Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.
Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.

Maheshwar Maji

Abstract

3  

Maheshwar Maji

Abstract

সেলফি

সেলফি

4 mins
877



রাহুল এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।জানলার কাঁচ তুলে পাশের গাড়িটির দিকে।সাদা রঙের গাড়িটির গায়ে লাল হরফে লেখা রয়েছে।

"স্বর্গলোক মৃত্যু যান।"

একটি মৃতদেহ কাঁচের ঘরটির মধ্যে লম্বালম্বি রাখা আছে।

মুখচা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।মনে হচ্ছে যেন ঘুমিয়ে পড়েছে।মৃত বলে ভাবাই যায় না।


এদিকে পাঁচ মিনিট হয়ে গেল।বাসটা অল্পও নড়েনি। সূর্যের তাপটা রাহুলের কোলে এসে পড়ছে।তাই দরদর করে ঘামছে।

একরাশ বিরক্তি, মনটাকে তেঁতো করে দিল।

কিছুতেই নজরটা অন্যদিকে ঘোরাতে পারছে না। ফিরে,ফিরে সেই মৃতদেরটার দিকেই চলে আসছে।এমন সময় রাহুলের মনে হল একবার মৃতদেহটাকে জিজ্ঞাসা করলে হয়,কাঁচের ঘরে কেমন লাগছে মশাই?

অবাঞ্ছিত প্রশ্ন!সে পাগল নাকি?আবার একবার তাকাল,মৃতদেহটার দিকে।

লোকটার মুখে এতটুকুও বিরক্তি নেই কেন?

তবে কী তিনি মৃত্যুর পর সত্যি সত্যিই মানুষ সুখী হয়ে যান?

নিশ্চয়ই বড় ধরণের কোন রোগ হয়েছিল?...আবার নাও হতে পারে।আজকাল হার্ট ফেলুওর বা অ্যাটাক তো কমন জিনিস।


রাহুল এবার নিজের বুকের বাঁদিকটা হাত দিয়ে দেখে নিল।

মাঝে,মাঝে ধড়ফড় করে।

কী জানি জীবনের ঘড়ি কখন থেমে যায়?

অবশ্য ইন্সুরেন্সের সমস্ত কাগজ,পত্রগুলো মৌরীর কাছেই রাখা আছে।

রাহুলের যে ভুলো স্বভাবের, সেটা মৌরীর জানতে বেশি দিন সময় লাগেনি।

তাই গুরুত্বপূর্ণ নথি এমনকি মাইনের টাকাটা পর্যন্ত রাহুল মৌরীর জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে।

আগের থেকে তাই মাথাটা হাল্কা থাকে।অফিসের কাজেও মন দিয়ে করতে পারে।


বাসের অনেকেই নেমে হাঁটতে শুরু করেছেন।আগে একটা ট্রাম আটকে পড়ায় এই বিপত্তি।

সারাসারি করতে সময় লাগবে।সুতরাং অফিস যাত্রীদের বসে থাকলে চলবে না।

রাহুল কি মনে করে মৃতদেরটার সাথে একটা সেলফি তুলে নিল।

বেশ লাগছে!জীবিত আর মৃতের অনবদ্য যুগলবন্দি।


অফিস ছুটির পর রাহুল আজ একবার ফুলের দোকানে ঢুকল।

মৌরী দুবার ফোন করে মনে করিয়ে দিয়েছে।তাই রাহুল ভুলেনি।

একটা ভালমত গোলাপ তোড়া নিয়ে বাসে চেপে উঠল।

এবারের সিটটাও জানলা দিকে।একই রকম আর একটা মৃতদেহ দেখতে পেল।তবে চেষ্টা করেও তার মুখটা রাহুল ভালভাবে দেখতে পেল না।

ফুলের মালায় ঢেকে আছে।

রাহুল ভাবল,

এর আবার কী হয়েছিল কি জানি?

সমস্ত মৃত্যুর পিছনে কোন না কোন একটা কারণ তো থাকবেই।

কমন হোক বা আনকমন।


বাস থেকে নামার পর রাহুলের মনে পড়ল।তার ভাড়াটা দেওয়া হয়নি।

ইস!

আফসোস করেও এখন কোন লাভ নেই।সঙ্গে,সঙ্গে মধ্যবিত্ত মনটা দুবার নেচে উঠল।ছয় টাকা লাভ হল।কার লোকশান হল দেখে লাভ নেই।

মানিব্যাগটাকে আদর করতে গিয়ে বুঝল।সেটা হাওয়া।

একটু আগের করা হিসেবটা উল্টে গেল।কত ছিল সে জানে না। মৌরী বলতে পারবে।

সেটা বড় কথা নয়।আসলে তার গুরুদেবের দেওয়া কয়েকটা অক্ষরের একটা জপমন্ত্র ছোট্ট কাগজে লেখা ছিল।

সারাদিনে একশো আট বার উচ্চারণ করতে হয়।বিগত দু বছর ধরে জপ করেও মুখস্ত করতে পারেনি।

এসব মন্ত্র আবার অন্য কাউকে বলা নিষেধ।না হলে মৌরী বাঁচিয়ে দিত।


নিজের বিবাহ বার্ষিকীর দিনটাও রাহুলের মনে থাকেনা।

খাবার টেবিলে রকমারি রান্না। এমনকি মৌরীর সাজগোজ দেখেও রাহুল বিন্দুমাত্র আন্দাজ করতে পারেনি।প্রথমটাই ভাবল সন্টুর বোধ হয় বার্থ ডে হবে।পরক্ষণেই মনে পড়ল,ও তো সবে তিন বছরের।এখন তো জন্মদিন পালন করা হয় না।পাঁচ বছর পূর্ণ হলে হবে।

বিছানায় গোলাপ ফুলের মিষ্টি গন্ধ পেয়ে রাহুলের ভুল ভাঙল।আজ তো তার বিয়ের দিন!

সাথে, সাথেই লাফিয়ে বলে উঠল, ইয়েশ।আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী।মনে পড়েছে ।তারপরেই কপাল চাপড়ে বলে উঠল,

...ইস!! কিছু তো গিফ্ট আনা হল না।


মৌরী ভাঁজ করা চাদরটা ডিভানের চারিদিকে ভাল করে গুঁজে বলে উঠল,আমাকে যে প্রতি পল এত ব্যস্ততার মধ্যে রেখেছ।এটাই কী কম বড় গিফ্ট?

তারপর রাহুলের গলা জড়িয়ে আবার বলে উঠল, আজ সেই ফ্রেঞ্চ কিসটা করো তো জড়িয়ে।না, সেটাও আমাকেই দেখিয়ে দিতে হবে?

রাহুল বলে উঠল,মনে নেই মানে!তবে আজ কিন্তু খাওয়ার পর ব্রাশ করিনি।

---তাহলে আমি করি?

---সেই ভাল।

মৌরীর খুব হাসি পেল।

এমন সরল মনা স্বামীর প্রতি দিন,দিন ভালবাসাটা সরের মত গাঢ় হয়ে পড়ছে। হৃদয়ের অলিন্দে জমিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে। অসময়ে একটু,একটু বের করবে।


"ওম হ্রীং ক্লিং কৃষ্ণায় নমঃ....."

ভোরবেলায় রাহুলের মুখে উপরোক্ত মন্ত্রটা বার,বার শুনে মৌরী তুলসিমঞ্চে জলটা ঢেলেই দৌঁড়ে এসে তাকে জাগিয়ে তুলল।

---কখন থেকে কী বড়বড় করছো তুমি?

ওম হ্রীং ক্লিং কৃষ্ণায় নমঃ।এটা কী হ্যাঁ?

রাহুল চোখ কঁচলে বলে উঠল।

--ধ্যাত কি যাতা বলছো?আমি কেন ওসব বলবো?

মৌরী চেঁচিয়ে উঠল, তাহলে আমি কোত্থেকে শুনলাম হ্যাঁ?...এখুনি তো ঘুমের ঘোরে বকছিলে।

রাহুল এক লাফে খাতা,পেনটা নিয়ে বসল।

---আর একবার বলো তো কী বলছিলাম?...চট করে লিখে নিই।

লিখেই বলে উঠল,আরে এটা তো আমার গুরুমন্ত্র!এবার বুঝেছি।তাহলে আসল ব্যাপারটা খুলেই বলি তোমাকে।গতকাল বাস ওঠে দুটো মৃতদেহ দেখেছিলাম। আজ স্বপ্নে তারা আমার কাছে এসে হাজির। বাইনা জুড়লেন।

গতকাল তোলা সেলফিটা তাদেরকে একবার দেখাতেই হবে। আমি বললাম,আপনারা তো মৃত।আবার ফিরে এলেন কী করে?

উনারা জবাব দিলেন,যমরাজের মোষটা বাগানের ভেতরে ঘাস খেতে ঢুকে পড়েছে।উনি আমাদের অপেক্ষা করতে বলে বাহন খুঁজতে বেরুলেন।সেই ফাঁকে আমরাও ভগা।একদম তোমার কাছে।

ঠিক তখনি যমরাজের ডাক কানে এল।

উনারা বলতে লাগলেন,সেলফি দেখাও ।নাহলে তুমিও চলো আমাদের সাথে।

আমি শত চেষ্টা করেও মোবাইলটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।বললাম,এটা অন্যায়।আমি কেন যাব? উনারা হাত ধরে টানতে শুরু করতেই,আমি

বার,বার গুরুমন্ত্রটা জপ করতে লাগলাম।

দেখলাম ওনারা দুজনই একটু বাদে ওধাও হয়ে গেলেন।


....রাহুল চিন্তিতভাবে বলে উঠল,কিন্তু এটা কী করে সম্ভব?

মন্ত্রটা আমি আজ দু বছর ধরে মুখস্ত করেও পারিনি। সেটা হঠাৎ কী করে নির্ভুল বলে দিলাম? তাও স্বপ্নে!!

মুখে জলের ঝাপটা নিয়ে রাহুল বলে উঠল,গুরুর দয়াই জোর বেঁচে গেলাম। আর ভুল করেও কক্খনো কোন,মৃত ব্যক্তির সেলফি তুলতে যাব না।

  


Rate this content
Log in