STORYMIRROR

Paula Bhowmik

Comedy Drama Thriller

3  

Paula Bhowmik

Comedy Drama Thriller

সাদা কালো দেহ

সাদা কালো দেহ

3 mins
162

সেবার ছটপুজোর আগের দিনের ঘটনা। তখন ভোর রাত। চারটে নাগাদ হঠাৎ একটা কিছু প্রাচীর থেকে ঝাঁপ দিয়ে পড়লো মাটিতে। ঘুম তো আমার খুবই পাতলা। আধো অন্ধকারেও দেখলাম বটে কিন্তু বুঝতে পারলামনা। কুকুর টুকুর হবে ভেবে নিশ্চিন্তে পাশ ফিরে আবার চিনি ঘুমের চেষ্টা করাই ভালো।


বাইরে একটা টিনের চালা ঘর আছে। অনেকটা স্টোর রুমের মতো। ওপর দিকটায় চাটাইয়ের বেড়া আর নিচটা কয়েকটা বাঁশ জুড়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা।

তাতে করে মোটামুটি পরিষ্কার থাকে জায়গাটা।

ভেতরে থাকে একটা স্কুটার, দুটো সাইকেল, আর যত কিছু হাবিজাবি, বালতি, ঝুড়ি, কোদাল, বাতিল ভিডিও গেম, ভাঙা রেডিও, এসব আরকি।


ঘুমাবো কি! মাঝে মাঝেই ঘ্যাস, ঘটাং, ঠং, কটাৎ এই সব চলছে। কুকুর জাতীয় কিছু অথবা বেড়াল বা বেজিই হবে। কিন্তু হঠাৎ যেন সাইকেলের বেল টিং করে উঠলো! নাঃ আর বিছানায় থাকা যাচ্ছে না। 


উঠে বাইরের লাইটটা জ্বালিয়ে বাথরুমের জানালা দিয়ে দিই উঁকি। কিছু দেখা তো যায়না তবে শব্দ একদম বন্ধ। এরকম বার দুয়েক লক্ষ্য করার পর মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। কুকুর বা অন্য কোনও প্রানী হলে লাইট জ্বালাতেই চুপ করে যায় কি করে। 


এবার পতিদেবতাকে ঠেলেঠুলে জাগানো চেষ্টা করি। 


_এই যে, শুনছো সাইকেলের ঘরে না মনে হয় কিছু ঢুকেছে। কেমন যেন শব্দ হচ্ছে। কুকুর টুকুর হবে বোধহয়। মনের সন্দেহের কথাটা বলিনা। 


জাগলেন হয়তো, শুনলেনও বটে। কিন্তু ওঠার ইচ্ছে আছে বলে মনে হলোনা। পারমিশন ছাড়া তো পেছনের দরজাটা খোলা ঠিক হবেনা, অগত্যা প্রস্তাব দিই.

________আমি দরজা খুলে দেখবো? 


হয়তো ঘুমের ঘোরে বলে ওঠেন ____উমম দেখো।


আমাকে আর পায় কে? প্রথমে দরজাটা আস্তে করে খুলে পর্দার ফাঁকা অংশ দিয়ে নজর রাখি। তবে এবার ইচ্ছে করেই লাইট জ্বালাইনি। 

তাকিয়েই আছি। নীরবে প্রতীক্ষায় আছি। মশা কামড় দিলেও মারছিনা শব্দ করে। অপর পক্ষও একেবারে নিঃশব্দ। 

মনে মনে ভাবছি আমি এর শেষ দেখেই ছাড়বো। 

একটু পরেই তো সকাল হবে। যদি কেউ ভেতরে ঢুকেই থাকে কতক্ষণ থাকবে। অন্ধকারে চোখ সয়ে এসেছে ততক্ষণে। 

বেড়ার ওপর দিকেও কিছুটা করে ফাঁকা অংশ আছে। হঠাৎ মনে হলো একটা ছায়া ছায়া মানুষের মাথা দেখা দিয়েই সাথে সাথে নিচু হয়ে গেল। ভাবছি, আমি কি ঠিক দেখলাম নাকি আমার মনের ভুল!

আরো কিছুটা সময় চুপ করে আছি। এদিকে ভোর হয়ে আসছে। হঠাৎ দেখি সেই ছায়ার মাথাটা আবার উঠে ঘরের ভেতরেই নড়াচড়া করছে। এবার তো আর বুঝতে বাকি নেই। চিঁই চিঁই করে চিৎকার শুরু করি। 


"এবার তুই কি করে বাড়ি যাবি? মেরে হাত পা ভেঙে দেবো। আমার ছেলেটা সাইকেলে করে একটু কলেজ যায়। ঐদিকে তোর নজর। সবাই পূজো করছে আর তুই চুরি করতে এসেছিস? আসলিই যখন একা কেন আসলি? কাউকে নিয়ে আসলে তো তাও চুরি করে পালাতে পারতিস। এবার তোর আর রক্ষা নেই।" 


আমার সুমধুর চেঁচামেচিতে সামনের বাড়ির মাসিমণিও গ্রিলের বারান্দায় দরজার কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন _______ কি হয়েছে গো পলা? 


_______এই দেখোনা


মুহুর্তেই একটুখানি ফাঁক দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে, ছিপছিপে চেহারার সাদাকালো ডোরাকাটা ফুলহাতা গেন্জি পরা একটা দেহ প্রাচীরে দুহাতের ভর দিয়ে ভল্ট খেয়ে একলাফে প্রাচির টপকে পগার পার। 

এবার সাহস করে দরজা খুলে বেরিয়ে দেখি বাইরেই একটা সাইকেল দাঁড় করানো। আর একটা সাইকেল বের করতে চোর আবার ভেতরে ঢুকেছিলো। 

নীচের কয়েকটা বাঁশ কত কষ্ট করে করে খুলেছে কত সময় ধরে কে জানে! একেই বলে অতি লোভে তাঁতি নষ্ট। কেনরে বাপু একটাই নিতিস। 

যাকগে না নিয়ে তো আমাদেরই ভালো। বোঝাই যাচ্ছে ফেলে রাখা শৌখিন চপ্পল জোড়া দেখে যে ততটা গরীব মোটেও নয়। সাইকেল বিক্রির পয়সায় ড্রাগ খাওয়াটাই হয়তো ছিল উদ্দেশ্য, কে জানে! 


এবারে খোঁজ পড়লো বহু বছর আগের, 

বাড়িতে পড়ে থাকা শিকলের। 

দুটো সাইকেলকে যদি শিকলে জুড়ে যায় রাখা, 

হয়তো মিলবেনা আর চোর বাবাজীদের দেখা। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy