির্বাচিত হলেন কিউই। পুরস্কার নেবার জন্য রাজসভায় এলেন কিউই। কিন্তু সম্রাট সহ্য করতে পারলেন না কিউই এর সেই কদাকার রূপ। হাত থেকে খসে পড়ল সোনার গোলাপ। লজ্জায়, অপমানে রাজসভা থেকে বেরিয়ে এলেন কিউই। অসংখ্য মানুষের ঘৃণা ভরা দৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য ছুটতে ছুটতে সমুদ্রের তীরে এসে উপস্থিত হলেন তিনি। উন্মত্ত অবস্থায় এরপর সমুদ্রে ঝাঁপ দেন কিউই। মৃত্যুর পরে দেবতাদের আশীর্বাদে কিউই হয়ে গেলেন জ্যোতির্ময়। সপ্তর্ষি মন্ডলে স্থান পেলেন তিনি। সেখান থেকেই প্রতিনিয়ত তাঁর আশীষ ঝরে পড়ছে পৃথিবীর জ্ঞানসাধকদের মাথায় ।

চারটি তারা দিয়ে গঠিত ঘুড়ির আকৃতির কর্ভাস বা কাকমন্ডলের গল্প বলি এবার - গ্রীক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে কর্ভাস ছিল সূর্য দেবতা আ্যপোলোর পোষা কাক, যেমন সুন্দর দেখতে, তেমনই সুকন্ঠের অধিকারী। আ্যপোলো একবার কর্ভাস কে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দিয়ে দূরের কোনো জায়গায় পাঠালেন। এবং তাকে নির্দেশ দিলেন, কাজ সারা হলে কোথ্থাও দেরি না করে অতি দ্রুত যেন সে ফিরে আসে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করে ফেরার রাস্তা ধরল কর্ভাস। ফেরার পথে হঠাৎ তার চোখে পড়ল, একটা গাছে বড় বড় অনেক ডুমুর ফলে রয়েছে। সবেমাত্র পাক ধরেছে সেগুলোয়। পাকা ডুমুরের লোভে সেখানেই সে থেকে গেল কয়েকটি দিন। পেট ভরে পাকা ডুমুর খেয়ে দিনকয়েক বাদে ফিরে এল সে। দেরির কারণ জিজ্ঞেস করায়, আ্যপোলো কে সত্যি কথা বলল না কর্ভাস। কিন্তু আ্যপোলো তো সব জেনেই গিয়েছেন। তিনি তো দেবতা। কিছুই তাঁর অগোচরে থাকে না। কর্ভাসের কাছে এরকম আচরণ তিনি আশা ই করেননি। তাই তিনি অভিশাপ দিলেন কর্ভাস কে। সেই মুহূর্তেই কর্ভাস তার সকল সৌন্দর্য ও সুকন্ঠস্বর হারাল। সেই সঙ্গে পৃথিবীর সকল কাক হয়ে গেল কদাকার ও কর্কশ কন্ঠের অধিকারী। দৃষ্টান্ত স্বরূপ কর্ভাস কে স্থাপন করা হল আকাশে। কর্ভাস তারা মন্ডল কে দেখলে আজও পৃথিবীবাসির আ্যপোলোর দেওয়া শাস্তির কথা মনে পড়ে। 

এবার লাইরা মন্ডলীর কথা বলি। লাইরা তারাদের প্রথমে শকুনি রূপে কল্পনা করা হত। পরে তা বদলে গেল বীণা যন্ত্রে। সে এক করুন কাহিনী। আ্যপোলো পুত্র অরফিয়ুস। গ্রিক পুরাণে অসামান্য সূর শিল্পী রূপে অমর হয়ে রয়েছেন তিনি। ইউরিডাইস ছিলেন অরফিয়ুসের স্ত্রী, অরফিয়ুসের যোগ্য সহধর্মিনী। একদিন ইউরিডাইস গেলেন বাগানে ফুল তুলতে। ফুলবাগানের মধ্যেই সর্পাঘাতে মৃত্যু হল তাঁর। পাগল হয়ে উঠলেন শোকাতুর অরফিয়ুস। ইউরিডাইস বিহীন জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠল তাঁর কাছে। তিনি ঠিক করলেন, মৃত্যুপুরী থেকে ফিরিয়ে আনবেন ইউরিডাইস কে। অনেক কষ্ট সহ্য করে, অজস্র বাধা অতিক্রম করে অরফিয়ুস এসে পৌঁছলেন মৃত্যুপুরী তে। মৃত্যুরাজ প্লুটোর পদতলে বসে গান শোনালেন অরফিয়ুস। তাঁর সেই হৃদয় নিংড়ানো গানে টলে উঠল প্লুটোর সিংহাসন ।অরফিয়ুস দেখলেন, , মৃত্যুরাণী প্রসের্পিনের চোখে জল। মৃত্যুরাজ প্লুটো বিহ্বল কন্ঠে বললেন, কি চাও শিল্পী? অরফিয়ুস প্রার্থনা করলেন ইউরিডাইসের মুক্তি, মৃত্যু পুরী থেকে। প্লুটো বললেন, একটা শর্তে মুক্তি পাবে ইউরিডাইস। সে যাবে তোমার পেছনে। মৃত্যুপুরী অতিক্রম করার আগে একবারের জন্যেও তুমি পেছনে তাকাতে পারবে না। রাজি হলেন অরফিয়ুস। মৃত্যুপুরীর রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন অরফিয়ুস। তাঁর বীণায় বাজছে করুন সুর। পেছনে আসছেন ইউরিডাইস। মৃত্যুপুরী অতিক্রান্ত প্রায়। হঠাৎ অরফিয়ুসের মনে হল, পেছনে তো ইউরিডাইসের পদশব্দ শোনা যাচ্ছে না। শর্ত ভুলে পেছনে তাকালেন তিনি। আরে। ওই তো ইউরিডাইস ।মুহূর্তের মধ্যেই একরাশ অন্ধকার এসে ছেঁকে ধরল ইউরিডাইস কে। তীব্র হতাশায় কেঁদে উঠলেন ইউরিডাইস। দেখতে দেখতে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন তিনি। মৃত্যুপুরী থেকে একলাই ফিরলেন অরফিয়ুস। ইউরিডাইস ছাড়া পৃথিবী অর্থহীন তাঁর কাছে। আপন মনে বীণা বাজান তিনি। ছড়িয়ে দেন করুন সুরের মুর্ছনা। সুন্দরী নটীর দল প্রলোভিত করতে চায় তাঁকে। ফিরেও তাকান না তিনি তাদের দিকে। প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে পাথর ছুঁড়তে থাকে তারা। শিল্পীর বীণার সুরে স্তব্ধ হয়ে যায় পাথরের গতি। বুঝতে পেরে তুমুল কোলাহল সৃষ্টি করে নর্তকীর দল। সেই কলরবে স্তব্ধ হয় সুর, স্তব্ধ হয়ে যায় শিল্পীর জীবনের গতি ও। হিব্রুস নদীর ধারে গড়িয়ে পড়ে শিল্পীর দেহ। অলিম্পাস পাহাড় থেকে নেমে এলেন মিউজের দল। পরম সমাদরে তাঁরা শিল্পী কে সমাধিস্থ করলেন লিবেথ্রায়। লায়ার বা বীণা যন্ত্রটিকে তারা দিয়ে সাজিয়ে আকাশে রেখে দিলেন জুপিটার। এই হল লাইরা বা বীণামন্ডলের কাহিনী। 

      প্রাচীন ভারতের পৌরাণিক কাহিনীগুলি আমাদের সকলেরই প্রায় জানা। এগুলি অনেকাংশেই মহাকাশ ভিত্তিক। যদি জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টি তে আমরা কাহিনী গুলিকে দেখতে চাই, তাহলে কি দেখব? আসছি অগস্ত্য তারার কথায়। অগস্ত্য ঋষি ও তার স্ত্রী লোপামুদ্রার কথা মনে আছে? ঋষি অগস্ত্য একবার জানতে পারলেন, তাঁর পুর্বপুরুষরা খুব কষ্টে আছেন। তাঁদের কষ্ট দূর করতে হলে তাঁকে বিবাহ করে পুত্র সন্তানের জনক হতে হবে। তাই পরমা সুন্দরী রাজকুমারী লোপামুদ্রা কে বিবাহ করলেন তিনি। কিন্তু কপর্দক শুন্য ঋষি সন্তান পালন করবেন কি ভাবে? প্রশ্ন করলেন লোপামুদ্রা। লোপামুদ্রার সংশয় নিরসনের জন্য বিভিন্ন রাজার দ্বার থেকে দ্বারে ঘুরলেন অগস্ত্য। কোথাও অর্থ সাহায্য পেলেন না। এই ভাবে ই ঘুরতে ঘুরতে ইল্ল্বল আর বাতাপির কাছে এসে পড়েন তিনি। এ গল্প আর নতুন করে বলার দরকার নেই। দক্ষিণ আকাশের একটি বিশিষ্ট তারা হচ্ছে অগস্ত্য। মহাকাশে সর্বোজ্বল তারকাদের মধ্যে দ্বিতীয়। এটি Carina মন্ডলের তারা। লোপামুদ্রা অনায়াসে প্রত্যক্ষ যোগ্য অগস্ত্যের নিকটতম তারা। Carina মন্ডলেই অগস্ত্যের ঠিক পুর্বেই এর অবস্থান। ইল্ল্বল হল ইল্ল্বলা নক্ষত্র। মৃগশিরার শিরের পাঁচটি তারা নিয়ে এই নক্ষত্রের কল্পনা। এগুলো কালপুরুষের কটিতে অবস্থান করছে। আর বাতাপি! কালপুরুষ নক্ষত্রই বাতাপি। অগস্ত্য বাতাপিকে বধ করেছিলেন। বাত হল ঘুর্নীঝড়। অগস্ত্যের উদয়ে ঝড়, ঝঞ্ঝা স্তব্ধ হল। অর্থাৎ বাতাপির মৃত্যু ঘটল। অগস্ত্যের সমুদ্র শোষণের ব্যাখ্যায় বলা হল, বর্ষনান্তই হল সমুদ্র শোষণ। অগস্ত্যের উদয়ে বর্ষাকাল শেষ হল। অগস্ত্য হল ঋতু নির্দেশক তারা। এইভাবে ভারতের পুরান কাহিনী গুলির সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সমন্বয় সাধন হয়েছে। 

  মানব সভ্যতার ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায, প্রাচীন মানুষ জাগতিক যে কোনো কিছুরই একটা রূপ কল্পনা করতে ভালবাসত। এভাবেই তারা জড় জগতের সব রহস্য আবিস্কারের চেষ্টা করেছে। সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, তারা, সাগর, পাহাড় সকল কিছু একদিন এভাবেই দেবত্বে উত্তীর্ণ হয়েছে। বৈদিক সাহিত্য, গ্রীক সাহিত্যে এই মনোভাব স্পষ্ট করে দেখতে পাওয়া যায়। কখনও দুঃসহ বিশ্ময়, কখনও গভীর অনুরাগ, কখনও বা সুন্দরের প্রতি আসক্তি, এইসবের ওপর নির্ভর করেই গড়ে উঠেছে নানা কাহিনী। ধরা যাক, গভীর সমুদ্রে পাল তুলে একটা জাহাজ চলেছে, ধীর মন্থর গতিতে। শান্ত নিস্তরঙ্গ সমুদ্র। হঠাৎ একরাশ কালো মেঘ এসে ছেয়ে ফেলল আকাশটাকে। তুমুল ঝড়ে সমুদ্র হয়ে উঠল উত্তাল। সামাল সামাল রব উঠল জাহাজে। শুরু হল ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সমুদ্রের বুকে টিকে থাকার মরণপন লড়াই। প্রকৃতির খেয়ালে একসময়ে ঝঞ্ঝা গেল থেমে। মেঘ সরিয়ে বেরিয়ে এল একটুকরো আকাশ। সেখানে জ্বল জ্বল করছে দুটি তারা। নাবিকরা ভাবল, এই দুই তারাই হচ্ছে ঝড় বৃষ্টির দেবতা। সমুদ্রের ঝড়ে এঁরাই ছুটে আসেন মানুষের সাহায্যার্থে। ভয়ে, শ্রদ্ধায় তাদের প্রণাম করল নাবিক রা। তারা দুটির নাম রাখল ক্যাস্টর আর পোলাক্স। 

আসছি রাশি চক্রে। মেষ বৃষ আর মিথুন যমজ তারা /কর্কট আর সিংহের আলো ভরা /কন্যা তুলার দল /বৃশ্চিক ধনু মকর রয়েছে চেয়ে কক্ষে কুম্ভ আজও কে চলেছে ধেয়ে /মীনের গাত্র কত তেজ উজ্জ্বল। এই ছড়াটা কার তা জানিনা। তবে এর মধ্যে বারোটা রাশির নাম রয়েছে। এতটুকু পরিসরে সব রাশি গুলির কাহিনী বলা সম্ভব নয়। তাই আমি চারটি রাশি কে বেছে নিয়েছি। প্রথমে আসছি মিথুন রাশির কথায়--মিথুনরাশি বা জেমিনি নক্ষত্রমন্ডল মে মাসের সন্ধ্যায় পশ্চিমে পা আর পুবে মাথা দিয়ে উত্তর পশ্চিম আকাশে হেলে থাকে। ভারতীয় রা মনে করেন, ওরা একজোড়া নারী পুরুষ। ইউরোপিয়ানদের কাছে ওরা দুটি যমজ ভাই। জেমিনির দুটো উজ্জ্বল তারার মধ্যে প্রথমটা হল ক্যাস্টর, আর দ্বিতীয়টা পোলাক্স। দুজনেই গ্রীক দেবতা জিউসের সন্তান। পোলাক্স ছিল বক্সার, আর ক্যাস্টর ছিল ঘোড়া কে বশ করায় ওস্তাদ। সেই সময়ে সমুদ্রে জলদস্যুরা খুব উৎপাত করত। পোলাক্স আর ক্যাস্টর দুজনে একসাথে সমুদ্র যাত্রা করে জলদস্যুদের দমন করে। এরকমই এক অভিযানে জলদস্যুদের সাথে লড়াই করতে গিয়ে ক্যাস্টর মারা যায়। এই ঘটনায় শোকে কাতর হয়ে পড়ে পোলাক্স। জিউসের কাছে সে প্রার্থনা জানায়, একদিন অন্তর সে যেন পরলোকে গিয়ে ক্যাস্টরের সাথে মিলিত হতে পারে। পোলাক্সের ভাতৃপ্রেম অথবা বন্ধু প্রীতিতে মুগ্ধ হয়ে তার প্রার্থনা মন্জুর করলেন জিউস। ভালবাসার দৃষ্টান্ত হিসেবে তাদের দুজনকেই আকাশে স্থাপন করলেন তিনি। ভারতবর্ষে এদেরই নাম মিথুন তারা বা পুনর্বসু। 

চীনদেশে এই তারা দুটি কে মনে করা হত, জগতের দ্বৈত রূপের প্রতীক। এদের নাম ইন ও ইয়াং। ইয়াং আলো, ইন অন্ধকার। এরা দুজনেই দুজনের পরিপুরক। দুজনে মিলে রচনা করে ঋতুচক্র। 

বৃষরাশি - প্রায় হাজার বছর ধরে বৃষদেব আপিসের পুজো করে আসছে মিশর। মেমফিস শহরে আছে বৃষদেবের পূজামন্দির। বৃষদেব আসলে সর্ব সুলক্ষণ যুক্ত কালো রঙের একটা ষাঁড়। নানা রকম লক্ষণ দেখে সেই ষাঁড় কে নির্বাচন করা হত। তারপর খুব যত্ন সহকারে সেই মন্দিরে নিয়ে গিয়ে তাকে প্রতিষ্ঠা করা হত। বৃষদেবের আশীর্বাদে সোনার ফসল ফলবে মাটিতে। সেই বিশ্বাসে পুজো করা হত তাকে। এই আপিস বৃষ মারা গেলে আর একটি ষাঁড় কে একই পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হত। তবে কোনো আপিস বৃষ যদি পঁচিশ বছরের বেশি বাঁচত, তাহলে তাকে মন্দির সংলগ্ন পুকুরে ডুবিয়ে তাকে হত্যা করা হত। 

দেবরাজ জুপিটারের আর একটা প্রনয়ের কাহিনী শোনা যায় গ্রীসে। জুপিটার একবার ফিনিশিয়ান রাজকুমারী ইউরোপার প্রেমে পড়েন। ফিনিশিয় রাজার গোশালায় অনেক গরু ছিল। জুপিটার এই গোশালায় একটি বৃষের রূপ ধরে আশ্রয় নিলেন। তার কনকদ্যুতি সম্পন্ন শিংজোড়া ও দুগ্ধ শুভ্র গাত্রবর্ণে মুগ্ধ হলেন ইউরোপা। একদিন তাঁর ইচ্ছা হল আশ্চর্য সুন্দর ওই বৃষের পিঠে চেপে বেড়াতে। রাজকুমারী সেই বৃষের পিঠে চেপে বসতেই বৃষরূপী জুপিটার শুরু করলেন দৌড়। একেবারে অন্য দেশে এনে ফেললেন তিনি ইউরোপাকে। গ্রীকদের মতে এই যে বৃষরূপ ধরেছিলেন জুপিটার, সেই রূপেই এই তারাগুলী সাজানো রয়েছে বৃষরাশি তে। 

লিও বা সিংহ রাশি - গ্রীক পুরাণের দুরন্ত সিংহ লিও চাঁদে বাস করত। একদিন খিদের জ্বালায় সে চাঁদের দেবী সেলিনের রথের একটা ঘোড়া কে খেয়ে ফেলল। সেলিন রেগে গিয়ে লিও কে চাঁদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। লিও তখন পৃথিবীতে এসে পড়ে। পৃথিবীর মানুষদের মেরে মেরে খেতে শুরু করে সে। দেবতারা হারকিউলিস কে পাঠান লিও কে মেরে ফেলার জন্য। তিরিশ দিন ধরে যুদ্ধ করে লিও কে মারতে সক্ষম হন হারকিউলিস। জিউস হারকিউলিসের বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাকে আকাশে স্থাপন করেন। আর তার কিছুটা পশ্চিমে স্থাপন করা হয় মৃত সিংহ টিকে। 

ধনুরাশি - ধনুরাশি হচ্ছে একজন সেন্টর (Centaur) । মানে আধা ঘোড়া আধা মানুষ (অশ্বানর) জাতীয় বিচিত্র জীব। এরা ঘোড়ার মতোই শক্তিশালী ও মানুষের মতো মেধাসম্পন্ন জীব। আসলে পৌরাণিক কাহিনী গুলোতে কল্পনার তো কোনো বাধা নিষেধ থাকে না, সে যে দেশেরই হোকনা কেন। গ্রীক পুরাণ অনুসারে এই অশ্বানরদের রাজা ছিলেন চিরন। অত্যন্ত জ্ঞানী, বিচক্ষণ ও দয়ালু ছিলেন তিনি। গ্রীক বীর হারকিউলিস একবার চিরনের পুত্র ফোলোস কে খুব বড় বিপদের হাত থেকে উদ্ধার করেন। চিরন খুব খুশী হয়েছিলেন এই ঘটনায়। তাই হারকিউলিস কে ভয়ংকর কাঁকড়াবিছে স্করপিয়নের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য, হারকিউলিসের দক্ষিণে স্করপিয়নের ঠিক পেছনেই স্থাপন করেছিলেন এক ধনুর্ধারী বীরকে। আকাশের দক্ষিণ দিকে বৃশ্চিকের লেজের পরেই পূর্ব দিকে ধনুরাশির অবস্থান।  

       তারকা সংক্রান্ত প্রচলিত কাহিনী গুলির মধ্যে কিছু কাহিনী এখানে তুলে ধরতে চেষ্টা করলাম। এ গল্প গুলি প্রায় সকলেই জানেন। আবার কিছু মানুষ হয়তো জানেন না। তারকা জগৎ নিয়ে আজও মানুষের মনে কত কৌতুহল, সংস্কার, কত অলীক ধারণা জেগে রয়েছে। যেমন একজনের কাছে শুনেছিলাম, স্বাতী নক্ষত্রের জল ঝিনুকের মধ্যে পড়লে, সেই ঝিনুকে মুক্তো জন্মায়। আবার আকাশ থেকে তারা খসে কোনো সাপের মাথায় পড়লে, সেই সাপের মাথায় মণি জন্মায়। এসব অমূলক ধারণা। তবু মানুষ এসব ভাবতে ভালবাসে। আমাদের কোনো প্রিয় মানুষ মারা গেলে আমরা ভাবতে ভালবাসি, সে আকাশের তারা হয়ে গিয়েছে। অনেক দূরের থেকে সে দেখতে পাচ্ছে আমাদের। তাই কার্তিক মাসে আকাশ প্রদীপ জ্বালানর রীতি আজও প্রচলিত সারা কার্তিক মাস ধরে আমাদের হারিয়ে যাওয়া মানুষ গুলির জন্য প্রদীপ জ্বালি আমরা, যাতে তারা তাদের ফেলে যাওয়া পুরোনো আবাসভূমি কে চিনে নিতে পারে। হারিয়ে ফেলার বেদনায় সচল হয় কবির কলম - 

বুকের ভেতর কান্না পুকুর লুকিয়ে আছে, 

সন্ধ্যা বেলায় পাইনি দেখা সাঁঝ তারা টির। 

লক্ষ কোটি তারার মেলায় কোথায় সে যে - 

হারিয়ে গেছে কেমন করে, পাইনি খুঁজে ।

রাতটি নামার একটু আগে আলতো সাঁঝে, 

রোজ জ্বেলে দিই প্রদীপখানি তুলসী তলায়। 

তার আলোতে পথটা চিনে আসবে নেমে - 

যে গেছে সেই তারার দেশে আমায় ছেড়ে। 

ভোরবেলাতে শুকতারাটির টিপ কপালে 

পরিয়ে দিয়ে বলবে তোমায় ভালবাসি, 

তাইতো আমি সাঁঝতারাতে সাঁঝের বেলায় 

রোজ তোমাকে এমনি ভাবেই দেখতে আসি। 

বুকের ভেতর কান্না পুকুর উথলে ওঠে - 

আজ আমি সেই সাঁঝতারাটির পাইনি দেখা, 

আকাশ পটে হাজার তারার আখর দিয়ে 

তাই লিখে যাই নামটি আমার ভালবাসার 


সবশেষে বলি, আকাশ ভরা সূর্য তারার মাঝে আমি এক পরমাণু সদৃশ প্রাণ, লিখে গেলাম আমার ভালবাসার কথা। আমার দুটি চোখের তারায় প্রতিফলিত হয় অনেক দূরের কোনো নক্ষত্রের কিরণ। সেও বলে আমাকে- ভালোবাসি তো, ভালোবাসি তোমায়। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy