রেডিমেড চাইল্ড
রেডিমেড চাইল্ড
“নিউ লাইফ” নার্সিং-হোমের সামনে পৌঁছে গাড়িতে বসেই স্বপ্নপুরনকে ফোন করে আকাঙ্ক্ষা। “চলে এসেছি। জাস্ট ফাইব মিনিট। তুমি নার্সিং-হোমে গিয়ে বস। আমি আসছি।” ফোন রিসিভ করে আকাঙ্ক্ষা কিছু বলার আগেই এক দমে কথাগুলো বলে স্বপ্নপুরন। “ও.কে” বলে ফোন রেখে গাড়ি থেকে নামল আকাঙ্ক্ষা। ড্রাইভারকে গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলে নার্সিং-হোমে ঢুকল ও। আকাঙ্ক্ষা কর, একটি সরকারি স্কুলের অ্যাসিস্টেট হেড মিস্ট্রেস। আর ওর হাজবেন্ড স্বপ্নপুরন কর, একটি মাল্টিন্যসানাল কন্সট্রাকসান কোম্পানির ডি.জি.এম। “নিউ লাইফ” নার্সিং-হোমটি ডঃ সম্ভাবনা পাত্রের। এখানে প্রধানত প্রজনন-গত সমস্যার চিকিৎসাই করা হয়। বহু নারীর মাতৃত্ব লাভের ইচ্ছে পূরণ করেছে এই সম্ভাবনা পাত্র। আকাঙ্ক্ষার সে অর্থে কোনও প্রজনন-গত সমস্যা নেই। কিন্তু ওর চোখে এখন হেড-মিস্ট্রেস হওয়ার স্বপ্ন। তাই ও এখন প্রেগন্যান্ট হতে চাইছে না। তবে মা হওয়ার ইচ্ছেটা তার ভীষণ ভাবেই রয়েছে। সেই জন্যই এই নার্সিং-হোমের সন্ধান পাওয়া মাত্র ফোনে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে ওদের এখানে চলে আসা। নার্সিং-হোমে ঢুকে ডঃ সম্ভাবনা পাত্রের চেম্বারের কাছে বসে থাকা মেয়েটি কাছে নাম নথিভুক্ত করে ভিজিটর চেয়ারে বসল আকাঙ্ক্ষা। অল্পক্ষণের মধ্যেই স্বপ্নপুরন চলে এলো। দু-একজনের পর ওদের ডাক পড়লে ওরা ভেতরে গেল।
স্বপ্ন পূরণ - মে উই কাম ইন ডক্টর?
ডঃ সম্ভাবনা - ইয়েস, অফকোর্স। বসুন। হ্যাঁ, এবারে আপনাদের সমস্যাটা বলুন।
আকাঙ্ক্ষা - সমস্যা কিছু নেই। আমরা আপনার ল্যাবে আমাদের সন্তানের জন্ম দিতে চাই।
ডঃ সম্ভাবনা - ও টেস্টটিউব বেবি? তার মানে সমস্যা তো একটা আছেই। তা সমস্যাটা আপনাদের মধ্যে কার সেটা আইডেন্টিফাই করা গেছে?
স্বপ্ন পূরণ - না,না শারীরিক ভাবে আমাদের কারোরই কোনও সমস্যা নেই। আমরা একজন হাইলি ট্যলেন্টেড, মেরিটোরিয়াস, এন্ড ইনটেলিজেন্ট ছেলের জন্ম দিতে চাই।
আকাঙ্ক্ষা কর - আসলে এখন আমি হেডমিসট্রেস হওয়ার জন্য পরীক্ষা দিচ্ছি। তাই এই মুহূর্তে আমার প্রেগন্যান্ট হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা দুজনেই এখন একটি সন্তান চাই, দ্যাটস হোয়াই উই আর হেয়ার অ্যাকচুয়ালি।
ডঃ সম্ভাবনা - ও আই গট ইট। আপনারা রেডিমেড চাইল্ড চাইছেন। আপনারা শুধু সেই সন্তানের গায়ে আপনাদের কোম্পানির ছাপটা লাগাবেন, এই তো?
স্বপ্ন পূরণ - এক্সাক্টলি. মানে হাইলি কোয়ালিফাইড, মেরিটোরিয়াস, কোনও সাইন্টিসের স্পার্ম নিয়ে ...
ডঃ সম্ভাবনা - ও.কে। ও.কে। ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু এক্সপ্লেইন এনি মোর। এই কাজ তো আর আমি নতুন করছি না। কত স্কলার ছেলে-মেয়ের যে আমার এই ল্যাবে জন্ম হল তা গুনে শেষ করা যাবে না। এইতো সেদিন এক মাড়োয়ারি প্রমোটার এক ডাক্তার সন্তান তৈরি করার অর্ডার দিয়ে গেছে। মোটা টাকা অ্যাডভান্সও দিয়ে গেছে। কিন্তু এখন ডেলিভারির সময় হয়ে গেল, অথচ তার পাত্তা নেই।
স্বপ্ন পূরণ - আরে, বলেন কি? তা আপনারা তার সাথে কন্টাক্ট করেন নি?
ডঃ সম্ভাবনা - হ্যাঁ, করেছিলাম। উনি বললেন যে ওনার কারেন্ট প্রোজেক্টের বেশ কিছু ফ্ল্যাট বিক্রি না হলে ওনার পক্ষে ছেলের ডেলিভারি নেওয়া সম্ভব নয়।
আকাঙ্ক্ষা কর – ও, গড। কি যুগ পড়ল! ফ্যাল্ট বিক্রির উপর লোকের বাবা হওয়া নির্ভর করছে।
ডঃ সম্ভাবনা - সে তো করবেই। সময় মতো না এলে ঐ বাচ্চার বাবা মা অন্য কেউ হয়ে যাবেন। ইচ্ছে করলে আপনারাও হতে পারবেন। বাচ্চার জন্মের দিনক্ষণ সময় তো আর আমি চেঞ্জ করতে পারবো না।
আকাঙ্ক্ষা কর - না, না। আমরা ঐ সাইন্টিস বাচ্চাই চাই।
স্বপ্ন পূরণ - আচ্ছা আপনি বললেন না যে বাচ্চার জন্মের দিনক্ষণ সময় চেঞ্জ করা যাবে না। তা সেটা একটু উনিশ-বিশ হলে কি এমন হবে?
ডঃ সম্ভাবনা - কি এমন হবে মানে? বাচ্চার ঠিকুজী কুষ্ঠি-ই চেঞ্জ হয়ে যাবে।
আকাঙ্ক্ষা কর - ব্যাপার টা তো ঠিক বুঝলাম না।
ডঃ সম্ভাবনা - দেখুন আপনার ছেলে মেরিটোরিয়াস হলেই যে আপনার ছেলে লাইফে সাইন করবে তার কোনও গ্যারান্টি নেই। ভাগ্য বলেও তো কিছু আছে নাকি? কর্ম + ভাগ্য = ফল। তাই আমরা এখানে নামকরা জ্যোতিষীদের দিয়ে জন্ম সময় ঠিক করে সেই সময় মত বাচ্চার জন্ম দিই।
স্বপ্নপুরন - তার মানে আপনারা বাচ্চার জন্মের আগেই বাচ্চার কুষ্ঠি-ঠিকুজি তৈরি করে ফেলেন?
ডঃ সম্ভাবনা - ঠিক তাই। আমাদের কাষ্টমাররা কি ধরনের বাচ্চা চাইছেন সেটা দেখে, সেই বাচ্চার কি রাশি, কি গণ, কি লগ্ন হলে সে তার কেরিয়ারে সবচেয়ে বেশী সফল হবে সেটা আমাদের জ্যোতিষীরা ঠিক করেন। আর তার জন্য সেই বাচ্চার জন্ম তারিখ, সময় কি হবে তা ওনারা আমাদের বলে দেন। আমরা সেই ডেলিভারি ডেট লক্ষ করে ব্যাক ক্যালকুলেশান করে আমাদের কাজটা শুরু করি।
আকাঙ্ক্ষা কর - তারমানে বাচ্চার বাবা-মা তাদের সন্তানের জন্মের আগেই তার ঠিকুজি হাতে পেয়ে যান?
ডঃ সম্ভাবনা - হ্যাঁ, তবে একটা নয়। তিন-চারটে ঠিকুজি তাদেরকে দেওয়া হয়। ওনারা সেই ঠিকুজি থেকে একটি ঠিকুজি চুজ করে আমাদের দেন। আমরা সেই ঠিকুজির দিন অনুযায়ী বাচ্চার জন্ম দেই। আর ওটাই হয় বাচ্চার অরিজিনাল ডেট অফ বার্থ।
আকাঙ্ক্ষা কর - অরিজিনাল ডেট অফ বার্থ মানে?
ডঃ সম্ভাবনা - মানে বার্থ সার্টিফিকেটে তো বাচ্চার ওই অরিজিনাল ডেট অফ বার্থ দিলে চলবে না। বিশেষ করে সেটা যদি জুন, জুলাই, অগাস্ট বা সেপ্টেম্বর হয় তাহলে তো একদমই চলবে না। স্কুলে ভর্তি করতে অসুবিধে হবে। ওটা ডিসেম্বর জানুয়ারিতে নিয়ে আসতে হবে।
স্বপ্নপুরন - হ্যাঁ, সে দিকটা তো আমরা ভেবে দেখিনি!
ডঃ সম্ভাবনা - আপনারা না ভাবলেও আমাদের তো কাষ্টমারের কথাটা ভাবতেই হয়। তারপর ডিসেম্বর, জানুয়ারির যে কোনও ডেট করলে হবে না। আপনাদের বিজি শিডিউলে আপনারা কি প্রতি বছর বাচ্চার জন্মদিনের দিন ছুটি নিতে পারবেন? অথচ বাচ্চার জন্মদিনটা-তো বড় করে করতেই হবে। না হলে সোসাইটিতে সম্মান থাকবে না। সেই কথা ভেবে জন্মদিনটা আমরা সাধারণত ২৫শে ডিসেম্বর, ফাস্ট জানুয়ারি, বা ২৬শে জানুয়ারি-ই ফেলি।
স্বপ্ন পূরণ - হ্যাঁ, হ্যাঁ, ছুটির দিনে ছেলের জন্মদিন হলে তো খুব-ই ভালো হয়। সত্যি আপনাদের ভাবনা চিন্তার প্রশংসা না করে পারছিনা। তা টোটাল কষ্টিং কত পরবে?
ডঃ সম্ভাবনা - সব কিছু নিয়ে ৫০ লাখ টাকার প্যাকেজ পরবে। তবে কার্ডে পেমেন্ট করলে একটা ক্যাশ-ব্যাক অফার আছে।
স্বপ্নপুরন – কিন্তু তাও তো অনেক। তা কিছু কম-সম হয় না?
ডঃ সম্ভাবনা -খরচ কমাতে বলবেন না। তাহলে সেরিব্রাল ক্যাপাসিটির পারসেন্টেজ মেইন্টেন করতে পারবো না।
স্বপ্নপুরন - সেরিব্রাল ক্যাপাসিটি! সেটা আবার কি?
ডঃ সম্ভাবনা - সেরিব্রাল ক্যাপাসিটি হল কোনও প্রাণী তার ব্রেনের কতটা ব্যাবহার করতে পারছে সেই ক্ষমতা। অন্যান্য প্রাণীরা তার ব্রেনের মাত্র ৩ - ৫ শতাংশ ব্যাবহার করতে পারে। যেখানে মানুষ গড়ে তার ব্রেনের ১০শতাংশ ব্যাবহার করতে পারে। আমাদের তৈরি বেবি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাবহার করতে পারে।
আকাঙ্ক্ষা - কিন্তু এটা আপনারা করছেন কি করে? আর এর ফলে শিশুটির কি কি গুন থাকতে পারে সেটা যদি একটু পরিষ্কার করে বলেন।
ডঃ সম্ভাবনা - একটি প্রেগন্যান্ট ওম্যান, তার সিক্স উইক অফ প্রেগ্নেনসির পর একটি মলিকুল তৈরি করে। দ্যা পাওয়ার অফ দিস মলিকুল ফর এ বেবি ইজ দ্যা পাওয়ার অফ অ্যান অ্যাটমিক বোম। এটা শিশুর শরীরের সমস্ত হাড় তৈরির জন্য মাকে এক্সট্রা এনার্জি দেয়। তবে এটা খুবই অল্প মাত্রায় তৈরি হয়। আমরা স্যারোগেট মাদারের শরীরে কেমিক্যালই এর মাত্রা বাড়িয়ে থাকি। এটি নিউরনকেও কন্ট্রোল করে। ফলে শিশুটি তার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ব্রেনের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাবহার করতে পারে। ফলে তার স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি, ডিসিশন মেকিং ক্যাপাবিলিটি সাধারণের থেকে অনেক অনেক বেশী হয়।
আকাঙ্ক্ষা - আরে আমরা-ও ঠিক এটাই চাইছি। আমাদের বাচ্চা সব বাচ্চার থেকে মেধাবী, বুদ্ধিমান হবে।
ডঃ সম্ভাবনা - না ম্যাডাম। শুধু মেধাবি, বুদ্ধিমান হলে আপনার ছেলের কেরিয়ারটা হয়তো ব্রাইট হবে। কিন্তু বড় হয়ে মা বাবাকেই দেখবে না। তাই আমরা বাচ্চার ইমোসানের দিকটাও যেন ঠিক-ঠাক কাজ করে সেই দিকটাও দেখি। এইখানেই অন্য কম্পানীর প্রোডাক্টের সাথে আমাদের কম্পানীর প্রোডাক্টের পার্থক্য।
স্বপ্নপুরন - ঠিক আছে। পুরো ব্যাপারটা তো জেনে নিলাম।আমরা একটু ভাবনা চিন্তা করি। তারপর ফাইনাল ডিসিশন নিয়ে আপনার কাছে আসবো।
ডঃ সম্ভাবনা – ও.কে। তবে বেশী দেরী করবেন না। ৩১শে মার্চের পর এলে কিন্তু ক্যাশ-ব্যাক অফারটা থাকবে না।
আকাঙ্ক্ষা কর – এখনও তো দিন পনের সময় আছে। তার আগেই আমরা আমাদের ডিসিশন আপনাকে জানিয়ে দেব। এখন তবে আসি।
চেম্বার থেকে বেরিয়ে আকাঙ্ক্ষা, কাকলিকে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে গেল। স্বপ্নপুরন একটু এগিয়ে গিয়েছিল। আকাঙ্ক্ষাকে দাঁড়াতে দেখে ও দাঁড়িয়ে গেল। কাকলি অন্য আরেকটি স্কুলের হেড-মিস্ট্রেস। আকাঙ্ক্ষার থেকে সিনিয়র। ওনার একটি ছেলে আছে তা আকাঙ্ক্ষার জানা। “তবে কি কাকলি দি এই বয়সে আবার মা হতে চাইছেন?” আকাঙ্ক্ষার মনের স্বাভাবিক প্রশ্ন। মনের কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে প্রশ্নটা একটু অন্যভাবে করেই ফেলল ও।
– কাকলি দি, তুমি এখানে?
– এই তো ছেলেটাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি।
– কেন ছেলের আবার কি হল?
– আর বলিস না। আমার ছেলে তো এখানেই জন্মে ছিল। জিনিয়াস তৈরি করার আশায় ডঃ সম্ভাবনা পাত্রের ওপর নির্ভর করে একটি রেডিমেড ছেলের জন্ম দিয়ে ছিলাম আমরা।
“কেন? জিনিয়াস তৈরি হয়নি তোমার ছেলে?” প্রশ্নটা করতে করতে কাকলির পাশে বসে পড়ল আকাঙ্ক্ষা। ওর দেখাদেখি স্বপ্নপুরনও বসে পড়ল।
– জিনিয়াস, বলে জিনিয়াস! সব ব্যাপারে জিনিয়াস আমার ছেলে। যেমন মেধা, তেমন বুদ্ধি, তেমনি তার স্মৃতিশক্তি। এক বছর বয়েসের কথাও দিব্যি বলে দিতে পারে ও। আর কোনও কিছু একবার শুনলেই বা একবার পড়লেই তার মুখস্থ হয়ে যায়।
– তাহলে আর তোমার চিন্তা কিসের? ছেলেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাইন্টিস যা মন চায় বানাও। বড় হয়ে তোমার ছেলে বাবা-মার নাম উজ্জ্বল করবে। এখন তো তোমার আনন্দে থাকার কথা।
- হ্যাঁ রে, আমারও এটাই কল্পনা ছিল। কিন্তু কল্পনা আর বাস্তবের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। বড় সমস্যায় পড়েছি ওকে নিয়ে।
• সে কিরকম?
• বই পরা হল তার নেশা। এক-মিনিটেই এক পাতা পড়া হয়ে যায় ওর। তারপর শুধু বই নয়। সময় সুযোগ পেলেই ইন্টারনেট খুলে বসে যায় জ্ঞান আহরণ করতে।
• বই পড়া তো ভাল। পড়ার বই বাদ দিয়ে নিশ্চয় অন্য বই পরে না?
• না, পড়ার বই তো তার কবেই মুখস্থ হয়ে যায়।
• তাহলে ও যদি ওর জ্ঞান বাড়ায়, ক্ষতি কি?
• নিজের জ্ঞান নিজের কাছে রাখলে কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু সে তো ও রাখে না। একটু সুযোগ পেলেই আমাদের জ্ঞান দিয়ে চলেছে। এইটা খেও না। এটা খাও। আসন কর। প্রাণায়াম কর। জোরে কথা বোলো না। রাগারাগি কোরও না। রাগারাগি করলে নাকি শরীরের ওয়েট বাড়ে!
• ও তো ভুল কিছু বলে না। ঠিক কথাই বলে। বাবা-মার ভালোর জন্যে ছেলে যদি কিছু উপদেশ দেয়, তাতে ক্ষতি কি?
• কাহাতক ঐ ন বছরের ছেলের জ্ঞান শোনা যায়। কখন কি খাব, ও বলে দেয়। সোফায় বা চেয়ারে কিভাবে বসব, ও বলে দেয়। কম্পিউটারে কিভাবে বসে কাজ করব, ও বলে দেয়। এমনকি কিভাবে পটি করতে হবে, ও সেই ডায়রেকশানও দিয়ে দেয়। কিছু বলতে গেলে বই বা ইন্টারনেট খুলে নিজের কথা যে সঠিক তা প্রমাণ করে দেবে। তাও যদি ব্যাপারটা বাড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো, মেনে নিতাম। স্কুলে গিয়ে টিচারদের পড়ানোর ভুল ধরে বেড়াবে। এবার অ্যানুয়াল এক্সামে সাইন্সে ১ নম্বর কেটেছে বলে টিচারের সাথে রীতিমত লড়াই লাগিয়ে দিল। নানা রকম বইপত্র নিয়ে ও যে ঠিক তা প্রমাণ করে, ঐ ১ নম্বর আদায় করেই ছাড়ল। স্কুল থেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে ওকে আর স্কুলে পাঠানোর দরকার নেই। ওকে শেখানোর মত বিদ্যা তাদের নেই। তাছাড়া ওর বিশেষ বন্ধু-বান্ধবও নেই। সম-বয়সিদের সাথে ওর একদম বনে না। ওদের ধরে এমন জ্ঞান দেয় যে, কেউ আর ওর ধারে কাছে আসে না। তাই বাধ্য হয়েই ডঃ সম্ভাবনা পাত্রের কাছে ছুটে এসেছি। উনি যদি ওষুধ দিয়ে ওর মেধা কিছুটা কমাতে পারেন।
কাকলি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু চেম্বারের কাছে বসে থাকা মেয়েটির ডাক শুনে ওকে থামতে হল। ছেলেটা টিভিতে চলতে থাকা অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট গিলছিল। কাকলি ওকে ডেকে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকল। স্বপ্নপুরন ও আকাঙ্ক্ষা নার্সিং হোম থেকে বেড়িয়ে গাড়িতে উঠল। গাড়িতে আকাঙ্ক্ষা বিশেষ কথা বলল না। স্টিয়ারিং হাতে স্বপ্নপুরন, বৌয়ের গম্ভীর মুখ দেখে ওকে বিশেষ ঘাটাল না। বাড়িতে পৌঁছেও প্রয়োজন ছাড়া কথা বলল না আকাঙ্ক্ষা।
রাতে শুয়ে স্বপ্নপুরন আকাঙ্ক্ষার মাথায় হাত রেখে বলল “কিছু ভাবলে?”
• ভাবছি, এই রেসের মাঠের ঘোড়া-দৌড় থেকে বেরিয়ে আসবো। কেরিয়ারের পিছনে ছুটতে ছুটতে হাঁপিয়ে গেছি। নাই বা হলাম হেড-মিস্ট্রেস।
• তোমার এতদিনের স্বপ্ন হেড-মিস্ট্রেস হওয়া। হবে না? তাহলে কি হবে?
• মা হব। আদর্শ একজন মা হব। সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা সাইন্টিস নয়। মানুষের মত মানুষ তৈরি করব। কিগো পারবো না আমরা?
“কেন পারবো না। আমি আছি, তুমি আছ। আমাদের বাবা-মা আছেন। নিশ্চয়ই পারবো।” কথাটা বলে স্বপ্নপুরন আকাঙ্ক্ষাকে আরও কাছে টেনে জড়িয়ে ধরল। তারপর? নাইবা বললাম। ভীষণ ব্যক্তিগত।