Latifur Rahman

Fantasy Others

4.7  

Latifur Rahman

Fantasy Others

প্রিয় তিলোত্তমার শহরে। (১ম )

প্রিয় তিলোত্তমার শহরে। (১ম )

3 mins
412


ভ্রমণ কাহিনি। 


            প্রিয় তিলোত্তমার শহরে


(প্রথম কিস্তি )



বাড়িতে বকাবকি, চোখ রাংগানো তো থাকছেই। কিন্তু ভ্রমণের নেশা তাড়ানো যে সম্ভব নয় তা আগে আগে থেকেই বাড়িতে আচ করতে পেরেছিল। আমাদের ভ্রমণ টিমের সদস্যদের সবার একই অবস্থা। ডানপিটে আর বধির। যে যাই বলুক আমরা খুব কমই শুনতে পারি। বাড়িতে নিজেদের বউ বাচ্ছাদের নানা ছলনা আর অদ্ভুত ভাবে কিভাবে সামলিয়ে আর ম্যানেজ করার গল্প গুলো শুনলে পেটে হাসতে হাসতে খিল ধরে যায়। বলতে গেলে এই বালকসূলভ আচরণ আর উদ্দামতা থামিয়ে রাখা যায় নি। দেশের প্রায় ৭০% এলাকা বাইকে দাপিয়ে বেড়িয়েছি আমরা কয়েক জন মিলে। এখন নতুন করে কোথাও যেতে গেলে কয়েক বার ভাবতে হয়। কিছু প্রিয় জায়গা ছাড়া দ্বিতীয় বার যাওয়ার ইচ্ছে তেমন থাকে না। ২০০০ সাথে মাথায় ভুত চেপে ধরে ভারত ভ্রমণের নেশা। তড়িঘড়ি করে পাসপোর্ট করে নিলাম কিন্তু বাধ সেধেছিল সারা দুনিয়ার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি। আর যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে নি। বেচারা পাসপোর্ট ঘরের টেবিলে শুয়ে থাকতে থাকতে বয়স টা দু বছর পার করেছে। অপেক্ষা শুধু রোগের প্রোকোপ কমা মাত্রই যাওয়ার প্লান করব। ভ্রমণ করলে একটা ই সুবিধা তা হলো আপনার অসম্ভব সাহস বেড়ে যাওয়া। বাহিরের পরিবেশ, আবহাওয়া আর হরেক রকম মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার অজস্র স্মৃতি। একমাত্র ভ্রমণ পিপাসুদের তা জানার কথা। লেখালেখির মাধ্যমে ভারতীয় বন্ধুর সংখ্যা অনেক বেড়েছে ইতোমধ্যে। কখনো দেখা না হলেও হৃদয়ের নরম আন্তরিকতা আর প্রেম সত্যিই মুগ্ধ হতে হয়।

রমেশ কর্মকার। পিকু দা। আমার চেয়ে বয়সে খানিকটা বড় হলেও মনের বয়স টা খুব কম। সাহিত্যিক, কবি ও প্রকাশক। ভারত ভ্রমণের কিছুদিন আগে আমার প্রিয় সেই নীরার মতো বইয়ের পান্ডুলিপি চেয়ে বসলে সেই লোভ সংবরন করার সাধ্য ছিলো না। দেশের বাহিরে কোলকাতার মতো জায়গায় নিজের বই বের করার আনন্দ যে কি তা অন্যের পক্ষে বুঝতে পারা সম্ভব নয় কখনো। যাই চেয়েছিলাম তাই হলো। দ্রুত তিনি আমার প্রথম বই সেই নীরার মতো বের করে ছাড়লেন। অনলাইনে বইয়ের প্রচ্ছদের ছবি টা দেখে বারবার ছুয়ে দেখার জন্য আংগুল সংবরন করা শক্ত ছিলো। দেশের বাহিরে পা দেব এই কল্পনায় ভাসতে থাকি। কাটাতার, সীমান্ত আর পর দেশের মাটির ঘ্রাণ সত্যিই ভিন্ন রুপ একটা অনুভূতি। দিলীপ কাকা বাইক এক্সিডেন্ট করে কোমরের হাড় ভেংগে গেছে। এর আগেও তিনি ভারতের চিকিৎসা নিয়েছেন আর উনি এবার ও যাচ্ছেন শুনে আরও আগ্রহী হতে থাকি। দ্রুত ভিসার জন্য আবেদন দিয়ে রাখলাম কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মে ১৪/১৫ দিন লাগে হাতে পেতে। তার মানে তার দিলীপ কাকা আগেই চলে যাচ্ছে। কিন্তু হাল ছাড়লাম না। গুগল ঘেটে ঘেটে প্রিয় তিলোত্তমা কোলকাতার পথ ঘাট তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখা শুরু করে দিয়েছি আরও দিন দশেক আগে থেকে। ইতোমধ্যে আমার বইয়ের অর্ডার দিয়ে দিলাম পিকু দা কে। ভারত ভ্রমণের সাথে নিজের বই নিয়ে আসা এক সাথে দুটো কাজ। পিকু দা র বাড়িতে গিয়ে উঠে পড়বো তাই তিনি সমস্ত পথ টা বাতলে দিয়ে রাখলেন। বলতে গেলে মুখস্থ করে রেখেছি। তবে এই প্রথম দেশের বাহিরে যাওয়া। নতুন দেশ, নতুন নিয়ম পেরিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা। তাই কিছুটা সংশয় ও কাজ করতে থাকে মনের ভিতর কিন্তু সাহস হারাই নি। বারবার ভাবতে থাকি অজস্র মানুষ তো যাচ্ছে। ঠিক আমিও চলে যাব। কিন্তু হুটহাট দিলীপ কাকার পুর্ব যাওয়ার তারিখ বাতিল হয়ে যায়। তার মানে আগামী ১৯/০৮/২২ তারিখ এক সাথে যাচ্ছি। মনের ভিতর আচমকা এক সাগর সাহস উথলে ওঠে। ঠিকঠাক ভিসা পেলাম, যাবতীয় কাগজ পত্র রেডি করে নিলাম। এখানকার ব্যাংকে ভ্রমণ কর ৫০০/ টাকা পরিশোধ করে নিলাম।

১৯/০৮/২২

অনলাইনে পার্বতীপুর টু যশোহর ট্রেনের টিকেট কেটে নিলাম। দিলীপ কাকা, উনার স্ত্রী আর আমি। তিন জনই যাচ্ছি একসাথে। রাত ৮.৩০ এ ট্রেন ধরতে সময় মতো স্টেশনে এলাম কিন্তু ট্রেন তার চিরায়ত নিয়মের বিরুদ্ধে যায় কি ভাবে প্রায় তিন ঘন্টা পর চলে এলো। যাইহোক রাত বারোটা। এবার ট্রেন ছুটে চল্লো।

(চলবে)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy