সবুজ
সবুজ


সবুজ আমার ছেলে। নামটা আমিই দিয়েছিলাম। সেই উনিশ বছর বয়েসে এই একান্নবর্তী পরিবারে সেজো বউ হয়ে এসেছিলাম। বাবার ইচ্ছা ছিল পড়াশুনাটা যেনো বন্ধ না করি। বিয়ের আগে সেটা জানিয়ে ও রেখেছিলেন বাবা। কিন্তু বিয়ের পর আমার শ্বাশুড়ি মা বাবাকে এই বিষয়ে বলেছিলেন ' কি হবে আর পড়াশুনা করে, ঘর আর বাচ্চা এই দুটোই ত শুধু সামলাতে হবে, ওটার জন্য পড়াশুনা করতে লাগবে না। আর কোনো কথা হয় না। আমার পড়াশুনা আর হলো না। শুধু ছেয়েছিলাম গানের চর্চাটা যেনো বন্ধ না হয়। আমার খুব ছোট বেলায় গানের হাতে খড়ি। অনেক প্রতিযোগিতায় পাওয়া পুরষ্কার ব্যাপার বাড়ির আলমারিতে সযত্নে রাখা কিন্তু শশুরবাড়ি তে এর কোনো দাম নেই বুঝতে পারতাম। সংসার আর বাচ্চা সামলানোর বাইরে এরা কেউ বেরোতে পরে নি। মনটা খুব খারাপ হতে যেত। ভাবতাম গানের জন্য এত সাধনার আর কোনো দাম থাকলো না আমার কাছে। এরই মাঝে সবুজ এলো। বংশে তিন মেয়ের পর আমার ছেলে। শাশুড়ি মা আমার উপর একটু দুর্বল হয়ে পড়লেন। আমার অনেক কথাই মেনে নিতে শুরু করলেন। আমিও এই সুযোগে আমার গানের চর্চা আবার শুরু করার বিলটা পাশ করিয়ে নিলাম। সংসার, বাচ্চা আর গান এই তিনটে নিয়ে আমি খুব ব্যস্ত হতে পড়লাম। আর সাফল্যও পেলাম। আজ আমি একজন খ্যাতনামা গায়িকা। বিদেশ থেকে আমার গানের আমন্ত্রণ আসে। কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর আমি আজও খুঁজে চলেছি। আমার এই সাফল্যের পিছনে কে, আমার পরিশ্রম না আমার ছেলে সবুজ?