Kumar Archita

Drama Romance Inspirational

4.0  

Kumar Archita

Drama Romance Inspirational

সাদা গোলাপ

সাদা গোলাপ

4 mins
598


আমরা থাকি শ্যামবাজারে... ঠিক এখনকার কথা বলছি না বেশ তিরিশ - চল্লিশ বছর পেছনে চলে যান, তখন কলকাতা অনেকটাই ফাঁকা ফাঁকা ছিল। আমরা ছোট থেকে দেখে এসেছি ...আমাদের পাড়ার শেষপ্রান্তে বিশাল এক বাগান বাড়ি নামেই বাগানবাড়ি কেননা বাগানে একটাও ফুল নেই আর ওই বাড়ির মধ্যে যারা থাকে তারা না বলেন কারও সঙ্গে কথা না কেউ তাদেরকে হাসতে দেখেছে বাড়ির বাইরে বড় করে লেখা আছে ব্যানার্জি ভিলা। বাড়ির বড় ছেলের নাম পরাগ ব্যানার্জি,তার আরো ভাই আছে বোন আছে...মা বাবা দাদু ঠাকুমা সবাই আছে...কিন্তু যেহেতু পরাগ ব্যানার্জি পছন্দ করেন না অহেতুক কারুর সঙ্গে কথা বলতে তাই বাড়ির সব লোক ওই নীতি মেনে চলে। পরাগ ব্যানার্জি যেমন গম্ভীর তেমন দাম্ভিক পাড়ার কেউ কখনো ওর মুখে হাসি দেখেনি। হঠাৎই একদিন দেখা গেল ওই বাড়িতে দু -গাড়ি ফুলের গাছ ঢুকছে পাড়ার লোকেরা সবাই উৎসুক প্রাচির ঘেরা বাড়িতে কি হচ্ছে।পরেরদিন সকালবেলা... তিন চারজন মালি বাগান আর ছাদের পরিচর্যা করছে। বেশ কয়েক মাস বাদে...আমরা সবাই দেখলাম বাগানে আর ছাদে অনেক ফুল ফুটেছে, আমার কৌতূহল সবথেকে বেশি ছিল তাই ছাদে উঠে দেখতে গেলাম কি কি ফুল ফুটেছে...?দেখলাম গোটা বাগানজুড়ে প্রচুর গোলাপ ছাদে ও গোলাপ আছে কিন্তু ওখানে আরো বিভিন্ন ফুলের গাছ আছে। কিন্তু বাগানের বৈশিষ্ট্য আমাকে আরো ভাবে আকৃষ্ট করল কেননা ফুলের গাছ গুলো অদ্ভুত ভাবে সাজানো হয়েছে। চতুর্দিকে বিভিন্ন রঙের গোলাপের গাছ আর বাগানের মাঝখানটায় শুধু সাদা গোলাপের প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানো হয়েছে যদিও দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।


এর বেশ কিছুদিন বাদে...হঠাৎ দেখা গেল সুন্দরী বড় বাড়িটা খুব সুন্দর করে লাইট দিয়ে সাজানো হচ্ছে। পাড়ার সবাই বলা-কওয়া করতে শুরু করল কি ব্যাপার কেননা সবারিতো উৎসুক ঐ বাড়িটাকেই নিয়ে। রাত্রিবেলা দেখা গেল প্রচুর লোকজন এল গান-বাজনা...এসব হলো,আমরা এসব দেখলাম...কিন্তু বুঝতে পারলাম না কি হলো ।এর বেশ একমাস বাদ দিয়ে... হঠাৎ করে পরাগ ব্যানার্জির বাবা এলেন আমাদের বাড়িতে... এসে বললেন আমার ছেলের বড় ছেলের বিয়ে।এই বলে আমার বাবাকে নিমন্ত্রন্ন করলেন।এরপর পাড়ার সবাই জানতে পারল যে সে দিনের অনুষ্ঠানটা কেন হয়েছিল সেটা ছিল ওনার বড় ছেলের আশীর্বাদ।এরপর পাড়ার বুড়ো,ছেলেমেয়ে,বউ...কেউ বাদ গেলোনা আলোচনা করতে যে কার বাড়ির মেয়ে এরকম সর্বনাশ হচ্ছে... এরকম ছেলের সঙ্গে বিয়ে কারণ যে কোনদিনও কারো সঙ্গে ভালো করে কথা বলেনি আর লোকে কোনদিন তাকে হাসতেও দেখেনি...। যাইহোক দেখতে দেখতে...বিয়ের দিন এসে গেল...আমরা সবাই গেলাম নেমন্তন্ন রক্ষা করতে, গিয়ে দেখলাম বউকে খুব সুন্দর দেখতে হয়েছে কিন্তু বিশেষত্ব হলো বউয়ের বসার জায়গা থেকে শুরু করে...।রঙিন গোলাপের জায়গায় সাদা গোলাপের আধিক্য বেশি...সবারই একটু অবাক লাগলো কারণ বিয়ে মানেই আমরা জানি লাল গোলাপ আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে সাদা গোলাপের স্থান হয় না। আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম খুবই ভালো খাইয়েছেন যাকে বলে রাজকীয় খাবার। খেয়েদেয়ে আমরা যখন বিদায় নেবার জন্য নীচে এলম তখন স্বয়ং পরাগ ব্যানার্জি এসে জীবনের প্রথম আমাদের সঙ্গে কথা বললেন তাও আবার হেসে...এই পরিবর্তন দেখে পাড়ার সব লোকই অবাক হয়ে গেল।এ ব্যাপারটা... পরাগ ব্যানার্জি ও বুঝতে পারছেন...।এই ব্যাপারটা পরাগ ব্যানার্জি ও বুঝতে পারছিলেন তাই তিনি সবাইকে বললেন আমার এই পরিবর্তন দেখে আপনারা সবাই অবাক হয়েছেন তাই আপনাদের আমি কিছু কথা বলতে চাই... এই বলে উনি ওনার স্ত্রীকে হাত ধরে নিয়ে এলেন নিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। এসে বললেন...আমার স্ত্রীর নাম পাপড়ি ব্যানার্জি এই আমার পরিবর্তনের মূল কারণ।এই আমাকে পুরো এক পরিবর্তিত মানুষে রূপান্তরিত করেছে কারন আগে আমি না কারো সঙ্গে কথা বলতাম না হাসতাম না গান শুনতাম... আমি একটা যন্ত্র ছিলাম..।


ওর ভেতরেই শান্ত ও সৌন্দর্য দিয়ে আমাকে মানুষে পরিণত করেছে।তারপর জানেন কেন এত এই গোলাপ... প্রথমে যে আমি আমি যখন ওর বাড়ি গিয়েছিলাম আমি ঢুকেই দেখেছিলাম ওর বাগানে অজস্র সাদা গোলাপ,ওদের ঘরে ঢুকে দেখেছিলাম ফুলদানিতে রাখা আছে সাদা লাল গোলাপ..।আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম সাদা গোলাপ কেন এত..? পাপড়ি বলেছিল সাদা গোলাপ ওর ভীষণ পছন্দের কারণ সাদা হল শান্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক। তাই সেদিনের পর থেকে আমি ও আমার বাড়িতে সাদা গোলাপের গাছ লাগিয়ে ছিলাম আপনারা হয়তো দেখে থাকবেন।আর আজ ও সাদা গোলাপের এই আধিক্য বেশি..। এসব কথা শুনে আমি যখন বাড়ি ফিরছিলাম সারাটা রাস্তা ভাবতে লাগলাম একজন মানুষকে শুধু ঐ সাদা গোলাপ দিয়ে এতটা পরিবর্তন করা যায়..? ভাবতে ভাবতে কখন বাড়ি এসে পৌঁছেছি আমাদের বাগানে ও বিভিন্ন রকমের ফুলগাছ আছে।তখন প্রায় রাত্রি এগারোটা বাজে চাঁদের আলোয় পুরো গোটা বাগানটা ভরে গেছে আমাদের আমি বাগানের দিকে চেয়ে দেখলাম...। কি অদ্ভুত সুন্দর মায়াবী লাগছে...!! তখন মনে হলো হ্যাঁ...ঈশ্বরের সৃষ্টি এই ফুল এত সৌন্দর্য কোন মানুষ সৃষ্টি করতে পারে না তাই ঐ সাদা গোলাপ একটা মানুষকে যন্ত্র থেকে রূপান্তরিত করে ফেলেছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama