Manasi Ganguli

Abstract

3  

Manasi Ganguli

Abstract

পুনরায়

পুনরায়

5 mins
332


   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায় "গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল,বন্ধু তেমনি একটি বিশেষ জাতের মানুষ",তাই সবার বাগানে যেমন গোলাপ ফোটে না তেমনি সবার কপালে এই বিশেষ জাতের মানুষ অর্থাৎ বন্ধু জোটে না। যার জোটে সে ভাগ্যবান,কারণ একজন প্রকৃত বন্ধু তাকে ছাড়ে না কখনও সুখে,দুখে,শোকে। বন্ধুত্ব হল নির্মল একটি সম্পর্কের নাম,যার কাছে জীবনে অনেক কিছুই অকপটে মেলে ধরা যায়,যাকে বিশ্বাস করা যায়। এমন বন্ধুত্ব খুব কম মানুষই পায়,তবে সমর পেয়েছিল এমন এক বন্ধু যে বন্ধুত্বের জন্য তার সর্বস্ব বাজি রেখেছিল। তার সে প্রিয় বন্ধু হল সুমিত। সেই ছোট্টবেলার সাথী,একসঙ্গে বড় হয়েছে দুজন।একসঙ্গে খেলা,একই ক্লাসে পড়া,পাশাপাশি বাড়ি। অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে সুমিত,সমরদের অবস্থা কিন্তু মোটেই ভাল ছিল না। সুমিত তাই নানাভাবে সমরকে সাহায্য করার চেষ্টা করত। অর্থনৈতিক কারণে সমর টিউশন নিতে পারত না,তাই সুমিত তার টিউশনে পাওয়া নোটস সমরকে দিয়ে সাহায্য করত। অভাবী ঘরের ছেলে হলেও সমর কিন্তু খুবই মেধাবী, পরীক্ষায় বরাবরই সে সুমিতের থেকে ভাল রেজাল্ট করে সুমিতের কাছ থেকে ধার করা নোটস পড়েও। সুমিতের খুব ভাল লাগে,এতটুকু দুঃখ বা হিংসা তার হয় না এজন্য। 

     এভাবেই দুই বন্ধু বড় হতে লাগল। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে তারা কলেজে ভর্তি হল। একদিন একসঙ্গে কলেজ যাবার পথে আচমকা একটি গাড়ি ব্রেক ফেল করে ওদের দিকে ছুটে এলে সমর একধাক্কায় সুমিতকে ছিটকে ফেলে দেয়,তাতে ওর হাত পা ছড়ে কেটে যায় কিন্তু সমর গিয়ে পড়ে গাড়ির সামনে। রক্তারক্তি কান্ড। সঙ্গে সঙ্গে হসপিটালাইজ করতে হয় তাকে রক্তের দরকার,সমরের ও নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত যা তখন হসপিটালে মজুত ছিল না। বন্ধুরা সকলে টেস্ট করালে কারো সাথে তা ম্যাচ করেনা শেষে দেখা যায় একমাত্র সুমিতের রক্তের সঙ্গেই সমরের রক্ত ম্যাচ করল। গুরতর আঘাত,৭২ ঘন্টা সময় দিয়েছিলেন ডাক্তার,যমে মানুষে টানাটানি। শেষে সুমিতের রক্তে সমর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে।

    দীর্ঘদিন পর শুরু হয় আবার কলেজ,পড়াশোনা। কলেজে থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হওয়া মিতার প্রেমে পড়ে যায় দুই বন্ধুই। সুমিত নিজের পছন্দের কথা সমরকে জানালে সমর় নিজেকে সংযত করে সরে আসে। সে বন্ধুর পথের কাঁটা না হয়ে। সমর বুঝতে পারে মেয়েটি ওকে বেশি পছন্দ করে তবুও মেয়েটির দিকে তাকায় না মোটে। মেয়েটিও ওর প্রতি সমরের কোনো আগ্রহ না দেখে নিজেকে গুটিয়ে নেয় ক্রমে। এসবের কিছুদিন পর সুমিত মিতাকে প্রপোজ করলে সে রিফিউজ করে,জানিয়ে দেয় সে সমরকেই ভালবাসে। সুমিত একটু ধাক্কা খায় এতে কিন্তু সেও সরে দাঁড়ায়। ইতিমধ্যে কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা এসে যায়। সমর ফাস্ট ক্লাস পেয়ে পাস করে। সুমিতও ভাল রেজাল্ট করে তবে ফার্স্ট ক্লাস পায় না। এরপর চাকরির জন্য দুজনেই চেষ্টা করে। একটা ভাল চাকরির জন্য ওরা দুজন এবং অন্যান্য কয়েকজন বন্ধু দরখাস্ত জমা দেয়। রিটন্ পরীক্ষায় সমর,সুমিত দুজনেই কেবল কোয়ালিফাই করে,চাকরি কিন্তু একটা। সমর ভাবে,চাকরিটা সুমিত পাক তাহলে মিতাকে বিয়ে করে সুখী হতে পারবে,মিতাকে যে ও নিজেও ভালোবাসে মনে মনে,জানেনা মিতা তার অপেক্ষায় বসে আছে,সে সুমিতকে গ্রহণ করেনি। সুমিত ভাবে চাকরিটা সমরের দরকার,ওদের পরিবারে খানিক স্বচ্ছলতা আসবে তাহলে। সুমিত জানতে পারে না সমর ইন্টারভিউয়ের দিন ইচ্ছা করে জানা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চলে আসে যাতে সুমিত চাকরিটা পায়। হলও তাই। চাকরিটা সুমিতই পেল। এর বেশ কিছুদিন পর অনেক চেষ্টা করে সমর অনেক দূরে একটা চাকরি পেয়ে চলে গেল সেখানে। দুই প্রিয় বন্ধুর মাঝে পাঁচিল হয়ে দাঁড়ালো দূরত্ব। দুজনেই কষ্ট পায়। সমর ভাবে সুমিত আর মিতা ভাল থাকুক,বিয়ে করুক,জানেনা মিতা ওর জন্যই অপেক্ষা করে বসে আছে। কখনও বাড়ি ফিরলে দেখা হয় দুজনের কিন্তু সম্পর্কের সুর কেটে গেছে যেন।

     বছর খানেক পরে সুমিতের বিয়ের চিঠি পৌঁছায় সমরের কাছে। অনেক আগে থাকতেই চিঠি পাঠায় যাতে সমর় আসতে পারে,ফোন করে বিশেষ ভাবে আসতে বলে। এ বিয়েতে আসার সমরের একটুও ইচ্ছা নেই, প্রথমে ভাবে আসবে না,তার পছন্দের মিতাকে সুমিতের বউ হিসেবে দেখতে ওর ভাল লাগবে না কিন্তু সুমিত বেশ কয়েকবার ওকে ফোন করেছে যাবার জন্য,না যাওয়াটাও খারাপ দেখায়। তাই বিয়ের আগের দিন সমর় আসার মনস্থ করে। ব্যাগ গোছাবার সময় সমরের হঠাৎ মনে হয় বিয়ের কার্ডটা সঙ্গে রাখার দরকার ভেনুটা জানার জন্য। কিন্তু খুলে দেখতে ইচ্ছা হয় না। কিছু পরে কি মনে হতে দুরুদুরু বুকে খুলে দেখে সুমিতের বিয়ে কোন এক রমলার সঙ্গে হচ্ছে। ও তখনই ফোন করে সুমিতকে,জানতে চায় মিতার সঙ্গে বিয়ে না হয়ে রমলা নামক মহিলার সঙ্গে বিয়ের কারণ কি? সুমিত সমরকে অবাক করে দিয়ে জানায়,"তুই ঠিক বলেছিস,তোকে বলেছিলাম আমি মিতাকে ভালোবাসি,প্রপোজও করেছিলাম কিন্তু মিতা জানায়,ও তোকে ভালোবাসে আমায় নয়। খুব ধাক্কা খেয়েছিলাম কিন্তু মেনে নিয়েছিলাম। ও তোর জন্য আজও অপেক্ষা করে বসে আছে। তোর প্রতি ওর এই একতরফা ভালবাসাকে আমি শ্রদ্ধা করি। আমার বিয়েতে আমি ওকেও নিমন্ত্রণ করেছি। সেদিন তুই ওর সঙ্গে কথা বল,ও তোকে খুব ভালোবাসে। সমর বলে,"আমিও ওকে প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম,কিন্তু তুই আমায় বলেছিলি যে তুই ওকে ভালবাসিস,সেটা শুনে আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম,তোর পথের কাঁটা আমি হতে চাইনি। তোর পাশে ওকে দেখলে আমি সহ্য করতে পারব না বলে দূরে চাকরি নিয়ে চলে এলাম। ভাবলাম,তোরা ভালো থাক।" সুমিত বলে,"দেখ দেখি,কি রকম ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেল। ছোট থেকে একসঙ্গে কিউ আর ইউএর মত থেকেও বড় হয়ে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। এখন আমার কাছে সব জলের মত পরিস্কার হয়ে গেল। আমি আর কোন কথা শুনবো না,এবার তুই এলে তোদের বিয়ের ঘটকালিটা আমিই করব। মিতা তোকে ভালোবাসে জানার পর আমি সংকোচ কাটিয়ে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাই। ও এখন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমার বিয়ের দিনেই তোর বিয়ের পাকা কথা হবে তাহলে।" দুই বন্ধুর মাঝে জমে থাকা বরফ গলে জল হল,দুজনে হাহা করে হাসল খানিকক্ষণ।

    সমরের আর তর সয় না,মনে হয় কেন আরো দুদিন আগে ও টিকিট কাটল না। বাড়ি এসেই বন্ধুর বাড়ি ছুটল সমর। দুই প্রিয়বন্ধু পরস্পরকে জড়িয়ে ধরল,সম্পর্কের শীতলতা কেটে উষ্ণতার স্পর্শ পেল দুজন। সুমিতের বিয়ের দিনই মিতার সঙ্গে সমরের দেখা হল,আর সুমিত ঘটকালিটা করেই রেখেছিল। তাই বিয়ে মিটলেই সমর আর মিতার বাড়ির মধ্যে সুমিত যোগাযোগ করিয়ে ওদেরও বিয়ের দিন ঠিক করে দেয় তিন মাস পরে। সুমিত বলে," আমাদের হানিমুন একসঙ্গেই হবে তিন মাস পরে। ততদিন আমরা অপেক্ষা করে থাকব।" সত্যিই সুমিত অপেক্ষা করে ছিল সমরের জন্য,একসঙ্গে দুই বন্ধু হানিমুনে যাবে বলে। অনেকদিন পর দুই প্রিয়বন্ধুর আবার মিলন হল। ভুল-বোঝাবুঝি কেটে,মেঘ সরে গেল। পথের দূরত্বটা এখন আর কোনো দূরত্বই নয় ওদের মাঝে। আসা-যাওয়া, ফোন,হোয়াটসঅ্যাপ,ভিডিও কল আবার আগের মত মধুর সম্পর্ক নতুন করে তৈরি হল যেন।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract