স্বদেশ ভাবনায় নজরুল।
স্বদেশ ভাবনায় নজরুল।
স্বদেশ ধারণাকে প্রেমের গ্রন্থিতে গেঁথে স্বদেশ ধারণার সীমাকে দিকচক্রবালের মতো অলীক করে দিয়েছিলেন নজরুল।জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ কোন ভেদ রেখা তাঁর স্বদেশ প্রেমকে পারে নি খন্ডিত করতে।
ব্রিটিশ শাসনে পরাধীন ভারতে জীবনের অধিকাংশ সময় কেটে যায় তার। কারার অত্যাচারও ভোগ করতে হয় দীর্ঘদিন। স্বদেশ প্রেমে প্রাথমিকভাবে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষে ভরে ওঠে। গান, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তার স্বদেশ প্রেম সব বিদ্বেষ অতিক্রম করে মানব প্রেমের ঘাটে গিয়ে উঠেছে। মানব প্রেমের ঢেউ মানব মনের সব মলিনতা, অন্ধকার দূর করে বিশ্বমানবতার প্রেম শিক্ষাই বলে তিনি মনে করেন।
গানে, কবিতায়, প্রবন্ধে, সম্পাদকীয়তে বিশ্বমানবের মুক্তির কথা বলেছেন নজরুল। তিনি বলেছেন, " আমি উপাড়ি ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে"। এ এমন এক সৃষ্টি যেখানে কেউ কারো অধিনে থাকবে না। যেখানে থাকবে না কোন নিপীড়ন, অত্যাচার, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প। নবসৃষ্টি হবে বিশ্বমানবের সুখ ও সমৃদ্ধির আধার।
" একই বৃন্তে মোরা দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান "- বলে যে সব মানুষই একই মায়ের সন্তান। সব ভেদাভেদ ভুলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানবতার যে নির্মমভাবে লঙ্ঘল ঘটে চলেছিল তা রুক্ষে দিতে তিনি ডাক দিয়েছেন--
"অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানেনা সন্তরণ,
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পণ,
হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন।
কান্ডারী বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা'র।"
এই মা সকল অত্যাচারিত, নিপিড়ীত, অসহায় মানুষের বিশ্বজনীন মা। বিশ্বের সব অত্যাচারিত, নিপিড়ীত, অসহায় মানুষের মুক্তি চেয়েছেন নজরুল। 'ফরিয়াদ' কবিতায় বলেছেন তিনি, "------- এবার বন্দী বুঝেছে, মধুর প্রাণের চাইতে ত্রাণ;
মুক্ত কন্ঠে স্বাধীন বিশ্বে উঠিতেছে একতান।
জয় নিপিড়ীত প্রাণ, জয় নব অভিমান, জয় নব উত্থান।"
সমগ্র বিশ্ব স্বাধীনতা তার অভিপ্রেত। সব মানুষের মুক্তি তার সাধনা।এই তার স্বদেশ প্রেম, স্বদেশ ভাবনা।