Rima Goswami

Abstract Tragedy

4.0  

Rima Goswami

Abstract Tragedy

স্ত্রী তোমার সতীত্বর সংজ্ঞা কি

স্ত্রী তোমার সতীত্বর সংজ্ঞা কি

5 mins
195



কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র বলেছিলেন, যেদিন নারী হয়ে যাবে দুর্লভ, সেদিনই সমাজ অনুধাবন করতে পারবে নারীর যথার্থ মূল্য। চিরকাল সমাজ নারীর মূল্য নির্ধারণ করে তার সেবাপরায়ণায়, স্নেশীলতায়, সতীত্বে এবং সহনশীলতায়। কেউ তার মনের খবর রাখেনি । কথাশিল্পী মূলত মানুষের মনুষ্যত্বকেই বড় করে দেখেছেন। এ জন্য নারীর জীবনের স্বাভাবিক সুখ-দুঃখকে অপরিসীম সহানুভূতি ও দরদে রাঙিয়ে তুলেছেন। সমাজের মানদণ্ডে যেসব নারী চরিত্রহীন, তাদের মধ্যে তিনি খুঁজে পেয়েছেন মনুষ্যত্ব । তাইতো দেবদাসের পার্বতীর সাথে চন্দ্রমুখীর সামজিক পার্থক্যকে তিনি গণ্য করেননি । পরীনিতাতে আন্নাকালীর কালো রঙের মধ্যেও তিনি সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছেন । সংস্কৃত নৃ শব্দটি থেকে নারী শব্দটির উৎপত্তি ।  ঋতুমতী হওয়াকেই নারীত্বের প্রারম্ভ বলা হয় ।


 অর্থাৎ শারীরিকভাবে মেয়েটির জন্ম দানের সক্ষমতাই সদ্যকিশোরীটিকে নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয় তথাকথিত নারীত্ব তো সমাজ দ্বারা নির্মিত, যা শারীরিক গঠন ও সামাজিক উভয়ভাবেই নির্ধারিত হয়। নারীর বর্ণনার সাথে কি ভাবে যেন জুড়ে গেছে কোমলতা, নম্রতা, সমানুভূতি,সহনশীলতা সংবেদনশীলতা এই শব্দ গুলি ।নারীত্বের পবিপরীতে অবস্থান করছে পুরুষত্ব।পুরুষ এর অপর নাম দমন । পুরুষ যেন অনায়াসে স্ত্রীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেই পারে ! যৌন বৈষম্য যুগে যুগে এক চরম অভিশাপ হয়ে নেমে এসেছে সমাজের বুকে ।


তারপর নিজ অস্তিত্বের রক্ষায় নারীর মধ্যেই জন্ম নিয়েছে নারীবাদ । যার প্রাথমিক উদ্দেশ্যে সমাজে নারীর সমতা অর্জন, বিশেষ করে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের যৌক্তিকতার ওপর গুরুত্ব আরোপ। নারীবাদ দাবী করে: নারী পুরুষের তুলনায় একদিকে সক্ষম অন্যদিকে সামাজিক অবদানের দিক দিয়ে পুরুষ থেকে কম নয়। নারী নিজ দেহের উপর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য একদিকে কাজ করে । আবার নারীবাদ বা ফেমিনিজম অপরদিকে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ ও পারিবারিক নিগ্রহ থেকে নারী ও বালিকাদের রক্ষা করার জন্য সচেষ্ট থাকে। নারীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার জন্য বিভিন্ন কদর্য ভাষায় তাকে আক্রমণ করা হয় । যার মধ্যে মাগী শব্দটি বহুল প্রচলিত । তবে আদতেও কি মাগী একটি অপশব্দ ?


সুকুমার সেনের ব্যুৎপত্তি-সিদ্ধার্থে শব্দটি মার্গিতা থেকে, যার অর্থ মাগিবার জিনিস। সংস্কৃত মাতৃগাম থেকে পালি ভাষায় এসেছে মাতুগাম, সেই থেকে প্রাকৃতে মাউগ্গাম, তা থেকে মাউগ, মাগু এবং মাগু থেকে এসেছে মাগী । মৈথিলিতে মৌগী বা মাগু দুইয়েরই অর্থ নারী। অতীতের বাংলা চলচ্চিত্রে মাগি শব্দটি আদুরে ডাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে! বলাবাহুল্য, মাগি সন্বোধন তখন ছিলো অত্যন্ত আদরের। এখনো কিছু কিছু অঞ্চলে মাগি বলতে নারী, মহিলা বা স্ত্রী লিঙ্গদের বোঝানো হয়।


পতিতা, বারাঙ্গনা, দেহপসারিণী, দেহপোজীবিনী, রক্ষিতা, বারবনিতা,গণিকা এ সকল নামের আঙ্গিকে জড়িয়ে আছে আঁসটে এক রহস্য । সকালে ভালো মানুষ সেজে যারা রাতের অন্ধকারে টুক করে অন্য এক শরীরকে টাকার বিনিময়ে কিছুক্ষনের জন্য কিনে নেয় তারা হলো বাবু বা খদ্দের আর যারা শরীর বিক্রী করে তাদের কাজটা হলো বেশ্যাবৃত্তি । বেশ্যা ও বেশ্যাবৃত্তি পৃথিবীর সকল দেশের ইতিহাসের অবিচ্ছদ্য অংশ এবং এই ইতিহাস করুণ একটি অধ্যায় ও আদিমতম পেশা । সবসময়েই দেখা গেছে যে, সমাজের উচ্চশ্রেনী থেকে নিম্নশ্রেনী পর্যন্ত বেশ্যা নামের নারীদের নিজেদের বাসনা চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করেছে এবং তাদের সমাজ বৃত্তের বাইরেই রেখেছে চিরকাল। সমাজের কাছে তাদের প্রয়োজনটা কিন্তু ফুরিয়ে যায়নি কোনদিনই , ফলে ব্যাধিগ্রস্থ সমাজের সামান্তরালে চলছে ‘বেশ্যালয়’ বলে আরেক অন্ধকূপ সমাজ। আমরা মনে করি এখানে যারা বাস করে তারা নষ্ট মেয়েমানুষ । তবুও বলবো বেশ্যালয় আমদের দরকার বলেই না আছে ? যে সকল নারীরা পেশা হিসেবে নিজের শরীরকে অন্যের যৌন লিপ্সা মেটানোর জন্য দান করেন অথবা অর্থের বিনিময়ে অন্যকে যৌন তৃপ্তি দেন আমাদের সমাজের ভাষায় তারা ‘বেশ্যা’। আমরা একটু অতীতে তাকালেই দেখতে পাই শরীর ভোগের বিনিময়ে নারীকে ভরণ-পোষণ, আশ্রয় দিলেই হত, বিয়ে না করলেও হত যাদেরকে দাসী বা যৌনদাসী বলা হত। এই বেশ্যাদের গর্ভে সন্তানও হত, তারা অবাঞ্ছিত হিসেবে পরিচিত হত। রাজা-বাদশাদের হারেমে অসংখ্য বেশ্যারা যৌথভাবেই থাকত এবং রাজা-রাজপুত্রদের ইচ্ছে মত তারা যৌনকাজে ব্যবহৃত হত। তার পরেও পুরুষ সমাজ ধোয়া তুলসী পাতা সাজার জন্য বেশ্যাদের দিকেই সরাসরি আঙ্গুল তোলে । আর এক সমাজিক মোড়কের মধ্যে শোষণ হলো বিয়ে ।


হিন্দু বিয়ের যে রীতি এখন সমাজে প্রচলিত সেটা হল ‘প্রজাপতেয়’ বিবাহ। এই বিয়ের একটি অংশ হল কন্যাদান; মেয়ের বাবা পাত্রের হাতে মেয়েকে দান করেন। কন্যা কি দান করা যায় আদতেও ? সে কি কোন গাভী ! কোন বস্তু ! যাকে দান করে দেওয়া সম্ভব ? কই পাত্রকে তো দান করেনা তার পিতা ? অথচ বিবাহে দুজনেই একে অপরকে মন্ত্র উচ্চারনের মাধ্যমে হৃদয় দান করে ।


''যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব\" অর্থাৎ 'আমার হৃদয় তোমার হোক, তোমার হৃদয় আমার হোক।'

ইসলাম ধর্মের বিয়ে পদ্ধতিতে রয়েছে কাবিন নামা যেখানে বিয়ে করার সময় পুরুষ তার সাধ্য অনুযায়ী নারীকে অর্থ দেবার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়। নারী কি দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়? অথবা কিসের বিনিময়ে পুরুষ এই অর্থ দেয় ? হ্যাঁ, শরীরের বিনিময়ে। বিয়ের মধ্য দিয়ে নারী তার শরীরকে পুরুষকে দিবে তার সকল যৌন বাসনা মেটাতে, সন্তান জন্ম দিতে, গৃহের কাজ করতে বিনিময়ে পুরুষ তাকে দিবে ভরণ-পোষণ । বিয়ে নামের সামাজিক চুক্তি হয় দুই পক্ষের মধ্যে যেখানে উভয়েই কোন না কোন প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। বিয়ে নামক এই সামজিক চুক্তিতে নারীর প্রধান প্রতিশ্রুতি কি থাকে? তার শরীর শুধুমাত্র তার স্বামীই ভোগ করবেন আর কেউ নয়। অন্য কাউকে যদি নারী এই অধিকার দেয় তবে তার জুটবে বেশ্যা নাম; কিন্তু পুরুষ ইচ্ছা করলে যদি বেশ্যালয়ে যান বা অন্য নারীতে লিপ্ত হন তাকে কেউ বেশ্যা বলবে না। সম্মান, মানবিক মর্যাদা, স্বাধীনতা, অধিকার বিবেচনা করলে গণিকালয় আর গৃহস্থ নারীদের পার্থক্য খুব সংকীর্ণ। ধনী-দরিদ্র-মধ্যবিত্ত যাই হোক না কেন এই সমাজে একটি মেয়ে কৈশোর পেরোতেই তার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। মেয়ের মা-বাবা আর সমাজ দেখে নেয় ছেলের যোগ্যতা কি? কেমন চাকরি করে? কত টাকা আয় করে? বাড়ি-গাড়ি আছে কি না? কিন্তু একবার ভেবেছেন মেয়ের যোগ্যতা কি? একটি বেকার মেয়েকে নিয়ে কিন্তু ছেলে পক্ষ প্রশ্ন করছে না যে মেয়ের যোগ্যতা কি? মেয়েদের যোগ্যতার দরকার নেই কারণ তার আসল যোগ্যতা তার শরীর। তার একটা সুন্দর শরীর আছে কিনা, সেটাই বিবেচ্য এই সমাজে। টাকা তো ছেলের আছেই, তার দরকার নারী, নারীর শরীর। বিনিময়টা কিসের হচ্ছে?মেয়েটাকে ভাত কাপড়ের বিনিময়ে তার শরীর ও শ্রম দিতে হবে । সমাজ যাদের বেশ্যা বলে গালি দিচ্ছে তাদের থেকে এই বিয়ের মোড়কে যে বিনিময় প্রথা তা খুব একটা আলাদা নয় ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract