ভালো থেকো ধর্ষক!
ভালো থেকো ধর্ষক!
আমি ধর্ষক। আমার নাম নেই। আমি কোনো নাম নিয়ে বাঁচি না। দশ বছর পর দেশে ফিরে এসে আমি আমার নাম, পরিচয় হারিয়ে কেবল একজন ধর্ষক বলে পরিচিত। না, না, কেউ জানে না, কারুর মনে নেই দশ বছর আগে আমার কলেজের বান্ধবীকে, আমি আরো পাঁচ বন্ধুর সাথে মিলে ধর্ষণ করে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে গেছিলাম। সে মামলা করেছিল। তারপর আদালতে প্রতিদিন জনসমক্ষে আমাদের উকিল তার ধর্ষণ করেছিল, প্রশ্নের মাধ্যমে। ধর্ষণ করেছিল সংবাদ মাধ্যম। ধর্ষণ করেছিল আরো কিছু ধর্ষকাম। ধর্ষণ করেছিল সমাজব্যবস্থা। ধর্ষণ করেছিল এ দেশের চোখে কাপড় বাঁধা আইন ব্যবস্থা। এতো ধর্ষণ সহ্য করেও গোপা লড়েছিল। কিন্তু সবশেষে সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে আমরা “সসম্মানে” ছাড়া পাই। শুনেছিলাম গোপা গলায় দড়ি দিয়েছিল। লজ্জার মাথা খেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম ওর মৃতদেহ। আমি একাই আর কেউ যায়নি। বাকিরা তখন আরেকটা শিকার খুঁজতে ব্যস্ত। ওর ঠিকরে আসা চোখ, বুক অবধি ঝুলে থাকা জিভ দেখে সেদিন শিউরে উঠেছিলাম।
তারপর আমার ব্যবসায়ী বাবা আমায় বিদেশের এক কলেজে ভর্তি করে দিল। ওখানেই পড়াশুনা, চাকরি। তারপর দশ বছর পর দেশে এলাম বিয়ে করতে। শপিং শেষে কেন জানিনা একদিন নিজের অজান্তেই গাড়ি চালিয়ে চলে এলাম গোপার পাড়ায়। বদলে গেছে চারিপাশ। বদলায়নি ওদের দোতলা বাড়িটা। ওর নিঃস্ব বাবা মা মেয়ের মৃত্যুর পরে বাড়ি ছেড়ে দেন। বাড়িটা বিক্রি করেননি তবু। ওই বাড়ির প্রতি ইঁটে বেঁচে আছে তাদের মেয়ের স্মৃতি। ওদের ঘরের সামনে গিয়ে দেখলাম তালা ঝোলানো। সন্ধ্যে নামছে। আমার শরীরটা কেমন ভারী হয়ে গে
ল। গাড়িতে উঠে মনে হলো যেন আমার সঙ্গে আরো একজন যোগ হয়েছে। যতো রাত বাড়তে লাগলো শরীরটা কেমন খারাপ হতে শুরু করলো। যেন আমি আমার বশে নেই। যেন কেউ আমার মধ্যে থেকে আমায় কাজ করিয়ে নিচ্ছে। আমি এক সম্মোহনের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি যেন। আমি আমার বিছানা ছেড়ে চলতে শুরু করলাম। ঘর ছেড়ে বেরোলাম। তারপর সব অন্ধকার।
এক আর্তনাদে হুঁশ ফিরল আমার। “জানোয়ার, জানোয়ার পেটে ধরেছি আমি।” আমার মায়ের কণ্ঠ। চেয়ে দেখলাম চারিদিকে রক্ত। আমার বোন, পিসি, বৌদি সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে পরে আছে হলের মেঝেতে। আমি ক্রমশ এগিয়ে চলেছি আমার মায়ের দিকে। আমার মস্তিষ্ক সজাগ। আমি জানি আমি পাপ করছি কিন্তু আমার শরীর আমার বশে নেই। আমার চিৎকার করছে। অভিশাপ দিচ্ছে আমায়। আমিও প্রানপন চেষ্টা করছি নিজেকে আটকাবার। কিন্তু পারছি না। আমি চিৎকার করছি, কাঁদছি, নিজেকে আঘাত করছি তবু আমার শরীর উদ্ধত লিঙ্গ নিয়ে এগিয়ে চলেছে আমার মায়ের দিকে। হঠাৎ কে যেন পাশ থেকে হেসে উঠল। তাকিয়ে দেখলাম, গোপা! তার সেই ঠিকরে আসা চোখ, বুক পর্যন্ত বেরিয়ে আসা জিভ লকলক করছে। তার শরীরে আঘাতের সেই চিহ্নগুলি স্পষ্ট। তার আর্তনাদে ছেয়ে পড়েছে সারা ঘর। আবার তার চোখে এক পৈশাচিক তৃপ্তি। তার হাসিতে আমার কানের পর্দা ফেটে যাচ্ছে। আমি পারছি না, পারছি না, ওর এই বিভৎস রূপের সামনে দাঁড়াতে। ওর সম্মোহনী শক্তির বশে আমি এখন একজন পশু, পশুর থেকেও অধম এক জীব।আমি ধর্ষণ করছি আমার মা, বোন, পিসি, বৌদিকে। সে অট্টহাসিতে ফেটে পরে আমায় বলছে, “ভালো থেকো ধর্ষক। ভালো থেকো!”