নবজাগরণ
নবজাগরণ


আমার জন্ম গ্রামে।সেখানের জলবায়ুতেই বড় হয়েছি।সেখানকার প্রকৃতি আমার খুব চেনা।
একদম মায়ের মতো।ছটা ঋতুতে ছয়রকম বেশ ধরে আমার তেইশটা বসন্তকে পরিপূর্ণ করেছিল।
তারপর আমি একসময় কলেজের পড়া শেষ করে পাড়ি দিলাম মুম্বাই এ।
খুব ছোটখাটো একটা কারখানায় সুপার ভাইজারি করি।গ্রামের ছেলে।এক জায়গায় আবদ্ধ হতেই মন,প্রাণ একেবারে কেঁদে উঠল।
এমন সময় দীপাবলিতে দিন কয়েকের ছুটি পেয়ে গেলাম।সাথে একমাসের মাইনে বোনাস।
আর আমায় রোখে কে?
একেবারে ডিগবাজি দিয়ে উঠলাম সোজা খান্ডালায়।
সেবার আমি একাই গেছিলাম।নামটা প্রথম শুনেছিলাম "গুলাম" নামক হিন্দি পিকচারে।আমির খানের মুখে।সেইথেকে অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল একবার ঘোরার।মুম্বাই থেকে লোকাল ট্রেন ধরেও যাওয়া যেত।
আমি বাস ধরে গিয়েছিলাম।
সেই অভিজ্ঞতা আমার জীবনকে অন্য একটা মাত্রা দিয়েছিল।একদিকে পাহাড়ী সবুজের ঢাল,অন্যদিকে তার কোলে ভাসছে সাদা,সাদা পেজা তুলো
র মতো মেঘ!
সবে মিলে আমি সেদিন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম রূপকথার কোন রাজ্যে।
পাহাড়ের বুকে সুদৃশ্য হোটেলের নয়নাভিরাম চুড়ো।সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলেছে কালো পিচের রাস্তা। ট্যানেলের আলো,আঁধারি অন্ধকারে কোন সুর উঠছিল যেন।
সেই ভাললাগা আমার বর্ণনার অতীত।
আমার দুচোখ বরাবর সমতল দেখতেই অভ্যস্ত ।সেই প্রথম উচ্চতার সাথে পরিচয় ।
তখনো দু,একটা ঝর্ণা নীল পাহাড়ের বুক চিরে দুরন্ত বালিকার মতো ঝাপ দিচ্ছিল গাছের ডালে।
আমার খিদে,তেষ্টা কিছুই ছিল না। এমনি সেই খান্ডালা,লোনাভালার প্রকৃতির অপরূপ সাজ!!
আমার মাস কয়েকের বদ্ধ জীবন,সেদিন খান্ডালার সবুজঘেরা পাহাড়ের খাঁজে মুক্তি খুঁজে পেয়েছিল ।
অনেক দিন পর প্রকৃতির প্রেমে মশগুল হয়ে দুটো কবিতা লিখে ফেলেছিলাম।
তাও আবার বাদাম ভাজার ঠোঙায়।
সেই থেকে আমি পাহাড় আর উপত্যকার প্রেমে মজে গেছি।
এখনো অবসর পেলে চুপিচুপি বেরিয়ে পড়ি,নতুন কোন পাহাড়ী শহরে।