Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Susmita Sau

Classics Inspirational

3.5  

Susmita Sau

Classics Inspirational

জলছবি

জলছবি

3 mins
872


মৃৎশিল্পী রাধাকান্ত পাল এই বছর দূর্গা পূজোয় ঠাকুরের অর্ডার পেয়েছেন পাঁচটি। এখনও পর্যন্ত একটি ঠাকুর ও শেষ করতে পারেননি। হাতে আর মাত্র এক মাস বাকি। এ বছর বৃষ্টি টা পূজোর আগে ব্যপকহারে হয়েছে। তাই পটুয়া পাড়ার সব শিল্পীর মাথায় হাত। যাইহোক এই কটাদিন দিন রাত এক করে খাটতে হচ্ছে শিল্পী রাধাকান্ত মশাইকে।

তিন কন্যা ও গিন্নি নিয়ে সংসার রাধাকান্ত বাবুর। অনেক কষ্ট করে মেয়েদের লেখা পড়া শিখিয়ে ছিলেন। বছর দুই আগে বড়ো মেয়ে শ্যামলীর বিয়ে দেন বেশ স্বচ্ছল ঘরে। জামাই দেবদুলালের মহাজনী কারবার। নিরীহ শ্যামলীর কিন্তু এই বিয়েতে মত ছিল না। কারণ ছেলের বাড়ি থেকে অনেক টাকা পণ দাবী করেছিল। রাধাকান্ত বাবু অনেক ধার দেনা করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ের ছমাস যেতে না যেতেই জামাইয়ের আবদার এসেছিল রঙিন টিভি র। সে শখ ও মিটিয়ে ছিলেন শিল্পী বসত বাড়ি বাধা দিয়ে। গেল বছর পূজোয় শ্যামলীর মায়ের আবদারে মেয়ে কে বাপের গরীব ঘরে আনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু জামাইয়ের বাড়ি থেকে আসতে দেয়নি, কারণ জামাইয়ের একটা বাইকের আবদার এসেছিল, যেটা না হলে নাকি শ্যামলীর পিতৃগৃহে আসার উপায় ছিল না। অসহায় রাধাকান্ত ততধিক অসহায় মেয়ে কে শুধু চোখে দেখে ফিরে আসেন। বাবার চোখে সেদিন ধরা পরেছিল মেয়ের না বলা করুন কাহিনী গুলো। এরপর প্রায় একবছর হয়ে গেল শ্যামলীর আর পিতৃগৃহে আসা হলনা। তাই এই বছর পূজোয় রাধাকান্ত বাবু জেদ করেছেন তার উমা মাকে ঘরে আনবেন, আর সেই কারণেই এই পরিশ্রম, একটা নতুন বাইক কিনতে হবে।

এইসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত রাধাকান্ত উদাস হয়ে যায়। হঠাৎ একটি কোমল স্পর্শে চিন্তা র জাল ছিঁড়ে বেড়িয়ে আসেন তিনি, পিছন ফিরে দেখলেন তার অষ্টাদশী মেজ মেয়ে কুহেলি। বাবার পিঠে নরম হাতের স্পর্শ করে স্বান্তনা দিয়ে বললে, " অনেক রাত হয়েছে, আর নয় বাবা, এবার ওঠো। "

-"নারে মা আর একটু করি, ভাবছি টাকা কটা পেলে পূজোর আগেই মেয়েটাকে ঘরে নিয়ে আসব। তাছাড়া মামা তোর জন্য একটা পাত্র দেখেছে, জানিনা কিভাবে কি করব। শুতে গেলেও কি ঘুম আসবে রে মা? "

-" না বাবা আর কোন কথা আমি শুনতে চাই না। তুমি ওঠো। " এই বলে এক প্রকার রাধাকান্ত বাবুকে প্রায় টানতে টানতে নিয়ে গেল তার অষ্টাদশী মেয়ে। মাথায় হাজার চিন্তা নিয়ে আর একটা বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করতে গেলেন শিল্পী।

পরদিন সকালে উঠে মুখ হাত ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে রাধাকান্ত বাবু ওনার চালাঘরে কাজ করতে এসে অবাক বিস্ময়ে দেখলেন প্রতিটি প্রতিমার চক্ষু আঁকা হয়ে গেছ। ভীষণ অবাক হয়ে দেখলেন তিনি কি অপূর্ব তুলির টান, কি নিখুঁত সৃষ্টি, এ জিনিস তো এ তল্লাটে রাধাকান্তর বাবা ছাড়া আর কেউ পারতেন না। এমনকি তিনি নিজেও পারেন না এই অপূর্ব সৃষ্টি। তবে কে করেছে এ কাজ? এ কার সৃষ্টি?

সেই মুহূর্তে বাবার জন্য চা নিয়ে পায়ে পায়ে ঘরে ঢুকল কুহেলি, "বাবা কিছু ভুল হলে ঠিক করে নিও। "

-"তুই? এ তোর সৃষ্টি? "

কুহেলি মাথা নীচু করে বলল, "আমায় কাজ শেখাবে বাবা? আমি তোমার মতো হতে চাই, আমি এখন বিয়ে করবনা, আমি দিদির মতো হেরে যেতে চাইনা। "

রাধাকান্ত আনন্দে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন। গিন্নি সুলতা এসে বললেন, " তুমি না আফসোস করেছিলে যে তোমাদের বাপ চোদ্দো পুরুষের এই সৃষ্টি এখানেই থেমে থাকবে। দেখো আমার মেয়ে সেই সম্মান বজায় রাখতে পারবে, ওকে এখন বিয়ে আমি দিচ্ছি না। ও নিজের সৃষ্টি কে জনসমক্ষে তুলে ধরুক, নিজের পরিচয়ে পরিচিত হোক। "

রাধাকান্ত আনন্দাশ্রু নিয়ে তার প্রতিমা গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলেন আজ মায়ের মৃন্ময়ী রূপ চিন্ময়ী হয়ে উঠেছে।


Rate this content
Log in