Chitta Ranjan Chakraborty

Inspirational Others

3  

Chitta Ranjan Chakraborty

Inspirational Others

নারী স্বাধীনতা

নারী স্বাধীনতা

5 mins
11.3K



আমি তখন ভারতবর্ষে নারীদের নিয়ে গবেষণার কাজ করছিলাম। আমি দেখেছি আমাদের দেশের সংবিধানে নারী অধিকারের কথা সুন্দর করে বলা থাকলেও বাস্তবে তা নয়।। নারী স্বাধীনতা যে শুধু মুখে বলার কথা নয়, আসলে আমরা পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় নারী স্বাধীনতার কথা যতই বলি না কেন সবাই মিলে সচেতন না হলে এ কঠিন কাজ। শৃঙ্খলা আবদ্ধ নারী সমাজকে নারী মুক্ত করা সম্ভব নয়।। আমার দেখা অনেকগুলি ঘটনার মধ্যে কয়েকটি মাত্র আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। আমরা প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখতে পাই নারী শিশু ধর্ষণ এবং খুনখারাপি প্রতিদিন প্রতিটি কাগজে ফলাও করে তুলে ধরছে। আমি দেখেছি মেয়েরা নিজেদের পরিবারে নিজেদের নিরাপত্তা নেই। কোন পরিবারে যদি একটি ছেলে একটি মেয়ে থাকে সেখানে দেখা যায় ছেলের প্রতি যেরকম আদর-যত্ন স্নেহ-মমতা থাকে বাবা-মায়ের মেয়ের প্রতি ততটা অনেক পরিবারে মেয়েদের ছোট বয়স থেকেই বিভিন্ন রকম হেনস্থার শিকার হতে হয়।

কোন বাড়িতে কাজের মেয়ে থাকলে তার প্রতি বাড়ির লোকে সহানুভূতি খুব ভালো দেখা যায় না। চলে তার উপর অন্যায় অত্যাচার জোর করে তার সামর্থের বাইরে কাজ করিয়ে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় এমনকি যৌন হেনস্থা র শিকার হতে হয় শিশু বয়স থেকেই।


অনেক সময় দেখা গেছে ওই সব মেয়েদের যদি পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া যায় বা বিভিন্ন খেলাধুলার সুযোগ করে দেওয়া যায় তাহলে দেখা যায় ওরা অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশে সফল হয়ে বেরিয়ে আসে। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এই রূপ সহযোগিতা করা খুব কম।

বস্তিবাসী ও আদিবাসীদের মধ্যে মেয়েদের প্রতি অন্যায় অবিচার এর হার সবচাইতে বেশি। আমি অনেক জায়গায় এইসব মেয়েদের নিয়ে , স্বনির্ভর দল করেছি অনেক মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়েছি তাতে দেখা গেছে মেয়েরা খুশি হয়ে স্কুলে যায় হাতের কাজ শেখা খুব মনোযোগ দিয়ে। আমি দেখেছি নিজেরা যখন তারা লেখাপড়া শিখে তখন তাদের মনের মধ্যে অন্ধ কুসংস্কার দূর হয়ে যায় তারা সুস্থ সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে চায়। কিন্তু ওদের শেকলে বাঁধা জীবন থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ কথা নয়। দেখেছি, রেখা মান্ডি কে সে একটি স্বনির্ভর দলের সদস্য ছিল । প্রতিমাসে এসে কিছু কিছু করে ব্যাংকে টাকা জমা তো এবং কিছু টাকা লোন নিয়েছিল শালপাতার থালা বাটি তৈরি করার জন্য, কিন্তু ওর স্বামী শুক্র মান্ডি ওটা কার খোঁজ পেয়েছিল। ওর স্বামী ওর থেকে টাকা চায় নেশা করবে বলে কিন্তু রেখা মান্ডি টাকা দিতে রাজি না হওয়াতে ওর স্বামীর হাতে ওকে খুন হতে হল। রেখা মানুষকে খুন করে শুক্র মান্ডি জঙ্গলে পালিয়ে যায়।


দেখেছি বস্তিতে স্বনির্ভর দলের মেয়েদের মনে অজানা ভয় কাজ করে, প্রতিদিন তাদের স্বামীরা মেয়েদের উপর অত্যাচার করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার জন্য। মেয়েরা যতটুকু এগিয়েছে দেখেছি তাদের মনোবল শিক্ষা আগ্রহ এবং নিজেকে স্বাধীন করার প্রচেষ্টা এবং সুন্দর একটি সংসার গড়ার স্বপ্ন স্বপ্নেরা দেখে। তাই আমরা সব মেয়েদের লেখাপড়া শেখার ব্যবস্থা করে দিই। ছেলে মেয়েদের মানুষ করার জন্য মেয়েরা মনেপ্রাণে কাজ করতে চায়। শুধু এদের সমস্যা এদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস যোগানো লোকের অভাব।

দেখেছি অনেক পরিবারে ফোনের জন্য অনেক মেয়েদের উপর অত্যাচার চলে নির্বিচারে। কখনো কখনো জীবন দিয়ে তার পরিসমাপ্তি ঘটে। জাহিরা বিবি কে দেখেছি ফোনের জন্য অশান্তিতে দুই মাসের গর্ভবতী অবস্থায় বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করতে।

প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখতে পাই শিশু নাবালিকা ধর্ষণ এবং তারপরে তাদের খুন করার মতো ঘটনা ।


নির্ভয়া কান্ড কামদুনির মত ঘটনা আমাদের জানা আছে। এখনো প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটেই চলছে। সেদিন জলপাইগুড়িতে একটি বস্তিতে হামিদা বিবি নামে এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল তার সাত বছরের শিশু কন্যাকে প্রতিবেশী যুবক কজন মিলে গণধর্ষণ করে গলা টিপে হত্যা করেছে। বারবার পুলিসি যাচ্ছে কিন্তু আজ অব্দি দোষীরা অধরা, উপরন্তু মামলা তুলে নেবার জন্য দোষীদের পরিবার থেকে এবং রাজনৈতিকভাবেও হামিদার উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এসব ক্ষেত্রেও পুলিশের সাথে কথা বলে ও বুঝেছি অনেক সমস্যা চলে আসে তাদের উপর।


এমনও দেখেছি স্কুল ছাত্রী রুপা উড়াও তার এক বন্ধুর সঙ্গে ফিরে আসার পথে দুজন দুষ্কৃতী তাদের উপর আক্রমণ করে, কিন্তু রূপা লেখাপড়া শিখে বুঝেছে অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলে এ সমাজে টিকে থাকা যাবে না। তাই দুই বন্ধু মিলে গাছের ডাল ভেঙে দুই দুষ্কৃতী ছেলেকে ঘায়েল করে নিজেরাই ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয় তাদের। এই সাহসিকতার জন্য তাদেরকে পুলিশের তরফ থেকে সাহসিকতার সম্মান দেওয়া হয়েছে।


আমাদের সমাজে শিশু ও নারী পাচার নৈমত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক জায়গাতেই খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এই শিশু ও নারী পাচারের পান্ডা মেয়েরাই। মেয়েরাই মেয়েদেরকে ভিন রাজ্যে বিভিন্ন রকম কাজের লোভ দেখিয়ে তাদেরকে নিয়ে গিয়ে অন্য রাজ্যে অথবা বিদেশে বিক্রি করে দিচ্ছে। সেখানে কোনো মেয়ের স্থান হচ্ছে যৌনপল্লীতে অথবা কোন ব্যক্তির কাছে। কেউ হয়তো কোন ভাবে ফিরে আসতে পারলেও অনেক অনেকে আর ফিরে আসতে পারে না । এমন অনেক ঘটনা আমি নিজে পুলিশের বড় কর্তা সঙ্গে কথা বলেছি এবং পাচারকারীর মূল পান্ডা কে এরেস্ট করিয়ে অনেক মেয়েদের যৌনপল্লী থেকে অথবা কোন গোপন ডেরা থেকে উদ্ধার করেছে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় অশিক্ষা এবং দারিদ্রতার জন্য এইসব গরিব পরিবারের মধ্যে ঘটে থাকে। আর তাদের অশিক্ষা দারিদ্রতা এই দুর্বলতাকে হাতিয়ার করে পয়সার লোভ দেখিয়ে গরিব ঘরের মেয়েদের ভিন রাজ্যে পাচার করে দেয়। উদ্ধার হওয়া একটি মেয়েকে বারকয়েক বিক্রি করা হয় চড়া দামে , আর এজন্য তাকে সারাজীবন বন্দিদশা থেকে ঋণ শোধ করতে হয়। জীবনে কোনদিন বাড়িতে ফিরে আসার কথা ভাবতেও পারে না। কেমন কঠিন শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে তাদের জীবন কাটাতে হয়।


এমনও দেখেছি ছোট ছোট শিশুদের পাচার করে তাদের কিডনি চোখ তুলে নেওয়া হচ্ছে এবং মৃতদেহগুলি অজ্ঞাত স্থানে পুঁতে দিচ্ছে। সেইসব কিডনি হার্ড চোখ দেহের বিভিন্ন হার অনেক চড়া দামে বিদেশে বিক্রি হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রেও দেখা গেছে নারীরাই মূলত শিশু কিশোরদের বিভিন্নভাবে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এমনি এক মহিলা পান্ডা কে জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছি সে প্রায় আশি টা শিশুকে বিভিন্ন কৌশলে পাচার করেছে। একজন শিশুর বিক্রি করলে সে কুড়ি হাজার টাকা পায় । ধরা পড়ার পর তাদের মধ্যে অনুশোচনা খুব কমই দেখেছি। পুলিশ বলেছে এরা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলে আবার এই শিশু পাচারের সঙ্গে যুক্ত হবে। এদের নেটওয়ার্কে এত বিশাল যে শেষ পর্যন্ত পৌঁছানো ভীষণ কঠিন কাজ।


ইদানিং কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় স্বনির্ভর দলের মাধ্যমে আমাদের দেশের মহিলারা যেভাবে স্বনির্ভর হচ্ছে এবং দারিদ্র্য মোচনের দিকে চলে যাচ্ছে অশিক্ষা কুসংস্কার থেকে নিজেদের মুক্ত করার চেষ্টা করছে তাতে ভালো ফলো মিলছে।

এমন বহু স্বনির্ভর দল আছে যাদের নিজস্ব ক্ষুদ্র ব্যাংক এবং প্রশিক্ষণ শালা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিজেরা ক্রয় করে দোলের মেয়েদের বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যাংক থেকে আর্থিক সাহায্য করে তাদেরকে স্বনির্ভর করে তুলছে। এমন এমন উদাহরণ আমাদের রাজ্যে এবং দেশে অনেক আছে।


এমন একটি স্বনির্ভর দলের কর্মসূচি উদ্বোধন করার জন্য আগামীকাল জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা ফরেস্ট এলাকায় যাব। আমাদের কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা কয়েকজন যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ওই মহিলা স্বনির্ভর দলটির নিজস্ব ব্যাংক আছে। ওরা ওদের সমাজের কুসংস্কার বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করে মেয়েরা লেখাপড়া করছে চাকরি করছে স্বনির্ভর দলের সহযোগিতায় ওরা বাড়িতে বসে বিভিন্ন রকম কুটির শিল্পের কাজ করছে। আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে ওসব দেখার জন্য এবং আগামী দিনের কিছু কর্মসূচি আমাদের হাত দিয়ে সূচনা করবে বলে বারবার যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে


ওদের আমন্ত্রণ ভুলতে পারিনি বলে আমরাও বিভিন্ন রকম কর্মসূচির ওদের মাধ্যমে রূপায়িত করব বলে, আমরা যাচ্ছি আগামীকাল রাত 8 টায় কাঞ্চন কন্যা ট্রেনে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational