STORYMIRROR

Apurba Kr Chakrabarty

Horror Inspirational Thriller

3  

Apurba Kr Chakrabarty

Horror Inspirational Thriller

রহস্য স্মৃতি 2

রহস্য স্মৃতি 2

5 mins
201



শীতের গোধুলি, খাতড়া ব্লকে তিরিং গ্রাম থেকে কটা বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট ইন্সপেকশন করে ফিরছি। বায়োগ্যাস এজেন্ট হকের রাজদুতে পিছনে চেপে,গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্ল্যান্ট ঠিক ঠাক মাপের হয়েছে কীনা!,রানিং রিপোর্ট দিলে তবে সরকারী নিদিষ্ট রেটে ভর্তুকি মেলে। দপ্তরের ব্লক স্তরের আধিকারিক হিসাবে আমার সুপারিশ ও আই আর , ছাড়া ভর্তুকির বিল লাগবে না।


 এই এলাকার বায়োগ্যাস এজেন্ট হক , একটা নিদিষ্ট রেটে বায়োপ্ল্যান্ট পিছু সে কমিশন পায়। সে সময়ের ওর আয় আমার বার্ষিক গড় আয়ের পাঁচ গুণ ছিল। ভীষণ ভদ্র অমাইক, আর এ কাজ ছাড়াও আমার দপ্তরের অন্য ইন্সপেশনে, তাকে বাহনের মত পেতাম।তেলের দাম তো নিতোই না , বরং রাস্তার পথে মিষ্টির দোকান থাকলে ,মটোর সাইকেল স্ট্যান্ড করে চলার পথে একবার অন্তত দৈ মিষ্টি রসগোল্লা সন্দেস যখন যেটা, খাওয়াতো।

একা দায়হীন অবিবাহিত শক্তপোক্ত যুবা, মেসে থাকা ও তাস পেটানোর চেয়ে এই অজানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরা দক্ষিণ বাঁকুড়ার গ্রাম,বিস্তীর্ণ জনহীন সবুজপ্রান্তর, নির্জন মোরাম মাঠাল রাস্তা বন ঝোঁপ আর ছোট টিলা, কংসাবতীর ক্যানেলের বাঁধ বরাবর মোটর বাইকে এই জার্নি যেন কোন সরকারী দপ্তরের তদন্ত করা ,কোন কর্মীর একঘেয়েমী দায়িত্ব নয়! বরং এক অজানা অচেনা পথে হারিয়ে যাওয়ার অপার আনন্দ।


হকের হয়ে সরকারী আধিকারিক হিসাবে,কত যে তার অনুরোধে গ্রামবাসীদের বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের বিবিধ উপকারিতা ও সরকারের অনুদান অন্য সুযোগ সুবিধা বোঝাতাম। রানীবাঁধ ব্লকে তখন অতিরিক্ত দায়িত্বে।

খাতড়া রানীবাঁধ উপজাতিদের বাস বেশ উল্লেখযোগ্য।

তাদের সরল সাদাসিধে অসচ্ছলতার মধ্যে সুখ শান্তির জীবন আমায় আবেগভরা মনকে ভীষণ টানতো।তাদের ছোট ছোট গ্রামে ছোট ছোট সারিবদ্ধ মাটির কুঁড়ে, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, নিকানো দেওয়ালে নানা রংএর হাজার নকশা আঁকা,যেন এ এক নতুন অনুভূতি নতুন জগত।

আটের দশকের শেষে তখনও এই এলাকায় তেমন উন্নয়ন ছিল না। ট্রেন দুরে থাক ,বাস অনেক গ্রাম থেকে পনের বিশ কিমি দুর। সরকারী তৈরী কাঁচা মোরাম রাস্তাও তেমন তখন হয়নি ।প্রাকৃতিক ভাবেই মানুষের ব্যবহার হতে হতে ঝোঁপ জঙ্গলময় সুরু মোরাম পথেই মানুষের হাঁটা চলা।দশ বিশ কিমি পায়ে হাঁটা তাদের সেসময়ে কোন ব্যাপার ছিল না । আর এই আঁকাবাঁকা বন জঙ্গল ভেদ করা সরু মোরাম পথে হকের বাইক ছুটত । তবে উপজাতি ভিন্ন অন্য মানুষের ঘর বাড়ি কিছুটা উন্নত মানের, বা কিছু ইটের তৈরী থাকলেও, রাস্তা ঘাট প্রাকৃতিক পরিবেশ তো একই!

হকের সাথে এইপথে দিনে অনেক গেছি,আর খানিক মোরাম পথ বরাবর গেলে, খাতড়া সিমলাপাল বাস রুট, পাকা পিচ রোড, তার পর পাপড়া পাড় হলেই খাতড়া। বড়জোর সাত আট কিমি।সামনে একটা ঘন জঙ্গল, বেশ ঘন,অন্তত এক কিমি ভিতর দিয়ে যেতে হবে,বনের ভিতর টা অন্ধকার তখন ঘনিয়ে এসেছে, বেশ ঠান্ডায় কন কনে ভাব। কেমন যেন এক থমথমে ভাব।

হক থমকে বাইক থামালো। বলল" সাহেব এই বনের ভেতর দিকের দিয়ে গেলে পথ অনেক কম, আর বাঁ দিকে ঘুরে একটা আদিবাসী গ্রামের ভিতর বরাবর গেলে সাত আট মাইল বেশী ঘুরতে হবে, সময় বেশী লাগবে।"

আমি একান্ত ক্যাজুয়েল ভঙ্গিতে বললাম, "আরে বনের ভিতর দিকে গেলে ক্ষতি কী!"

হক বলল "বড় নির্জন পরিবেশ মানুষ জন সন্ধ্যার পর আর এদিকে যায় না।আপনি তো সঙ্গে আছেন, একা হলে যেতাম না।"

নাকে একটা কেমন পচা মাংসের গন্ধ লাগছিল, হককে বললাম" কাছাকাছি কোন ভাগাড় আছে মনে হয়,কেমন বিকট গন্ধ লাগছে।"

থতমত হক কেমন ঘাবড়ে বলে "সামনে তো একটা ভাগাড় আছে কিন্ত দুরে! আমার নাকে গন্ধ আসছে না তো! "

নিজেকে সাহসী প্রতিপন্ন করতে বললাম, "বনের ভিতর বরাবর চলুন আমি তো সঙ্গে আছি ।"

হক মটোর সাইকেল স্টাট করে দশ মিটার তখন যায়নি, একটা কেমন জোর হাওয়া বা ঝড়ে মত শব্দ যেন ছুটে আসছে কানে এল।

হক মুহুর্তে বাইকের মুখ বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে সর্বোচ্চ গতিতে বাইক চালাচ্ছে।সাবধানী হক কোন দিনও চল্লিশের বেশী চালায় না।আজ তো আশি বা আরও বেশী! রাস্তা ভালো নয় অন্ধকার, বাইক কেমন লাফাচ্ছে, ভয়ে বলি "কী হল এত স্পীডে চালাচ্ছেন!" পোরে যাবো যে! "

হকের মুখে উত্তর নেই।কোন শব্দ নেই। অগত্যা তাকে জড়িয়ে বসলাম পোরলে দুজনেই পোরবো । বাইক আর থামেই না ,দহলা হয়ে যখন সিমলাপাল খাতড়া বাস রুটে আরও ছ সাত কিমি পিছনে উঠলাম যেন প্রান খুঁজে পেলাম। ভালো রাস্তা,ঝাঁকুনীটা কমেছে, বাইকের স্পীড কিন্ত থামে নি।

খাতড়ার একটি লজে এসে বাইক থেকে হক নামল, আমিও নামলাম। হেলমেট খুলে পকেট থেকে রুমাল বের করে হক মুখ কপাল ঘাড়ের ঘাম মুছল এই শীতে! মুখ দিয়ে "বাপরে বাপ " বলে একটা সু দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, বলুন কী মিষ্টি আজ খাবেন! আজ স্পেশাল, অর্ডার দিন!

বললাম হঠাৎই "কী হল এমন বাইক ঘুরিয়ে এত

স্পীডে--"

হক কথা শেষ হবার আগে বলল "কেন আপনি ঐ বনে কিছু দেখলেন না! "

"একটা শব্দ শুনেছিলাম কেমন ঝড় আসার মত । "  "সামনের দিকে নজর দেন নি,কিছু উন্মত্ত মোষ আর গরু কী ভীষণ ক্রোধে শিং উচিয়ে তেড়ে আসছিল! ওখানে থাকলে গুঁতিয়ে মেরেই দিতো। "

"একটু থেমে অনুতাপ আর অপরাধী স্বরে বলল বাবাজী তো সব দিন বাঁচাবে না! আর সর্তক তো করেছিলেন, দোষ আমার।"

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম "কী আং বাং বকছেন, মাথায় কিছুই ঢুকছে না। খুলে বলুন না!"

এরপর হক যা বলল ছোট করে বললে তার মর্মার্থ এই ,একদিন তখন আমি এখনে আসি নেই। বছর খানেক আগে এই পথেই হক একাই একটু সাঝ রাতে বাইকে ফিরছিল।বনের প্রায় শেষভাগে,একটা ভাগাড় আছে ,মৃত গরু মোষ বাছুর কুকুর বিড়াল সব ফেলা হয়। ঠিক এইখানেই হকের বাইকের স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়, হক হাজার চেষ্টায় গিয়ারের ধাক্কা দিয়ে দিয়ে নিষ্ফল, বাইক স্টার্ট নিচ্ছে না।এদিকে নির্জন পরিবেশ নিঃসঙ্গ বনের অন্ধকার, বর্ষার দিন,মেঘের বিরামহীন গর্জন, বিদ্যুতের ঘন ঘন ঝলকানি, বৃষ্টি যেকোন সময় নামতে পারে। হঠাৎই পশু প্রানী পচা বিকট গন্ধ যেন এলাকায় ভরে গেল,সঙ্গে তার চোখের ভ্রম কীনা ! রাস্তা সংলগ্ন ভাগাড়ে উপর কখনও গরু ,কখনও মোষ কখনও বিড়াল, একই স্থানে রুপান্তরিত হচ্ছিল এক অলৌকিক দৃশ্য। তারা ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে তাকে যেন ভেংচি কাটছে।আকাশের বিদ্যুতের আলো চমকালে দেখছে, আর অন্ধকারে ওদের চোখ গুলো কেবল ক্রোধে জ্বল জ্বল করছে, যেন খেতে আসছে।হকের প্রান বায়ু বের হব হব।আচমকাই এক মধ্য বয়সের মানুষ পিছন থেকেই আসছিলেন, থমকে দাঁড়িয়ে বললেন কী হল! হক কাকুতি মিনতি করে সাহায্য চাইল । তার আসার কারণ,ও পরিস্থিতির কথা বলল। বিদ্যুতের আলোয় যতটুকু নজরে এল,হকের মনে হল। ভদ্রলোকের গায়ে গেরুয়া বসন,আর গলায় রুদ্রাক্ষ মালা,খালি পা।

তিনি,"কৈ দেখি " বলে যেই বাইকের গিয়ার দাবিয়েই স্টার্ট করলেন,ম্যাজিকের মত বাইক ঠিক হল, তিনি বললেন " চল,তোমার সাথে খাতড়া যাবো।"

কৃতজ্ঞ হক তাকে সম্মানের সীটের পিছনে বসিয়ে যাত্রা শুরু করল।

যাবার পথে ভদ্রলোক বললেন, "এই জায়গাটা ভালো নয়, তিথিটাও আজ খারাপ। একা রাতে কোন দিন এ পথে যেও না।পাঁচ সাত মাইল ঘুরে দহলায় পিচ রোড পাবে।ওই পথটা নিরাপদ।"

হক কী বলে যে কৃতজ্ঞতা জানাবে ভাবতেই পারছিল না।তখন পিচ রোড সবে উঠেছে,দুরে খাতড়ার আলো দেখা যাচ্ছিল। হকের অনুভব হল পিছন সীট টা,হাল্কা, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল পিছনে কেউ নেই।

হকের মনে হল তিনি নিশ্চয় কোন ঈশ্বর বা আল্লাহর দুত। তাকে রক্ষা করতেই যেন তাঁর হঠাৎ আবির্ভাব।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror