ম্যাজিক
ম্যাজিক
গিলি গিলি ছূ, আবরা কা ডাবরা....
হাততালিতে ফেটে পড়ল প্যান্ডেল। ছোট ছোট চোখগুলিতে বিস্ময় ঝরে পড়ল। স্টেজে জাদুকর রঙিন পোশাক পরে একের পর এক জাদু দেখিয়ে চলেছে। কখনো ফুল ঝরে পড়ছে, কখনো বা উড়ে যাচ্ছে পায়রা, কখনো কার পকেট থেকে উঁকি মারছে ইঁদুর।
শো এর শেষে টাকা হাতে পেতে বেশ দেরি হলো সনাতনের। পুজো কর্তারা আরো কিছুক্ষন খেলা দেখাতে বলেছিলেন। কিন্তু সনাতনের সরঞ্জাম যে আর নেই। তাই শাস্তিস্বরূপ....। সঙ্গের ছেলেটির হাতে হাজার টাকা ধরাতেই তার মুখে ফুটে উঠল সব পেয়েছির হাসি। হয়তো ছেলেটির জীবনের প্রথম কামাই। এইসব দৃশ্য মনকে খুব খুশি করে দেয়। কিন্তু বাড়ি ফিরে খুশিটা কেমন ম্লান হয়ে যায়। বৌমা ছোট নাতিটার পিঠে গরম খুন্তি চেপে ধরে চিৎকার করছে, “খাবি, খাবি? আমায় খা রে শয়তান, আমায় খা।” দূরে বসে আছে ছেলে। সে নির্বাক হয়ে চেয়ে আছে স্ত্রীয়ের দিকে। সনাতন দ্রুত ছাড়িয়ে নিল বাচ্চাটাকে, “কি করছো কি বৌমা! ছেলেটাকে এই পুজোর দিনে মারবে নাকি?” সরমা ঝংকার দিয়ে বলে উঠল, “তাই করলে বাঁচবো বাবা। এমন অপগন্ড সোয়ামীর ঘর করার থেকে তো বাঁচবো।” সনাতন তাকালো প্রকাশের দিকে। সে শুকনো মুখে মাথা নেড়ে বলল, “আজও দিল না।” সনাতন বলল, “দিল না মানে? তুই তো সাতদিন আগে কাজ করেছিস। আজও টাকা দিল না?”
― না। ওই অন্নপ্রাশন বাড়িতে মিকি মাউসের জামা মাথা পরে ঘুরতে বলেছিল। ওতো বড় মাথাটা কিছুতেই সামলে উঠতে পারছিলাম না। একবার টাল সামলাতে না পেরে হোঁচট খেয়ে একজনের গায়ে পরে যাই। একটা প্লেট আর গ্লাস ভাঙে। ওই টাকা কেটে সাতশ টাকা দেবে বলেছিল। কিন্তু আজও দিল না।”
সনাতন ছেলের হাতে পাঁচশ টাকা গুঁজে বলল, “যা ছেলেটার জন্য খাবার নিয়ে আয়।” ছেলে চলে গেলে মনে মনে ঠিক করে নেয় বাকি দেড় হাজারে কি কি হিসেব মেটানো বাকি। নাতিটা মাটিতে উপুড় হয়ে কাঁদছে। ঠিক তার ওপরে দেওয়ালে ঝুলছে স্ত্রী মিনতির মালা পড়া ছবি। সনাতন বাক্স থেকে বের করে জাদুকরের পাগড়ি আর পোশাক। নাতির সামনে হঠাৎ বলে ওঠে, “এই দেখো দেখো, জাদু দেখো। ম্যাজিক, ম্যাজিক, ম্যাজিক। আমি পি.সি.সরকারের চেলা। অন্ধকারে সূর্য দেখাই, দিনের বেলা তারা, মরুভূমিতে ফুল ফোটাবে এই সরকার বাবুর চেলা।” প্লাস্টিকের ফুল ঝরে পড়ল ছোট্ট শরীর জুড়ে। হাসি ফুটে উঠল খিলখিলিয়ে। ক্ষিদের ব্যথা ভুলে সে মেতে উঠল দাদুর জাদুর খেলায়। সরমা নিভৃতে চোখ মুছে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে ম্যাজিশিয়ানের দিকে। এই বুড়ো মানুষটার পোড়া জীবনে একটা ম্যাজিক ভীষণ দরকার।