Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.
Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.

JAYDIP CHAKRABORTY

Romance

2.0  

JAYDIP CHAKRABORTY

Romance

মনোবাঞ্ছা

মনোবাঞ্ছা

15 mins
886


রাই, একটু চায়ের জল বসা। নার্সারি থেকে বাড়ি ফিরে, মেয়ের কাছে আবদার ছুঁড়ে সোফায় বসল তমাল। 

আমার বিয়ে দেওয়ার জন্যে, খুব যে উঠে পড়ে লেগেছ। আমার বিয়ের পর তোমার এইসব চাহিদা, আবদার কে মেটাবে শুনি? কথাটা বলে উত্তরের অপেক্ষা না করেই রান্নাঘরে চলে গেল রাই।

তমাল মোবাইলে হোয়াটস-অ্যাপ মেসেজ দেখছে। একটা অজানা নম্বর থেকে একটু আনকমন মেসেজ তমালকে কৌতূহলী করল।

-   গাছপালার ব্যবসাটা জমিয়েই করছ দেখছি। 

-   আপনাকে ঠিক চিনলাম না। 

-   আগে তো অফিসে হোটেলে গাছ সাপ্লাই করতে। এখন চাষবাসও শুরু করেছ দেখছি।

-   পরিচয় দিলে কথা বলতে সুবিধে হতো।  

-   এখন তোমার সাথে কতজন কাজ করে?

-   করে কিছু লোক, তা আপনি কে না জেনে ....

-   এখন লোকজনকে টাকা-পয়সা দাও তো? আমাকে তো শুধু রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করিয়েই পারিশ্রমিক মিটিয়ে ছিলে।

-   কে আপনি? তুমি সুমিতা?

-   যাক, নামটা মনে আছে তাহলে! আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে ভুলেই গেছ।

-   তুমি কোথা থেকে আমার নম্বর পেলে? দাঁড়াও ফোন করছি।

হোয়াটস-অ্যাপের নম্বরটাতে রিং করল তমাল।

-   হ্যালো, 

-   তুমি হোয়াটস-অ্যাপ না করে ফোন করলে, তোমাকে চিনতে এতো সময় লাগতো না। কণ্ঠস্বর তো আগের মতনই আছে।

-   তাই বুঝি? এখনও আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে কি?

-   তুমি এখন কোথায়?

-   মাইথনে। ছেলে ডি.ভি.সি পাওয়ার প্ল্যান্টে চাকরি করে। সেই সুবাদেই এখানে বসবাস।

-   আরে আমাকে তো প্রায়ই ওখানে যেতে হয়। ওখানের বেশ কয়েকটা হোটেলের গার্ডেনে আমার দেওয়া গাছ রয়েছে। মজুমদার নিবাসেও গাছ দিয়েছি। কয়েক দিনের মধ্যেই ওখানে আবার যেতে হবে। কল্যানেশ্বরী মন্দিরের কাছে একটা হোটেলে কিছু রেয়ার ভ্যারাইটি গাছের অর্ডার আছে। একটা ওভারল সার্ভের দরকার। ভাবছি এবার সেরে আসবো। 

-   খুব ভালো কথা। উইক এন্ডে সপরিবারে চলে এসো। 

-   পরিবার বলতে তো আমি আর মেয়ে। এক মিনিট, রাই তুই চায়ের কাপটা রেখে, ঘরে যা। আমি এই ফোনটা সেরে আসছি। 

-   মেয়ে কে সরিয়ে দিলে? মেয়ের সামনে বুঝি পুরনো বান্ধবীর সাথে স্মৃতি-চারন করা যায় না?

-   থাক না। আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে না হয় নাই বা জানল। যাক কি বলছিলাম যেন?

-   আমি বলছিলাম উইক এন্ডে চলে এসো। 

-   যেতে তো আমাকে হবেই। তবে উইক এন্ডে প্রায়ই মেয়েকে দেখতে আসে। উইক ডেতে আমাকে একাই যেতে হবে। 

-   আরে আমার ছেলের জন্যও তো মেয়ে খুঁজছি। মেয়েকে নিয়েই আসো। দুজনের সম্মতি মিললে চার হাত এক করে দেবো। নিজের ছেলে বলে বলছি না। ছেলে আমার খুব বাধ্যের। আর চাকরীও ভালোই করে।

-   আচ্ছা, উত্তম প্রস্তাব। ঠিক আছে, আমি ডেট ফাইনাল করে জানাচ্ছি।

-   হ্যাঁ, শিগগিরি জানাও। আমি ছেলেকে দিয়ে ডিভিসির গেস্ট হাউজ বুক করানোর ব্যবস্থা করছি।

-   আরে ওসব করতে যেও না। আমার যে হোটেলে কাজ, ওখানে থাকতেই হবে। আগে থেকেই কথা হয়ে রয়েছে। এখন তবে রাখছি। পরে করব। 

-   ওকে, রাখলাম।

ফোন সেরে চায়ের দিকে নজর পড়ল তমালের। ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ঐ ঠাণ্ডা চায়েই এক চুমুক দিয়ে, কাপ হাতে মেয়ের ঘরে ঢুকল তমাল। 

-   কে ছিল বাবা ফোনে?

-   পেপারে তোর বিয়ের জন্য যে অ্যাড দিয়েছি, সেটা দেখে মাইথন থেকে এক পাত্রের মা ফোন করেছিল। কথায় কথায় একটা পরিচিতিও বেড়িয়ে গেল। উনি আমাদের ওনাদের ওখানে যেতে বলছেন। কি বল, ঘুরেই আসি একবার? 

-   আমরা যাবো ছেলে দেখতে? সেকি, এমন উল্টোপুরান কেস কেন বাবা?

-   আরে না। ওনারাই আসতেন। আমিই বললাম, আমার মাইথনে একটা কাজ আছে, আমাকে ওখানে নেক্সট উইকে যেতেই হচ্ছে। তা তোকেও নিয়েই যাবো। জায়গাটা সুন্দর, তোর বেড়ানোও হয়ে যাবে। আর যদি ... যদি গল্প জমে যায়, তাহলে তো আমার মাইথন ঘোরার পাকাপাকি একটা জায়গা হয়ে যাবে। কি বল? 

-   খুব তো আমাকে তাড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছ! পারবে আমাকে ছেড়ে একা এই বাড়িতে থাকতে?

-   কষ্ট হবে। কিন্তু সেই জন্য তো তোকে আইবুড়ো করে সারা জীবন আমার দেখভাল করার জন্য রেখে দিতে পারি না। তবে সেই কথাই রইল। সামনের শনিবারই আমরা মাইথন যাচ্ছি। ওদের কিন্তু জানিয়ে দিচ্ছি সেটা, দেখিস বাবা.... 

কথামত যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হল। রাই ওর রুকস্যাকটায় কিছু জামা-কাপড় ও প্রসাধন গুছিয়ে নিলো। তমাল তার ট্রলি ব্যাগে নিজের জামা-কাপড় ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে নিলো। তার সঙ্গে সুন্দর ভাবে প্যাকিং করে কিছু দুষ্প্রাপ্য চারা গাছ ও একটি বনসাই বটগাছ নিলো। শনিবার ভোরে ব্ল্যাক ডায়মন্ড ধরে বরাকর স্টেশনে নামলো ওরা। একটা অটো ধরে মোটামুটি বেলা ১১টা নাগাদ হোটেলে পৌঁছল।

একটা সুইফট ডিজায়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই হোটেলের সামনে এসে দাঁড়ালো। তমালদের থাকার ব্যবস্থা করার সুযোগ সুমিতা না পেলেও, দুপুরে খাওয়ানোর সুযোগটা হাতছাড়া করল না ও। তাই ডাইভার পাঠিয়ে ওদের আনার ব্যাবস্থা করল সুমিতা। অল্প কিছুক্ষণ অপেক্ষা, তারপর তমাল ও রাই হোটেল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বসল। তমালের হাতে বনসাই বটগাছের প্যাকেটটা।

-   বাবা, তুমি বনসাইটা নিয়ে এলে কেন? এটা তো তুমি এই হোটেলে দেওয়ার জন্যে এনেছিলে!

-   না, ভাবছি ওদের এটা উপহার দেবো। যাতে এই নতুন সম্পর্কটা বটগাছের আয়ু পায়। তুই কি বলিস।

-   তুমি যা ভাল বোঝো কর। আমি আর কি বলব?

যদিও তমালের যুক্তিটা রাইয়ের ঠিক পছন্দ হল না, তবে বাইরে ও সেটা আর প্রকাশ করল না। চারদিকের দৃশ্যতে মন দিল। যাত্রার শুরুতে একটু কঠিন রাস্তা পেরতে হলেও অল্পক্ষণের মধ্যেই দুপাশের সবুজের সমারোহ ওদের মন কেড়ে নিল। তমালের এই দৃশ্য পূর্ব পরিচিত হলেও রাইকে নিয়ে নতুন সম্ভাবনার চিন্তায় ওর মনটা আদ্র হয়ে গেল।   

ডিভিসির স্টাফ কোয়াটার্স পাড়ায় গাড়ি ঢুকে একটি কোয়াটার্সের সামনে এসে থামল। একটি সুন্দর বাগান ঘেরা একতলা বাংলো। গাড়ি থেকে নেমেই তমালের চোখ গেল বাগানের গাছপালার ওপর। গাড়ির আওয়াজ শুনেই সুমিতা বেড়িয়ে এসে তমাল ও রাইকে ঘরে নিয়ে বসাল। দুই গ্লাস লস্যি দিয়ে ওদের প্রাথমিক অভ্যর্থনা করল সুমিতা। তমাল বনসাই বটগাছটি সুমিতার হাতে তুলে দিল। ওর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। তবে কোনও অনাবশ্যক বাক্য ব্যয়ে আনন্দ প্রকাশ করল না ও। 

অল্পক্ষণের মধ্যেই সুমিতার ছেলে অর্কদীপ পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ফিরল। অতিথিদের সৌজন্যে রোজের তুলনায় একটু আগেই বাড়ি ফিরেছে ও। দু-চারটে সাধারণ কথা বিনিময়ে অতিথিদের সাথে পরিচিত হল অর্কদীপ। তারপর সবাই লাঞ্চে বসল। লাঞ্চের মেনু দেখে বেশ অবাক হল রাই। নারকেল দিয়ে নিরামিষ মুগের ডাল, লম্বা লম্বা বেগুন ভাজা, আলু-পোস্তের তরকারি, সরষে ইলিশ, কাঁচা আমের চাটনি। সব গুলো আইটেমই তমালের প্রিয়। 

বাবা কি ফোনে নিজের পছন্দের আইটেম গুলো বলে দিয়েছিল? নিজের মনেই প্রশ্ন করল রাই। রাইকে নিয়ে এত দূরে ছেলে দেখতে আসা, তমালের এতো দামী একটা বনসাই গাছ উপহার দেওয়া, লাঞ্চের মেনু সহ অনেক ব্যাপারেই রাইয়ের মনে একটা খটকা লেগেছে। তবে কাউকে কোনও প্রশ্ন না করে ও সময়ের অপেক্ষায় মনের মধ্যেই প্রশ্নমালা লুকিয়ে রাখল। 

লাঞ্চের পর রাই ও অর্ককে আলাদা ভাবে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে সুমিতা তমালকে নিয়ে অন্য ঘরে চলে গেল। ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে অর্ক ও রাই দুজনেই কোনও কথা খুঁজে না পেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। অর্কই সেই নীরবতা ভঙ্গ করল। 

-   চুপ করে রইলেন কেন ? বলুন, কি জানার আছে।

-   আপনি শুরু করুন। বলুন আপনার কি জানার আছে।

-   আরে আপনারা আমাকে দেখতে এসেছেন। তাই প্রশ্ন আগে আপনিই করুন। লেডিস ফার্স্ট। 

-   অনেক প্রশ্নই তো মনের মধ্যে ভীড় করেছে। তবে সেগুলো সিলেবাসের নয়।

-   প্রশ্নগুলো করেই দেখুন না। সিলেবাসের বাইরেও তো আমার অনেক কিছু জানা থাকতে পারে। 

-   পেপারের অ্যাড দেখে আপনার মা আমার বাবাকে ফোন করল, আর বাবা আমাকে নিয়ে আপনাদের এখানে চলে এলো! তাও এমন একটা কস্টলি গিফট নিয়ে। বনসাইটার বর্তমান বাজার মূল্য পাঁচ-সাত হাজার টাকার কম নয়। প্রথম পরিচয়ে এমন গিফট বাবা এর আগে কাউকে দিয়েছে বলে তো মনে হয় না। 

-   আমার মা তো কোনও অ্যাড দেখে আপনার বাবাকে ফোন করেনি। আমাদের বাগানে একটা ইউক্যালিপটাস গাছের চারা লাগানোর জন্যে নেটে গাছ খুঁজতে খুঁজতে মা আপনাদের নম্বরটা পেয়েছে। আপনার বাবা, আমার মার পূর্ব পরিচিত। ফোনের কথা-বার্তা শুনে তো সেরকমই মনে হল। 

-   বাবা বলেছিল আপনার মার সাথে কথা বলতে বলতে একটা পরিচিতি বেড়িয়ে গেছে। কিন্তু সেই পরিচয় কতটা যে এতদিন পর দেখা হলেও আপনার মা, আমার বাবার পছন্দের আইটেম রান্না করতে পারলো? আর আমার বাবাই বা কেন আপনার মাকে গিফট দিল।

-   ফোনের কথা শুনে তো মনে হল যে আপনার বাবার ব্যবসার শুরুতে আমার মা ওনাকে হেল্প করেছে। 

-   ইন্টারেস্টিং। সেটাতো বাবা বলেনি। তাহলে তো সম্পর্কটা গভীরই ছিল। 

-   এখানে কতদিনের প্ল্যান?

-   আজ সকালে ব্ল্যাক ডায়মন্ডে এসেছি। কাল বিকেলে ব্ল্যাকেই ফেরত।

-   এতো কম সময় নিয়ে কেন? তাহলে চলুন আজই আপনাদের পাঞ্চেত ড্যাম আর গড়-পঞ্চকোট ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।

-   তাহলে আপাতত বিরতি, চলুন আমাদের অভিভাবকদের আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটাই। 

সুমিতা ও তমাল অন্য ঘরে বসে ওদের যৌবনের স্মৃতি রোমন্থন করছে। 

-    সত্যি তোমার চেহারার বিশেষ কোনও পরিবর্তন হয়নি। একটু আভিজাত্যের ছাপ লেগেছে। এখনো যে কেউ দেখা মাত্রই প্রেমে পড়ে যাবে।

-   সংসারটাই ধরে রাখতে পারলাম না। এই বয়সে আর নতুন করে প্রেমে পড়ার ইচ্ছে নেই।

-   কেন, কি এমন হল যে তোমার মত এমন সুন্দরী, সর্ব গুণসম্পন্না মেয়েকে ছেড়ে যেতে হলো?

-   আমি নাকি ওর জীবনে ভীষণ অপয়া। আমাকে বিয়ে করার পর ও ওর বাবাকে হারিয়েছে। ওর চাকরী চলে গেছে। একবার বেশ বড়সড় রোগ বাধিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি হতে হয়েছিল। সেও নাকি আমার জন্যই হয়েছিল। ওর মা, বোন তো আমাকে সহ্যই করতে পারতো না। ওরাই আমার বরের কানে সব সময় বিষ ঢেলে আমাকে ওর থেকে আলাদা করে দিল। প্রতিদিনই নানা কারণে বাড়িতে অশান্তি লেগে থাকতো। এক কালীন একটা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আমার থেকে আর ঐ অশান্তি থেকে মুক্তি নিয়েছিল ও। তখন অর্ক ছয় বছরের। সেই থেকে শুরু হল আমার লড়াই। 

-   তখন আমার সাথে যোগাযোগ করনি কেন? 

-   নিজের অশান্তি আর তোমার সংসারে দিতে ইচ্ছে হয়নি। আমার বাবা তোমাকে যা নয় তাই বলে অপমান করেছিল। এরপর আর কোন মুখে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করি বল?

-   তোমার বাবার ঐ অপমানের জন্যই কিন্তু আজ আমি এই জায়গায়। তোমার বাবার ঐ কথাগুলো আমার মনে জেদ ধরিয়ে দিয়েছিল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ছিলাম এই গাছ বিক্রি করেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবো। বাখরাহাটে আজ আমার বেশ বড় একটা নার্সারি। প্রায় হাজার প্রজাতির গাছ আছে নার্সারিতে। বিদেশেও আমার গাছ যায়। সব মিলিয়ে জনা পঞ্চাশেক লোক কাজ করে আমার নার্সারিতে। সবই কিন্তু হয়েছে ঐ জেদের বশে। 

-   তোমার প্রথম গাছের অর্ডার সাপ্লাই করার সময়ে কিন্তু একমাত্র আমিই ছিলাম তোমার পাশে। 

তাই নাকি বাবা? আন্টি তোমার এতো দিনের চেনা? আর এতো বড় খবরটা আমাকে তুমি বলনি? ঘরে ঢুকেই ওদের আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটাল রাই। রাইয়ের প্রশ্নে বেশ অস্বস্তিতে পড়ল তমাল। কোনও উত্তর খুঁজে না পেয়ে চুপ করে রইল।

তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও মা, চলো ওনাদের একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি, কালকেই ওনারা ফিরে যাচ্ছেন। অস্বস্তি কাটাতে প্রসঙ্গ ঘোরালো অর্ক। সুমিতা একটু নিম রাজি থাকলেও অর্কের জোরাজুরি আর তমালের অনুরোধে ওকে তৈরি হতেই হল। বেড়িয়ে পড়ল ওরা। অর্ক ড্রাইভারের সিটে। পাশে রাই। পেছনে তমাল ও সুমিতা। 

স্নেক রেসকিউ সেন্টারে গাড়ি থামল। বিষধর ও নির্বিষ দুই ধরনের সাপেরই দেখা মিলল এখানে। সাপ ছাড়াও বেশ কয়েক রকমের পাখি, বাঁদর, হনুমান, খরগোশও রয়েছে ওখানে। অর্ক প্রথমে নিজে একটা পাইথন ঘাড়ে নিয়ে ছবি তুলল। তারপর সেই সাপ রাইয়ের কাঁধে চাপাল। রাই ভীষণ ভয় পেলেও অর্কের অনুরোধ ও সহায়তায় পাইথন কাঁধে নিয়ে ছবি তুলল ও।

ওখান থেকে বেরিয়ে পাঞ্চেত ড্যামে গেল ওরা। দামোদর নদের ওপর দীর্ঘ সেতু। তারই মাঝে গাড়ি দাঁড়াল। সেতুর একপাশে নদী, আরেক পাশে পাহাড়ে ঘেরা সবুজ প্রকৃতি। সেই নদী ও প্রকৃতিকে পেছনে রেখে বেশ কয়েকটা ছবি তুলল ওরা। এরপর গাড়ি চলল গড়-পঞ্চকোটের উদ্দেশ্যে। অর্ক সামনের একটা পাহাড় দেখিয়ে বলল, এর পেছনেই এখন আমরা যাবো। দুই পাশে সবুজ বন। মাঝে মসৃণ পিচের রাস্তা। তার মধ্য দিয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে।  

সবাই চুপচাপ। হঠাৎ রাই তমালকে বলল, বাবা তোমার এই ব্যবসার শুরুটা বল না প্লিজ। কিভাবে আন্টি তোমাকে হেল্প করেছিল, কিভাবে এই ব্যবসা এতো বড় হল, সবটা বলবে।

ওসব অনেক দিন আগের কথা মা। থাক না এখন। মেয়ের অনুরোধটা কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল তমাল। 

বলতে অসুবিধে আছে? আমি তো এখন আর ছোটো নেই।

 হ্যাঁ, তোমার জীবন যুদ্ধ ওরও জানা দরকার। ঠিক আছে শুরুটা নয় আমি করছি। ত্রিশ বছর পিছিয়ে গেল সুমিতা।

তমাল আর আমি একই কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি। ও আমার থেকে দু বছরের সিনিয়র। কলেজে আলাপ। কলেজেই প্রেম। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে তেমন কোনও চাকরিই জোটাতে পারল না তমাল। এদিকে আমি গ্রাজুয়েশনের ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষা দেওয়া মাত্রই আমার জন্যে পাত্রের সন্ধান শুরু হল। বেশ চিন্তায় আছি। তমালের কথা বাড়িতে বলতেও পারছি না। এরকম সময় একদিন তমাল আমার সাথে দেখা করে বলল, ও ওর মামার রেফারেন্সে সল্টলেকের একটি পার্কে গাছ সাপ্লাইয়ের অর্ডার পেয়েছে। 

অর্ডার ঠিক বলা যায় না। আমার মামা একদিন একটা গাছের লিস্ট আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, দেখতো তমাল এই গাছগুলো কোথা থেকে পাওয়া যাবে। সুমিতার কথা থামিয়ে নিজের কথা নিজেই বলতে শুরু করল তমাল। 

ছোটো বেলা থেকেই গাছ গাছালিতে আমার খুব আগ্রহ। আমি বিভিন্ন নার্সারি ঘুরে গাছের দাম জোগাড় করে, প্রতি গাছের দাম সামান্য বাড়িয়ে মামাদের অফিসে গেলাম। মামা বিলিং সেকশনের একজনের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। উনি আমার দেওয়া গাছের দাম দেখে বললেন,

-   একটাও তো ঠিক দাম নয়। প্রতিটা গাছের দাম বেশ বাড়ানো আছে দেখছি। কি ভুল বললাম?

-   না, মানে আমাকে তো ছোটাছুটি, পরিশ্রম করতে হচ্ছে। তাই অল্পই …

-   অবশ্যই তুমি লাভ রাখবে। সরকারি টাকা। তুমি লাভ কর না। কিন্তু আমাকেও তো তোমার দেখতে হবে।

-   আপনি যেমন বলবেন, তেমনই হবে। আমি আপনাকে অরিজিনাল দামের কাগজটাও দিয়ে দিচ্ছি।

-   তার আর দরকার হবে না। তা গাছ কেনা, আনার জন্যে কিছু টাকা দরকার তো। পেমেন্ট তো গাছ ডেলিভারি করার পর বিল পাশ হওয়ার পর পাবে। তা সে টাকা আছে তোমার কাছে?

-   না, তেমন টাকা আমার কাছে নেই। 

-   ঠিক আছে। সে টাকা তোমাকে আমিই দেবো। বিল-পত্রও তো আমাকেই করতে হবে। তা অতোগুলো গাছ আনবে কি করে?

-   কেন? ম্যাটাডোরে করে।

-   রাস্তা দিয়ে এতোগুলো গাছ নিয়ে আসবে, পুলিশ ছেড়ে দেবে ভেবেছ? দক্ষিণা দিতে হবে না? তোমার লাভের গুড়েতে তো পিঁপড়েরা ফিস্ট করবে। 

-   কি করবো তাহলে? 

-   গাড়ির সামনে চক দিয়ে সি.এম.সি লিখে দিও। আর চালানটা হাতে রেখো। আশাকরি কোনও সমস্যা হবে না।

ওনার কথা মতই কাজ হল। রাস্তায় কোনও সমস্যা হল না। পুরো কাজটাতে সুমিতা আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। ও আমার সাথে ম্যাটাডোরেও ছিল। আমার একার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু অনেক অনুরোধ করা সত্তেও এক পয়সাও পারিশ্রমিক নিলো না ও। পুরো পেমেন্টের পর একটা ভালো হোটেলে একদিন লাঞ্চ করিয়েছিলাম শুধু। এরপর মামার কল্যাণে আরও একটা কাজ আমি পেয়েছিলাম। দুটো মিলে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা রোজগার হয়েছিল আমার। মনের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হল। সুমিতার বাবার কাছে চলে গেলাম। বললাম আমি আপনার মেয়ে কে বিয়ে করতে চাই। উনি শুনে বললেন,

-   তা তুমি কাজ-কর্ম কি কর?

-   গাছ কেনা বেচা করি। গত মাসে দুটো কাজ করে ভালোই কামাই হয়েছে।

-   গাছ কেনা বেচা কর? এটা কোনও কাজ হল? কোনও বাঁধাধরা আয় তো নেই। তা এমাসে হাতে কেমন অর্ডার আছে? 

-   এখনও কিছু নেই। তবে চেষ্টা চলছে, পেয়ে যাবো।

-   পেয়ে নাও। মাসে একটা বাঁধাধরা উপার্জন হোক, তারপর বিয়ের স্বপ্ন দেখো। তবে ততদিনে সুমিতার হয়তো বিয়ে হয়ে যাবে। তাতে কি হয়েছে? দেশে তো মেয়ের অভাব নেই!

বেশ অপমানিত হয়ে ওদের বাড়ি থেকে চলে এলাম। ঠিক করলাম এই অপমানের জবাব দেব। গাছের ব্যবসাটাই করবো। যোগাযোগ বাড়ালাম। ক্লাব, হোটেল, অফিস, যেখানে সুযোগ পেলাম গাছ যোগান দিলাম। বাড়ির বাগানে নিজেও ছোটো ছোটো চারা তৈরি করলাম। ইন্টারনেট প্রচলিত হওয়ার পর আমার যোগাযোগ আরও বাড়ল। ধীরে ধীরে সেই ব্যবসাই আজ এই রূপ নিয়েছে।

তমালের কথা শুনতে শুনতে কখন যেন ওরা গড়-পঞ্চকোট পৌঁছে গেল। বহু পুরনো ভগ্ন মন্দির, রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ প্রত্যক্ষ করল ওরা। নতুন একটি রাধাকৃষ্ণের মন্দির তৈরি হয়েছে ওখানে। তমাল ও সুমিতা ঐ মন্দিরে ঢুকল।  

-   আমার মেয়েকে কি তোমার ছেলের মনে ধরবে? কি মনে হয় তোমার?

-   তোমার মেয়ের মধ্যে অপছন্দ হওয়ার কিছু দেখিনি। বটানিতে অনার্স। দেখতে শুনতেও তো বেশ। আমার ছেলেকে আমি যতটুকু চিনি তাতে তো ওর আপত্তি করার কিছু দেখি না। তবুও আমি আজ রাতে ওর সাথে কথা বলে তোমাকে জানাবো। তুমিও রাইয়ের মতটা জেনে রেখো।

-   হ্যাঁ, তোমাদের সংসারে মেয়ে দিতে পারলে আমি নিশ্চিন্ত হই। 

-   ও তুমি কিছু ভেবো না, যদি ভাগ্যে থাকে, ও আমার সংসারে মেয়ের মতোই থাকবে।

-   সে তোমাকে বলতে হবে না। বহু পয়সা খরচ করেও তো ওর মাকে আমি বাঁচাতে পারলাম না। তোমার মধ্যে যদি ওর মাকে ও ফিরে পায়…

-    কি হয়েছিল ওর ?

-   ব্রেস্ট ক্যানসার। কোলকাতার ডাক্তাররা রোগটা ধরতেই পারেনি। ভুল ট্রিটমেন্ট করে গেছে। ভেলোরে গিয়ে লাস্ট স্টেজে ধরা পড়ল। চল, এবার ওদের ডাকি। ফিরতে হবে। 

রাইয়ের অনুরোধে ফটোগ্রাফারের ভূমিকা নিতে হয়েছে অর্ককে। সবুজ গাছ-গাছালি ও পুরনো ভাঙ্গা দেওয়ালকে পেছনে রেখে জিন্স আর টপে রাই। ভীষণ মিষ্টি লাগছে ওকে। অর্ক ক্যামেরার চোখে সেই সৌন্দর্য উপভোগ করছে। ফটো তোলা হলে, দুজনে হোয়াটস-অ্যাপ নম্বর বিনিময় করে ছবি বিনিময় করল। 

আমার দাদুর ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। তোমার বাবাকে এরকম ভাবে অপমান করার কোনও মানে হয়। একটা ছেলেকে নিজের পায়ে দাঁড়াবার সময় তো দিতে হবে। মাকে সাত তাড়াতাড়ি বিয়ে না দিয়ে তোমার বাবাকে দুবছর সময় তো দিতে পারতো। রাইকে হোয়াটস-অ্যাপে ছবি পাঠাতে পাঠাতে বলল অর্ক।

হ্যাঁ, আমার বাবা আর আপনার মায়ের বিয়েটা হলে খুব ভালো হত। আমাদের সম্পর্কটা ভাই বোনের হতো। সেক্ষেত্রে আপনার আমার বিয়ের কোনও প্রশ্নই উঠত না। 

সুমিতা ও তমাল চলে এলে ওদের আলোচনা থামাতে হল। সবাই আবার গাড়িতে উঠে বসল। অর্ক সুমিতাকে ওদের কোয়াটারে নামিয়ে রাই ও তমালকে ওদের হোটেলে পৌঁছে দিল। 

কিরে অর্ককে কেমন লাগলো? হোটেলের ঘরে ঢুকে মেয়েকে প্রশ্ন করল তমাল। 

সবই ঠিক আছে। তবে এই জায়গাটা আমাদের বাড়ি থেকে বড্ড বেশী দূরে। এতো দূরে তোমাকে একা রেখে আমি থাকতে পারবো না। কাছাকাছি শ্বশুরবাড়ি হলে না হয় যাতায়াত করা যেত।

মেয়ের যুক্তিকে ফেলে দিতে পারল না তমাল। আবার এমন ছেলে হাত ছাড়াও করতে চাইছে না ও। সুমিতা ফোন করে রাইয়ের মত জানতে চাইলে তমাল রাইয়ের বক্তব্য গুছিয়ে বলল। কথাটা শুনে সুমিতার খারাপ লাগলেও রাইয়ের মতকে সমর্থনই করল ও।  

রাতে হোয়াটস-অ্যাপে অর্ক ও রাইয়ের চ্যাট চলল। 

-   দাদুর ওপর রাগ কমলো?

-   ভেবে দেখলাম কাজটা দাদু একদিক দিয়ে ভালই করেছে।

-   কেন?  

-   না হলে তো আমাদের বিয়ে সম্ভব হতো না।  

-   আমাদের বিয়ে এমনিতেও সম্ভব নয়।

-   কেন আমাকে আপনার পছন্দ নয়?

-   না, না। তা নয়। দাঁড়ান ফোন করছি। 

হোয়াটস-অ্যাপ রেখে ফোন করল রাই। 

-   হ্যালো। আসলে ভেবে দেখলাম বাবাকে ফেলে আমার এতো দূরে থাকা সম্ভব নয়। বাবার বয়স হয়েছে। একা থাকা বাবার পক্ষে অসম্ভব। এখানে বিয়ে হলে তো ইচ্ছে হলেই বাবার কাছে চলে যেতে পারবো না।

-   বুঝলাম। বেশ গুরুতর সমস্যা। কালকে তো আপনাদের বিকেলে ট্রেন। সারাদিন কি করছেন?

-   সকালে কল্যানেশ্বরী মন্দিরে পূজো দিতে যাবো। তারপর হোটেলেই থাকবো। বাবা কাল নিজের ব্যবসার কাজে কয়েকটা হোটেল, রিসোর্টে ঘুরবে। একা একা আর কোথায় যাবো বলুন?

-   আপনি কাল একদম সকাল সকাল পূজো দিয়ে, ব্রেকফার্স্ট করে তৈরি থাকবেন। আমি কাল সাড়ে নটা দশটা নাগাদ আপনাদের হোটেলে যাচ্ছি। মাইথনে তো আর আসার ইচ্ছে নেই। মাইথন ড্যামটা দেখে যান। এতো কাছে এসে এটা মিস করবেন কেন?

-   হ্যাঁ, আমি মাইথন ড্যাম দেখে যেতেই চেয়েছিলাম। বাবার জন্যে হয়ে উঠছিল না। ঠিক আছে। আপনি কাল আসুন। আমি রেডি থাকবো। 

পরদিন ভোরে উঠে স্নান করে তৈরি হয়ে বাবা ও মেয়ে পূজো দিতে গেল। অতো সকালে লাইন বিশেষ ছিল না। তাড়াতাড়ি পূজা দিয়ে বেরিয়ে এলো ওরা। মন্দিরের সামনের বটগাছের গুড়িতে অসংখ্য ঢিল বাঁধা আছে। রাই সেই ঢিলের সংখ্যা একটা বৃদ্ধি করল। তারপর ওরা মন্দিরের সামনের একটি দোকান থেকে কচুরি জিলিপি খেয়ে হোটেলে ফিরল। হোটেল থেকে নম্বর নিয়ে একজন অটো ড্রাইভারকে ফোন করল তমাল। অটো এলে প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র নিয়ে তমাল তার কাজে বেরিয়ে গেল। যথা সময়ে অর্ক গাড়ি নিয়ে চলে এলো।রাই প্রস্তুতই ছিল। হর্ন শোনা মাত্রই নেমে এলো।

গাড়ি চলল। তার সাথে ওদের আলোচনাও চলল। ডিভিসির তৈরি অভয়ারণ্যে অসংখ্য হরিণ বসবাস করে। ব্রিজের ওপর গাড়ি থামিয়ে রাইকে কয়েকটা হরিণ দেখাল অর্ক। তারপর রাইকে বলল, তোমার বাবাকে একটা ফোন করে দেখো তো উনি কোথায় আছেন।

বাবা গড় পঞ্চকোট ইকো ট্যুরিজমে আছে। ফোন থেকে মুখ সরিয়ে অর্ককে বলল রাই। 

বাবাকে বল ওখান থেকে আমাদের বাড়ি গিয়ে মাকে নিয়ে তোমাদের হোটেলে ফিরতে।

রাই কোনও প্রশ্ন না করে অর্কর শেখানো কথা বাবাকে বলে অর্কের বাড়ি যেতে রাজি করাল।

রাই ফোন রাখার পর সুমিতাকে ফোন করল অর্ক।

-   মা, রাইয়ের বাবা আমাদের বাড়ি যাচ্ছেন। তুমি ওনার সাথে রাইদের হোটেলে চলে এসো। আলোচনা আছে। 

-   মানে? তুই বাড়ি আসবি না? আমি যে রান্না করলাম?

-   আমার খাবার তুমি রাইয়ের বাবাকে খাইয়ে দাও। আমরা বাইরে খেয়ে নিচ্ছি। 

ফোন রেখে আবার ওরা গাড়িতে উঠল। মাইথন ড্যামের কাছে পৌঁছে রাইরা দামোদর বক্ষে নৌকা বিহার করল। সেখানেও গুরু গম্ভীর আলোচনা। নদীর মাঝে একটি উঁচু টিলায় উঠে অসংখ্য ছবি ও সেলফি তোলা হল। সেই একই নৌকায় ফেরা হল। তারপর কাছাকাছি একটি হোটেলে লাঞ্চ সেরে অর্ক ও রাই হোটেলে ফিরল। বেশ কিছুক্ষণ পর তমাল ও সুমিতাও হোটেলে চলে এলো। প্রাথমিক কথাবার্তার পর শুরু হল মুল বিষয়ের আলোচনা।

সুমিতা – রাই, তাহলে আর তোমার পাকাপাকি ভাবে মাইথন থাকা হচ্ছে না।

রাই – কি করবো বলুন? বাবার পক্ষে তো নার্সারি ছেড়ে আমাদের সাথে থাকা সম্ভব না। আর আমি ও বাবাকে একা ছেড়ে থাকতে পারবো না।

সুমিতা – কথাটা তোমার ভুল নয়। তবে সব ঠিক তো মন মেনে নিতে পারে না, তাই ...

তমাল – তুই যদি এখানে বিয়ে করবিই না, তবে এখানে এলি কেন?

রাই – এসেছি তো ঘুরতে। 

অর্ক – তোমার বাবাকে যদি একা থাকতে না হয়, তাহলেও কি এখানে বিয়ে করবে না?

রাই – না, তা কেন? কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কিভাবে?

অর্ক – সম্ভব হবে। এমন ব্যবস্থা নেব, যাতে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না। তোমার আমার বিয়ের দিনে একটা নয়, দুটো বিয়ে হবে?

তমাল – মানে?

রাই – হ্যাঁ। আমার আর অর্কের বিয়ের সাথে তোমার আর সুমিতা আন্টির বিয়ে। একই সাথে মা ছেলে, বাবা মেয়ের মালা বদল।

সুমিতা – যত সব পাগলের প্রলাপ। এই বয়সে মালাবদল করব? লোকে বলবে কি?

অর্ক – লোকের কথা তো সারা জীবন ভাবলে। এবার একটু নিজেদের কথা ভাবো না। নিজেরা ভালো থাকার চেষ্টা কর না।  

রাই – আন্টি, তুমি বাবাকে বিয়ে করলে বাবার আর একা থাকতে হয় না। আর তোমাদের যৌবনে একে অপরকে পাওয়ার মনোবাঞ্ছাও পূরণ হয়। লোকলজ্জা বাদ দিয়ে বাকি জীবনটা একটু আনন্দ করে বাঁচো না।

তমাল – না না, এই বুড়ো বয়সে আমি মালাবদল করতে, সাত-পাক ঘুরতে পারবো না। 

অর্ক – বেশ তো, ওসব নাই করলেন। রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করুন। 

সুমিতা – সেটা তাও সম্ভব। সই সাবুদ করলেই কাজ শেষ।

রাই – ব্যাস, তাহলে এটাই ফাইনাল হয়ে গেল। আমাদের বিয়ের দিনই তোমাদের বিয়ে হচ্ছে। আমি তবে এখন একবার কল্যানেশ্বরি মন্দিরে গিয়ে ঢিলটা খুলে আসি।

অর্ক – এখনই যাওয়ার দরকার নেই। আগে বিয়ে দুটো হোক। বিয়ের পর তো তুমি এখানে আসছই। তখন না হয় ঢিল খুলো।

তমাল – রাই না গেলেও ভাবছি আমি একবার মন্দির থেকে ঘুরে আসবো। আমিও একটা ঢিল বেঁধে আসি তাহলে। অনেক দিন পর বিয়ে তো। একটু টেনশন হচ্ছে। 

সুমিতা – বেশ তো, তোমরা তো ঐ পথ দিয়েই স্টেশন যাবে। তখন না হয় মন্দিরে যেও।

তমাল ও রাই নিজেদের ব্যাগ গুছিয়ে নিলো। তারপর হোটেলের বিল মিটিয়ে সবাই মিলে বেড়িয়ে পড়ল। মন্দিরে সবাই নেমে মায়ের কাছে নিজেদের মনোবাঞ্ছা জানিয়ে আবার গাড়িতে উঠলো। অর্ক ও সুমিতা রাইদের বরাকর স্টেশনে পোঁছে দিল। ওদের ট্রেনে তুলে বিদায় নিলো, আর সকলেই আগামী শুভদিনের অপেক্ষায় দিন গুনতে লাগল। 




Rate this content
Log in

More bengali story from JAYDIP CHAKRABORTY

Similar bengali story from Romance