Latifur Rahman

Classics Fantasy

4.1  

Latifur Rahman

Classics Fantasy

সম্পর্ক শেষ পর্ব

সম্পর্ক শেষ পর্ব

7 mins
1.4K



সম্পর্ক  (শেষ)

এর মধ্যে অনিকের বদলি হয়েছে। সে এখন শহরে থাকে। প্রতিদিন যাতায়াত আর অফিসের কাজ করতে সে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে যায়।

তার মা একদিন বলে, বাবা শহরে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাক।

এভাবে রোজ রোজ যাতায়াত করা তোর জন্য খুব কস্ট হচ্ছে।

হা মা, তাই ভাবছি অনিক বলে।

একমাস থেকে অনিক শহরের একটা ছোট্ট বাড়ি ভাড়া নিয়েছে। দক্ষিণে খোলা জানালা। একটা মরা নদী। বর্ষায় পানিতে ভরে যায় তবে সব সময় বেশ বাতাস পাওয়া যায় জানলার পাশে বসলে কিছুক্ষণের মধ্যে নদী থেকে বয়ে আসা বাতাস শরীর হিম শীতল করে দেয়।

সন্ধ্যার পর প্রতিদিন সে বাড়ির ছাদে একটা চেয়ারে বসে গান শুনে,

বই পড়ে। কবিতা পড়া প্রিয় সখ। দেশের এবং বাইরের নামকরা কবিদের কবিতার বই তরে তরে সাজিয়ে রেখেছে তার বুকসেল্ফে।

খোলা ছাদ, উপরে রাতের জ্যোৎস্নায় মাখানো আকাশ, কবিতা পড়তে পড়তে কখনো কখনো হারিয়ে যায় অন্য কোথাও। তবে লিখতে পারেনা, যদি দু চার লাইন ছন্দ মেলায় তবে পরে আর মেলাতে পারে না, তাই সে জেনেই গেছে যে, তাকে দিয়ে লেখালেখির কাজ টা হবে না। সবাই লেখক হতে পারে না। যারা লেখক হয় তারাও জানে না লেখক হবে। একটা সময় হয়েই যায়, ইচ্ছে হোক আর অনিচ্ছায় হোক।

আজ হটাৎ করে পপি র কথা মনে পড়ে যায় অনিকের। 

হুম, সেই পপির কথা বলছি, বাসের সেই মেয়েটি। মানুষ একা একা বসে থাকলে পুরাতন স্মৃতি গুলো বুজি ভেসে আসে। স্মৃতি রোমন্থন এর জন্য একা থাকতে হয়। ভাবনার জন্য পরিবেশ চাই, শব্দহীন একটা নিস্তব্ধতা চাই। হইহট্টগোলে এর মধ্যে ভাবনা বাস করে না।

ভাবনা বাস করে একাকীত্বে, নিরালায়, অন্ধকারে।

অনিক দীর্ঘদিন ধরে তাই করে। রোজ রোজ সন্ধ্যায় সে এই ছাদে একা একা বসে থাকে।

মাঝে মাঝে নিচে নেমে গিয়ে একটা করে চা পান করে আসে। আর সিগারেট টা সে আজও ছাড়তে পারেনি। তার মা ত ক্লান্ত বলতে বলতে। কিন্তু ছাড়াতে আর পারল কই। সিগারেট ছাড়াতে বললে নানা রকম যুক্তি দেখায়। বলে, যে দুনিয়ার সব ভাবুক মানুষ রা নাকি সিগারেট খাইত। অনেক উদাহরণ দেখায়।

তাই এই নিয়ে তার যুক্তির শেষ নেই। আপাতত কেউ আর তেমন বলে না। তার দু একজন বন্ধু আছে, তারা মাঝে মাঝে অনিকের সাথে বসে এখানে আড্ডা দেয়।

যার কথা বলছিলাম, পপি। প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেল। সে আর কখনো ফোন দেয়নি অনিক কে। অনিক ও তার নাম্বার নেয়নি।

থাক একজন মানুষের জীবনের বাকে বাকে হয়তো এমন অনেক পরিচয় হয়, সব পরিচয় চুড়ান্ত রুপ পায়না।

থাক এই নিয়ে সে আর ভাবতে চায়না।

ইদানীং অফিসে অনেক কাজ বেড়েছে। রাত দিন কাজ করতে হয়েছে। ছুটির দিনে ও সে বাড়িতে যেতে পারে নি। মা বারবার ফোন দিচ্ছে। কিন্তু উপায় নেই। সব কাজ শেষ করে তবেই সে বাড়ি যাবে কাল।

দুদিন ছুটি পেয়েছে অনিক। বড় সাহেব বললো, যাও দুদিন বাড়িতে গিয়ে মায়ের হাতে খাও।

জি স্যার। মাথা চুলকায় অনিক।

ছুটি পেয়েই সকালে বাড়িতে এসেছে।

কি রে বাবা অনিক, অফিসে এত কাজ তোর।

আর বলনা মা, দুজন অফিসার অসুস্থ। তাদের কাজ ও আমাকে করতে হচ্চে। একদম আরাম নেই। দুদিন ছুটি পেয়েছি তাই এলাম।

সকালে নাস্তা খেয়ে ই একটা ঘুম দিল অনিক।

সে তখন ঘুমিয়ে আছে।

তার ফোন বেজে ওঠে।

অনিক এর মা রিসিভ করে।

হ্যালো, কে বলছেন। অনিক ত ঘুমায় এখন।

প্লিজ দিন না, একটা মেয়ের কন্ঠ। আমাকে আপনি চিনবেন না।

খুব দরকার।

আচ্ছা আচ্ছা দিচ্ছি।

অনিক কে ডেকে ফোন দেয় তার মা, দেখত কে একজন ফোন দিয়েছে।

আচ্ছা দাও।

হ্যালো, কে বলছেন?

কেন আমাকে ভুলে গেলেন? ফোনের ওপাশ থেকে মেয়েটি বলে

সরি আসলে বুজতে পারছি না, প্লিজ বলুন।

পপি।

পপি, জি প্লিজ এখনো চিনতে পারছি না।

তাই। নাম ও ভুলে গেছেন। থাক তাহলে আর দরকার নেই।

আরে না না প্লিজ বলুন, চিন্তায় পড়ে অনিক, তারপর বুজতে পারে,

ও আপনি। হুম বুজেছি। তা একদিন পর আপনার মনে পড়লো?

এটা ত কথা ছিল না। অনিক, বলে।

পপি বলে,কি করব বলেন, আপনার নাম্বার লেখা কাগজ টা সত্যিই হারিয়ে ফেলেছিলাম, এই কেবলমাত্র পেয়েছি। খুব খারাপ লেগেছে আমার। যাইহোক তবুও ত পেয়েছি। একদম ভুলে যাইনি কিন্তু। তবে কাগজ টা হারিয়ে খুব খারাপ লেগেছিল।

আচ্ছা কেমন আছেন বলুন, অনিক বলে।

জি ভালো। আপনি?

হুম। ভালো।

এরপর পরিবারের খোঁজ খবর নেয় দুজন।

এরপর থেকে প্রতিনিয়ত কথা চলে দুজনের। সম্পর্ক টা শেষ অব্ধি প্রেমের রুপ নেয়। অনিকের অফিস থেকে পপির বাড়ি কয়েক ঘন্টার পথ। পপি প্রায়ই দেখা করার জন্য চাপ দিতে থাকে।

অনিক যেতে চায় না। তাছাড়া সেখানে গিয়ে দেখা করার মতো সময় আর সুযোগ খুবই কম। নানা বাহানায় এড়িয়ে যেতে থাকে অনিক। এভাবে চলতে চলতে একটা সময় সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। অনিক চায়, যাক না আরও কিছু টা সময়, সম্পর্ক টা আরও গভীর হয়ে আসুক। তারপর না হয় দেখা করতে যাবে। কিন্তু পপি তা মানতে চায় না। খুব চাপ দিতে থাকে।

বলে, তোমার ছোয়া পেতে খুব উদগ্রিব হয়ে আছি। আমি তোমাকে ছুতে চাই। তোমার স্পর্শ পেতে আমি পাগল হয়ে আছি। অনিক জানে, এটা দোষ দেয়া যাবে না।

এমন আসক্তি নারী পুরুষ এর থাকবে, অনিক ও কম আবেগ প্রবন তা নয়। সে ও চায় পপি তে ছুয়ে দেখতে, আদর করতে। কিন্তু। অনেক কিছু তাকে ভাবতে হবে। সবে ত নতুন চাকুরী। আর একটা কেলেংকারী হোক সে তা চায়না। যা কিছু হোক সেটার মধ্যে যেন প্রেম থাকে। আর বিয়ে করার মতো প্রস্তুতি অনিকের নেই। সে চায় পপির সাথে তার সম্পর্ক টা আরও কিছু দিন এগিয়ে যাক। দুজনের মধ্যে ভালো বাসা ভালো ভাবে জেগে উঠুক।

এই রকম ভাবনার দোলা-চালে ভুগতে থাকে অনিক। রোজ রোজ পপির জিদ অসম্ভব বেড়ে চলছে। নানা রকম প্রশ্ন দেখা দেয় অনিকের মনে।

তবে কি মেয়েটি, তাকে কোন বিপদে ফেলার ফন্দি আঁটছে কি?

না না তা হবে কেন? সে ত পপিকে ভালো বাসে। কিন্তু, যদি ফন্দি আঁটতে থাকে? নানাবিধ প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে লাগলো অনিকের। তাছাড়া পপির এলাকা টা ভালো নয়।,লোকজন খারাপ।

পরপর দু'দিন যেতে চেয়ে ও সে যেতে পারে নি পপির কাছে।

আজ তাই যাবে। পপি বলে দিয়েছে, আজ যদি অনিক না যায়, আর কোনদিন সে অনিকের সাথে কথা বলবে না। অনিক জানিয়ে দেয়, যদি সে পপির বাড়ি থেকে কয়েক মাইল দূরে, একটা জায়গায় গিয়ে দেখা করে তবে সে যেতে রাজি। পপি তাতেও রাজি হয়। অনিক তখন কিছুটা নিরাপদ বোধ করে।

গতরাত থেকে হটাৎ করে অনিকের খুব জ্বর আসে। তার ভিতর ও একটা জিদ কাজ করে। তবুও সে দেখা করতে যাবে।

পরদিন সাথে অফিসের একজন স্টাফ বন্ধুর মতো। তাকে সাথে নিয়ে ট্রেনে উঠে সেখানে চলে যায়। কখনো এখানে আসেনি সে। সেখানে নাস্তা সারে। সকাল নয়টা বাজে তখন। প্লাটফর্ম এ হাঁটাহাটি করে পপির অপেক্ষা করে। এভাবে ত্রিশ মিনিট পর পপি আসে।একটা ঢিলা স্কার্ট গায়ে,মেরুন রঙের।

সে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসে।

চলুন।

কই যাব এখন? অনিক বলে।

এভাবে কি দাঁড়িয়ে কথা বলব, চলুন কোথাও গিয়ে বসব।

চল, আমি কিন্তু এখানে কিছুই চিনি-না।

আচ্ছা চল, ভয় নেই। তিন জনে একটা রিক্সায় চড়ে একটা বড় গেটের সামনে গিয়ে নামল।

গেটের উপর লেখা শিশু উদ্যান।

ভিতরে প্রবেশ করে তিনজন। খুব সুন্দর করে সাজানো পুরো এলাকা।

এটা কল্পনায় ছিল না অনিকের। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, দুটো পুকুর আর কপোত কপোতী দের ঘাপটি মেরে আলাপের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরী করা। এক পলক চারিদিকে তাকিয়ে দেখে অনিক। শুধু তাই বসার জন্য আরও কয়েক স্তর জায়গা সাজিয়ে রাখা আছে এখানে। 

এমন কোন জায়গা সারা দেশে আর আছে কি না, অনিকের জানা নেই।

অনিকের বন্ধু, অনিক কে ছেড়ে দূরে চলে যায়, চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে।

পুকুরের ধারে একটা সান বাধা জায়গায় গিয়ে বসে পড়ে দুজন।

দুজন কথা বলছে।

প্রেমিক, প্রেমিকা রোজ রোজ একই কথা বলে। ঘুরিয়ে, ফিরিয়ে বলে, বারংবার বলে। সব প্রেমিক প্রেমিকার একই অবস্থা। হাজারো সপ্ন, হাজারো বাধা, হাজারো প্রশ্নের উত্তর হীন আলোচনা, যা দেখা হলে, তাই কথা হয় দেখা না হলেও তাই। একটা অন্তহীন সম্পর্ক এটা।

যে প্রেমে বাধা নেই সে প্রেম অসার, স্বাদহীন। এমন প্রেমে মজা নেই।

প্রেমে যত বাধা প্রেম ততটাই গভীর হয়।

অনিক তার হাজারো সমস্যার কথা বলে, নতুন চাকুরী, তার বিয়ে করতে দেরি হবে।

আমি পারব না এতটা দেরি করতে, পপির সাফ কথা।

তোমাকে পেতে আমি অস্থির হয়ে আছি, আমার বুকে হাত দাও দেখ, বলেই পপি অনিক এর হাতটা পপির বুকের উপর চেপে ধরে। দেখেছ কি বলছে।আমি আর পারছি না। আমাকে তুমি শান্ত কর। অনিকের হাত পপি তার পেটের নিচে নিয়ে চেপে ধরে, দেখেছ আমার শরীরে উত্তেজনা কত। আমি আর পারছি না প্লিজ। চল পাশেই আমার একটা আত্মীয়ের বাড়ি। বাড়ি ফাকা। আমি এই দেখ চাবি নিয়ে রেখেছি, পপি অনিক কে বাড়ির চাবি বের করে দেখায়।

অনিক পপির আচরণ দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ে। মেয়েরা এতটা উত্তেজিত হয়ে যায় আগে সে এমনটা অস্বাভাবিক কাউকে দেখেনি।

ছি, পাগলামি কর না। সবাই দেখছে।

দেখুক। চল সেই বাড়িতে যাব।

না তা হয়না। আমি অসুস্থ শরীরে এখানে শুধু দেখা করতে এসেছি। অনিক পপির এমন আচরণ দেখে ভয় পেয়ে যায়, বিপদেরগন্ধ গন্ধ পায়।

চরম বিরক্তি প্রকাশ করে পপি। তাহলে এসেছ কেন। জাননা, আমি আর থাকতে পারছি না, আমার শরীরে আগুন ঝরছে।

অনিক বুঝতে পারে, মেয়েটি তাকে হয়তো বিপদের মুখে ফেলতে চাইছে।

দেখ, আবারও আমি আসব। দু চার দিন পরেই আসব, অপেক্ষা কর প্লিজ। আমি সুস্ত হলে আসব।তুমি যা চাও তাই হবে। অনিক বুদ্ধি খাটায়। অনিক বুজতে পারে তার সাথে প্রেমহীন এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে পপির। সে অনিক কে হয়তো বিপদে ফেলে বিয়ে করতে বাধ্য করতে চাইছে।

তুমি আমাকে বিয়ে করবে না? পপি বলে

দূর পাগল কেন করব না, তোমার সব কষ্ট মিটিয়ে দেব গো।

দাও একটু আদর করে দেই।

খুশি হয় পপি।

অনিক পপিকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু বসিয়ে দেয়। পপির নরম আর খাড়া বুকে ইচ্ছে মতো আদর করে দেয়।

কিছুটা শান্ত সুবোধ হয়ে আসে।

অনিক জানে তাকে কিছুটা অভিনয় করতে হবে, নয়তো পপি আজ তাকে ছাড়ছে না।

আচ্ছা। আজ আসি, কেমন।

পপির মুখে মেঘ চলে আসে। আবার এসো। অনেক আদর দেব তোমাকে।

অনিক মাথা নাড়ায়।

অনিক চলে আসে।

এরপরে পপি আর কখনো অনিকের ফোন ধরেনি।

২৮/৮/১৯

সমাপ্ত



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics