Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Manasi Ganguli

Fantasy

2  

Manasi Ganguli

Fantasy

স্মৃতির ঝাঁপি

স্মৃতির ঝাঁপি

6 mins
695


স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসি যখন কোথায় যে হারিয়ে যাই,কত বেলা যে বয়ে যায় টেরই পাই না। কিছু স্মৃতি মধুর,কিছু বা বেদনা বিদুর। ছোট বেলাটা ভাইবোনদের সাথেই কাটত বেশি সময়,তার মধ্যে আমার দিদির সাথে বেশি,তাই অনেকটা স্মৃতিই দিদিকে ঘিরে। পিঠোপিঠি ছিলাম আমরা,যত মারপিট ততটাই ভাব ভালবাসা। দু'জনের দু'জনকে না হলে চলত না। ছোট্ট থেকে খুব দুরন্ত ছিলাম বলে তৃতীয়জনের জন্মের সময় মামারবাড়ী নিয়ে গিয়ে মা আমায় রেখে এলেন সেথায়,বাড়ী ফিরলেন দিদি আর কোলেরটিকে নিয়ে। কেটে গেল দুটো বছর মামাবাড়িতে অতি আদরে সকলের কোলে কোলে। ফিরে এলাম বাবার সাথে বাড়ীতে,স্কুলে ভর্তি হতে হবে যে। কেজিতে ভর্তি হলাম। দুইবোনে একসঙ্গে স্কুলে যেতাম। আমার সর্বদার সাথী দিদি,শিশুমনে যা প্রশ্ন জাগত সবই মনে হত দিদি জানে। দিদিকে জিজ্ঞাসা করতাম,"মাইকে এত জোরে আওয়াজ হয় কি করে রে দিদি?" দিদি তার ছোট্ট মাথার বুদ্ধি দিয়ে গম্ভীরসে বলত,"রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম মাইকে কথা বলেছিলেন তো তাই"। আমার ছোট্ট মাথা তাই মেনে নিত।

     দু'জনে একসাথে স্কুলে যাওয়া,বাড়ীতে প্রাইভেট টিউটরের কাছ একসাথে পড়া,বিকালে বাড়ীর উঠোনে বা বাড়ীর সামনের মাঠে একসাথে অন্য বন্ধুদের নিয়ে খেলা,ছুটির দিনে খেলাবাটি খেলা। সে খেলাবাটিও হত জব্বর খেলা,সবেতেই দিদি আমার সাথী। তখন কুলোয় চাল ঝাড়া হত,খুদগুলো রাখা থাকত,ছাদে পায়রাকে দেওয়া হত। সেখান থেকে চাড্ডি খুদ নিয়ে নারকেলের মালায় করে রাতে জল দিয়ে ভিজিয়ে রাখতাম,বেশ ভাত হয়ে যেত সেগুলো সকালে। তাছাড়া বাড়ীতে গরু ছিল বেশ কয়েকটা,একটা নারকেলের মালা নিয়ে গিয়ে খানিকটা দুধ দুয়ে নিয়ে আসতাম আর আশ্চর্য গরুগুলো কিচ্ছুটি ঝামেলা করত না,আর আমাদের সত্যিকারের দুধ,ভাত নিয়ে খেলাবাটি বেশ জমে যেত। 

   যত ভাব তত ঝগড়া ছিল দু'জনের,কোনো ব্যাপারেই মতের মিল হত না আবার দু'জনের দু'জনকে ছাড়াও চলত না। গরমের ছুটিতে ঠাকুমা আমাদের নিয়ে গঙ্গার চান করতে যেতেন,শিবের মাথায় জল ঢালতেন, আমরাও ঠাকুমার সাথে জল ঢালতাম,তারপর মেলা থেকে কাঁচের চুড়ি পরিয়ে আনতেন। কি আনন্দ সেসব রঙিন চুড়ি প'রে কিন্তু যেই মারপিট হত,টার্গেট ঐ কাঁচের চুড়ি,আমি ওরটা ভাঙ্গব ও আমারটা,দালানময় কাঁচের চুড়ির টুকরোয় ছড়াছড়ি হয়তো বা হাতও একটু চিরে যেত আর তারপর মনখারাপ ক'রে কাঁদতে বসা। পরের বেলাতেই কিন্তু ভাব হয়ে যেত,তাই ভাবি কি অদ্ভুত সুন্দর দিনগুলো ছিল আমাদের। আমার ছোট বেলার স্মৃতির সবটুকুতেই জড়িয়ে আমার দিদি। দিদি খুব ভুগত বলে রোগা আর আমি গাঁট্টা গোট্টা। দিদি কটর কটর করে দুটো কথা বলে দিত,ওটা আবার আমি পারতাম না,আমি দিতাম দু'ঘা বসিয়ে,কিন্তু রোগা বলে পাল্লা ওর দিকেই ঝুঁকত,আমিই বকুনি খেতাম। গরমের ছুটির বেশিটা,ডিসেম্বরে শীতের ছুটি,আমি দিদি একসাথে গ্রামে মামারবাড়ী গিয়ে কাটাতাম,কখনো বাবা,কখনো ড্রাইভার যে কেউ আমাদের দিয়ে আসতেন আবার সময়মত নিয়ে আসতেন। অন্যান্য ভাইবোনরা ছোট তখন,তাই আমি আর দিদি,আর মামা মাসিরা আমার মায়ের থেকে অনেক ছোট হওয়ায় কারো বিয়ে হয়নি তখনো,কাজেই আমাদের সেখানে খুব আদর,মামারবাড়ীর আবদার বলে না,একদম তাই। দিদিমা আমার নানারকম আচার করতেন আর আমাদের সারাদুপুর সেইসব চলত,এছাড়া গরমের ছুটিতে গাছের আম,কাঁঠাল,লিচু জাম,তালশাঁস অফুরন্ত। মায়ের ঠাকুমা বঁটি পেতে আম কেটে থালায় রাখতেন,আমি আর দিদি থালা থেকে তুলে খেয়ে যেতাম,শুধু আমেই জলখাবার। আর আমি ছোট থেকেই ভোজন রসিক তাই আমি গেলেই পুকুর থেকে মাছ ধরা হত,অনেকগুলো পুকুর,একটা দিঘী,নাম তার 'মোহনদিঘী',মামা সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন মাছধরার দিন,ঘরের খাবার মাছ রেখে বাকীটা পাইকারদের দেওয়া হত। আমি যে মাছগুলো পছন্দ করতাম সেইগুলো রেখে বাকীগুলো দেওয়া হত। সে মোহনদিঘীর চারপাশে বড় বড় তেঁতুল গাছ,জলে তার ছায়া পড়ে কালো দেখায়,সেখানে একা গেলে গা ছমছম করবে,দিদি যেত না,আমিই যেতাম। বিশাল মুড়ো রান্না করে দিদিমা আমার পাতে দিতেন,প্রায় থালাভরা,আর আমি নিপুণভাবে খুঁটেখুঁটে খেতাম,একফোঁটা শাঁসও গায়ে লেগে থাকত না। মামারা তাই আমার নাম দিয়েছিলেন 'যজ্ঞির বেড়াল'। দিদি আবার মাছ-মাংস বেশি খেতে চাইত না,ঘেন্না পেত। আর শীতে যখন যেতাম কতরকমের পিঠে-পাটিসাপটা যে দিদিমা করে খাওয়াতেন তখন,আহা। তবে দিদি বেশি খেতে পারত না,তাই লায়ন শেয়ার আমার। তখন মামাবাড়িতে ইলেক্ট্রিসিটি ছিল না,সন্ধ্যের পর হ্যারিকেন জ্বলত,ঘুটঘুটে অন্ধকার আর আমার মায়ের ঠাকুমা আমাদের গরমের দিনে ঘরের বাইরে খোলা দালানে বসে ভূত,ব্রহ্মদত্যির গল্প শোনাতেন,শুনতে তো খুব মজা কিন্তু তারপর ঘরে ঢুকে আর খাট থেকে নামা নেই। যেন খাট  থেকে পা ঝোলালেই ভূতে পা টেনে ধরবে। যত দস্যিপনা দিনের বেলা।

  এইভাবে দিদি,আমি একসাথে বড় হতে লাগলাম। দিদি আমার মত দস্যিপনা করত না আর আমার পরের বোনটি বড় নিরীহ,খুব শান্ত,তাই ভাই ছিল আমার দস্যিপনার সঙ্গী,অবশ্য খেলার সময় দিদিও থাকত।   আমাদের শৈশব কত যে ঘটনাবহুল ছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি আর আমার দিদি ছিলাম উৎপেতে,বলাই বাহুল্য আমিই বেশি,তবে দিদিকে সবসময় পাশে পেতাম। আমার পরের বোন মানে সেজো দেড়বছরের ছোট হলেও,আমাদের দলে কোনোদিন ভেড়েনি,খুব নিরীহ,একেবারে আমার মায়ের মত,কোনোদিন কোনো দুষ্টুমি করে নি। 

   আমি আর দিদি মিলে,তখনকার সাদা কলাইকরা বাসন হত,তেমন একটা বড় কাঁসিতে একসঙ্গে চারটে কৎবেলের আচার বানাতাম,এবার দু'জনে মিলে ঠিক করতাম,ছাদে রোদ্দুরে দিলে টেস্ট ভাল হবে। সেইমত দু'জনে মিলে সেই কাঁসি নিয়ে ছাদে যেতাম কিন্তু ছেড়ে নড়তে পারতাম না,শেষে দু'জনে কাঁসির দু'দিকে রোদ্দুরে বসে ভাজা হতাম,আচার রোদ্দুর খেত আর আমরা আচারও খেতাম,রোদ্দুরও খেতাম। খাবার আগে অবশ্যই মাঝখান দিয়ে আঙ্গুল দিয়ে দাগ টেনে দু'ভাগ করতাম,কেউ যদি বেশি খেয়ে ফেলে তাই,যদিও ফাঁকে তালে আমি দিদির দিক থেকে টেনে খানিক সাবাড় করতাম,না হলে বেশ শান্তি হত না। দু'জন দু'পাশ থেকে খেতেই, থাকতাম,চারটে কৎবেলের আচার দু'জনে মিলে সময় তো লাগবেই,তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেতে হবে না?শেষে সেই সাদা কলাইয়ের থালা আর ধোবার প্রয়োজন হত না,আহা সেসব কি মজার দিন ছিল।

   যখন ক্লাস এইটে পড়ি,সরস্বতীপূজা করব বাড়ীর বাগানে,ঠিক করলাম আমি,দিদি,ভাই আর সমবয়সী কয়েকজন বন্ধুরা। বাগানের মাঝখান দিয়ে চওড়া রাস্তা,সেখানে হবে প্যান্ডেল,সে নিজেরাই ঝাঁটপাঁট দিয়ে শাবল দিয়ে গর্ত করে বাঁশ পুঁতে,রেডি হল,এবার ছাউনি চাই, আলমারি থেকে মায়ের পিওর সিল্কের শাড়ী বার করে ছাউনি হল,তার যেখানে সেখানে যথেচ্ছ পেরেক ঠোকা হল,পরে আর সেসব শাড়ী মা পরতে পারেননি আর এজন্য মা আমাদের কিচ্ছুটি বলেননি। এরপর চাঁদা তোলা,ঠাকুর আনা,ফল কাটা পুজোর জোগাড় সব ভাগাভাগি হল ছেলেমেয়েদের মধ্যে।  

    তারপর কলেজ,বড় হয়ে দিদির সাথে আর মারপিট হত না,বন্ধুত্বটাই বেশি,যদিও মতের অমিল হতই। পড়া শেষে দিদির বিয়ে হলে আমরা ভাইবোনেরা কেঁদে ভাসালাম। দিদি কলকাতার বাসিন্দা হল,ছোট থেকে আমায় বলত,"আমি কলকাতায় বিয়ে করব,ফর্সা হব আর তোকে বর্ধমানে বিয়ে দেবো,গ্রামে গিয়ে কালো হবি",আসলে ওর গায়ের রঙ আমার থেকে একটু কালো ছিল বলে ওর খুব আক্ষেপ ছিল। কত যে মজা ছিল তখন,অথচ ওর বিয়ের পর যেদিন কলকাতা যেতাম,ছটফট করত,কতবার যে ফোন করত,'কোথায় আছিস' বলে তার ঠিক নেই। আর ফোনে তো প্রায় রোজ গল্প,কত যে কথা ওর পেটে জমে থাকত,এক দেড় ঘন্টার আগে ফুরত না। দিদি ছিল আমাদের ভাইবোনেদের পরামর্শদাতা,যা কিছু প্রবলেম,জানতাম দিদি ঠিক সলভ করে দেবে। বাড়ীতে গেস্ট আসবে,কিংবা দশ পনেরোজন খাবে,কি রান্না করব দিদিকে ফোন,পরপর মেনু সাজিয়ে,কতটা কি লাগবে সব,ব্যস মুশকিল আসান। সেই দিদিটা আমার আজ আমায় বড্ড একা করে দিয়ে চলে গেছে। রাতে খেয়ে মায়ের সাথে আধঘণ্টা কথা বলে শুল,সকালে সে আর উঠল না ঘুম থেকে। দিদির শোকে মনে মনে ক্ষয়ে চলেছি প্রতিদিন একটু একটু করে। এমন দিন নেই যেদিন দিদির জন্য আমার চোখের জল পড়ে না। আজ দিদির কথা লিখতে লিখতেও আমার দু'চোখ ভেসে যাচ্ছে। সবাই আছে,হাসি,ঘুরি,ফিরি,বেড়াই কিন্তু বুকের ভিতর অহরহ যন্ত্রণা।

"দিদিরে তুই চলে গেলি কোন সুদূরের পারে

আমি কত ডাকলাম যে দিদি দিদি করে

ফিরেও তুই চাইলি না যে একটু আমার পানে

পড়ে রইলাম হারিয়ে তোকে আমি শূন্যমনে।

কত যে আঁধাররাতে ঘুম আসে না চোখে

তোকে নিয়ে কাটাই যে রাত বড় দুঃখে শোকে;

হাত বাড়িয়ে খুঁজি তোকে পরশ যদি পাই

ভুল ভাঙ্গলে বুঝি তখন দিদি যে আমার নাই।

লুকিয়ে লুকিয়ে চলে গেলি বলে গেলি না

কোথায় যে তুই হারিয়ে গেলি খুঁজেই পেলাম না;

পালাতে তোকে দেবো নাকো আমায় ছেড়ে ফেলে 

আসতে তোকে হবেই জানিস রোজ সপনের মাঝে।"

   এভাবেই দিদিকে নিয়ে স্বপ্নে আমার রাত কাটে,দিনের বেলা চোখের জলে। 


Rate this content
Log in

More bengali story from Manasi Ganguli

Similar bengali story from Fantasy