অদৃশ্য প্রেম
অদৃশ্য প্রেম
যত দূরে যাই না হোক কেন আমি তোমার থেকে কোনদিনও দূরে যাব না..... এই কথাটা অদিতির মরন কালে কানে বেজেই চলেছে অদিতির মরন কালেও ওর সব সময় মনে হচ্ছে যে রোমি আছে এবং মরার পরেও একসঙ্গে থাকবে। আমার আর রোমির অদৃশ্য প্রেম কাহিনীটা সমাজ আজ পর্যন্ত বুঝতে পারোনি,না বুঝতে পারল আমার স্বামী ইন্দ্রনীল।আমাদের বিয়ের দিনই আমি ইন্দ্রনীলকে রোমির কথা জানাতে ইন্দ্রনীল আমার পুরো কথাটাকেই হেসে উড়িয়ে দিল....,বিয়ের তিনমাস পরে ইন্দ্রনীল আমাকে পাগল অপবাদ দিয়ে ফিরিয়ে দিল....।অবশ্য!!,আমার মনের অবস্থাটা খানিকটা বুঝতে পেরেই আমাকে আবার ফিরিয়ে নেয়...আমার কাছে ইন্দ্রনীল রোমির পুরো ঘটনাটাই জানতে চায়, তখন আমি ওকে প্রথম থেকে সবটাই জানাই , সব কথা শোনার পর ও আমার কাছে রোমির একটা ছবি চায়, তখন আমি রোমি আর আমার একটা ছবি তুলেছিলাম দুর্গাপুজোয় সেই ছবিটা ওকে দেখাই.... ঐ ছবিটা দেখার পর ইন্দ্রনীল কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল,তার পরে ও দৌড়ে ঘরে চলে গেলো....,দৌড়ে ঘরে গিয়ে কাউকে যেন একটা ফোন লাগায়...???এখন বুঝতে পেরেছি সেই ফোনটা ছিলো একটা বিজ্ঞান ভবনের।ইন্দ্রনীলের বন্ধু একজন মস্ত বড় সায়েন্টিস্ট তিনি অদৃশ্য মানব এর ওপর গবেষণা করছেন।আমি ইন্দ্রনীলের কাছে ওনার কথা অনেক শুনেছি.....যে অদৃশ্য মানব হচ্ছে এমন এক জীব সে যদি চায় কাউকে বশ করে রাখতে পারে চিরকাল,তাহলে.... কি রোমি ও একজন অদৃশ্য মানব, যে আমাকে এখনো পর্যন্ত নিজের ছায়ায় আবদ্ধ করে রেখেছে। হ্যাঁ.... অবশ্য ইন্দ্রনীল আমাকে বলেছিল যে অদৃশ্য মানব এর কিন্তু ছায়া পড়ে, তারমানে রোমির ছায়া দেখেই কি আমি ওর প্রেমের জালে আবদ্ধ হয়েছিলাম.....।না...., ও নিজেই আমাকে নিজের প্রেম জালে আবদ্ধ করেছিল। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। রোমির সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় আমার কলেজের প্রথম দিনে.... রোমিকে নীল রঙের শার্ট এ আর বাদামী রং-এর প্যান্ট বেশ মানাচ্ছিল। আমি তো প্রথম দেখাতেই রোমির প্রেমে পড়ে গেছিলাম, কি জানি হয়তো ওর রূপের মোহোয়ই আর ওর গায়ের সাদা রঙের ছটায় আমাকে এতই মুগ্ধ করেছিল যে আমি নিজেই নিজেকে ওর কাছে আবদ্ধ করে নিয়েছিলাম.....। আমরা দুজনে অনেক সময় কাটিয়েছি এক সঙ্গে.... পার্কের ধারে,নদীর তীরে,নৌকার মধ্যে....আম গাছের তলায়.....। এরাম করে দিনের পর দিন মাসের পর মাস কেটে গেল আর আমার আর রোমিওর ভালোবাসা ক্রমশ বাড়লো। ঠিক এরকমই একদিন কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরে দেখি ইন্দ্রনীলের বাবা মা বাড়িতে এসেছে, আমার আর ইন্দ্রনীলের বিয়ের কথা বলতে.....। আমি বিয়ের কথা জানতে পেরে আমি মা-বাবাকে স্পষ্ট না....করে দিলাম। আমার না করার কারণ আমি খুব ভালভাবেই জানি....। আমি তো ইন্দ্রনীল কে বিয়ে করতে পারব না, আমি রোমিকে ভালোবাসি সেও আমাকে ভালবাসে ....।আমি এই কথা রোমিকে কিভাবে বলব সেটা বুঝতেই পারছিলাম না,কেনো...আমার কাছে না ওর ফোন নাম্বার ছিল, না ছিল ওর বাড়ির কোন ঠিকানা....।আমি সারাটা রাত বিছানার উপর শুয়ে চোখের পাতা এক করতে পারছিলাম না, আমি কোনমতে চোখ খুলেই শুয়েছিলাম.... খালি সকালের জন্য অপেক্ষা করছিলাম অধীর আগ্রহে....। সকাল হতেই দৌড়ে পালালাম কলেজে....। কলেজে পৌছেই চলে গেলাম রোমির ক্লাসে সেখানে গিয়ে দেখি রোমি আসেনি...? কলেজ শেষেও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিলাম রোমিওর জন্য.... কিন্তু.... সে আসলো না.....।আমি নিত্যান্তই খুব ব্যথা পেয়ে মনমরা হয়ে বাড়ি ফিরে এলাম, আমার মনের মধ্যে একটা কথাই ঘুরপাক খেতে লাগল,কেন....রোমি আসল না....।আর আমি আমার বাবা মাকে কি জবাব দেবো....?আমাকে তো কিছুদিনের মধ্যেই আমার সিদ্ধান্তটা জানাতে হবে,যে আমি ইন্দ্রনীল কে বিয়ে করবো কি করবো না.....।তাই আমি অনেকটাই নিরুত্তর হয়েই ইন্দ্রনীল কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু জানেন..... একটা কথা রোমি আর আমার মধ্যে ঘটা সেই মুহূর্তগুলোকে আজও আমি খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারি....,তার প্রত্যেকটা ছোঁয়া....।আজও.... আমার পুরো শরীরটাকে ঘিরে রয়েছে.... আর মনে হয় আমার মরার পরে ঘিরে থাকবে। বিয়ের দিনে নিজেকে অনেকটাই সামলে নিয়েছিলাম কিন্তু তাও আমার মনের ভেতরটা যেন ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল যত বিয়ের সময়ে এগোচ্ছিল।বিয়ে হল... আর তারপরের কথা তো আপনারা সবাই গল্পের শুরুতেই জেনেছেন। আজ পর্যন্ত আমার মনের মধ্যে একটা কথা অধরা উত্তরহীন হয়ে রয়ে গেল..? সেটা হলো যে...যেদিন আমি ইন্দ্রনীলকে রোমির আর আমার ছবিটা দেখিয়েছিলাম সেদিন ও ছবিটার দিকে তাকিয়ে ওরকম হতভম্ব হয়ে উঠল কেন.....?। আর কেনই বা ও....ওর... সাইন্টিস্ট বন্ধুকে ফোন করলো..? আর কেনই বা সেদিন রোমি কলেজ এলোনা....?,তাহলে কি রোমি একজন অদৃশ্য মানব...। যদি তাই হয় তাহলে ও আমাকে সত্যি কথাটা বলল নাই বা কেন...?, কেনই বা আমাকে নিজের প্রেমে জরালো আমাকে জোরালো।তাহলে ছেড়ে গেল কেন....? তাহলে এটা রোমির কিরকম প্রেম....কিংবা এটা তার কোন ছলনা ছিল না তো.....??।এইসবের উত্তর না পেয়ে আমাকে চিরতরে হারিয়ে যেতে হবে মনে হচ্ছে....।আপনার কি মনে হয়....? আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে এইসব প্রশ্নের উত্তর পাবো কি ....? না পাবো না.....।