রাতের হাতছানি
রাতের হাতছানি
যে ঘটনাটা আপনারা পড়তে চলেছে এটিও একটা সত্য ভৌতিক ঘটনা যেটা ঘটেছে আমার দাদা ঠাকুর এর সঙ্গে।
আমার দাদা ঠাকুর ছিলেন ডাক্তার তখনকার দিনে গ্রামে ডাক্তারি করতে যেত ঘোড়ায় চড়ে। আমার দাদা ঠাকুর ও তাই যেতেন কেননা এখনকার দিনের মতো ট্যাক্সি,বাস তখনকার দিনে তো ছিল না।সেইরকমই একদিন জমিদার বাড়ি থেকে ডাক এলো যে জমিদারের মেয়ের খুব শরীর খারাপ তাই দেখতে যেতে হবে। আমার দাদা ঠাকুর বলে পাঠালেন যে "কাল ভোর বেলা,আমি চলে যাব"..।পরের দিন...সকালবলা দাদাঠাকুর জমিদার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। জমিদার বাড়ি পৌঁছে তার মেয়েকে দেখলেন তার মেয়ের খুব জ্বর হয়েছে অনেকদিন ধরে কিন্তু কিছুতেই সার ছিল না।আমার দাদা ঠাকুর তাকে দেখে সব ওষুধপত্র দিলেন আর বললেন....জমিদার বাবুকে বলেন.. চিন্তা করার কিছু কারণ নেই তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। এরপর জমিদারবাবু সঙ্গে গল্প করতে করতে বেশ কিছুটা সময় চলে গেল এরপর জমিদার বাবু বললেন... ডাক্তারবাবু অনেক বেলা হয়ে গেছে তো এখানেই কিছু খাওয়া-দাওয়া করে নিন...।আমার দাদা ঠাকুর দুপুরের খাওয়া দাওয়া জমিদারবাবুর বাড়িতেই সারলেন।খাওয়া-দাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিলেন বিশ্রাম নিয়ে যখন দাদা ঠাকুর উঠলেন তখন বেলা গড়িয়ে এসেছে, উনি জমিদারবাবু কে বললেন...এবারে তো আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হব...। আমাকে অনুমতি দিন, কিন্তু জমিদার বাবু বলেন...ডাক্তারবাবু বেলা পড়ে এসেছে আপনার যাওয়ার পথেই তো পাশে শ্মশান পড়বে তাই আমার মনে হয় আজ রাতটা আপনি এখানেই কাটিয়ে যান।কাল ভোর ভোর চলে যাবেন কিন্তু...আমার দাদা ঠাকুর বরাবরই ভীষণ সাহসী তিনি বললেন...ও কিছু চিন্তা করবেন না... আমি ঠিক চলে যাব,কারণ শ্মশান টা তো পাশে পড়বে আমি তো শ্মশানের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি না...।
এই বলে তিনি তৈরি হতে লাগলেন।তখনকার দিনে যখন রোগী দেখতে গেলে টাকাপয়সার থেকেও বেশি জিনিসপত্র দিত, তেমনি জমিদারবাবু টাকা পয়সা তো দিলেনই এরপর মিষ্টি, ফল এবং একটা গোটা মাছ উপহার হিসেবে আমার দাদা ঠাকুর কে দিলেন।আমার দাদা ঠাকুর ঘোড়ার উপর উঠে মাছটা হাতে নিয়ে নিলেন তারপর জমিদারবাবু কে নমস্কার করে যাত্রা শুরু করলেন...। বেশ কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পর দেখলেন যে মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে আর সেই চাঁদের আলোয় পুরো এলাকাটা আলোকিত হয়ে আছে।আমার দাদা ঠাকুরের বেশ ভালই লাগছিল কেননা চারিদিক জ্যোৎস্নার আলোতে এক রহস্যময় লাগছিল রাস্তাটাকে....।কারণ কোন লোক চলাচল নেই বললেই চলে কেননা সন্ধ্যার পরে এই রাস্তায় কেউ আসা-যাওয়া করে না...কেননা পাশে শ্মশান বলে লোকে এই রাস্তাটা কে এড়িয়েই চলে...। এইসব সাতপাঁচ ভাবতে... ভাবতে...আরো কিছুটা রাস্তা কখন এগিয়ে এ এসেছে উনি খেয়াল করলেন। আরে...!পাশেই তো শ্মশানটা আর আমি অনেকটা রাস্তা চলে এসেছি..., আর কিছুটা গেলেই শ্মশানটা পেরিয়ে যাব,আর আমি আমার গ্রামের রাস্তায় ঢুকে যাব।কিন্তু...তখনই খেয়াল করলেন যে একটি মেয়ে মনে হচ্ছে আমার সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছে...কিন্তু আমিতো ঘোড়ায় যাচ্ছি আর মেয়েটি উড়ছে...নিজের চোখকে উনি বিশ্বাস করতে পারছেন না....কেননা প্রথমত এইসবে উনি বিশ্বাসই করেন না...।আরো কিছুক্ষণ বাদে চাঁদের আলোয় স্পষ্ট হলো... লাল পাড় সাদা শাড়ি পরা একটি মেয়ের অবয়ব...।সে... যেন হাত বাড়িয়ে আমার কাছে কিছু চাইছে...। এমন সময় তিনি তার কানে স্পষ্ট শুনতে পেলেন যে একটি মেয়ের গলার আওয়াজ...। সে বলছে..."আমায় মাছটা দিবি...."। এই কথা শোনার পর দাদা ঠাকুরের গোটা মেরুদন্ড বেয়ে শরীরটা যেন হিম হয়ে গেল...। উনি তখন কোনো দিকে না তাকিয়ে প্রাণপণে ঘোড়াটাকে ছোটালেন...আর ঘোড়াটা যত জোর ছুটছে মেয়েটা তালে তাল রেখে ওই ঘোড়ার সঙ্গে যাচ্ছে এভাবে যে কতক্ষণ চলেছিল দাদা ঠাকুরের কিছু মনে নেই। যখন উনার হুস এল তখন উনি দেখলেন যে....ঘোড়াটা দুটো গ্রামের মাঝখানে যে থানা থাকে সেই থানার মধ্যে ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়েছে থানার বড়বাবু আমার দাদা ঠাকুর কে দেখে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে বললেন...." কি ব্যাপার ডাক্তার বাবু,আপনি এত রাতে এইভাবে...!কি হয়েছে....?এইসব উত্তর দেওয়ার মতন অবস্থায় আমার দাদা ঠাকুরের ছিলনা। থানার বড়বাবু উনাকে দেখে বুঝতে পেরেছিলেন যে কিছু একটা বড়সড় হয়েছে...। উনি ওনাকে ধরে ধরে থানার ভিতরে নিয়ে গেলেন,তারপর দাদা ঠাকুর বসে কিছুক্ষণ বাদে... সব কিছু বলল,সব শুনে থানার বড়বাবু থানার চৌকিদারকে বললেন মাছটা জঙ্গলে সামনে ফেলে আসতে আর আমার দাদা ঠাকুর কে বললেন যে ডাক্তারবাবু ওই মাছটা যে দেখেছে তখনই সে খেয়ে ফেলেছে...তাই আর ওই মাছটা আমাদের খাওয়ার যোগ্য নয়।এই সব কথা শুনে আমার দাদা ঠাকুর বলেন আমার আর ওইসব কিছু চাইও না... আমি যা বিশ্বাস করতাম না, আজ ঈশ্বর আমাকে সেটা বিশ্বাস করিয়ে ছাড়লো...।এইসব কথা বলে কয়ে আমার দাদা ঠাকুর থানার বড়বাবু কে অনেক ধন্যবাদ দিলেন আর বললেন যে আমি এবার বাড়ি যাই। কিন্তু...থানার বড়বাবু, বললেন...যে আপনি যাবেন কি করে...?কেননা আপনার ঘোড়াতো এক পাও নড়ছে না... তাকে আমরা জল আর খাবার দিয়েছি।আপনি বরং আজকের রাতটা এই থানায় বিশ্রাম করুন কাল সকাল বেলা বাড়ি ফিরবেন। আমার দাদা ঠাকুর আর কথা না বাড়িয়ে এই কথাতেই রাজি হয়ে গেলেন আর ওই থানায় রাতটা কাটিয়ে খুব সকাল বেলায় বাড়ির জন্য রওনা দিলেন।