Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Keya Chatterjee

Fantasy

1  

Keya Chatterjee

Fantasy

বন্ধু

বন্ধু

3 mins
568


মুখটা কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে সোহম। ঠাম্মার কাছে খুব বকা খাচ্ছে। সোহমের স্কুলের গাড়ির ড্রাইভার কাকু নালিশ করেছে যে সোহমকে প্রায়ই ফুটপাথে থাকা কিছু ছেলেমেয়ের সাথে দেখা যাচ্ছে। এই নিয়ে চারদিন হলো। সোহমকে খুঁজতে গিয়ে গাড়ি ছাড়তে দেরী হয়ে যাচ্ছে তার। ওদিকে অন্য অভিভাবকরা রাগারাগি করছে। তাকে মালিক বকছে। এত কিছু অভিযোগ শুনে, সোহম বাড়ি আসার পর থেকে ঠাম্মা অনবরত তাকে বকছেন। সঙ্গে রয়েছে নানা উপদেশ ও নিষেধাজ্ঞা। ফুটপাথের বাচ্চারা খারাপ। ওরা সোহমকে খারাপ করে দেবে। সোহমের লেখা পড়া হবে না, ইত্যাদি, ইত্যাদি। তার সঙ্গে চলছে সোহমের হাত পা মুখ ভালো করে সাবান দিয়ে ধোয়ার যুদ্ধ। আট বছরের সোহম তার নিষ্পাপ মস্তিষ্কে এতো জটিল অঙ্ক কিছুতেই মেলাতে পারছে না। তার অতিরিক্ত টিফিন সে কিছু ছোট ছেলেমেয়েদের খাইয়ে দিয়ে আসে। এতে সে কি খারাপ হয়ে গেল? মা তো বলে খাবার নষ্ট করতে নেই, জল আমাদের সম্পদ। তাহলে? ওরা তো খাবারই পায়না। ওদের হাসি মুখ দেখলে সোহমের খুব আনন্দ হয়।

 সন্ধ্যেবেলা দীপা অফিস থেকে ফিরে সব শোনে শাশুড়ি মায়ের মুখে। রাগ হওয়ার থেকেও কৌতূহল হয় বেশি। অফিসের জামাকাপড় না পাল্টেই চলে যায় ছেলের ঘরে। সোহম তখন টেবিলের ওপর ঝুঁকে এক মনে ছবি আঁকছে। সোহমের যখন যেটা ইচ্ছে করে দীপা তাকে বাধা দেয়না। পড়ায় মন না বসলে গল্পের বই পড়তে বা আঁকতে বলে। এখানে মাঠ নেই, বিকেলে খেলার অভ্যেসটা তৈরি করতে না পারায় একটু আফশোস আছে দীপার। সোহমের পাশে চেয়ার টেনে বসে দীপা। মাকে দেখে অন্য দিন আনন্দে লাফিয়ে ওঠে সোহম কিন্ত আজ একটু ভয় পেল। সে জানে ঠাম্মা মাকে সব বলে দিয়েছে। কিন্তু মা এখনো বকছে না কেন!

 দীপা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে প্রশ্ন করল, “কি ব্যাপার বলতো? কারা ওরা?” সোহম মায়ের আশ্বাস পেয়ে উজাড় করে দেয় মনের কথা,বলে, " মা জানো তো, স্কুলের পাশে যে ডাস্টবিনটা আছে, ওখানে একদিন আমি হাফ টিফিন ফেলে দিয়েছিলাম ঠাম্মা বকবে বলে। কিন্তু ঠাম্মা বোঝে না, অতো খাবার আমি খেতে পারি না তো! খাবারটা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে ওখানকার দুটো বাচ্চা খাবারটা ওই নোংরা থেকে তুলেই খেয়ে নিল। আমার না খুব খারাপ লাগল। আমরা খাবার ফেলে দিই আর ওরা কতোদিন না খেয়ে থাকে মা! পরেরদিন স্কুল ছুটি হওয়ার পর গাড়ি আসার আগে হাফ টিফিনটা ওদের হাতে দিলাম, ওরা খুব খুশি হয়ে খেলো। আমি তো ভাত খেয়ে যাই মা, অতো খাবার খেতে পারিনা। ওরা না কতদিন ভাতই খায়না, জানো! ওরা যখন খায় তখন ওদের হাসি দেখলে আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু ঠাম্মা যে বলল ওরা নাকি খারাপ। কেন খারাপ মা? ওদের স্কুল যাওয়ার, খাবার কেনার টাকা নেই বলে?" আট বছরের ছেলের মানবিকতা আর্দ্র করলো দীপার চোখ। সত্যিই এই প্রশ্নের কোনো উত্তর তার কাছে নেই। এক শ্রেণী ধনী হচ্ছে আরেক শ্রেণী ক্রমশ দরিদ্র হচ্ছে। এই ছোট্ট মনে সেই জটিলতা ঢোকানোর কি কোনো প্রয়োজন আছে? একটু চুপ করে ভেবে নেয় কিভাবে ছেলে আর শাশুড়ি মা উভয়কে ব্যালান্স করা যায়। সোহম নিস্পলক তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। মায়ের সিদ্ধান্ত শোনার জন্য। ছেলের মুখ দেখে দীপা আলতো হেসে ছেলের চুল ঘেঁটে দিয়ে বলল, "কাল থেকে দুটো টিফিন বক্স পাঠাবো, কেমন? একটা তোর, আরেকটা তোর ওই বন্ধুদের।"

নির্মল হাসিতে ভরে গেল সোহমের নিষ্পাপ মুখ।

বন্ধু হওয়ার জন্য একটা সুন্দর মন সরকার এই পৃথিবীতে। আর কিচ্ছু প্রয়োজন নেই। এই বন্ধুত্বের হাত ধরে পৃথিবী হয়ে উঠবে সুন্দর।


Rate this content
Log in