arijit bhattacharya

Horror Inspirational

3.1  

arijit bhattacharya

Horror Inspirational

স্যাটানিজম

স্যাটানিজম

5 mins
1.1K



খুব ভোরবেলা য় আজ ঘুম ভেঙে গেল সুলগ্নার। খানিকক্ষণ এপাশ ওপাশ করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো সে। ঘড়িতেদেখলো সবে সাড়ে চারটে। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো তার বর দিব্য গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কাল অনেক রাত পর্যন্ত কম্পিউটারে কি সব করছিল। আজকাল দিব্যর কিছু হাবভাব কেমন যেন রহস্যময় লাগে সুলগ্নার। কাল যেন দিব্য খুব চিন্তায় ছিলো। অফিসে কিছু হোলো কিনা কে জানে ,আজ একবার জিজ্ঞেস করে দেখবে সে।এইসব ভাবতে ভাবতে সুলগ্না বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। ভোরের ঠান্ডা হাওয়া তার মনপ্রাণ জুড়িয়ে দিলো। হঠাৎ তার চোখ গেল সামনের তিনতলা সাদা বাড়িটার দিকে।


সাদা বাড়িটা অনেকদিন ধরেই নির্জন পড়ে আছে।সুলগ্না শুনেছে যে এই বাড়ি রায়দের বাড়ি। এই বাড়ির রায়দের দুই ছেলে বাবুলাল রায় ও তার ভাই সোহনলাল রায় তিন বছর ধরে ইংল্যান্ডের বাসিন্দা। তারা তিন মাস অন্তর এই বাড়িতে ঘুরতে আসেন তাদের স্ত্রীদের নিয়ে। ঘটনাচক্রে এদের স্ত্রী রাও একে অপরের নিজের বোন। এরা ইংল্যান্ডে চলে যাবার পর এই বাড়িতে তাদের মা মানে রায়গিন্নী একাই থাকতেন।কিন্তু গত বছর তিনি মারা যাবার পর নিঃসঙ্গ বাড়িটা ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। হু হু মুক্ত বাতাসের মধ্যে তীব্রভাবে হাহাকার করছে।মাঝে মাঝে বাবু আর সোহন বেড়াতে আসে।


দিব্য আর সুলগ্নার বিয়ে হয়েছে এক বছর আগে। দিব্য সল্টলেকের নামী তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিতে কাজ করে। বছর সাতাশের তরুণ দিব্যর সাথে চব্বিশ বছর বয়সী সুলগ্নার পরিচয় হয়েছিল ফেসবুকে। ফেসবুকের ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের প্রেম স্থান করে নিয়েছিল বাস্তব দুনিয়াতেও। একসাথে পার্কে দেখা করা,বসন্তের বিকালে একে অপরকে অন্তরঙ্গ অনুভূতির কথা শেয়ার করা-ধীরে ধীরে তাদের ফেসবুক প্রেম পরিণতি পেয়েছিল বিয়ের পিঁড়িতে।এক সময় দিব্যর মন প্রাণ সবকিছু জুড়ে ছিল সুলগ্না।সুলগ্নার কথায় দিব্যর হৃদয়ে বাজত প্রেমের জলতরঙ্গ।দিব্যর ভালোবাসার দুনিয়া জুড়ে শুধুই সুলগ্না।যখন রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফিরত দিব্য আর দেখত ওপরের ব্যালকনিতে ভেজা খোলা 'অন্ধকারে বিদিশার নিশা'র মতো চুল নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সুলগ্না,তখন শরীর মনে শিহরণ খেলে যেত দিব্যর। বাড়িতে ফিরে সোহাগে সোহাগে অস্থির করে তুলত সুলগ্নাকে। সুলগ্নার ঘাড়ে কাঁধে এঁকে দিত চুম্বন,গভীর আলিঙ্গনে নিজের ভালোবাসার হৃদস্পন্দনকে অনুভব করত। কতোবার বর্ষার দিনে সুলগ্নার সাথে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজেচে।কিন্তু,গত দু মাস ধরে দিব্যর কি যে হয়েছে,কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। 


এখন আশ্বিন মাস। সারা আকাশ বাতাসে বাজছে আগমনীর সুর। মা আসছেন।তাদের হানিমুনে নৈনিতাল যাবার কথা ছিল,দিব্যটা তাও ক্যান্সেল করে দিল। এদিকে দিব্যর যে কি হয়েছে,সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে।মাঝে মাঝে অস্থিরভাবে কম্পিউটারে নেটে কি সব যেন ঘাঁটে,সবসময় গভীর চিন্তায় মগ্ন।প্রথম প্রথম সুলগ্না ভাবত অফিসের কোনো প্রজেক্ট হবে,কিন্তু পরে একদিন কৌতুহলবশত নিজেই দেখে ফেলে। আরে এ তো ডার্ক ফ্যান্টাসি,মানে ব্ল্যাক ম্যাজিক,উইচক্র্যাফ্ট,তন্ত্র এইসব। 


পুবাকাশ অরুণ রঙে রাঙিয়ে উঠছে। সেইদিকে তাকিয়ে বিজ্ঞানীর ছাত্রী সুলগ্না ভাবে যত্তসব গাঁজাখুরি। ছোটবেলা থেকেই সে নাস্তিক,যদিও তার স্বামী আস্তিক। তার প্রতিবেশীরা তো পরম আস্তিক। সুলগ্না ভাবে, এরকমটা বাস্তবে আবার হয় নাকি!ঈশ্বরবাদীদের মতো শয়তানবাদীরাও দুই প্রকার- আস্তিক আর নাস্তিক। আস্তিক শয়তানবাদীরা যতোটা ভয়ঙ্কর,নাস্তিক শয়তানবাদীরা ততো নাকি ভয়ঙ্কর নয়। তাও শয়তানের অনুগামী মানেই অশুভের উপাসক।

আচ্ছা দিব্য পাগল হয়ে যাচ্ছে না তো!


কিন্তু সামনের সাদা বাড়িটাও যেন দিন দিন কেমন রহস্যময় হয়ে উঠছে!এখনও বাড়িটার কিচেন যেদিকে শুনেছে সেই জানলা দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। অথচ বাড়িটাতে কেউ নেই। মাঝে মাঝে রাতেই সুলগ্না শুনতে পায় বাড়িটা থেকে ভেসে আসছে বাসন কোচনের শব্দ,সুন্দরীর পায়ের পায়েলের টুংটাং শব্দ। আর কি!ভয় পেয়ে যায় সুলগ্না।


"স্যাটানিজম(Satanism) কথাটার মানে জান!

"দিব্যর গলার আওয়াজে চমকে ওঠে সুলগ্না। "স্যাটার্ন কথাটা ওল্ড টেস্টামেন্টে রয়েছে। আর কথাটার মানে শয়তান। স্যাটানিজম মানে আমি যতোটা জানি,যারা শয়তানকে সৃষ্টির পরমকর্তা হিসাবে পূজা করে। তারা সাধারণত কালাজাদুতে পারদর্শী হয়,ডাকিনীবিদ্যায় বিশ্বাস করে এবং নরবলি প্রধানত শিশুবলি এদের প্রিয়।যারা ঈশ্বরভক্ত বা আধ্যাত্মিক মার্গে বিশ্বাসী ,তাদের যেমন অনেক গোষ্ঠী রয়েছে,তেমন স্যাটানিস্ট বা শয়তানের উপাসকরাও অনেক গোষ্ঠীতে বিভক্ত।সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হল সাধারণ মানুষ যেমন ঈশ্বরের বিষয়ে আস্তিক বা নাস্তিক হয়ে থাকেন,তেমন এই স্যাটানিস্টরাও আস্তিক বা নাস্তিক হন। যারা আস্তিক ,তাদের কাছে শয়তান পরম শক্তিশালী এবং সারা বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ও পালক। কিন্তু যারা নাস্তিক ,তাদের কাছে শয়তান হল মানব চরিত্রের কিছু দিকের সমাহার।মূলতঃ তমো গুণ।" "এনাফ জানো।পারলে প্যারাডাইজ লস্ট টা পড়ে দেখো। "বলে উঠল দিব্য।


"আর সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হল এই স্যাটানিস্টরা যেমন ইউরোপে ছিল,তেমন ছিল এশিয়াতে,তেমন ছিল আফ্রিকাতে। ছিল সরি আছে। আরেকটা টপ সিক্রেট জানিয়ে রাখি। ইণ্ডিয়াতে তো শয়তান উপাসক উপাসিকারা আছেই। এদের দেখা তুমি পেতে পার এই বেডরুম থেকে জাস্ট দেড়শো ফুট দূরত্বে। হ্যাঁ,রায়বাড়িতে!"এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামল দিব্য। চমকে উঠল সুলগ্না।


দিব্যর মুখে এই কথা শুনে চমকে উঠল সুলগ্না। দিব্যকে অনেকদিন পর আজ যথেষ্ট তরতাজা লাগছে । সুলগ্নার মাথার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে দিব্য বলল,"এই শয়তানের উপাসকরা বিশ্বাস করে যে,এরা শয়তানের উপাসনা করে অলৌকিক শক্তির অধিকারী বা অধিকারিণী হবে।যদিও তাদের ভুল ধারণা,কিন্তু এসব করতে গিয়ে তারা যথেষ্ট ডেসপারেট। যথেষ্ট বিপজ্জনক হয়ে যায়।"দিব্যর বুকে মুখ ঘষে সুলগ্না বলল আমার তো এসব শুনে রীতিমতো ভয় করছে ।


যথারীতি পরের দিন সকালে দিব্য লাল বাজারে খবর দিল। সন্ধ্যাবেলা পুলিশ আসল বাড়িটাকে রেড করতে।

রাতের আঁধারে পুলিশ ঢুকল বাড়িটায়।সাথে দিব্য আর সুলগ্না। ঢোকার দরজা ভেঙে পুলিশ যা দেখল জাস্ট স্তম্ভিত হয়ে গেল। সামনের ঘরে অদ্ভূত এক পাথরের মূর্তি। পাথরটা কি সেটাও অচেনা,আর মূর্তিটাও অদ্ভূত। পায়ের গোড়ালির বদলে ক্ষুর, শরীরটা পুরোপুরি মানুষের মতো হলেও মুখটা ছাগলের। আর অদ্ভূত বিষয় মুখে লাগা রয়েছে তাজা রক্ত। দিব্য বুঝতে পারল,এই মূর্তি আর কারোর নয়,স্বয়ং শয়তানের। কিন্তু চোখদুটি এমনভাবে জ্বলছে যে,চোখদুটি জীবন্ত। তা দিয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে সারা বিশ্বের আদিম ক্রূর লালসা এবং হিংস্রতা!সারা ঘর জুড়ে ধোঁয়া। অদ্ভূত এক তান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপ চলছে।ঘরের মাঝখানে যজ্ঞবেদী ও তার সামনে রাখা এক রক্ততিলক মাখা নরমুণ্ড। মাথা থেকে পা অবধি আলখাল্লার মতো এক পোষাক পরে বহু লোক জড়ো হয়েছে। এবার চমকে উঠল দিব্য আর সুলগ্না দুজনই। এই অনুষ্ঠানের পুরোধা স্বয়ং লন্ডননিবাসী বাবুলাল রায়। বাবুদাকে আগে শ্যুট বুট পরা চেহারায় অনেকবার দেখেছে দিব্য,কিন্তু এরকম লাল তিলক পরা,গরদের পাঞ্জাবী গায়ে মাতাল অবস্থায় নয়। আর আছে একজন তান্ত্রিক ,যে বলি দিতে চলেছে এক কুমারী নগ্ন যুবতীকে।ব্যাপারটা বুঝতে পারল দিব্য,নির্দিষ্ট লগ্নে জন্মানো কুমারীর রক্ত দিয়ে শয়তানের আরাধনা,আর তাতেই তুষ্ট হয়ে ভক্তের অভিলাষা পূরণ করবেন শয়তান। নাস্তিক সুলগ্নার মনে তখন প্রচণ্ড আতঙ্ক,স্যাটানিজমের বিভীষিকা সুলগ্নার মনকে করে তুলল আস্তিক,সুলগ্নার মতো নাস্তিক মেয়েও ডাকতে শুরু করল পরম করুণাময় ঈশ্বরকে।


 সত্যি বিশ্বপিতা ঈশ্বরের পরম শক্তির সামনে কোনো শক্তিই টেকে না। যাই হোক,পুলিশ এসে সব পণ্ড করে। মেয়েটাকে হোমে পাঠানো হয়। বাবুলাল এবং অন্যান্য সম্পন্ন অতিথি যাদের কেউ নামী কলেজের প্রফেসর,কেউ ইঞ্জিনিয়ার,কেউ বা আইনজীবী তাদের গ্রেফতার করে। পরে জেরার মুখে বাবুলাল জানায় এটাই তাদের বংশের পরম্পরা,তার ঠাকুরদা মোহনলাল ইউরোপে গিয়ে এই থিস্টিক স্যাটানিজমে দীক্ষিত হয়েছিলেন।


অবশেষে জিতল বিজ্ঞানমনস্কতা,জিতল সাধারণ মানুষের কৌতুহল ও সাহস। হার মানল কুসংস্কার।


রাতে বেডরুমে স্বল্পবসনা সুলগ্নার অধর চুম্বন করে দিব্য জানায় পরের দিনই ফ্লাইটে তারা গ্যাংটক যাচ্ছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror