পুনর্ভবা পর্ব :-৮
পুনর্ভবা পর্ব :-৮
আকাশে মেঘেদের বিচরন নির্ভর করে রোদ ও হাওয়ার ওপর। তাই এক এক বছর নানা সময়ে বৃষ্টি ও হয় নানা রকম। আর মূলত এই বৃষ্টির জলের রওপরেই বিশাল করতোয়া নদীর প্রবাহমানতা নির্ভরশীল। বিপুল পরিমাণ জলরাশি বইতে গিয়ে হঠাৎ দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে এর জলধারা। করতোয়া নিজেকে বিলুপ্ত করে পুষ্ট করেছে আত্রেয়ী ও ঢেপাকে। আত্রেয়ী ঠিক করে নিয়েছে নিজের গতিপথ। আর ঢেপা বীরগঞ্জ এর আশে পাশে বয়ে চলেছে যেন ওদের যাত্রপথ কে অনুসরণ করে। কিছুদুর যাবার পর যখন ওরা চাঁদগন্জ পেরিয়ে দিনাজপুরের কাছাকাছি মাঝডাঙায় পৌঁছে গেল তখন প্রায় দুপুর। এবার কিছুক্ষণ বিশ্রাম। একটা বেশ বড় ডুমুর গাছের তলায় নামলো সকলে। ছায়ায় গরু দের গাড়ি থেকে খুলে দড়ি দিয়ে একটা জিওলগাছে বেঁধে রাখলো লালমোহন। কিছু খড় ও দু আঁটি সবুজ ঘাস তুলে দিলো মুখের সামনে। এবারে একটা বালতি নিয়ে চললো সামনের ছোটো নদীটা থেকে জল আনতে।
খুকু হঠাৎ বলে,
______দেখ কম্মা ঐদিকে আরেকটা নদী।
অনুপমা দেবী দু হাত কপালে ঠেকিয়ে বলে ওঠেন ________গঙ্গা গঙ্গা!
নিখিলেশবাবু বলে ওঠেন। হ্যাঁ খুকু এই ছোটো নদীটা পুনর্ভবা। আর ঐ বড় নদীটা ঢ্যাপা। ও এসেছে আরও অনেক বড় নদী করতোয়া থেকে। করতোয়া বা স্বচ্ছতোয়ার আরেক নাম পূণ্যতোয়া। এই নদীকে এখানকার গঙ্গা বলে মানা হয়। বহু যুগ ধরে এই নদী নানা রকম পরিস্থিতিতে মানুষের সভ্যতার বিকাশের অগ্রগতির দোসর হয়েছে। এই তো সামনে একটু পরেই এই নদী দুটো মিলে গেছে। কাঞ্চন নাম নিয়ে চলেছে একটুক্ষণ। একটু পরেই কাঞ্চন সেতু পেরিয়েই আমরা ওপারে যাবো।
নিজেরাও বাড়ি থেকে আনা চিঁড়ে, কলা, গুড় আর
দই দিয়ে দুপুরের আহার টা সেরে নিল। শিবরামপুর পৌঁছতে বিকেল তো হবেই। তাই খুব বেশি সময় নষ্ট করার উপায় নেই এখানে। নয়নাভিরাম দৃশ্য ছেড়ে তাই আবার উঠে বসতে হলো গরুর গাড়িতে।
এবার পুনর্ভবা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ওরা। তবে আরেক নদী আত্রেয়ী এবার সাথে চলছে দীঘন, উমরপাইলের পর থেকে।
মোহনপুরে এসে খুকু হাততালি দিয়ে উঠলো,
_____বাঃ বাঃ কি মজা! আবার দুটো নদী মিলে গেল।
_____না খুকু দুটো নদী নয়। একটাই নদী দু ভাগ হয়ে গিয়েছিলো রানীপুরের কাছে। এখানে মোহনপুরে আবার এক হলো।
রায়নন্দ, পলাসি ব্রাহ্মণপাড়া হয়ে তুলাতের কাছে শিবরামপুর এ যখন ওরা পৌঁছে গেছে। তখন সূর্য দেব তাঁর কর্ম সমাধা করে পৌঁছে গেছেন পশ্চিম দিগন্তে। সারা পশ্চিম দিকের আকাশের মেঘ নানা বর্ণের ছটায় উদ্ভাসিত।
এতো সুন্দর দৃশ্য যে চোখ ফেরানো দায়। অথচ কত কম সময়ের জন্যে ! মুহুর্ত গুলো আকাশের রঙের সাথে পাল্লা দিয়ে যেন ছুটে চলেছে। এমনিতে বোঝা যায় না, পৃথিবীটা যে ছুটছে। কিন্তু সন্ধ্যের সময়টুকুতে যখন চোখের সামনে দিন থেকে রাত হতে দেখা যায় তখন এই পৃথিবীর চলমান অবস্থা যেন অনুভব করা যায়।
খুকু একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘেদের চলা দেখে আর ভাবে। বাবা আর মেয়ে দুজনেই আকাশ দেখে মুগ্ধ নয়নে। গরু দুটো ওদের পা চালিয়ে চলেছে বহুক্ষণ হলো। এখন যেন ওদের ও ঘুম ঘুম পাচ্ছে। অথচ বাড়ির কাছাকাছি চেনা যায়গায় এসেছে বলে উৎসাহ যেন একটু বেড়ে গেছে।
