The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Priyanka Chatterjee

Fantasy

0  

Priyanka Chatterjee

Fantasy

সোনালী

সোনালী

9 mins
483


আমি আমার জীবনের এক ঘটনার কথা বলবো।আমি তখন রসায়ন নিয়ে বি এস সি করেছি।পার্ট টু এর ফল আশানুরূপ না হওয়ায় বর্ধমান ইউনিভার্সিটিতে সুযোগ পেলাম না।এক সিনিয়র দিদির কাছে বিলাসপুরের কথা শুনে বাবা আমায় উচ্চশিক্ষার জন্য ওখানের ডি পি ভি কলেজে ভরতি করে দিলেন।

ওখানে অনেক খুঁজে বাবা এক বাঙালী দম্পতির খোঁজ পান ,ওনাদের মেয়েদের মেস আছে ।টাকার বিনিময়ে থাকা ও খাওয়া।ওনারা ছিলেন দুজন, অজয় কুন্ডু ও শেফালী কাকিমা।ওনাদের এক মাত্র ছেলে ডাক্তারি পড়তে কলকাতা নিবাসী।

          ঘটনার কথা বলতে গেলে কাকিমার মেসটার বর্ণনা দেওয়া আবশ্যক।কাকিমা বাড়িটাকেই মেস বানিয়েছিলেন।বাড়িটা বেশ বড়।দোতলা বাড়ি।সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই ছোট্ট বাগান।বাগান পেরিয়ে সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই ছোট্ট গ্রিল বারান্দা। সোজা গিয়ে আরেকটি দরজা দিয়ে ঢুকেই নীচের তলা। প্রবেশ করেই বেশ বড় একটা হল ওপেন কিচেনের সাথে।হলের দুইপাশে দুটো বড় বেডরুম।বাঁদিকের বেডরুম দিয়ে বাইরে বেরিয়ে বাথরুম ও উঠোন। সদর দরজা লাগোয়া গ্রিল বারান্দার দক্ষিণ দিক দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে।সিঁড়ি দিয়ে উঠে ডান দিকে বাথরুম বাঁদিকে ছোট্ট রুম। তারপর সোজা উঠে দোতলা। দোতলায় বিশাল বড় হল।হলের শেপ ছিল এল আকারের। গোটা হলটাই ব্যালকনিতে ঘেরা ছিল।হলের সামনে দুটো বেডরুম।টার্ন নিয়ে বেসিন আরো একটা রুম।দোতলায় উঠে ছাদে যাবার সিঁড়ি।এটায় কোনো রেলিং ছিলনা। সিঁড়িটি ইটের তৈরি কিন্তু সিমেন্টের ঢালাই ছিলনা।ছাদের সিঁড়ি দিয়ে উঠেই বাঁদিকে আরেকটা রুম ছিল।আর ডানদিকে এক মানুষের সমান এক পাল্লার জানলা।তাতে গ্রিল থাকলেও পাল্লা ছিল না।

  প্রত্যেক রুমে দুজন করে মেয়ে থাকতো।আরেকটা রুম খুব বড় ছিল ওতে চারজন থাকতো।সব মিলিয়ে বারোজন ছিলাম। দেরী করে আসায় ওই ছাদের রুমেই ঠাই হল আমার।তবে আমার কোনো রুমমেট ছিল না। বাবা চান নি আমি এই বাঙালী দম্পতির কাছে না থেকে অন্য কোথাও থাকি।আমি মা বাবার বাধ্য সন্তান সবসময়। 

কাকিমার নীচের একটা বেডরুম সাতজন খেলোয়াড়দের ভাড়া দেন ,ওরা রেলে সার্ভিস করত। 

 যে ঘটনা বলতে যাচ্ছি তা ঘটে এম এস সি এর দ্বিতীয়বর্ষে।সেটা ২০০৭ সাল।বাবা ও মা দাদার কাছে যাবে বলে ঠিক করেন।দাদা বিদেশে গবেষণা সম্পূর্ণ করে ও পুরস্কৃত হয় তাই মা ও বাবা বিশেষ আমন্ত্রণ পান।কিন্তু তখন আমার গ্রীষ্মের ছুটি চলছে।অগত্যা ছুটি শেষ হবার আগেই আমি মা ও বাবার সাথে বিলাসপুর রওনা দিলাম।কলেজ খুলতে হপ্তাদুয়েক বাকি।গোটা মেসটা খাঁ খাঁ করছে।কেউ নেই।শুধু আমি উপরের তলায় একা।

 নীচের তলায় খেলোয়াড় মেয়েগুলো থাকলেও ওরা ওদের মত আসতো যেত।

মা বাবা চলে যাবার পর আমি আমার রুমটা গুছিয়ে নিলাম।কাকিমা খেতে ডাকলো।খেতে গিয়ে দেখি উনিশ কুড়ির একটি মেয়ে আমার সাথেই বসেছে। কাকিমাই বললো নতুন মেয়ে ওই খেলোয়াড় মেয়েগুলোর সাথে থাকে। নাম সোনালী। মেয়েটার রূপ সোনার মতই।উপরে গিয়ে দেখি মা বাবার কিনে দেওয়া বিস্কুটের দুটো প্যাকেট নেই।সংগে সংগে নীচে নামি।কাকিমাকে বলতে গিয়ে দেখি সোনালী ওই বিস্কুট খাচ্ছে।খুব রাগের মাথায় সোনালীকে দিলাম চার কথা শুনিয়ে।ওকে বললাম "আমায় বলতিস আমি দিতাম তোকে।"সোনালী হিস হিস করে বললো "আমি নিইই নি।"কাকু অবশ্য বললেন উনি দেখেছেন  সোনালীকে উপরে যেতে।আমিও বললাম "মিথ্যে বলছিস কেন রে??"কথা না বাড়িয়ে উপরে রুমে গেলাম।

সন্ধ্যে নামতেই বড্ড নিঝুম লাগছিল।রেডিও শুনছিলাম।পড়াশোনা করছিলাম।কাকিমা খেতে ডাকতে নীচে নামলাম, নীচে নামার সময় দেখি গোটা দোতলা ফাঁকা ,কেমন নিঝুম।খেতে খেতে দেরী হয়ে গেল।সিঁড়ির আলোগুলো জ্বালিয়ে উপরে উঠলাম।বেসিনে থালা বাটি গ্লাস ধুতে গিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে গেছলাম।খেয়াল করিনি সিঁড়ির আলো নেভানো।হলের টিউবটা খারাপ।তাই থালা বাটি নিয়ে সিঁড়ির কাছে গিয়ে আলো জ্বালাবো তখন কেউ যেন আমায় ধাক্কা দিল।হাত থেকে থালা বাটি পড়ে গেল।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালাম।কিন্তু বাঁ পায়ের পাতায় অসহ্য যন্ত্রণা।আমার মনে হল যেন কেউ পিছনে ছিল।কিন্তু ওখানে কেউ ছিল না।কাকিমা কাকু দৌড়ে আসে।আমায় রুমে নিয়ে যায়।পা ফুলে ঢোল। গরম জল আর মুভ ও পেইনকিলার এর দৌলতে কিছু কষ্ট কম হল।কাকুকে বললাম" সিঁড়ির আলো কে নেভালো?"কাকু কাকিমাদের কাছে শুনলাম ওরা খাচ্ছিল।বিশ্বাস করিনি যে ওরা নেভায় নি।তাহলে কি সোনালী??কাকিমা বলল বাকিরা শুয়েছে আর সোনালী টিভি দেখছে।পরে জেনেছিলাম আমি যাবার পর কাকিমারা সত্যি খাচ্ছিল ,ওরা কেউ সিঁড়ি আলো অফ করেনি।তখনতো জানতাম না আরো কত কিছু ওয়েট করে আছে আমার জন্য।

সেই রাতে ঘুম আসছিলনা।আর কুকুরগুলো কেমন করুন সুরে কেঁদে চলেছে।খুব অস্বস্তি লাগছিল আমার।ঘরে মার কাছে শুতাম।কখন জানিনা ঘুম এসেছিল।অসহ্য ব্যথা নিয়ে ঘুম ভাঙল।কাকিমা আমায় ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে জানতে পারি বাঁ পায়ে আঙুলের হাড়ে হেয়ার লাইন ফ্রেকচার হয়েছে।সেদিন বিকেলে দেখি সোনালী রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।আমায় একটা বিস্কুটের প্যাকেট দিল।আমায় বললো "আমি নিয়েছিলাম"।আমি ওকে বললাম ভিতরে আয়।"চা খাবি??"খুব খুশি হল দেখলাম। ওখানে আমাদের সবার রান্নার টুকটাক সরঞ্জাম ছিল।ওকে প্যাকেট ফেরত দিয়ে দিলাম।বললাম "তুই খাবি।না বলে নিস না ,যা লাগবে চেয়ে নিবি।"

তারপরেই আমার সাথে ওর ভাব হয়ে গেল আর ভালোবাসার অত্যাচার শুরু হল।এই সময় ও অনেক হেল্প করতো।তখন শুনলাম ওর জীবনের কাহিনী।মাত্র ছয় বছর বয়সে মা হারা হয়।এক বোন আছে ,নাম তার মানালি।ওর বাবা রেলে সার্ভিস করতো।এক দিন সন্ধেবেলায় মা ও বাবার ঝগড়া হয়। তারপরেই ওর মা কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।এর এক বছরের মাথায় ওর বাবাও আত্মঘাতি হয়।ওরা মামাবাড়িতে অনাদরে মানুষ।মাধ্যমিক পাশ করেছে বলে ও বাবার চাকরি পেয়েছে।বোনের দায়িত্ব ওর উপরেই। খুব খারাপ লাগছিল সোনালীর জন্য।

দিন পেরিয়ে যায় ,সবাই মেসে আসে,কলেজ শুরু।আমারো বেশ ভাল লাগে।হঠাত্ দিন সাতেকের মত সোনালী মেসে আসেনা। কাকিমা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে মামাবাড়িতে ও যায়নি।ফিরে আসলে জানি ও সিড্ডি গেছিল।সেদিন রাতে কাকিমার সাথে খুব বচসা হয়।কাকিমা রোজ ভোরে হাঁটতে যেতেন।পরের দিন ও সকালে গেছেন।আমরা শুনতে পাই খুব চিৎকার।নীচে নেমে দেখি কাকিমার শাড়ি ছেঁড়া।বেশ বিধ্বস্ত। কাকিমা নাকি মেইনরোডে ছিলেন।হঠাত্ করে দুটো হিংস্র কুকুর নাকি পিছু নিয়েছিল।কাকিমা দৌড়তে শুরু করে।বাড়ির কাছে এসে মাথা ঘুরে পড়ে যায়।তাতেই হাতে খুব জোরে লাগে।

এরপরেও সোনালী ও কাকিমা কাকুর অশান্তি বাড়তে লাগল।কাকুও হঠাত্ খুব জোরে পড়ে যান।

 রাতের বেলা সবার কেমন অস্বস্তি লাগছিল।এর আগে এরকম হয় নি।একদিন রাতের খাবার পর যে যার নিজের রুমে পড়ছে,হঠাত্ মিলির চিৎকার শুনে আমি নীচে নামলাম।মিলির রুমমেট ঘুমোচ্ছিল।মিলির মনে হয় ব্যালকনিতে কেউ আছে।ও নাকি দেখেছে।পাশের রুমের রুবিও নাকি দেখেছে।কাকিমাও উঠে এসেছেন।আমরা মিলিকে বোঝাই।গল্প করি।আমাদের মনটা খচ খচ করছিল।

প্রত্যেক রাতের কুকুরের কান্না অভ্যেস হয়ে গেছিল।সেদিন খুব বৃষ্টি হয়েছে।অনেক পড়া বাকি। সোনালী ঢুকতেই বললাম জ্বালাসনি আজ।পড়তে হবে তুই যা।ওর দিকে তাকাতে মনে হল অসুস্থ।নীচে খেতে গিয়ে দেখি জ্বরে বেহুঁশ।আমি উপরে গিয়ে ক্যালপল আনি।ওকে খাওয়াই। হরলিকস করে দিয়ে আসি।রাতে পড়তে বসেছি।হঠাত্ ঠেসানো দরজা দুম্ করে খুলে যায়।আমি চমকে উঠে দরজায় গিয়ে দেখি উল্টো দিকের ওই এক মানুষ সমান গ্রিলের জানলায় কে দাঁড়িয়ে আছে।সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলি কে এএএ।দোতলার সবাই দৌড়ে আসে।আমি স্থানুবৎ হয়ে গেছিলাম।

সেই মুহুর্তে আমি প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো চোর।তারপরেই দেখলাম অবয়ব যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।আমার গলা শুকিয়ে গেছে,মাথা কাজ করছেনা।আমার চিৎকারে দোতলা হতে আমার বান্ধবীরা ছুটে আসে।আমার সামলাতে সময় লাগে।কিছুতেই ভুলতে পারছিলামনা ওই অবয়বটাকে আর আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে ছিল।সবাই বলল রাত জেগে পড়ে নাকি আমার এরম হয়েছে।

 পরের দিন সকালে কলেজে বেরুবো তখন সোনালী হাজির।আমার গলা জড়িয়ে বলল খুব জ্বালাতন করেছি ।আমি বুঝতে পারলাম না।কি যে বলে পাগলি একটা।মা মরা মেয়ে তাই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।খুব বিরক্ত করলেও বলতাম না।দেখলাম ওর জ্বর আর নেই। এদিকে কাকিমা ও কাকুর সাথে ওর ঝামেলা বেড়েই চলল।সোনালীর রাত করে বাড়ি ফিরত,নিজের ইচ্ছেমত চলত ,মেসের কোনো নিয়ম মানতো না।তাই ওনাদের রাগ হওয়া খুব স্বাভাবিক ছিল।প্রেমিক ও ছিল।যা মন যেত করত।অশান্তি বাড়তেই থাকল।অনেক অমঙ্গল নাকি ঘটছিল।কাকিমা কোনো শুভো কাজে গেলেই বাধা পড়ছিল।একদিন কাকিমা পূজো দিতে যাবেন ,হঠাত্ পূজোর থালায় এক টুকরো মাছের কাঁটা উড়ে এসে পড়ল।যেতে পারলেন না পূজো দিতে।এরকম কিছু ঘটনা ঘটছিল যদিও আমরা পাত্তা দিই নি এসবে।এসবের মধ্যে আমর ছিলাম নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।মেসে আমার দুই বান্ধবী ছিল রুবি আর র সোমা।খুউউব মজা করতাম। রুবি ফিজিক্স এম এস সি প্রথমবর্ষ ।সোমা বি এড করছে তখন।ওরা সোনালীকে পছন্দ করত না কিন্তু কিছু বলত না।সোনালী আমায় খুব জ্বালাতন করত।মা মরা মেয়ে বলে আমিও ওকে কিছু বলতাম না।দিনগুলো পেরিয়ে যায়।পূজো চলে আসে।মা বাবাও ফিরে আসে।বাড়ি যাবার আনন্দে মনটা ভরে গেল।পূজোর কটা দিন হুল্লোড়ে কেটে গেল।লক্ষী পূজার পরেই কলেজ খুলে যাবে।অ্যাটেন্ডেন্স কম হলেই পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না।তাই পাততাড়ি গুটিয়ে চললাম বিলাসপুর।বারো ঘন্টার পথ।এদিকে হপ্তাখানেক ক্লাসের পরেই দীপাবলির ছুটি পড়ে গেল।মাত্র চার পাঁচ দিনের জন্য বাড়ি গেলাম না।ওখানেই থেকে গেলাম।কলেজ ছুটির পর সবাই চলে গেল।রুবিও বাড়ি যায়নি পড়বে বলে। কাকিমা ছিলেননা।কাকিমা গেছিলেন ছেলের কাছে।খেলোয়াড় মেয়েগুলো ছিলনা। নীচে ছিল শুধু কাকু ও সোনালী।আর উপরের তলায় আমি ও রুবি।


সেদিন ছিল চতুর্দশী তিথি।আমরা বলি অবশ্য ভুত চতুর্দশী।রুবি আর আমি জমিয়ে আড্ডা মারছিলাম বিকেলে।এই সময় সোনালী আবির্ভূত হল।অন্যদিন হলে রুবি চলে যেত।আজ কেউ না থাকায় ও আড্ডা মারছিল।গল্পে প্রসঙ্গ পালটাতে সময় লাগে না।ঠাকুর দেবতা সাধনা এইসব নিয়ে কথা হচ্ছিল।আমার জ্ঞ্যান খুব সীমিত।সোনালী হঠাত্ সাধনা নিয়ে কথা বলতে শুরু করে।এমনকি বেশ ডিটেল এ ভৈরবী সাধনার কথা বলে।আরো বিভিন্ন সাধন উপাচারের কথা বলে।আমার ও রুবির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল।আমরা মুখ চাওয়া চায়ি করছিলাম।রুবি বলল ও বাজে বকছে,আর তুমি গিলছ।কিন্তু আমি যে আমার নিকট মানুষের কাছে এইসব কিছু শুনেছি,তাই বুঝতে পারছি যে ও বাজে বকছেনা।এমনকি দেবী পূজোর আচার যে তন্ত্রের উপাচার সেসব বেশ ভালোমত ব্যখ্যা দিল।সেইসময় স্মার্টফোন ছিলনা,নেট সহজলভ্য ছিল না।মাধ্যমিক পাশ করা সোনালী জানলো কি করে এসব।বিয়ের পরে আমি  বেশ কিছু বই পড়ে জেনেছি এক বর্ণ ভুল বলেনি মেয়েটা।যাই হোক ,সেদিন আমি ওকে চেপে ধরে বলি বল কি করে জানলি??আমতা আমতা করে বলল বাবা বলেছিল।আমি বললাম তোর বাবাতো তোর মা মারা যাবার পর আত্মহত্যা করেন,তুই তো তখন ছোট, তোকে তখন বলেছে??ঠাস করে মারবো মিথ্যে বললে।অন্যদিন হেসে উড়িয়ে দেয়।সেদিন আমায় ভীষণ হিংস্র ভাবে বললো মিথ্যে বলছিনা।রুবি তখন আমায় বলল বাজে বকবকানি যত ওর।এসব কিছু হয় না।সোনালী বলল তোমরা একদিন বুঝবে আমি সত্যি বলছি।সব আছেগো সব আছে।

এরপরে রাতের খাবার খেয়ে আমরা শুতে চলে গেলাম।ঘুমিয়ে গেছিলাম হঠাত্ রুমের দরজায় নক শুনে ঘুম ভাঙল।ঘরের বাইরের আলোটা জ্বালাই থাকে।দেখলাম কে অফ করে দিয়েছে।লাইট জ্বালিয়ে দেখি রাত একটা।দরজা খুলে দেখি কেউ নেই।আবার শুয়ে পড়ি।শুয়ে আছি সেসময় ঝমঝম আওয়াজ কেউ যেন সিঁড়ি দিয়ে উঠছে।(সোনালী পায়ে মোটা তোড়া পড়ত।অবশ্য ওখানের অনেকেই মোটা তোড়া পরত।)আবার দরজায় নক,সেরকম কুকুরগুলো কেঁদে চলেছিল।সাহসী আমি নই।মনে হল সোনালী ভয় দেখাচ্ছে।রুমের দরজাটা প্লাই এর।দরজা আর মেঝে মাঝে বেশ কিছুটা গ্যাপ ছিল।

আমি নীচু হয়ে দেখি কেউ দাঁড়িয়ে আছে।আমার খুব ভয় লাগছিল,দরজাটা খুলিনি।ঝমঝম করে কেউ যেন সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেল।রুবির ঘরের দরজায় কেউ নক করছে যেন।আমি ঠাকুর নাম জপ করতে শুরু করি।ভয়টা একটু কমতে খুব ক্লান্ত লাগছিল।রাত প্রায় দুটো।আলো অফ করে শুয়ে পড়ি। মনে মনে ঠিক করি কাল সকালে সোনালীকে উত্তাল গালি দেবো।

হঠাত্ করেই ঘুম ভেঙে যায় কি যেন অস্বস্তিতে। খুব কষ্ট হচ্ছিল।মনে হল কেউ যেন আমার ঠিক উপরে আছে।আমি অনুভব করতে পারছি তার শ্বাস প্রশ্বাস।চোখ খুলে কাউকে দেখতে পাইনি।কিন্তু প্রচণ্ড ভয় আমায় গ্রাস করেছিল।আমার অন্তরের অন্তর চোখ যেন আমায় বলছে অদৃশ্য হতে কেউ আমায় দেখছে।অনুভব করতে পারছি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না।বুকটা ধুকপুক করছিল।মনে হল আজ মরেই যাব।তখন মনে পড়ছিল বাবা বলত ঠাকুরতো তোর মধ্যে আছে।বিপদে পড়লে তাকেঁ স্মরণ করবি।আমি মনে মনে ঠাকুরকে ডাকছি। এরপর মনে হল আমার উপরে নেই কিন্তু মশারীর বাইরে আছে।মনের জোর ছিলনা আর।দুচোখ দিয়ে জল পড়ছিল।

এরপর সবটুকু সাহস এক করে আলো জ্বালালাম।ভাবলাম যা হবার হবে।এর আগেও আমি একা থেকেছি প্রথমবর্ষে ,দ্বিতীয়বর্ষের প্রথমে।এরম হয়নি।জামা ঘামে ভিজে গেছিল।রাত তিনটে কুড়ি। আলো জ্বালিয়ে নীচে নামলাম।রুবির ঘরে আলো জ্বলছে দেখে নক করি।অনেকবার নক করার পরে ও দরজা খোলে।মুখটা রুবির ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।ওর কাছে ওই এক অভিজ্ঞতার কথা শুনি।আমরা দুজনেই স্নান করে পূজো করি। আমি বলি আমি যা অনুভব করেছি সেটার কথা। মানসিকভাবে আমরা বিদ্ধস্ত ।যে ঝড় গেছে সেটা ভাবতে পারছিলামনা।

সকালে নীচে গিয়ে দেখি বারান্দার কোলাপসিবলে তালা দেওয়া।অনেক নক করারপর কাকু দরজা খুলে দিল।কাকুকে রুবি বলল কাকু সোনালী রাতে দরজায় নক করে।কাকু বললেন আমরা খেয়ে যাবার পরেই কাকু তালা দিয়ে শুয়েছিলেন।সোনালী ঘুমিয়ে গেছিল কাল।কিছু না বলেই চলে এলাম।জানতাম কেউ বিশ্বাস করবেনা।সেই দিন কালীপুজো।আমরা একসাথে ছিলাম।সোনালীর দেখা পাইনি।পরেরদিন শুনলাম ও মেস ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে।মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। এরপরেই রুবি ভীষণ অসুস্থ হয়।ওর মা বাবা ওকে বাড়ি নিয়ে যায়।আমার খুব জ্বর আসে।আমার বাবা মা এখানেই আমায় সুস্থ করে তোলে।বেশ কিছুদিন পর সোনালী আসে।অনেক গল্প করে।দুম করে বলে জানোতো মা সবসময় আমায় ঘিরে থাকে।আমি তাই ভয় পাই না।প্রথমে বুঝিনি।তারপর বলল মা কথা বলে আমার সাথে।তুমি আমার জন্য অনেক কষ্ট পেলে।তোমার পায়ে লাগল।কালীপুজোর আগের রাতে তুমি ভয় পেয়েছিলে রাতেরবেলা।আর পাবে না ,আমি থাকছিনা। ভালো থেকো।আমি বিস্ফারিত নয়নে চেয়ে রইলাম।ও চলে যাবার পর থেকে কুকুরগুলো কাঁদে না আর।এরপর আর যোগাযোগ হয়নি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy