dazzle with me

Action Classics Inspirational

4.0  

dazzle with me

Action Classics Inspirational

শ্রী গণেশ

শ্রী গণেশ

3 mins
242



  প্রায় তিরিশ বছর আগে বাবার হাত ধরে সুদূর মহারাষ্ট্রের এক প্রত্যন্ত গ্রাম 'শোনপাতী, থেকে আসামে চলে আসে বালাজি দেশমুখ । ওর বাবা এখানে মাল বওয়ার কাজ করতো আর ছোট্ট বালাজি বাবার সঙ্গে সঙ্গে ফাইফরমাশ খাটতো বাবুদের। মূলত বারাক নদীর উত্তাল জলে যে গাছের গুঁড়ি গুলো ভাসিয়ে দেওয়া হতো, সেগুলো গোলা পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যেত হাতিতে, কিন্তু প্রবল জল থেকে ওই কাঠের লোক লগগুলো যে কজন শ্রমিক টেনে তুলতো তাদের মধ্যে একজন ছিল বালাজির বাবা ভূষণ দেশমুখ। তারপর থেকে আসামই ওদের মাতৃভূমি। এখানেই বালাজির বোন অমৃতা জন্মালো ,ওরা দুই ভাই বোন বড় হল ,অমৃতার অসমীয়া ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু বালাজির জন্য কনে খুঁজে আনা হল সুদূর মহারাষ্ট্র থেকে । ভাবনা খুব ভালো মেয়ে, বালাজির অভাবের সংসারে ও সুন্দর মানিয়ে নিয়েছে। 


  ভূষণ আর তার স্ত্রী মারা গেছেন অনেকদিন ,সংসারে বালাজি তার স্ত্রী ভাবনা আর ওদের একমাত্র মেয়ে, বছর-দশেকের বেলা । সে আর দশটা বাচ্চার মত স্বাভাবিক নয় একটু বুদ্ধি কম ,চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে মেন্টালি রিটারডেড।


 বেলা সারাদিন খেলা করে শ্রী গনেশ এর সঙ্গে। শ্রী গণেশ হলো একটা লম্বা চওড়া ঝোলা কান, কুচকুচে কালো রঙের, বড় বড় দাঁত ওয়ালা হাতি । আসলে বালাজি ওর মাহূতের কাজ করে । নদী থেকে কাঠ তুলে গোলা পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যায় শ্রী গণেশ। ওকে দেখভাল করার দায়িত্ব পড়েছে বালাজির কাঁধে । 

  অন্যসব মারাঠি পরিবারের মতো বালাজির পরিবারের ও পূজ্য দেবতা গণেশ। ভাবনার খুব ইচ্ছে বেলাকে নিয়ে একবার ওদের গ্রামে যায় ,মেয়েকে দেখিয়ে নিয়ে আসে, ওখানে গণেশ পূজোর কি ধূম!এখানে তো বিহূই সবথেকে ধুমধামে পালন করা হয়, তবে বালাজি আর ভাবনার মনে গণেশ উৎসব উঁকি দিয়ে যায়। "গনপতি বাপ্পা মোরিয়া".......।বেলাও মায়ের দেখাদেখি গণেশ পুজো করে। ও অাবার শ্রী গণেশ কে ভাই পাতিয়েছে । মা বলেছে গণেশই ওর ভাই, তাই ভাই দুজের দিন ওকেই ভাইফোঁটা দেয় । 

  এই অসম বন্ধুত্ব উপভোগ করে এলাকার সবাই।কাজের সময়টুকু বাদ দিয়ে অবসর সময় শ্রী গনেশ ওর সঙ্গে ঘুরছে, খেলা করছে, ঝগড়া করছে, রাগ অভিমান করছে, যেন সত্যি দুই পিঠ পিঠি ভাই-বোন । নদীর জল শূঁড়ে করে এনে দুষ্টুমি করে ভিজিয়ে দেয় বেলাকে আর ও রেগে মুলে দেয় শ্রী গণেশের ঝোলা কান। 

  ভাবনা আর বালাজি বেলাকে শ্রী গনেশ এর কাছে রেখে নিশ্চিন্ত।ওকে নিয়ে কোন ভয় নেই, গণেশ ওকে ঠিক দেখে রাখবে, তা না হলে এই জঙ্গলে, জঙ্গলে কেন ?সব জায়গাতেই তো মেয়েদের বড় বিপদ ,বেলার মত মেয়েদের তো আরো বেশি । 

  একদিন দুপুরে বালাজি তখন গোলাতে, সাহেবকে কাঠের গুঁড়ির হিসাব বুঝিয়ে দিতে,ভাবনা বাড়িতে রান্নায় ব্যস্ত । বাড়ির কাছাকাছি একটা ঝোড়ার কাছে খেলে বেড়াচ্ছে বেলা।ওর তো আর স্কুলে যাবার বালাই নেই । ওর মত বাচ্চাদের পড়ানোর ক্ষমতা বালাজির মত মানুষদের কোথায় ? এখানে স্কুল বলতে তো একটা প্রাইমারী,যাতে একজন মাত্র মাস্টার আর তাও বেশিরভাগ দিনই তালা মারা ,মাস্টার গেছেন শহরে দরকারি কাজে! 

  হঠাৎই ঝোড়ার কাছে পাকা রাস্তায় একটা গাড়ী এসে থামল ,দুজন লোক চুপিচুপি নেমে এলো বেলার দিকে। বেলা তখন লুকোচুরি খেলছে গণেশের সঙ্গে । গণেশ লুকিয়েছে একটু দূরে গাছের পেছনে। হঠাৎই লোকটা পকেট থেকে বার করে একটা রুমাল চেপে ধরল বেলার মুখে !এলাকাগুলোতে যেমন চোরাশিকারে বহু প্রাণী হারিয়ে যায় তেমনি বহু বালিকা, কিশোরী ,যুবতী মেয়েও হারিয়ে যায় চিরদিনের জন্য। তাদের ঠিকানা হয় বড় বড় শহরগুলোর অন্ধকার কুঠুরিতে ,যেখান থেকে তারা আর কোনদিন ফিরে আসতে পারে না । সেসব শিকারিদের কাছে বেলা তো সহজ শিকার। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে বেলা, ওর ছোট্ট শরীরটাকে নিয়ে গাড়িতে তোলা কঠিন ব্যাপার নয়।ওরা আগেই খেয়াল করেছে ওদের পোষা হাতিটা বেশ দূরে । 

  কিন্ত যেই ওকে গাড়িতে তুলতে যাবে ,সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎই শূঁড়ের ধাক্কায় গাড়ি নড়ে উঠলো, আর এক প্রচন্ড ধাক্কা । একটা বিকট শব্দ করে গাড়ি গিয়ে পড়লো ঝোড়ার জলে। যে লোকটা বেলাকে কোলে তুলেছিল ,ঐ বিশাল হাতিকে এত কাছ থেকে দেখে তাড়াতাড়ি নামিয়ে দিলো রাস্তার ওপরেই। শ্রী গণেশ লোকটাকে শূঁড়ে তুলে মারল এক আছাড় , সঙ্গের জন ততক্ষণে দিয়েছে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুট। 

  ঝোড়া থেকে জল এনে শ্রী গণেশ ছেটাতে লাগল বেলার মুখে।বেশ কয়েকবার ছেটানোর পর জ্ঞান ফিরে বেলা জিজ্ঞাসা করলো, "গনু ভাইয়া আমার মাথায় এতো দরদ কেনো? "শ্রী গণেশ আর কি বলবে? শূঁড়ে করে ওকে নিয়ে চলল ওদের বাড়ির দিকে। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action