The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Chitta Ranjan Chakraborty

Inspirational Others

3  

Chitta Ranjan Chakraborty

Inspirational Others

মুক্তি

মুক্তি

6 mins
175


আমি বিডিও হিসেবে চাকরি পেয়ে প্রথম কুমারগ্রাম ব্লকে কাজে যোগদান করি। কুমারগ্রাম ব্লক টি বৈচিত্রে ভরা। ভৌগলিক দিক থেকে উত্তরে ভুটান পূর্বে আসাম দক্ষিনে কোচবিহার জেলা পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের শেষ ব্লক কুমারগ্রাম। জীবনে এই প্রথম এত বড় চাকরি পেয়ে মনটা আমার আনন্দে ভরে যায়। তার উপর এমন বৈচিত্র্যময় জায়গা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্যান্য জায়গায় খুব কমই দেখা যায়। চা বাগান, যেদিকে তাকাই সেদিকে মনে হয় সবুজ চাদর দিয়ে মুড়ে রেখেছে। সবুজ আর সবুজ চা বাগানের মাঝখানে গাছগুলো আরো সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। চা বাগান ঘেঁষে শ্রমিকদের বস্তি। ওরাও মদেশিয়া মুন্ডা এসব বিভিন্ন জনজাতির বাস। বড় বিচিত্র ময় তাদের আচার-ব্যবহার কথাবার্তা কিন্তু তারা খুব দরিদ্র অসহায় এবং অত্যন্ত নিরীহ। তাদের এই বৈচিত্র্যময় জীবন আমার ভীষণ ভালো লাগে।

আমার কোয়ার্টারে ঝুমকি নামে এক আদিবাসী মেয়ে আমাকে রান্না করে দেয় এবং আমার ঘরের সব কাজ করে। ওর মুখে আধো-আধো বাংলা শুনতে বেশ ভালো লাগে। ওদের নিজস্ব ভাষা ছাড়াও ওরা হিন্দিতে কথাবার্তা বলে এবং পড়াশোনা করে। ঝুমকি কাজে ভীষণ পটু সকাল হলেই আমি বারান্দায় বসলেই বাগানের তৈরি চা পাতা দিয়ে চা তৈরি করে আমাকে দিয়ে যায়, এবং খবরের কাগজ গুলো গুছিয়ে আমাকে দেয়। এখানে বাংলা হিন্দি ইংরেজি তিন ভাষারই কাগজ পাওয়া যায়। প্রতিদিনের বাজার ঝুমকি নিজেই করে নিয়ে আসে। এখানে সব বস্তিতে চাষ করা সবজি পাওয়া যায়। আর এখানকার স্থানীয় নদীর রুই কাতলা আর মাছ ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত বোরোলি মাছ পাওয়া যায়। যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু।। তিস্তা তোর্ষা রায়ডাক কালজানি ছাড়া অন্য কোন নদীতে এই মাছ পাওয়া যায় না। শুনেছি ইদানিং নাকি পুকুরে মাছের চাষ হচ্ছে।

আমি ভীষণ প্রাকৃতিক প্রেমী কাজের ফাঁকে গাড়ি নিয়ে বাগান বস্তিতে ঘুরে দেখি। অপরূপ সৌন্দর্য মন ভরে যায়।


আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এরপর সান্তনা কে নিয়ে আসবো। সান্তনা যদি এখানে এসে এই সবুজ চা বাগান সবুজে ঘেরা পাহাড় উচ্ছল নদী দেখতে পায় ও ভীষণ খুশি হবে। একদিন সান্তনা কে ফোনে ছবি তুলে ওর কাছে পাঠিয়ে দিই, ওতো এসব দেখে এক্ষুনি আসার জন্য বায়না ধরে। আমি ওকে বুঝাই আমার চাকরি জীবনের প্রথম পোস্টিং আমি কাজ এবং এলাকার পরিবেশ কে জেনে নেই তারপর তোমাকে নিয়ে আসব। তাতে সান্ত্বনার ভীষণ মন খারাপ হয়।


আমি একদিন ভুটান পাহাড়ের সীমান্তে গ্রামে 100 দিনের কাজ দেখতে যাই, যাওয়ার পথে দেখি রাস্তার দুই ধারে কে বা কারা অনেক গাছ কেটে নিয়ে গেছে। স্থানীয় মানুষদের কাছে জানতে পেলাম পেলাম রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীরা গাছ কেটে নদী দিয়ে বাইরে পাচার করে দেয়। আমি দেখলাম এভাবে গাছ কাটলে অল্প দিনে সবুজ বন ধ্বংস হয়ে যাবে। দেখে আমার মনে ভীষণ কষ্ট হল।

তারপর একদিন দেখি রাস্তার ধারে পাহাড়ি খালগুলো সব আবর্জনার স্তূপে ভরে গেছে একটু বৃষ্টি হলেই সমস্ত আবর্জনা গুলো চলে আসে নদীতে। তাতে নদীর জল দূষণ হচ্ছে নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। নদীর জল ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে এসব পাহাড়ী নদী সারাবছর বৃষ্টি এবং ঝর্ণার জলে পরিপূর্ণ থাকতো। কিন্তু এখন সারা বছর নদী ভরে থাকে না। শুধু বর্ষার সময় এই নদীগুলি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে নদীর তীরে থাকা চা বাগান বসতবাড়ি চাষের জমি সব ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর মূল কারণ হচ্ছে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া আর ধারণক্ষমতা কমে যাওয়া।


আমি একদিন 100 দিনের কাজ দেখার জন্য রায়ডাক নদীর তীরে একটি গ্রামে যাই, গ্রামটির পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে রায়ডাক এবং সংকোশ নদী যে নদী দুটো বর্ষার সময় ভয়াল রূপ ধারণ করে প্রকৃতির উপর তাণ্ডব চালায়। কিন্তু আমি গিয়ে দেখলাম একটি ব্রিজের নিচে প্রায় দু'মাইল এর মত হবে এতটা এলাকা জুড়ে নোংরা আবর্জনা ভরে আছে। তারমধ্যে বিভিন্ন গাছ গাছালি আবর্জনা ছাড়াও প্লাস্টিক থারমো কল এবং বিভিন্ন পশু পাখির মৃতদেহ হাড়গোড় সব এখানে জমা হয়ে আছে দুর্গন্ধে এখানে থাকা যাচ্ছে না। নদীর এই অবস্থা দেখে আমার ভীষণ কষ্ট হল, নদী যেন বলছে আমি শ্বাস নিতে পারছি না আমার ভীষণ কষ্ট আমাকে এই পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচাও। নদী যেন আরো বলছে আমি বাঁচলে তোমরা বাঁচবে আমি যদি মরে যাই তোমরাও সবাই মরে যাবে। তোমরা বন কেটে কেটে ধ্বংস করছো। পাহাড় কেটে ধ্বংস করছো আমার বুক থেকে বেআইনিভাবে মাটি তুলে নিচ্ছ এতে করে আমি দিনের পর দিন আমার সমস্ত ঐতিহ্য হারিয়ে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছি। তোমরা আমাকে বাঁচাও। তোমরা যেভাবে আমার উপর অত্যাচার করছো তার ফল ভোগ করছো তোমরা তোমাদের অজানা ঝড় হচ্ছে প্রতিদিন অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তোমরা মারা যাচ্ছ। আমার বুকে জল স্তর দিনের পর দিন নিচে চলে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে থাকলে কিছুদিন পর তোমরা জলের অভাবে মারা যাবে। এখনো সময় আছে আমাকে বাঁচাও। নদীর এই করুন অবস্থা দেখে আমার দুচোখ ভরে জল এলো।


সেদিনই বিকেলে ডিএম সাহেবের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিলাম এই নদী পরিষ্কার করতে হবে। তার কদিন পরেই এলাকার মান্যগণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে পঞ্চায়েতের প্রধান দের নিয়ে একটি সভা করলাম। সেখানে নদীর দুরবস্থার কথা বন কেটে ধ্বংস করার কথা এসব উল্লেখ করে আগামী দিনে আমাদের মানবজাতির ভীষণ বিপদ আসছে বুঝিয়ে নদী পরিষ্কারের পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বললাম। আমার প্রস্তাব শুনে সবাই খুব খুশী হল এবং সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে বলে কথা দিল। তারপর তারপর দিন পরিকল্পনামাফিক গ্রামের লোকজন এর সাহায্যে নদী পরিষ্কার করার কাজ শুরু করলাম।


একদিন ডিএম সাহেব এবং এসডিও সাহেব আমার কাজ দেখে গেলেন এবং খুব প্রশংসা করলেন খুশি হলেন।


তারপর আমি নদীর দিকে তাকিয়ে দেখি স্বচ্ছ নদীর জল কুলকুল সুরে বয়ে যাচ্ছে। পাঠিয়ে কোন দুর্গন্ধ নেই কোন আবর্জনা নেই। এতদিন পর নদী যেন মুক্ত হাওয়া নিচ্ছে এবং পুরনো জীবন ফিরে পাবার সাদ পাচ্ছে। আমার ভীষণ আনন্দ হল।


এরপর ডি এম সাহেব আমাকে পরিবেশ রক্ষা কাজের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়ার পরামর্শ দিলেন ।

আমি তারপর প্রথমে সেচ দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে ওই এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধে বাঁধের ব্যবসা করি। তারপর বনদপ্তর এর সঙ্গে কথা বলে বনের গাছগুলো কেটে চোরাকারবারীরা পাচার করতে না পারে সেজন্য পাহারার ব্যবস্থা করা হল।

এই এলাকার সহজ সরল মানুষগুলো প্রতিদিন বড় দুঃখের মধ্যে জীবন যাপন করে। প্রায়ই শোনা যায় বাগানের কাজ বন্ধ, তখনই ওরা বেশি হতাশ হয়ে চোরাকারবারীদের সাথে যুক্ত হয়ে সামান্য পয়সা রোজগারের জন্য বনের গাছগুলো কেটে রাতের অন্ধকারে পাচার করে দেয়। হরিয়া এদের জন্মগত খাবার এবং পুরুষরা অলস প্রকৃতির হয়, সংসারের কাজ রোজগার করা মেয়েরাই বেশি করে পুরুষেরা সারাদিন হাড়িয়া খেয়ে মাতাল হয়ে ঘুরে বেড়ায় বাড়ি গিয়ে বাড়ির লোকেদের সাথে অশান্তি করে এসব ওদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের অঙ্গ।।

আমি ঝুমকির কাছে ওদের বস্তি সম্পর্কে ওদের জীবন যাপন সম্পর্কে অনেক জেনেছি এবং শিখেছি। তাই ওদের সঙ্গে মেলামেশা করতে ওদেরকে বুঝতে আমার কোনো অসুবিধা হয় না।

বস্তিতে ওদের নিয়ে মিটিং করে আমি ওদেরকে বুঝিয়েছি বন বাঁচলে তোমরা বাঁচবে। নদী বাঁচলে তোমরা বাঁচবে। তাই নদী এবং বন রক্ষার দায়িত্ব তোমাদেরই নিতে হবে। আমার কথাতে ওরা খুব খুশি হয় এবং বৃষ্টির মরশুম জুলাই মাসে ঘটা করে বনে গাছ লাগানোর উৎসব পালন করি। ওরাও তাতে অংশগ্রহণ করে। খুশি হয় এবং অনুষ্ঠানে ওদের ধামসা মাদল বাজিয়ে নাচ জানো চলে। প্রত্যেকটা বস্তিবাসীকে গাছ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এবং 100 দিনের কাজের কর্মসূচি থেকে গাছ পাহারা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।


আমি ভীষণ খুশি হই আমার জীবনে প্রথম কাজের দায়িত্ব নিয়ে সফলভাবে কাজ করতে পেরে। আমার কাজ দেখার জন্য অনেক পরিবেশবিদ এবং সরকারি কর্মকর্তারা এসে কাজ দেখে যান। কাজ দেখে খুশি হয়ে আমার প্রশংসা করেন। আমিন মনে মনে নিজেকে গর্বিত মনে করি।


কিছুদিন পর আমার বদলির অর্ডার এলো, আমি মনে মনে ভীষণ ভেঙ্গে পড়লাম কারণ এই চা বাগান এই নীল সবুজ পাহাড় সুন্দর নদী সুন্দর সহজ সরল মানুষগুলোকে আমি ভীষণ আপন করে নিয়েছিলাম। ওরাও আমাকে ভীষণ ভালবাসতে শ্রদ্ধা করতো। প্রায় দিনই ওরা নদী থেকে মাছ ধরে আমাকে দিয়ে যেত। চা বাগান থেকে চা পাতা এনে দিত। কিছুদিনের মধ্যেই আমি ওদের এত কাছের লোক হয়ে উঠেছিলাম যে আমার বদলির খবর শুনে ওরা দলে বলে ডিএম এর কাছে ডেপুটেশন দেয় যাতে আমাকে বদলি না করে। ডি এম ও খুব অভিভূত আমার কাজে কিন্তু এক জায়গায় বেশিদিন থাকা যাবে না বলেই আর বদলির চাকরি তাই আমাকে বদলি হতেই হবে, একথা আমি ওদেরকে বুঝালাম।


ওখান থেকে যাবার আগে সান্তনা কে নিয়ে গেলাম এবং ওকে পাহাড় নদী চা বাগান বস্তি সমস্ত কিছু দেখালাম। ও দেখে ভীষণ অভিভূত হল।


অবশেষে আমি একদিন নদী দেখতে গেলাম দেখলাম নদী কুলুকুলু সুরে বয়ে যাচ্ছে, আমাকে দেখে যেন নদী পাহাড় বন জঙ্গল সদ্য লাগানো গাছগুলো, আমার দিকে সস্নেহে তাকিয়ে আছে। আমি ওদেরকে হাতজোড় করে প্রণাম করে বিদায় নিলাম।


Rate this content
Log in

More bengali story from Chitta Ranjan Chakraborty

Similar bengali story from Inspirational