মেহুলের গোয়েন্দা কাহিনী
মেহুলের গোয়েন্দা কাহিনী
রাত তখন একটা, মেহুল পড়ার টেবিলে বসে ইতিহাসের পাতায় আলাউদ্দিন খিলজি তে মন দিতে চেষ্টা করছিল। বাড়ির আর সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বাইরের বসার ঘর থেকে বড় ঠাকুরদার আমলের ঘড়িটা ঢং করে ঘন্টা বাজিয়ে রাত একটা জানান দিল। মেহুল ভাবল আর একটু ইতিহাসটা এগিয়ে নি, পূজোর ছুটির পর স্কুল খুললেই তো পরীক্ষা।বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল ছোট ভাই পাপান ঘুমিয়ে গেছে। গলির মাথার কালো কুকুরটা আজ ক্রমাগত চেঁচিয়ে যাচ্ছে। এমনিতে মেহুল খুব ডাকাবুকো কিন্তু কদিন ধরে এলাকায় যা সব হচ্ছে, একটু ভয় ভয় লাগল মেহুলের।
আর তো দু চার দিন পর পূজো, কাল শেষ স্কুল হয়ে ছুটি পরে যাচ্ছে। এইসব হিজিবিজি ভাবতে ভাবতে মেহুল ইতিহাসের পাতা থেকে কিছুক্ষণের জন্য বিরতি নিয়ে ছিল। আর ঠিক তখনই ঐ কুকুর টা একটা বিরাট শব্দ করে হঠাৎই চুপ করে গেল। মেহুলও আলো অফ করে ওর বিছানায় উঠে গেল।
পরদিন সকালে ওর জন্য আরও একটা চরম বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল, মা বলল আজ আর স্কুল যেতে হবে না। জিজ্ঞেস করে জানতে পারল যে স্কুলের দারোয়ান বাহাদুরের মেয়েটা কে গতরাত থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুনে চমকে গেল মেহুল, এই নিয়ে গত দু মাসে পাঁচটি বাচ্চা নিখোঁজ হয়ে গেল। প্রথম হারিয়ে যায় পাড়ার চায়ের দোকানের বাচ্চা ছেলেটা। রোজকার মতো ভোরে উঠে সে উনুন ধরাতে গিয়ে ছিল। এরপর এক এক করে পাশের পাড়ার আরও তিনটি বাচ্চা। তবে প্রতিটি রহস্য ই যেন চোরাবালিতে প্রবেশ করেছে। নাহ্ মেহুল আর কিছু ভাবতে পারছে না। এই মুহূর্তে ওর ছোট্টো সুজানের কথা ভীষণ রকম মনে জাগছে। কি মিষ্টি ছিল বাচ্চা টা। ওরা যখন ক্লাস করত, তখন সুজান একা একা ওদের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সামনে টা তে খেলা করত। মেহুলরা কোনো কোনো দিন ভাল টিফিন নিয়ে গেলে সুজানকে দিয়ে খেত। মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেল।
এখন সকাল গড়িয়ে দুপুর। মেহুল আজ কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারছে না। এপাশ ওপাশ করে উঠে পরে সাইকেল টা নিয়ে বেরিয়ে গেল। এই ঘটনার পর থেকে পাড়াটা একটু বেশি নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। মেহুল সোজা গঙ্গার ধারে চলে গেল। এই বছর পূজোটা একটু দেরি করে শুরু হচ্ছে, তাই ঠান্ডার আমেজ আছে। এদিক টা এমনিতেই ফাঁকা থাকে, দু এক জন সান্ধ্য ভ্রমণকারী ছাড়া আর কেউ নেই। মেহুল আর পাঁচটা মেয়ের মতো নয়, ও খুব সাহসী। একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের গায়ে সাইকেল টা রেখে ও গঙ্গার ধারে এসে বসে পরে, খোলা হাওয়ায় ওর মাথা টা একটু একটু করে পরিষ্কার হচ্ছে।
পিনাকী কাকু সবসময় ওকে বলে মেহুল শুধু সাহস নয়, সবার আগে তোর উপস্থিত বুদ্ধি কে কাজে লাগাবি। ওহ আসল কথাই বলা হয়নি, মেহুল শুধু সাহসী নয়, ও কিন্তু এই চোদ্দো বছর বয়েসেই দু একটা ছোটোখাটো রহস্যের সমাধানও করে ফেলেছে। যদিও এর পিছনে ওর পুলিশ কাকু পিনাকী বিশ্বাসের সাপোর্ট আছে, শেষ বার তো খবরের কাগজে নাম ও উঠে ছিল। যাইহোক এখন মেহুল মোটামুটি একটা পরিচিত মুখ। মেহুল ভাবতে বসল ওদের এই ছোট্ট জায়গা উত্তরপাড়া, এটা তো খুব শান্ত আর নিরিবিলি ছিল। গত দুমাসে কি এমন পরিবর্তন হয়ে গেল? এইসব ভাবতে ভাবতে মেহুলের হঠাৎ মাথায় এল, আরে গত দুমাস যাবৎ একটা পাগল ঐ বুড়ো বটগাছের নীচে এসে তো আশ্রয় নিয়েছে। সারাদিন ওখানে থাকে অথচ সন্ধ্যের পর কোথায় যেন চলে যায়, তাকে আর দেখা যায় না। ইসস! এতো বড় ঘটনাটা কি করে ওর নজর এড়িয়ে গেল?
ও ওখান থেকে উঠে এগিয়ে গেল ঐ বটগাছটার দিকে। পাগল টা এই মুহূর্তে নেই ওখানে। গাছটার অনতিদূরে একটা পোড়ো মন্দির আছে আজ মাস চারেক হল একজন জটাধারী তান্ত্রিক ওখানে আশ্রয় নিয়েছে। মানুষ টা কিন্তু খুব ভালো, সকাল সন্ধ্যে পূজো করেন, সবাই কে ডেকে ডেকে প্রসাদ বিতরণ করেন। মেহুল ও দুএক বার গিয়েছিল। যদিও ঠাকুর দেবতায় মতি ওর একেবারেই নেই, বরং মিষ্টি আর নাড়ু পাবার লোভেতেই গিয়েছিল। আজও মন্দিরে সন্ধ্যা আরতি হচ্ছে, মেহুল একবার চিন্তা করলে যাই একটু মিষ্টি খেয়ে আসি, পরমুহুর্তেই মনে জেগে উঠল সুজানের পাহাড়ী নিষ্পাপ মুখটা। মেহুল এগিয়ে গেল গাছটির দিকে, চারদিক তাকিয়ে দেখল কেউ নেই, শুধু পাগলের বস্তাটা রয়েছে, যেটা সারাদিন পাগলটা আগলে রাখে। কৌতূহল বশতঃ মেহুল বস্তাটা ঘাটতে লাগলো, শুধু ছেঁড়া কাগজ আর নোংরা কাপড়ের টুকরো।
-কিছু নেই ওতে।
পিছন থেকে কথা গুলো শুনে সে চমকে উঠে তাকিয়ে দেখল সেই মন্দিরের তান্ত্রিক টা, কি সৌম্য কান্তি চেহারা, দেখলেও ভক্তি জাগে। মেহুল উঠে দাঁড়িয়ে প্রনাম করল।
-তুমি কি মেহুল?
এবার একটু অবাক হয়ে গেল সে, ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলল।
-তোমার তো বেশ নামডাক, কয়েক টা রহস্যের উদঘাটনও করেছ।
-আপনি এতো কিছু জানলেন কি করে?
-আমি আরও অনেক কিছু জানি।তুমি যাদের খুঁজতে এসেছো তাদের ও খবর জানি।
এবার একটু অবাক হল মেহুল। মনে মনে ভাবলো , আচ্ছা পিনাকী কাকু এনাকে পাঠিয়েছেন কি? পরক্ষণেই ভাবলো না তা কি করে হয়? এই ছেলে চুরি রহস্যের অনেক আগেই তো এনার আগমন। এবার তান্ত্রিক মেহুল কে রেকাবি করে দুটো মিষ্টি খেতে দেয়। এই এক ওর দোষ, মিষ্টি দেখলে ওর সব বুদ্ধি লোপ পায়। ও যেন কেমন মিষ্টির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরে। সে মিষ্টি গুলো তৎক্ষণাৎ খেয়ে ফেলল।
*****************************
এখন নিশুতি রাত, চারদিক ঘন অন্ধকার।একটা জোর আওয়াজ শুনে মেহুলের ঘুম ভেঙে গেল, তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ, মাথাটা বেশ ভারি লাগছে, ও বুঝতে পারলোনা যে এই মুহূর্তে কোথায় আছে, তবে নিজের ঘরে যে নেই তা বেশ বুঝল। তখনই আওয়াজের উৎস টা বোঝা গেল। কোন বাচ্চা একনাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছে, আর তাকে কেউ চাপা স্বরে বকছে। এবার মেহুল উঠে বসার চেষ্টা করল, নাহ সম্ভব নয়, হাত পা কিছুর সঙ্গে বেশ শক্ত করে বাঁধা। অসহায়ভাবে শুয়ে মেহুল মনে করার চেষ্টা করল এখানে ও এলো কিভাবে। আর তখনই মনে পরে গেল সন্ধ্যের ঘটনা, ইসস কি বোকা ও। বাঁধা হাত গুলো নিয়ে ও পকেটে ঠেকাল, মোবাইল টা ও নিয়ে নিয়েছে, মার জন্য মনটা কেমন করে উঠল, আর ঠিক তখনই দরজা খোলার শব্দ পেল। এবার মেহুল চোখ বুজে ঘুমের ভান করে রইল। লোক গুলো ওর কাছে এসে দাঁড়াল, একজন অপরজনকে বলল, গুরু তোমার দেওয়া ওষুধের ডোজটা কি বেশি হয়ে গেছে? কই মেয়েটার ঘুম ভাঙলো না তো? অপরজন বললো এটাই বসের শেষ টার্গেট, আজ ভোর রাতেই এখান থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যাব। এখন কিছু দিন রেস্ট,এই কটা বাচ্চা কে পাচার করলে এখন অনেক টাকা আসবে, তারপর আবার পরের কাজ শুরু হবে অন্য কোথাও।মেহুল সব শুনল, কিন্তু সেই মুহূর্তে কিছু একটা ওর পায়ে কামড়ে দিল, জ্বালা করে উঠল।এবার মেহুল মাগো বলে কাতরাতে লাগল। লোক দুটো পিছন ফিরে চলে যাচ্ছিল, আওয়াজ শুনে ঘুরে দাঁড়িয়ে গেল।
ওদের মধ্যে ঐ গুরু বলছিল যাকে সে ঘুরে দাঁড়িয়ে অপরজনকে বলল , দেখলি কি বলেছিলাম মেয়েটা বহুত চালু, ঘুমের ভান করে আ
মাদের কথা শুনছিল। এবার মেহুল উঠে বসতে চাইল, লোক দুটোকে একটু জল দিতে বলল। একজন একগ্লাস জল এনে ওর মুখের সামনে ধরল।অপরজন বলল ওর হাতটা খুলে দে বংশী জল ও নিজে খেয়ে নেবে, চল আমরা ঐ বাচ্চা কটাকে রেডি করি,এখুনি বস এসে বকবে। ভোর রাতে গাড়ি লাগবে। লোকগুলো বাইরে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল। এতোক্ষণ দরজা খোলা থাকায় বাইরের আলোটা ঘরে আসছিল, এই মুহূর্তে আবার সব অন্ধকার হয়ে গেল।মেহুল উঠে বসে পায়ের বাঁধন টা খুলে ফেলল।
************************
সেই সন্ধ্যে থেকে মেহুল কে পাওয়া যাচ্ছে না। তনিমা দেবী কেঁদে যাচ্ছেন তার একমাত্র কন্যার অশুভ কিছুর আশঙ্কায়, আর ওনার পিনাকী ঠাকুরপো কে বলে যাচ্ছেন মেহুল কে ফিরিয়ে আনার জন্য। পিনাকী বিশ্বাস হলেন মেহুলের বাবা সপ্তকের মাসতুতো ভাই। পিনাকী বাবু বেরিয়ে গেলেন তৎক্ষণাৎ। ওনার সন্দেহ ঠিক, ঐ মন্দিরের অনতিদূরে যে পোড়ো বাড়িটা আছে ওখানেই কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে। মাস দেড়েক ধরে ওর আশপাশে থাকা পুলিশের ইনফর্মার সে রকম ই ইনফরমেশন দিয়েছেন। আর আজ বিকালেও মেহুল কে ওদিকেই শেষ দেখা গিয়েছিল। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের দুঁদে অফিসার পিনাকী বাবুও একটু চিন্তিত। এই মুহূর্তে যত শীঘ্র সম্ভব ফোর্স রেডি করতে হবে। আর দেরী করলে ঘুঘু পালিয়ে যাবে।
মেহুল আস্তে আস্তে অন্ধকারে উঠে দাঁড়াল, একটু একটু করে অন্ধকার টা চোখে সয়ে যাচ্ছে। হাতরে হাতরে দরজার কাছে এল, নাহ হলো না, দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। আবার ফিরে এসে চৌকিটায় বসে চিন্তা করতে লাগল। এই মুহূর্তে নিজেকে অসহায় লাগল, ফোনটা ও নেই। ধুরত্তেরি বলে আবার উঠে দাঁড়াল, এবার উল্টো দিকে খানিকটা এগিয়ে দেখল একটা কাঠের দরজার মতো কিছু হাতে ঠেকল, সামান্য চাপ দিতেই খুলে গেল। ঘরটায় ঢুকতেই ওর পায়ের নিচে এবার জল ঠেকল। সামনে তাকিয়ে দেখল এক কোন থেকে যেন একটু আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে, ওদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখল ওটা একটা জানালা, চাপ দিয়ে খুলে ফেলল, বাইরে পূর্নিমার চাঁদ আর তারই আলো এসে পরেছে। সেই আলোয় ঘরের ভেতর টা দেখা যাচ্ছে। এটা একটা ছোটো বাথরুম, তাই পায়ের তলায় জল ঠেকছিল। জানলা টা বেশ উঁচুতে হওয়ার জন্য বাইরের কিছু দেখা যাচ্ছে না। মেহুল একটু লাফিয়ে জানলার রডটা ধরার চেষ্টা করে, আর ঠিক তখনই বাইরের দরজা খোলার আওয়াজ পেল। মেহুল ঘরে এসে দেখল আগের সেই লোক দুটো। ওরা বলল, এই চল তাড়াতাড়ি, নীচে বস অপেক্ষা করছে এক্ষুণি গাড়ি এসে যাবে। রাত একটায় ট্রেন। এবার লোক গুলো হাতে টর্চ নিয়ে এসেছিল, মেহুল লোক দুটো কে খুব ভালো করে লক্ষ্য করল,চেনা চেনা মনে হচ্ছে, কিন্তু কোথায় দেখেছে কিছুতেই মনে করতে পারছে না। লোক দুটো র পিছন পিছন বেরিয়ে এলো , একবার ভেবেছিল ক্যারাটের প্যাঁচ দিয়ে দুটো কে ধরাশায়ী করে। পরমুহুর্তেই ভাবল কে জানে কজন আছে, ওরা কতটা খতরনাক, তার থেকে এটা ভালো আর একটু অপেক্ষা করে দেখা যাক।
মেহুল কে নিয়ে লোক দুটো একটা হল ঘরে ঢুকল, মেহুল অবাক হয়ে দেখল ওখানে আগে থেকেই আরও পাঁচটি বাচ্চা রয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে ওদের পাড়ার চায়ের দোকানের ছোট ছেলে টা আর আছে ওর প্রিয় সুজান। ওদের দেখেই মেহুল এগিয়ে গেল, কিন্তু ওরা দুজনেই অবাক হয়ে মেহুলের দিকে তাকিয়ে রইল, যেন এই প্রথম দেখছে, ওদের দৃষ্টি ও কেমন যেন ঘোর লাগা। ঠিক সেই সময় মেহুল কে অবাক করে দিয়ে ঘরের কোন থেকে একজন সশব্দে হেসে উঠল। মেহুল চমকে পিছন ফিরে তাকাল, আগে তো ঐদিকে লক্ষ্য করেনি, দেখল একজন বিশাল চেহারার মিশমিশে কালো লোক বসে আছে। অসম্ভব বিভৎস রকম তার মুখটা, দেখেই মেহুলের বুকটা কেঁপে উঠল। লোকটা এবার বলল, এই যে পুরহিত এই বাচ্চাটা কেও ঐ নেশার ওষুধ দিয়ে দাও, ট্রেনে আর কোন ঝামেলা হবে না। মেহুল বুঝতে পারল বাচ্চা গুলো কেন ওভাবে দেখছে। আর ঐ লম্বা ঢ্যাঙা লোকটাকেও এবার চেনা গেল, ঐ মন্দিরের তান্ত্রিক পুরোহিত, আর তখনই মনে পরে গেল পাশের লোকটাকে ও, ওটা তো ঐ পাগল টা যাকে ও সন্দেহ করে ছিল। এবার ঐ পাগল সাজা লোকটা যাকে বংশী বলে ডাক ছিল, এগিয়ে এসে ওর হাতে একটা চিনির ডেলার মতো কিছু দিয়ে চলে গেল, আর ঠিক তখনই লোকটার পকেট থেকে কিছু একটা দরকারী কাগজ পরে গেল। মেহুল তাড়াতাড়ি করে কাগজটার ওপর পা দিয়ে চেপে ধরল, যাতে কেউ দেখতে না পায়। তারপর সবার অলক্ষ্যে কাগজটা নিয়ে পকেটে রেখে দিল। এবার সে বাথরুমে যাবার নাম করে পাশের ঘরে গিয়ে কাগজটা খুলল। মেহুল অবাক হয়ে দেখল কাগজটা একটা চিঠি যেটা তাকেই উদ্দেশ্য করে লেখা। লোকটি আপাতত ওকে ঘোর লাগার অভিনয় করতে বলেছে, ওটা নাকি চিনির ডেলা। আরও অবাক হল সে এই দেখে যে এটা পিনাকী কাকুর লেটার প্যাডে লেখা। কাগজটা সে ছিঁড়ে ফেলে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ঐ বাচ্চা গুলোর কাছে এসে ঘুমে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার অভিনয় করতে লাগল। এবার সে কান খাড়া করে ওদের কথোপকথন শুনতে লাগল। যেটা ও বুঝল এখানে ওরা মোট পাঁচ জন আছে। ঐ কিম্ভূতকিমাকার লোকটা, পুরোহিত, অদ্ভুত ঐ পাগল ছাড়াও আরও দুটি লোক যাদের ও দেখেনি, তারা নাকি বাইরে পাহারায় আছে। আর একটু পরেই গাড়ি আসবে ওদের স্টেশনে নিয়ে যাবে। ওখান থেকে রাত একটার ট্রেনে ওদের কোথায় একটা নিয়ে চলে যাবে আর তার পরিবর্তে এরা মোটা টাকা পাবে।
এখন রাত কটা জানা নেই। মেহুল সুযোগের অপেক্ষায়,কি করে এখান থেকে বাচ্চা গুলোকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া যায়, সেই মুহূর্তেই বাইরে গাড়ির শব্দ। ওদের নিয়ে যাবার জন্য এবার ঘরে পাঁচ জনেই এসে উপস্থিত হল। পুরোহিত টা জোরে উঁচু গলায় ড্রাইভার কে হাঁক দিল। ঘরে এসে যে দাঁড়াল তাকে দেখেই মেহুল অবাক হল, আবার মজাও পেল, পাঞ্জাবী ড্রাইভারের বেশে পিনাকী কাকু। এবার মেহুল একটু সাহস পেল। ওদের ধরে গাড়িতে তোলার সময় মেহুল পুরোহিতটা কে একটা প্যাঁচ দিয়ে ধরাশায়ী করে দিল। আর ঠিক তখনই ঘাড়ের কাছে একটা জোর আঘাত পেয়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। যখন জ্ঞান ফিরল তখন সে তার নিজের ঘরে বিছানায়। মা বাবা ভাই আর পিনাকী কাকু ঘরের ভিতর। পিনাকী কাকু প্রথমেই বলল ঐ রকম হঠকারী সিদ্ধান্ত কেউ নেয়? আমরা যেখানে উপস্থিত আছি সেখানে তোর ও রকম করতে যাওয়া বোকামি, যদি কিছু হয়ে যেতো? মেহুলের আর তর সই ছিল না। সে বলল কি হয়েছে আমায় সব খুলে বলো। পিনাকী বলল, এখানে ও তোর অবদান আছে। ঐ যে পাগল ও ছিল আমাদের ডিপার্টমেন্টের লোক, ওদের হয়ে কাজ করছিল। কিন্তু ওর কোন উপায় ছিল না আমাদের কাছে ইনফরমেশন পাঠানোর। তাই তোকে কিডন্যাপ করার সময় তোর মোবাইল টা ও সবার অগোচরে নিয়ে নেয় , আর আমায় মেসেজ করতে থাকে। অনেক দিন আগে থেকেই আমাদের কাছে এই দলটার সব খবর ছিল। এরা বিভিন্ন জায়গা থেকে বাচ্চা চুরি করে বাইরে বিক্রি করে, তাই আমরা আগেই সতর্ক ব্যবস্থা নিয়ে ছিলাম। দলের মাথা সহ সবাই ধরা পরেছে, আর বাচ্চা গুলোকেও নিরাপদে উদ্ধার করা গেছে। ঐ পোড়ো বাড়িটা কে সন্ধ্যে থেকেই আমরা ঘিরে ফেলেছিলাম। ওদের যে গাড়ি আসার কথা ছিল সেটাকে ও রাস্তা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, মোটামুটি সব বামাল সমেত সকলেই গ্রেফতার হয়েছে। আর তাই আজ রাতে বৌদির হাতের গরম গরম ফুলকো লুচি আর খাশির মাংস। সকালে তোর জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে, ডিপারমেন্টের তরফ থেকে। বাবা হো হো করে হেসে বলল যাই নতুন গুড়ের সন্দেশ টা কিনে আনি, সেটাই বা বাদ যায় কেন।