জমিদার নর্তকী
জমিদার নর্তকী
নীচের উল্লেখিত ঘটনাটি হলো সত্য ঘটনা,ঘটনাটি আমি আমার দাদুর কাছে শুনেছিলাম ঘটনাটি হল আসলে যার সঙ্গে ঘটেছিল তিনি হলেন আমার দাদা ঠাকুর।
আমার দাদু যখন কলেজে পড়তো তখন আমার দাদুর ফ্যামিলি রেঙ্গুনে থাকতো, আমার দাদা ঠাকুর ওখানকার জেলের ডাক্তার ছিলেন। আমার দাদা ঠাকুরের নাম হল অরিন্দম ঘোষ আর আমার দাদুর নাম অমিয় ঘোষ। আমার দাদুরা ছিলেন চার ভাই দুই বোন রেঙ্গুন থেকে ভারতে ফিরে আসার পর দাদুরা কলকাতায় এসে এক অতিথিশালায় উঠলেন কারণ তখন দাদুর কোন এখানে বাড়ি ছিল না। দাদুর বাবা একজনকে বাড়ি দেখার কথা বললে তিনি একটা বাড়ি দেখাতে নিয়ে যান, বাড়িটা দেখানোর পর দাদাঠাকুরের খুব পছন্দ হয় কারণ বাড়িটা খুব বড় আর আলো-বাতাস খুব ভালোই আছে। এরপর আমার দাদু তার ভাইবোন মা-বাবার সঙ্গে ওই বাড়িতে গিয়ে ওঠে। যথারীতি এখানে আবার সবাই স্কুল কলেজে ভর্তি হয় আর আমার দাদা ঠাকুর এক হসপিটালের সঙ্গে যুক্ত হন।এইভাবে বেশ কিছুদিন ভালই যাচ্ছিল হঠাৎ করে একদিন সন্ধ্যেবেলায় আমার দাদুর ছোট বোন তখন পড়ছিল, বাইরে থেকে মনে হল যেন আমার দাদা ঠাকুর তার নাম ধরে ডাকছিল ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দেখে কেউ কোথাও নেই। এই থেকে শুরু হল নানা রকমের ভৌতিক ঘটনা। তারপর বাথরুমের কল বন্ধ করে আসতো আমার দাদু তার কিছুক্ষণ পরেই শোনা যেত বাথরুমের কল থেকে জল পরছে তখন আমার দাদুর মা বলতেন,বাথরুমের কলটা খুলে এসেছিস? যা গিয়ে বন্ধ করে আয়।সেই শুনে আমার দাদু আর আমার দাদুর বোনেরা বলতো,"
আমরা কিন্তু কলটা বন্ধ করে এসেছি, কিন্তু কে যে কলটা খুলে দিয়েছে ? কিছু বুঝতে পারছিনা।এই কথা শুনে আমার দাদুর মা বলতেন হয়তো কলটার প্যাচ নষ্ট হয়ে গেছে....! কাল মিস্ত্রি ডাকিস..। প্রায়ই এসব হতে লাগল এরই মধ্যে আমার দাদা ঠাকুরকে তার দেশের বাড়ি উলুবেড়িয়ায় কাজে যেতে হলো।
দাদা ঠাকুরের সঙ্গে আমার দাদুর ছোট-বোন ঘুরতে গিয়েছিলেন।উলুবেড়িয়ায় পৌঁছে আমার দাদা ঠাকুর তার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আর আমার দাদুর ছোট বোন এক আত্মীয়ের বাড়িতে দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়লেন। তারপর বিকেলবেলায় আমার দাদা ঠাকুর ফিরে ছোট মেয়েকে নিয়ে যথারীতি কলকাতায় ফিরে এলেন, আর ঠিক এক সপ্তাহ বাদে আমার দাদুর ছোট বোন একদিন রাত ঠিক দুটোর সময় হাসতে শুরু করলে সবাই মিলে তখন জিজ্ঞেস করল হাসছিস কেন? এর কোন উত্তর দিল না, হেসেই যেতে লাগল,তারপর অজ্ঞান হয়ে গেল। আমার দাদা ঠাকুর ডাক্তার ছিলেন তাই উনি বলেন চিন্তা করার কিছু নেই আমি দেখে নিচ্ছি..? পরের দিন সকাল বেলায় যথারীতি দাদু এবং বাড়ির সবাই দেখলেন তার ছোট বোন একবারেই স্বাভাবিক, কিন্তু ঠিক সন্ধ্যে হওয়ার পর অদ্ভুত ব্যবহার করতে লাগলো। সে যা খায় না সেইসব খাওয়ার চেয়ে বসল। দাদুর মা তো অবাক হয়ে গেলেন।কিন্তু যাই হোক মেয়ে যা খেতে চেয়েছে তাই সেই সব খাবার বানিয়ে দিলেন। প্রায়ই একা নিজেই সাত-আটজনের খাবার খেয়ে নিল..!ওতো গেল এক দিনের কথা....এরাম চলতে চলতে দাদুর ছোট বোন অসুস্থ হতে শুরু করল, এত কিছু খাচ্ছে তাও বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে রইল। দাদুর বাবা ডাক্তার উনি ওষুধপত্র দিচ্ছেন কিন্তু তিনি তাও বুঝতে পারলে না যে অসুখটা কি হয়েছে...?।খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন বাড়ির সবাই এর মধ্যে একদিন রাত্তির বারোটার সময় পঞ্চাশটা পান্তুয়ার খাওয়ার জেদ ধরল দাদুর ছোট বোন যাই হোক সেটা ব্যবস্থা করে আনা হলো। এরইমধ্যে দাদুর মা তার মেয়ের চুল বাঁধতে গিয়ে দেখল একপাশে চুলের ভেতর দিক থেকে বেশ খানিকটা কাটা এটা দেখে তিনি তার স্বামীকে বলে সব ঘটনাটা।তখন আমার দাদা ঠাকুরের মনে কি রকম একটা সন্দেহ হয়েছিল তিনি তার বন্ধুকে সব কথা গিয়ে বললেন বন্ধু বললেন...ওনার একজনের সঙ্গে জানাশোনা আছে যিনি এইসব ঘটনার ব্যাপারে কাজ করেন আর পূজা আচ্ছা নিয়েই থাকেন।এরপর দাদাঠাকুর তার বন্ধুর সঙ্গে তার বাড়ি গেল যার কাছে নিয়ে গিয়েছিল তার নাম সুরেশ রায়। তিনি সবকিছু শুনে বললেন আমাকে দুটো দিন সময় দিন আমি পুজোয় বসে সব দেখিয়ে নিয়ে আপনাকে জানাবো। দুদিন বাদে আমার দাদা ঠাকুর আবার তার কাছে গেল যাওয়ার পর তিনি বললেন যে আপনারা কোথাও কি মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন....? এই কথা শুনে দাদা ঠাকুর বললেন, হ্যাঁ.... দেশের বাড়িতে গিয়েছিলাম, তখন...তিনি বলেন ওইখানেই কেউ আপনার মেয়ের চুল কেটে নিয়েছিল।এই কথা শুনে দাদা ঠাকুর তো অবাক হয়ে গেল কারণ তিনি উনাকে কিছুই বলেননি এরপর সুরেশবাবু বললেন আমি আপনার মেয়েকে পুজো করে একটা তাবিজ দিচ্ছি.. কিন্তু আপনি কাউকে বলবেন না যে আমি এই কাজটা করছি কেননা যে তান্ত্রিক এ কাজটা করেছে সে আমার থেকেও বড় সে যদি জানতে পারে আমাকেও মেরে দিতে পারে..কেননা একটা মেয়েকে বাঁচানোর জন্যই আপনার মেয়ের চুল কাটা হয়েছিল।
এই কথা শুনে আমার দাদা ঠাকুর বলেন আমি এই কথা কাউকে বলবো না।এরপর আমার দাদা ঠাকুর সেই তাবিজ এনে ছোট মেয়েকে পড়ান এরপর ধীরে ধীরে দাদুর বোন সুস্থ হতে শুরু করল ঠিক তার দু তিন দিন বাদে দেশ থেকে একজন লোক খোঁজ নিতে এল যে আমার দাদা ঠাকুরের ছোট মেয়ে কেমন আছে এই কথা শুনে সবাই বললো ভীষণ অসুস্থ বিছানায় শয্যাশায়ী এই কথা শুনে ভদ্রলোক চলে গেলেন। এরইমধ্যে দাদুর জাঠতুতো ভাই ঘুরতে এল উনি এসেছিলেন। আমার দাদা ঠাকুরের সঙ্গে কিন্তু বাড়ির কাছে এসে উনি আর বাড়িতে ঢুকলেন না উনি আমার দাদা ঠাকুর কে বললেন যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব।এই বাড়িটা ছেড়ে দে..!এরপর সবাই মিলে আবার বাড়ি খুঁজতে লাগল বাড়ি খুঁজে বেশ কিছুদিনের মধ্যে একটা বাড়ি পেয়ে গেল। তখন ওই বাড়িতে যাওয়ার জন্য জিনিসপত্র সব বাঁধাবাঁধি হচ্ছে তখন আমার দাদুর জ্যাঠতুতো ভাই আবার এলো বলল যে বাড়িটা তোরা নিয়েছিস একবার আমাকে দেখিয়ে দে..। দেখা হওয়ার পর বলল এই বাড়িটা নে, এই বাড়িটা ভালো বাড়ি। ওই বাড়িটা ছেড়ে যেদিন সব জিনিসপত্র নিয়ে নতুন বাড়িতে আসবে ঠিক তার আগের রাতে আমার দাদু রাত তিনটের সময় বাথরুমে উঠেছিল বাথরুমের লাইট জ্বেলেই আমার দাদু চেঁচামেচি শুরু করেছিল সবাইকে ডেকে দেখালো যে বাথরুম থেকে ফোটা ফোটা রক্ত দালান দিয়ে ঘর পর্যন্ত ভর্তি হয়ে আছে। এই দেখে আমার দাদুর মা অবাক হয়ে বললেন...যে এইসব কার কাজ এসব তো আমি যখন শুয়েছি তখন ছিল না। এই শুনো আমার দাদা ঠাকুর বললো ঠিক আছে, যা হয়েছে হয়েছে...ওইসব কথা ছেড়ে এখন সব পরিষ্কার করে শুয়ে পড়ো। পরের দিন সকালে সবাই মিলে নতুন বাড়িতে চলে এল আমার দাদা ঠাকুর ওই বাড়ির চাবি বাড়ির বাড়িওয়ালাকে দিয়ে বলল, আজ থেকে আমরা এই বাড়ি ছেড়ে দিলাম।এরপরে আমার দাদুর জ্যাঠতুতো ভাই আবার এসেছিল এসে সবাইকে বলেছিল যেদিন আমি তোদের ওই বাড়িতে গেছিলাম তোদের বাড়িতে আমি কেন ঢুকতে পারিনি জানিস..? তোদের বাইরের ঘরের জানলায় দুজন বাইজি দাঁড়িয়েছিল।শুনে তো সবাই তখন চমকে উঠেছিল তখন আমার দাদু বললেন তুমি দেখলে কি করে..? তখন দাদুর ভাই বলেছিলেন জানিস তো আমি শখে তন্ত্র মন্ত্র একটু শিখি সেইজন্য দেখতে পেয়েছিলাম।যেহেতু আমি পূজা আচ্ছা করি তাই তারা আমাকে ওই বাড়িতে ঢুকতে না করছিলো কারণ ওদের কষ্ট হবে। ওই জন্য আমি ঢুকি নি।এই কথা জানবার পর প্রত্যেকে তখন এত ভয় পেয়েছিল যে কারোর কথা বলবার ক্ষমতায় ছিল না।আমার দাদা ঠাকুর ডাক্তার ছিলেন তাই এই কথা শুনে তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কিন্তু চোখের সামনে ঘটা ঘটনাগুলোকে অস্বীকার করতে পারছেন না,তাই শেষ পর্যন্ত তিনি ও মেনে নিয়েছিলেন যে এই রকম ঘটনা আজও ঘটে....।