প্রতিবাদ
প্রতিবাদ


(আজ যে টা লিখলাম তার সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই এটা নিছক একটা গল্প………)
এটা সেই তখনকার ঘটনা,যখন মোবাইল ছিলনা| যখন শনিবারের অলস দুপুরে আলুপোস্ত,হিং দেওয়া বিউলির ডাল,পোস্তর বড়া,গুঁড়ো আলু ভাজা দিয়ে ভাত খেয়ে বাড়ির মেয়ে রা রেডিও চালিয়ে শনিবারের বার বেলা শুনতো| অথবা একটু বর্ধিষ্ঞু বাড়ির মেয়ে বৌরা সাদা - কালো টিভিতে সন্ধ্যের সময় চিত্রহার দেখতো| সেই সময় যখন এতো নারী স্বাধীনতা নিয়ে মানুষ মাথা ঘামাতোনা|
তা প্রায় আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের কথা| হুগলী জেলার মফস্বল গ্রাম|
বেশিরভাগ ঘর চাষী বাসি মানুষ| গ্রামেরই একটু অবস্থাসম্পন্ন ঘর রায়েরা| দুই ভাই সুরেন আর বীরেন চাষবাস ছাড়াও গ্রামের মধ্যে বড় মুদিখানার দোকান আছে| বড় ভাইয়ের প্রায় পনেরো বছর বিয়ে হয়েছে কিন্তু কোনো সন্তান নেই| ছোটো ভায়ের দুই ছেলে মেয়ে|
বড় বৌ সুলেখা বড় শান্ত মেয়ে| তার ফল যা হয় তখন গ্রামাঞ্চলে এতো ডাক্তার দেখানোর রেওয়াজ ছিলনা,যা ছিল ঠাকুর দেবতা| যখন তাতেও কোনো ফল হলোনা তখন চলল অকথ্য অত্যাচার | শেষ পরিণতি হিসেবে বাড়ির বৌটির আত্মহত্যা|
এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয় নি| হ্যাঁ সুলেখা আত্মহত্যাই করেছিল| তবে সেটা গলায় দড়ি দিয়ে নয়,বা বিষ খেয়েও নয়|
সুলেখা নিজে উদ্যোগ নিয়ে শাশুড়ির দূর সম্পর্কের আত্মীয়ার সাথে স্বামীর বিয়ে দেয়|
সবাই বলবেন আত্মহত্যা কোথায়?আমি বলবো এটা কি আত্মহত্যা নয়?
সে যাই হোক গল্পটা কিন্তু এখানে শেষ নয়, বরং এই শুরু | নতুন বৌ দীপশিখা নিম্নবিত্ত ঘরের মেয়ে হলেও লেখাপড়া শিখে ছিল| স্বামীর থেকে অন্তত কুড়ি বছরের ছোটো বৌটি স্বামী কে যত না ভালোবাসতে পেরেছিলেন তার দ্বিগুণ বেশি ভালবেসে ছিলেন সুলেখাকে| এরপরও যখন নতুন বৌ এরও কোনো সন্তান হলোনা তখন কারোর বুঝতে বাকি রইলোনা দোষ টা কার|কিন্তু শাশুড়ি এবং স্বামীটির অত্যাচারের পুনরাবৃত্তি ঘটতে লাগলো| নতুন বৌ টি মেনে নিতে পারেনি তার ওপর হওয়া এই অত্যাচার| সে চেয়ে ছিল এর প্রতিবাদ করতে আর তার জন্য সে এক অন্য পথ বেছে নিয়ে ছিলো|
বাবার অসুস্থতার অজুহাতে সে বাপেরবাড়ি গিয়ে একমাস থেকে এসে জানিয়ে ছিলো সে প্রেগনেন্ট| কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি তার স্বামী| আবার এটা মেনেও নিতে পারেনি তাই সেই সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই তিনি ইহজগতের মায়া ত্যাগ করে গিয়েছিলেন|
এরপরের ঘটনা আমার আর জানা নেই| জানিনা সুলেখা র ওপর সঠিক বিচার হয়েছিল কিনা| সেটা খোঁজ নেওয়ার কথাও আমার নয়|