পাশে থেকো
পাশে থেকো
কলকাতায় এবারে খুব জাঁকিয়ে শীত পড়েছে
তাই এবারে কমলালেবু খুব সস্তায় পেয়েছেন অমলেশ্বর বাবু।
অমলেশ্বর বাবু হল নন্দিনীর বাবা।
অফিস থেকে নন্দিনী বাড়িতে ফিরেছে দুপুরের খাবার খেতে। দুপুরের খাবার খেয়ে বারান্দায় বসে বসে, তখনই একটা ফোন আসে ওর মোবাইলে.... ফোনটা তুলতে ওর ঠোঁট যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেল আর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো। নন্দিনীর মা সোনালী দেবী পেশায় একজন ডাক্তার সে মাঝে মধ্যে বাড়িতে থাকে যখন তার কোনো রোগী দেখার থাকেনা।আজকে তার কোন রোগী দেখার ছিল না বলে সে বাড়িতে ছিল,নন্দিনীকে অনেক দেখার পরও সে সাড়া না দেওয়ায় ছুটে সোনালী দেবী চলে যান বারান্দায়। সেখানে গিয়ে দেখেন সোনালী পাথরের মত বসে আছে আর দু চোখ বেয়ে জল পড়ছে আর ফোনটা তার কানে লাগানো। অনেকবার ডাকা সত্ত্বেও সে কোন সাড়া না দেওয়ায় সোনালির মা নন্দিনীকে জোরে ঝাকিয়ে দিল তৎক্ষণাৎ সোনালী হুশ ফিরে আসতে বলল, মাগো.... বাবলুদা আর নেই সে আত্মহত্যা করেছে...
এই কথা শুনে সোনালী দেবী কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।নন্দিনী কিন্তু তখনও পাথরের মত বসে আছে তারপর হঠাৎ দুম করে পড়ে গেল সে.... ।সে নিজের জ্ঞান হারালো।কতক্ষন যে এইভাবে পড়েছিল তা সে জানে না তার যখন জ্ঞান ফিরল। তখন সে বাবলুদা বলে চেচিয়ে উঠলো। সে চারিদিক কিছু না ভেবে কাঁদতে কাঁদতে দৌড় সদর দরজার দিকে বেরিয়ে গেল। নন্দিনীর বাবা অমলেশ্বর বাবু চেঁচিয়ে নন্দী কে ডাকল....
কোথায় যাচ্ছিস?
কোথায় যাচ্ছিস,দাঁড়া আমি আসছি ....
সে কোন কথা না শুনেই আগে আগে এগিয়ে যেতে লাগলো। যেইনা নন্দিনী দরজার সামনে এসে দাড়ালো কান্তি লালবাবু নন্দিনীর কাকা সে নন্দিনীকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করল..?
বল কোথায় যাচ্ছিস তুই....?
সে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।তারপরে বল বাবলুদার বাড়ি যাচ্ছি। বাবলুদার বাড়ি কেন....?
জানো না... কেন? বাবলুদা নেই তুমি কি জানো....?
নাহ্....সেটা তোমাকে কেউ বলেনি। না আমি জানি....। কিন্তু ওকে তিনদিন আগেই শ্মশান ঘাটে দাহ করা হয়ে গেছে। ওর কোনো রকম বিন্দুমাত্র কিছু পড়ে নেই। তুই ওর বাড়ি গিয়ে কি করবি ওর বউ কাকলি সেও এখানে নেই।আবারও সেই পাথর মূর্তি ধারণ করে নন্দিনী।তারপরে পেছন ফিরে কাঁদতে তার ঘরে গিয়ে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। অমলেশ্বর বাবু। নন্দিনীকে ডাকতে যাচ্ছে তখনই নন্দিনীর ফোনটা সোফার উপর রাখা বেজে উঠলো....। অমলেশ্বর বাবু। ফোনটা তুলে ধরতেই ওপাশ থেকে একজন পুরুষ কণ্ঠস্বরে বলে উঠলেন.......
কংগ্রাচুলেশন ম্যাডাম......!!!!
আপনি একটা বড় ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে জব পেয়েছেন। আপনাকে তিনদিনের মধ্যেই ওখানে পৌঁছে গিয়ে আপনার জবে জয়েন করতে হবে।এটাই বলার জন্য আপনাকে ফোন করলাম অমলেশ্বর বাবুর ও পাশের জনের কথাটা কেটে দিয়ে বললেন......
আমি নন্দিনী না.....
ওর বাবা অমলেশ্বর বলছি......
আমি নন্দিনীকে বলে দেবো..... ও ঠিক পৌঁছে যাবে..... চিন্তা করবেন না
ধন্যবাদ..... ফোনটা রেখে দেন অমলেশ্বর বাবু। । তারপরে অমলেশ্বর বাবু। বলতে যাচ্ছেন আর ঠিক তখনই উত্তর দিকের জানলাটা দমকা হাওয়ায় খুলে খুলে যাবে.....।
কান্তিলালবাবু বলে....
তুই যা..... আমি জানালাটা বন্ধ করে আসছি। অমলেশ্বর বাবু নন্দিনীর ঘরের দরজায় গিয়ে ধাক্কা দিলেন কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া পান না। নাহ্... নন্দিনী দরজাটা খোলে।প্রায় দেড় ঘন্টার উপর হয়ে গেছে দরজাটা খোলেনি। তখন কোনমতে দরজাটা ভেঙে ঢুকে দেখলেন নন্দিনী খাটের উপর শুয়ে ঘুমাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন সব কষ্ট ক্লান্তি দুঃখ ভুলে আরামে ঘুমোচ্ছে। নন্দিনীর কাছে গিয়ে বসলেন অমলেশ্বর বাবু । নন্দিনীর মাথায় হাত বোলাতে গিয়ে কিছু একটা মনে হল অমলেশ্বর বাবু। , তখনই তার হাত ধরতেই টের পেল যে নন্দিনীর হাতটা পুরো ঠান্ডা হয়ে গেছে....। নাকে নীচের নিশ্বাস আর পড়ছেনা..... সোনালী......আমাদের নন্দিনী আর নেই...। নন্দিনী বলে চেচিয়ে উঠে বললেন.... মা !....নন্দিনী তুমি কেন এটা করলে?...... তুমি কেন এরকম করলে । তুই এতোটা দুঃখী আমি বুঝতে পারিনি রে মা নন্দিনী......বললেন সোনালী দেবী।তখন হঠাৎ করে নন্দিনী মায়ের সোনালী দেবীর হাতে একটা চিঠি উড়ে এসে পরল। চিঠিটা ঘুরিয়ে তুলতেই প্রথম লেখাটার সোনালী দেবীর চোখে ভেসে উঠলো.......প্রিয় বাবলুদা......
বাবলুদা বল তুমি আমাকে কেন ভালবাসলে না....?কেন...?.। আমাকে ভালবাসতে তো তোমায় আজ মরতে হতো না বলো তুমি কেন এরকম করলে তুমি আমায় প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলে.....যে তুমি আমার সব সময় আমার পাশে থাকবে আমার সাথে থাকবে আর সেই প্রতিশ্রুতি তাকে মিথ্যে করে দিয়ে চলে গেলে বাবলুদা.... "দিস ইজ নট ডান."....। বাবলুদা তুমি আমায় একলা রেখে চলে গেলে। বাবলুদা তুমি কাকলি কে বিয়ে করলে আমি কিছু বললাম না....আমি সবকিছুই মেনে নিয়েছিলাম।কিন্তু এটা মানতে পারছি না তুমি একটা একদম ঠিক করলে না।আমি তিনদিন যখন অজ্ঞান হয়েছিলাম তখন তুমি এসে বললে ননী....তোকে না ভালোবেসে আমি ভুল করেছিলাম রে.... আমি তোকে বুঝতেই পারিনি। কিন্তু মৃত্যুর পর বুঝতে পারলাম যে আমার আসল ভালবাসাটাকে বেসেছিল সেটা ছিল তুই, কিন্তু বাবলুদা আমি তোমায় চিরদিন ভালবেসে গেছি শুধু আছে। না আগেও বাসতাম এখনও বাসি আর চিরকালই বেসে যাব।আমি শুধু তোমার ননী হয়ে আজীবন বেঁচে থাকতে চাই মৃত্যুর পরেও....।
ইতি তোমার......
ননী
সোনালী দেবী কাঁদতে কাঁদতে নন্দিনীর বাবাকে বললেন....অভি( বাবলুদা)নন্দিনীকে ছোটবেলা থেকে দেখেছে। নন্দিনীর যখনই দরকার পড়েছে তখনই হেল্প করে দিয়েছি অভি আর যখন অভির দরকার থাকত তখন সারাক্ষ্মন ওর পাশে থেকেছে মেয়েটা।তাও অভি সেটা বুঝতে পারল না যে নন্দিনী ওকে ভালোবেসে ফেলেছে.... আর অভিও অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে নন্দিনীকে। যদি এটা বুঝতে পারত তাহলে এরকম পরিণতি হতো না ওদের ভালোবাসার। সত্তিকারের ভালোবাসার কি এরূপ পরিণতি হয়....।
