STORYMIRROR

Alpana Ganguly

Fantasy

4.5  

Alpana Ganguly

Fantasy

সোফাটা কার?

সোফাটা কার?

5 mins
401



শ্রীকান্তদের বাড়ী বনেদী একান্নবর্তী বাড়ী। ওদের বৈঠকখানায় চৌকীর ওপর ফরাস পাতা, আর গোটাকয়েক তাকিয়া এদিক ওদিক ছড়ানো থাকে, তাতে ঠেস দিয়ে বসে যে আড্ডা হয় তার মতো সুখ আর কোথাও নেই।

ভেতরের টানা শ্বেত পাথরের টাইলস বসানো বারান্দায় অনুরূপ একটি চৌকী আছে তাতে দুপুর বেলায় মা বড়মা, মেজমা, ছোটমার তাসের আসর বসে।‌সন্ধ্যেতে সেটি ছোটদের দখলে। পড়াশোনা , লুডো খেলা সব হয়।

এই বাড়ীতে সোফায় বসার চল নেই। দাদু বলেন ওসব সাহেবীআনা।

শ্রীকান্ত তার এক বান্ধবী ঈশিকার বাড়ীতে গিয়ে তাদের হালফ্যাশনে র সোফায় বসতে গিয়ে প্রায় তলিয়ে গেল নরম গদির ভেতর।‌ওঃ কী যে আরাম তা বলার নয়।‌

শ্রীকান্ত ক্লাস টেনে পড়ে। ও তো আজকালকার ছেলে, ওর ইচ্ছে করে একটু আধুনিক হতে। ওদের বাড়ীর সব কিছুই পুরোনো ধাঁচের। কড়িবরগার ছাদ, বিশাল বিশাল ঘর, মাটিতে আসন পেতে খাবার ব্যবস্থা। আর নাম গুলোও বস্তা পচা। শ্রীকান্ত! সেদিন ঈশিকা তো হেসেই ফেললো। দূর মধ্য যুগের নাম। এখনকার ছেলেদের দেখ্ ঋভু, রেহান, বিভান, আকাশ, সহজ।‌আর তার মাঝখানে তুই শ্রীকান্ত। ক্যাবলা কান্ত‌একটা।

শ্রীকান্ত ভাবলো বড় হয়ে না হয় নামটা পালটে নেবে, কিন্তু এখন যে প্রেস্টিজ যায় যায়। কেউ যদি বাড়ীতে এসে দেখে যে চৌকীতে তাকিয়ায়‌ ঠেসান দিয়ে বসার ব্যবস্থা তাহলে নিশ্চিত খিল্লি করবে ওকে নিয়ে।

এই খিল্লি করা ব্যপারটা ও হালে শিখেছে। বাড়ীতে এই শব্দ কেউ ব্যবহার করে না।এটা আধুনিক ‌শব্দ।

যাইহোক শ্রীকান্ত ওরফে কান্ত ওর‌ বাবাকে বললো জন্মদিনে‌একটা সোফা কিনে দিতে।

টাকার তো অভাব নেই, অভাব রুচির। মান্ধাতার আমলের ধ্যান ধারণা আঁকড়ে আছে সব।

দাদু শুনলেই আপত্তি করবেন। অথচ আদরের পুত্র কান্তর আবদার ফেলেন কী করে প্রশান্ত?

অফিসের এক সহকর্মীর কাছে মনের কথা বলতে তিনি নিয়ে গেলেন এক দোকানে। সেখানে অল্প ব্যবহৃত দামী জিনিসপত্র জলের দামে বিক্রি হয়।

এক সাহেব একটি সোফা বিক্রি করে দেশে চলে গেছে। সেইরকম সোফা, যেখানে বসলে গদিতে ডুবে যেতে হয়। প্রশান্তর খুব পছন্দ হলো। তিনি কিনেই ফেললেন। দুরুদুরু বক্ষে বাবাকে এসে মিথ্যে কথা বললেন,"বাবা আমার‌এক বন্ধু বিদেশে চলে যাচ্ছে। আসবাব পত্র সব বিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বন্ধুদের।‌তা আমাকে একটি সোফা দিয়েছে। না নিলে অসম্মান করা হয়। তাই নেবো বলেছি।"

"তা রাখা হবে কোথায়?"

"ওই ছেলে‌দের ঘরের‌ এক পাশে রাখবো। ওদের‌বন্ধু বান্ধব আসে, বসবে। আমাদের তো দরকার‌ নেই।"

গম্ভীর হয়ে শ্রীকান্তর দাদু বললেন "হুম্।"

তিন ভাইএর তিন ছেলে একঘরে থাকে। তিনটি খাট, তিনটি চেয়ার টেবিল, তিনটি আলমারি রেখেও অনেকটা জায়গা আছে। সোফা আসার পর কান্ত খুব খুশী।‌বোনেরা রেগে গেলো।‌তাদের‌ ঘরেও সোফা চাই।

কান্তরা তিন ভাই । কান্ত, নন্দ আর বাবলু ঠিক করলো রাতে পালা করেওই বিশাল‌ নরম গদী ওয়ালা সোফায়‌ ঘুমোবে। প্রথম দিন কান্ত শুলো।‌শুয়েই চোখ বুজে এলো‌ তার‌ আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কী সব স্বপ্ন দেখতে লাগল।‌দেখল এক সাহেব ও এক মেমসাহেব তার পাশে বসে আছে। কত কি বলছে। ঝগড়া করার‌ মত‌ মনে হচ্ছে।

মেমসাহেবের‌ মুখটা খুব চেনা মনে হলো‌। কান্তর কেমন‌একটা অস্বস্তি হতে লাগলো। ও সোফা ছেড়ে খাটে উঠে গেলো।

ওর পরে বাবলু শুলো। কান্তর মতো ও‌ ঘুমিয়ে পড়লো।‌ স্বপ্ন‌ দেখলো যে ঝগড়া করতে করতে মেমসাহেব এক সাহেবকে মারলো‌ এক বিশাল চড়। বাবলু ভয় পেয়ে নিজের খাটে চলে গেলো।

নন্দর ঘুম আসেনি। যেই দেখলো বাবলু উঠে গেছে অমনি

ও গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো। স্বপ্ন দেখলো , এক সাহেব একটা ছুরি নিয়ে মেমসাহেবে পেটে ঢুকিয়ে দিল। গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে দেখে নন্দ চিৎকার করে উঠে পড়লো। তিনজনে ঘুম ভেঙে গেলে‌ওরা নিজে নিজের স্বপ্নের কথা বললো।‌অবাক কান্ড যে তিন জনের স্বপ্ন পরপর যোগ করলে‌ একটাই গল্প হয়। কী করে হলো‌ এটা?

প্রশান্ত শুনে বললেন, "সোফা তো বসার জন্যে। শোবার‌ জন্যে নয়।

শুয়ে অস্বস্তি হয়েছে , তাই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছে। স্বপ্ন দেখেছো।"

হতে পারে তাই। কিন্তু তিন জনে আলাদা স্বপ্ন দেখলো আর সেটা এক গল্প‌হলো কী ভাবে?

দিনের বেলা সোফায় বসলে মনে হয় কে যেন ঠেলা মেরে সরিয়ে দিচ্ছে। তিন জনের‌এক অনুভূতি।

দাদারা স্কুলে গেলে বোনেরা এসে সোফায় বসলো। ওদেরো মনে‌ হলো কে যেন ঠেলছে। মায়েদের জানালে একদিন মায়েরাও বসলেন। বড়মা বললেন কে যেন ঠেলছে। শুনে মেজমা আর ছোটমা এমন ভয় পেলেন যে‌ ওনারা আর বসতে সাহস পেলেন না।

বাবলু বললো,"কান্ত‌ এটাতে ভূত আছে, এটা এঘর‌ থেকে বিদায় করতে হবে। কান্তর সোফাটা এত‌ই পছন্দ হয়েছে যে ও তাতে সায়‌ দিলনা। তাছাড়া ঈশিকা কে তো দেখানোই হলোনা সোফাটা। ওদের ঘরেও যে‌এটা নরম গদির সোফা আছে, তা তো জানাতে হবে ঈশিকাকে ।

কান্তর জন্মদিনে ওর বন্ধুরা এসেছে। ওদের বাড়ীতে কেক কাটার‌ চল নেই,এটা কান্তর প্রেস্টিজে লাগে। মাটিতে বসিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে‌ শঙ্খে ফু দিয়ে পায়েস খাওয়ানো হয়। তার আগে বন্ধুদের ঘটা করে নিজের ঘরে নিয়ে এলো‌ কান্ত। ঈশিকাকে সোফায় বসালো কান্ত। বসেই ঈশিকা বললো‌"ওয়াও।"

ব্যস জীবন সার্থক হয়ে গেলো কান্তর।ও ইশিকাকে তার আঁকার খাতা দেখতে দিলো।‌ঈশিকা একমনে ছবি দেখছে। অন্যরা গল্প করছে।

কান্তর বোন সৌদামিনী সবাইকে খেতে ডাকতে এলো।সবাই তো খাবার কথা শুনে চলে গেলো, শুধু‌ ঈশিকা খাতা হাতে নিয়ে চুপ করে বসে আছে। কান্ত দেখে ঈশিকা ঘুমিয়ে পড়েছে।

"ঈশিকা ওঠ্, খেতে চল্, সবাই গেছে।" ঈশিকা ওঠে না।‌গায়ে হাত দিয়ে ডাকতেও সঙ্কোচ হচ্ছে।

চুপ করে ওর মুখের‌ দিকে তাকিয়ে থাকে কান্ত। আহা, বেচারা বোধহয় টায়ার্ড। হঠাৎ ই ঈশিকা আর্তনাদ করে‌ ওঠে,"নো‌ নো ডেভিড, ডোন্ট কিল মি।‌প্লিজ্, ফরগিভ‌ মি। নো নো..."

ঘুম ভেঙে আতঙ্কিত‌ নয়নে তাকায় ঈশিকা। সবাই এসে ওকে স্বাভাবিক করার পর ও বলে যে ও স্বপ্ন দেখেছে এক সাহেব ওকে ছুরি নিয়ে মারতে এসেছে। না না বলা স্বত্ত্বেও ছুরিটি তাকে বিদ্ধ করে‌ও রক্ত পাত হয়। এই বীভৎস স্বপ্ন দেখার পর ঈশিকা কিছু খেতে পারেনা। বাড়ী চলে যায়। রাতে সবাই থমথমে মুখে বসে আছে বৈঠকখানার চৌকীতে।

দাদু বলেন বিদায় করো‌ ওই আপদ।

প্রশান্ত করুণ মুখে পরদিন লরী ডেকে সোফাটি নিয়ে যায় সেই দোকানে। দোকানদার একমুখ হেসে বলে,"আসুন ‌স্যার, আপনার জন্যে ই অপেক্ষা করছিলাম। এই নিয়ে আটবার হলো। তে রাত্রি পোহানোর আগেই ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে‌এসেছে। তা স্যার যে দামে‌ নিয়েছিলেন, তাতো ফেরত দিতে পারবো‌না, অর্ধেক‌দাম ফেরৎ দেবো, তবে আজ নয়, এই সোফা আবার বিক্রি হবার পর।।"

প্রশান্ত বললেন,"আমার কিছু ই ফেরৎ চাই না, আপনার সোফা আপনি রাখুন।"

বিক্রেতা বললেন,"এটাও জানতাম যে আপনি কিছু নেবেন না, ফেরত দিতে পারলেই বাঁচে ন। তাই তো সোফাটা আমার এতো প্রিয়।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy