Chitta Ranjan Chakraborty

Abstract Others

3  

Chitta Ranjan Chakraborty

Abstract Others

পুরনো স্মৃতি

পুরনো স্মৃতি

6 mins
768


এখন সবার হাতে হাতে সেল ফোন। কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে এই সেল ফোন ছিল না। অনেক বাড়িতে ডায়াল করা ফোন ছিল। সেসময় বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের বাড়িতে এ ডায়াল ফোনে ব্যবস্থা থাকত, তাতে সে বাড়ির একটা মর্যাদায় থাকতো। আমাদের বাড়িতেও ডায়াল ফোন ছিল, সুন্দর আভিজাত্যের ছোঁয়া তাকে রেখে দেওয়া হতো বসার ঘরে। বাবার অনেক বন্ধুবান্ধব ছিলেন যারা প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রয়োজনে বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। বাবা নিজের প্রয়োজনে সবার সঙ্গে কথা বলছেন। আমাদের ওই ফোনের বিশেষ প্রয়োজন হতো না, কারন আমার কোনো বন্ধু বান্ধবের ফোন নাম্বার আমার কাছে ছিল না। আমাদের কখনো-সখনো কোন বিষয়ে কাউকে ফোন করতে হলে বাবার নোটবুকে নাম্বার দেখে বন্ধুর বাবা কে ফোন করতাম, বন্ধুর বাবা বন্ধুকে ডেকে দিতেন তখন দুজনে কথা বলতাম। তা ছিল নিয়মের মধ্যে প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া বাড়তি কোনো কথা আমরা বলতে পারতাম না।


ধীরে ধীরে সময় পাল্টেছে, মানুষের জীবন ধারার মান ও পাল্টেছে। কিছুদিন পরে শুনতে পেলাম বিএসএনএল থেকে ফোনের সিম কার্ড দেওয়া হবে। ছোট ছোট হ্যান্ডসেট ফোন কিনতে পাওয়া যাচ্ছে তাতে সিম ভরে নিলেই যেকোনো কারো সঙ্গে অনায়াসে কথা বলা যাবে। আর ওই ডায়াল ফোনের প্রয়োজন হবে না। একথা শুনে তো ভারী আনন্দ হল আমার, যেদিন প্রথম সামান্য কিছু সিম কার্ড বিক্রি করা হবে তার আগের দিন রাত্রি জেগে লাইনে বসে থাকলাম। কারণ সকালবেলা যদি লাইনে দাঁড়াই তবে হয়তো সিমকার্ড পাবোনা। আমি শুধু আমি নই কয়েক হাজার মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। অথবা কেউ ইট অথবা নিজের পায়ের জুতা রেখে লাইনে থাকল। সে কি অসম্ভব অনুভূতি, আমার হাতে সেলফোন থাকবে সেকি মহা আনন্দ। অফিস খোলার প্রথম দিকে আমি আমার কাঙ্খিত সিম কার্ড পেয়ে গেলাম। আগে থেকেই ফরম পূরণ করে রেখেছিলাম বলেই কোন সমস্যা হয়নি।

সারারাত জেগে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সিম কার্ড নিয়ে বাড়িতে এসে বিশ্ব জয়ের মত সবাইকে ডেকে বললাম আমার বিজয়ের কাহিনী। সবাই আমার সিম কার্ড টি হাতে নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে দেখে বলল ইস কি সাংঘাতিক জিনিস একটি জিনিসের মাধ্যমে দূর-দূরান্তে মানুষের সঙ্গে কথা বলা যাবে।

সবার মনে নতুন কৌতুহল সৃষ্টি হল। বাবা কিন্তু সেই ডায়াল ফোনের গুরুত্ব আলোচনা করি সেটি ব্যবহার করতেন।

সেদিনই আমি একটি ভালো কোম্পানির হ্যান্ড সেট কিনে নিয়ে এলাম। তাতে লাগিয়ে ভালো করে ব্যাটারি অনেকক্ষণ চার্জ দিয়ে তারপরে প্রথমে বাবার ফোনে ফোন করলাম। বাবাকে বুঝালাম , ডায়াল ফোনের চেয়ে এই ফোন ব্যবহার করা খুবই সহজ। এখানে ডায়ালের চাকাটি বারবার ঘুরিয়ে নাম্বার ঠিক করে তারপর ফোন করার চেয়ে এই ফোনে নাম্বারের বোতাম গুলো টিপে অনায়াসে ফোন করা যায়। ফোন করার সময় স্ক্রিনে দেখা যায় কোন নাম্বারে আমি ফোন করেছি। অথবা কেউ ফোন করলে বোঝা যাবে কোন নাম্বার থেকে ফোন করেছে। তাছাড়া জরুরী বার্তা হিসেবে মেসেজ করার ব্যবস্থাও আছে। তাছাড়া আরো অনেক সুযোগ সুবিধা আছে। সব সময় এটি পকেট এ নিয়ে সব জায়গায় যাওয়া যাবে। অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু ডায়াল ফোনে তো সেই সুযোগ নেই। বাবাকে এগুলো বিষয়ে অনেক বুঝালাম কিন্তু বাবা তার ডায়াল ফোন নিয়েই থাকলেন।


আমার বেশ মজা হলো যেকোনো সমই বন্ধুদের সাথে কথা বার্তা , এমন কি সএমএস করে আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতাম।


এই ফোন যেনো আমাদের জীবনের নতুন দিগন্ত খুলে দিল। এখন আর কাউকে ফোন করতে বাবার ডায়াল ফোনের ভরসা করতে হয় না। অথবা বাইরে ফোন বুথে গিয়ে পয়সা দিয়ে ফোন করার ঝামেলা থাকলো না। যখন তখন যে কারো সাথে আমরা এই ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারি এখন।

কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিলো। যখন এই সেল ফোন বের হয়নি তখন শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পিসিও বুথ থাকতো সেখানে সব ছেলে মেয়েরা এক টাকা দিয়ে এক মিনিটের জন্য ফোন করতে পারতাম। তখন এই বুঝি এর ব্যবসা টা ছিল বেশ রোজগেরে ব্যবসা। অনেক মানুষ ফোনেরবুথ চালিয়ে তাদের সংসার চালাত। কিন্তু ধীরে ধীরে সবার হাতে সেল ফোন চলে আসাতে পিসিও বুথের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেল। এতে করে বহু মানুষ বেকার হয়ে গেল।


তারপর ধীরে ধীরে এই ফোন গুলোর গুণমান বৃদ্ধি হল, বোতাম টিপে ফোন করার পরিবর্তে বাজারে এলো স্কিন টাচ ফোন। এর মাধ্যমে কথা বলা, এসএমএস করা, এমনকি ভিডিও কলের মাধ্যমে কে ফোন করছে তাকে সরাসরি দেখা যায় এমন ব্যবস্থা এই স্কিন টাস ফোনে এসে গেল।

এরপর সব ছেলে মেয়েরা বোতাম টিপে ওই ফোন করার পরিবর্তে সবার হাতে হাতে চলে এলো স্কিন টাচ ফোন। আর সেইসঙ্গে বাজারে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ল অনেকগুলি বেসরকারি নেটওয়ার্ক। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের গ্রাহক ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে লাগলো। এর ফলে বিএসএনএল তার উচিত যে হারিয়ে ফেলল। বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিএসএনএল টিকে থাকতে পারছে না। নেটওয়ার্কের সমস্ত বাজার বড় বড় বেসরকারি সংস্থা বাজার দখল করে নিয়েছে।

এতে বিএসএনএল সংস্থাটি এখন ধুকে ধুকে চলছে।

এখন এই স্কিন টাচ ফোনের ব্যবহার এত বেড়েছে যে প্রায় প্রতিটি মানুষের হাতে স্কিন টাচ ফোন দেখা যায়। আর তার ফলে ভুলে গেছে চিঠি লেখা। চিঠির মাধ্যমে মনের আদান-প্রদান আর হচ্ছে না তার জায়গা করে নিয়েছে এসএমএস ভিডিও কল। এখন ফোনে সব সুযোগ সুবিধা আছে। বিভিন্ন চ্যানেলের টিভি দেখা, দেশ-বিদেশের শিল্পীদের নাচ গান দেখান, দেশ-বিদেশের সব রকম সিনেমা দেখা ইত্যাদি এই ফোনের মাধ্যমে চলে।

এমনকি এই ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং চাকরি বা অন্য কোন বিষয়ে আবেদন করা বা কিছু বের করে আনা সবকিছুই এই ফোনের মাধ্যমে হচ্ছে। তার ফলে অনেকেই টিভির সামনে বসে সময় নষ্ট করতে চান না। সবার যার খবর শোনার প্রয়োজন ফোনের মাধ্যমে জেনে নেন।ব্যবসা সংক্রান্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় কারণে টাকা-পয়সার লেনদেন এখন আর ব্যাংকে যেতে হইনা ।ফোনের মাধ্যমে সব লেনদেন চলে।

এখন যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে ফোন সবার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় জিনিস। ঘরে চালের সংস্থান কম থাকলেও ফোনে টকটাইম ঢুকাতে কেউ কার্পণ্যতা করে না।


কিন্তু এই এইসব সেল ফোনের দৌলতে এখনকার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার চেয়ে ভিডিও গেম, পাবজি এবং কার্টুন ছাড়া বিভিন্ন ধরনের খেলার প্রতি শিশু, কিশোর এবং বড় বড় ছেলে মেয়েরাও এসব খেলা বেশি মনোযোগী। যার ফলে প্রায়ই দেখা যায় অনেক অঘটন ঘটে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল করতে পারছে না। হতাশায় ভুগছে তার বাবা-মা এবং সে। এমন অবস্থায় অনেক প্রাণঘাতী র মত ঘটনাও ঘটে যাচ্ছে।

বর্তমানে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন মানুষের যোগাযোগ হচ্ছে। দূর থেকে দূরান্তের মানুষগুলো যেন কাছের মানুষ হয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিকই যেমন ভালো, তেমনি এর বিপরীতে দেখা যায় অনেক ছেলেমেয়ে ফেসবুকে যোগাযোগের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন রকম অসামাজিক অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা ফেসবুকে যোগাযোগ করে জীবন সাথী বেছে নিচ্ছে। তাতে ভালোর চেয়ে খারাপ বেশি হচ্ছে।

এমন একটি উদাহরণ আমার পাশের বাড়ির একটি ছেলে হঠাৎ করে একদিন একটি মেয়েকে স্টেশন থেকে নিয়ে বাড়িতে এলো। সবাই জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার কোথা থেকে এই মেয়েটি কী উদ্দেশ্যে এখানে এলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেল এই ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির দীর্ঘদিনের ফেসবুকে আলাপ তার ফলে তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর তার পরিণতিতে মেয়েটি সরাসরি এই ছেলেটার বাড়িতে চলে আসে। এই নিয়ে থানা পুলিশও হয়ে গেছে। মেয়েটির বাবা পুলিশ নিয়ে এসে মেয়ে এবং ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে।


আমি বাবাকে বুঝালাম বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের প্রয়োজনীয়তা। তাকে বললাম, তোমারও তো সর্বক্ষণ ব্যবসার কাজে ফোনের প্রয়োজন , তোমাকে আমি একটি স্ক্রিন টাচ স্মার্ট ফোন কিনে দি তুমি ব্যবহার কর। বাবা বললেন, সব ঠিকই বলেছিস, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতেই হবে। নইলে আমরা পিছিয়ে যাবো।


তারপর দিন আমি একটি স্কিনটাস স্মার্ট টেবিলে রাখা টট টেবিলে রাখা টেবিলে রাখাফোন, এবং একটি ভালো কোম্পানির ভালো সুযোগ সুবিধা দেওয়া সিম কিনে দিলা বাবা ভীষণ খুশি হলেন। কিন্তু আপত্তি তুললেন আমাদের ওই ডায়াল করা ফোনটি কি করবে। আমি বললাম, এখন আরো ওই ফোনের প্রয়োজনীয়তা নেই। এ ফোন থেকেই তো তুমি সব কাজ করতে পারবে। আমি ঠিক করেছি ওই ফোনের সব বিল মিটিয়ে দিয়ে লাইনটা কেটে দিবো।

বাবা কোন অমত করলেন না। কিন্তু টেবিলে রাখা সেলফোন টির দিকে তাকিয়ে বললেন। এতদিন থেকে ওই ফোনের সাহায্যে আমি সব যোগাযোগ করে আসছি। আমার বন্ধুর মত ফোনটি এতদিন পাশে ছিল, ওকে এভাবে বাদ দিতে মনে বড় কষ্ট হচ্ছে।

আমি বললাম, কষ্টের কিছু নেই, ওটা দিয়ে আর ফোন করা যাবে না, কিন্তু ওটাকে আমি সযত্নে তোমার টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখব।

বাবা মাথা নেড়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract