ভূতের গপ্পো
ভূতের গপ্পো
অনেকদিনের ইচ্ছে একটা হাড় কাঁপানো ভূতের গপ্পো লিখবো। কিন্তু বর্তমান রক্ত মাখা, ভয়ঙ্কর, মানুষ খেকো, হলিউডি ভূতেদের সামনে আমার ভূতগুলোকে কেমন মিয়ানো চিড়ে ভাজার মতো মনে হয়। আবার ভাবি, ভূত হয়েও বা অত কষ্ট করে ভয় দেখাবে কেন? দাঁত খিচোবে, নাড়ি ভুঁড়ি বের করবে তারপর লোকে ভয় পাবে। না বাপু, বেঁচে থাকতে নিজেই বেশি কসরৎ করলুম না। বেচারা ভূত গুলোকে অযথা কষ্ট দেওয়া।
ভূতের গল্প শুনতাম ছোট বেলায়। আমার মা নাকি এক লুঙ্গি পরা টাক মাথা ভূতকে তালগাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল। অনেক ডাকাডাকি করে যখন সাড়া পায়নি তখন দাদুকে ডেকে পিছন ফিরতেই সে লোক ভ্যানিস। ইমপ্রেসিভ ভুত।
এখন যেটা জেমস লং সরনী। আগে বলা হত রেল লাইন। এখনো কেউ কেউ বলে। সেই রেল লাইনে কাটা পড়ত অনেকে। সেই অতৃপ্ত আত্মারা ঘুরে বেড়াতো এলাকা জুড়ে। আমার দাদু নাকি একটা স্কন্ধ কাটা দেখেছিল। গায়ত্রী মন্ত্র জপে তাড়িয়েছিল। তাছাড়া, সন্ধ্যেবেলা ইলিশ মাছের লোভেও নাকি ভূত বাড়ি অবধি ধাওয়া করেছিল। ইয়ে মাছটা যখন ইলিশ...আমি ভূতের কোন দোষ দেখিনা।
আমার জেঠিমা আবার অদ্ভুত ভূত দেখেছিল। তখন এত কংক্রিটের জঙ্গল তো ছিল না। ছিল গাছপালার জঙ্গ
ল। অ্যাটাচ বাথরুম ব্যাপারটা খায় না মাথায় দেয় তাই কেউ জানত না। তা রাত্রে বাথরুম করতে উঠে গাছের ডালে আওয়াজ শুনে ওপরে তাকিয়ে দেখে দুটো হাত আর দুটো পা একবার এই ডালে যায় তো আরেকবার ঐ ডালে। তাই দেখে তো সেখানেই অজ্ঞান। ছোটবেলায় শুনে বলতাম, তুমি বোধহয় ঘুমের ঘোরে ভুল দেখেছ। সে তা কিছুতেই মানতে চায় না। আমাদের বাড়িতে একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল মন্দির। সেই মন্দির তৈরী হওয়ার আগে নাকি একটা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেত ঠিক আমাদেরই বাড়ির ওপর দিয়ে। সে নাকি এমন হাওয়া যে মনে হত এখুনি সব উল্টে নিয়ে যাবে। তখন আমার জন্ম হয়নি। মন্দির হওয়ার পর নাকি আর সেই হাওয়া আসেনি।
আমারও একবার ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সে নিয়ে ভাবলে এখনো ভয় করে।
তা এসব শুনে টুনে মনে হয়েছে ভূতকে ভয় দেখানোর জন্য বেশি খাটতে হবে না। ভূত হবে গিয়ে রজনীকান্তের মতো। আসবে, দাঁড়াবে, লোকে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যাবে। আবার মাঝে মধ্যে চুক্কি মেরে ভেবলে দিয়ে চলে যাবে।
তা আমি এমনি একখানা গপ্পো লিখতে চাই। কে জানে কবে লিখতে পারবো। কে জানে কবে আমার গপ্পো লোকে গোগ্রাসে গিলতে চাইবে। আপাতত,সমস্যা একটাই। গলাটা একটু শুকিয়ে গেছে। অন্ধকারে একা একা উঠে জল খাবো কী করে? 🥺