JAYDIP CHAKRABORTY

Abstract

3  

JAYDIP CHAKRABORTY

Abstract

অভ্যাসে সেলফি

অভ্যাসে সেলফি

3 mins
805


উইক-ডের এক সকালে যাত্রী বোঝাই একটা মিনিবাস সেক্টর ফাইভের দিকে ছুটে চলেছে। বাসের বা দিকের একটি টু সিটারে এক তরুণ তরুণী বিভিন্ন ভঙ্গিতে সেলফি তুলতে বাসত। ওদের সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে দুজন বয়স্ক লোক। ওনারা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে যাচ্ছেন। বাসে বয়স্কদের জন্য সংরক্ষিত দুটি আসন অন্য বয়স্ক ব্যক্তিদের দখলে। তাই বাধ্য হয়েই ওনারা দাঁড়িয়ে। ওনাদের দিকে কারোই কোনও লক্ষ্য নেই। যেহেতু কোনও বয়স্কদের জন্য সংরক্ষিত আসন বয়স্ক মানুষ ছাড়া আর কারো দখলে নেই, তাই নিজের আসন ছেড়ে দেওয়ার তাগিদও কেউ অনুভব করছে না। 

তরুণ-তরুনী দুজনে সেলফি তুলছে। বেশ ঘনিষ্ঠ ভঙ্গিতে উঠছে সেলফি। সেই ছবি গুলো মোবাইলের নানারকম অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্যে সম্পাদনাও করা হচ্ছে সাথে সাথে। এই কাজে মেয়েটি বেশ তৎপর। ছেলেটি তার সাথে সহযোগিতা করছে মাত্র।

সামনে দাঁড়িয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন প্রৌঢ়-দ্বয়। ভীর বাসে দাঁড়িয়ে যাওয়া তাদের বয়সে বেশ কষ্টকর। তার ওপর তাদের সামনে তাদের নাতির বয়সী ছেলে-মেয়ের কার্য-কলাপ উপেক্ষা বা গ্রহণ দুটোই তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

চুম্বন ভঙ্গিতেও ছবি তুললও ছেলে-মেয়ে দুটি। বেশ কিছু সেলফি তোলার পড়, দেখি কেমন তুললি, বলে ছেলেটি মেয়েটির মোবাইল ফোন নিজের হাতে নিলো। আঙুলের নির্দেশে ছবি পরিবর্তন করছে ছেলেটি। স্বাভাবিক ভাবেই সেই ছবিতে নজর গেল দুজন প্রৌঢ় ব্যক্তির। সদ্য তোলা সেলফি গুলো একের পর এক এসে চলে গেলে, হঠাৎ-ই মেয়েটির কেবল মাত্র অন্তর্বাস পরে তোলা একটি সেলফি মুঠোফোনের পর্দা জুড়ে বসল। বেশ অস্বস্তিতেই পড়ল সবাই। মেয়েটি তৎক্ষণাৎ ফোনটি নিজের কাছে নিয়ে নিলো।  

এই ঘটনার মাস-খানেকে মধ্যেই মেয়েটির পরিবার বিরাটি থেকে রাজারহাটের ফ্ল্যাটে শিফট করে। আস্তে-ধীরে ওরা নতুন প্রতিবেশীদের সাথে পরিচিত হয়। ওদের পাশের ফ্ল্যাটেই এক প্রৌঢ় দম্পতি থাকে। তাদের সাথে পরিচিত হতে গিয়ে মেয়েটি একটু থমকে গেল। বয়স্ক ভদ্রলোককে ভীষণ চেনা লাগছে মেয়েটির।

-আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি, মনে হচ্ছে। 

- এর মধ্যে তুমি ভুলে গেলে? বয়স তো আমার হয়েছে। কিছুদিন আগে বাসে দেখা হল না? আসলে তোমরা সেলফি তোলায় ব্যস্ত ছিলে তো, তাই সেভাবে খেয়াল নেই।

- ও, হ্যাঁ। ওসব কথা বাবা মাকে বলবেন না প্লিজ। 

- তুমি কি বাবা মাকে না বলার মত কোনও কাজ করেছ?

- না, আসলে ওরকম সেলফি তুলেছি মা-বাবা বা চেনা কেউ জানলে সমস্যা আছে।

- ও, অচেনা কেউ জানলে তবে সমস্যা নেই। তাই তো?

- হ্যাঁ, মানে না। মানে ইয়ে, আপনি তো এখন আর অপরিচিত নন। 

- আজ যে অপরিচিত, কাল সে পরিচিত হয়ে যেতেই পারে, ঠিক কি না? তাহলে যে কাজ সবার সামনে করা যায় না, সেই কাজ কারও সামনেই না করা ভালো নয় কি? তোমার মন যদি বলে তুমি ঠিক কাজ করছ, তাহলে যে যাই বলুক, কোনও সমস্যা নেই। তা না হলে সে কাজ না করাই ভালো।

- দাদু, আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন। আমি এখন থেকে আপনার কথা মেনে চলার চেষ্টা করব। তবে একটা অনুরোধ..

- না না, অনুরোধ করার কিছু নেই। আমি ওসব কথা কাউকে বলতে যাবো না। 

- আমি সেই অনুরোধ করছি না। আমি আপনার সাথে একটা সেলফি তুলতে চাই। 

- হ্যাঁ। নিশ্চয়ই। তবে আমি এসব ভালো পারি টারি না। 

আমি তুলে নিচ্ছি। আপনি একটু স্মাইল করুন।

অল্পক্ষণের মধ্যেই দুজনের সেলফি মেয়েটি ফেসবুকে আপলোড করল। আর সে ছবির ক্যাপশনে লিখল, এ নিউ সোর্স অফ ব্লেসিং ফর মাই লাইফ। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract