Latifur Rahman

Fantasy Inspirational Others

4  

Latifur Rahman

Fantasy Inspirational Others

প্রিয় তিলোত্তমার শহরে (চার)

প্রিয় তিলোত্তমার শহরে (চার)

5 mins
476


চতুর্থ কিস্তি)


ইমিগ্রেশন অফিস পার হলেই একটা বাজার। প্রচুর দোকান পাট। মানি এক্সচেঞ্জ করার জন্য ধর্না দিয়ে বেড়াচ্ছে কম বয়সী কিছু ছেলে। নতুন কোন পর্যটকদের কাছে এটা ঘাম ঝরানো অবস্থা মতো। বিভিন্ন জন নানা ভাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছে কাজেই দেখেশুনে স্থায়ী কোন দোকান ছাড়া মানি এক্সচেঞ্জ করার ঝুঁকি না নেয়াই উত্তম হবে। ভারতীয় সীমানায় পা দেয়া মাত্র আমার দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেছে তাই দেখেশুনে একটা মানি এক্সচেঞ্জ দোকানে গিয়ে টাকা রুপি করে নিলাম কারণ একটা চা খাইতেও আপনার রুপি লাগবে আর সাথে একটা মোবাইল সিম নিয়ে নিলাম। কারণ যোগাযোগ টাই মুখ্য বিষয় এখন। সিম লাগিয়ে পিকু দার সাথে অনবরত যোগাযোগ রাখছি। আমি এই প্রথম বার আসছি বলে পিকু দা ও আমার নিরাপত্তা আর আরামদায়ক উপস্থিতি তার কাছে না হওয়া অব্দি তিনি ও ভাবনায় আছেন। তবে এখন খুব রিলাক্স মুডে আছি বলা যায়। সীমান্তের এপার হলেও দু দেশের মানুষের কথা বার্তা আর চালচলন এর ফারাক খুব একটা চোখে পড়েনি আমার। সামান্য কিছু খেয়ে এবার যাত্রার গন্তব্য নিয়ে আলোচনা সেরে নিলাম। দিলীপ কাকার সাথে আমার আমার এখনি দুটো পথ হয়ে যাবে। উনি যাবেন একদিকে আর আমি আরেক দিকে। পিকু দা সহজ পথ টা এখনি বাতলে দিলেন যে, তুমি বনগাঁ স্টেশনে ট্রেনে উঠে বিধানগরে নামবে। দিলীপ কাকা ও যাবে শেষ স্টেশন শিয়ালদহ স্টেশনে কাজেই এক সাথে অনেক টা পথ যেতে পারছি। প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে। খুবই ক্ষুধা লেগেছে। এই ফাঁকে আগে ট্রেনের টিকেট কেটে নেয়া বেশি জরুরি। একটা সি এন জি ভাড়া নিলাম প্রতিজন পঞ্চাশ টাকা ভাড়া। রাস্তার দু ধারে বিশাল বিশাল রেইনট্রি গাছ। আর এটাই সেই ঐতিহাসিক বনগাঁ টু কোলকাতা সড়ক। বিশাল রাস্তা, পরিস্কার আর যান জট তুলনামূলক ভাবে কম আজ। প্রায় মিনিট তিরিশ পর আমরা হাজির হলাম বনগাঁর রেল স্টেশন এ। ভারতীয় এই সীমান্ত এলাকার সর্বশেষ স্টেশন এটি। কুড়ি রুপি ভাড়া এখান থেকে বিধাননগর। প্রায় ৭৩ কিমি পথ। তবে ভাড়ার দিক থেকে অনেক সস্তা বলা যায়। ট্রেন আসার ফাঁকে একটা হোটেলে গিয়ে খেতে বসে প্রথম ধাক্কা খেলাম। হোটেলের পরিবেশ আর খাওয়ার মান নিয়ে আমাদের দেশের সাথে বিস্তর ফারাক। তবে স্থানীয় মানুষদের দেখে তা বোজার উপায় নেই তারা গোগ্রাসে গিলতে আছে। মাছের অর্ডার দিলাম। নিয়ে এলো কিন্তু দেখে আর খেতে ইচ্ছে করে না বললাম খাব না। না দাদা এটা ফেরত হয় না। দোকানদার মহিলা নিয়ম টা বলে দিল। এবার নতুন আইন শেখা হলো। কি আর করি, মাছ টা হাতে নিয়ে হাত দিয়ে ভেংগে টুকরো টুকরো করে বাটিতে রেখে দিলাম। দামই যখন দেব তাহলে আর দ্বিতীয় বার যেন কারো কাছে বিক্রি করতে না পারে তার জন্য। দিলীপ কাকা ও খেয়ে পারেনি। কিন্তু স্টেশনের কাছে এটাই ভালো হোটেল মনে হচ্ছিলো। আর ট্রেন ও চলে আসবে তাই উপায়হীন অবস্থা।




লাইনের উপর বিদ্যুৎ এর তার দেখে বুঝতে পারি যে, হয়তো পুরো ভারতের ট্রেন বিদ্যুৎ দিয়ে চলে। দ্রুত গিয়ে ট্রেনে উঠে পড়ি। বিদ্যুৎ দিয়ে চলে তাই শব্দহীন বলা যায়। এই বিদ্যুৎ ট্রেনে প্রথম পা রাখলাম। বসার জায়গা পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। প্রচুর মানুষ। তবে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য অগনিত হাতল ঝুলে আছে। মন্দ লাগেনি। প্রায় চার পাচ মিনিট পর পর স্টেশনে থামছে। কিন্তু যাত্রীদের চুপচাপ হয়ে থাকা দেখে বাহিরে থেকে বোজার উপায় নেই যে এতগুলো মানুষ ভরে আছে। এই সুন্দর শব্দহীন যাত্রীদের দেখা পাওয়া আমাদের দেশে সত্যিই বিরল। এই রুটে মানুষের চলাচল যে বেশি তা আগে থেকে জেনেছি। আমার দৃষ্টি পড়ে আছে জানালার বাহিরে। আমার দেশের মতো ফসলের মাঠ, আধাপাকা বাড়িঘর আর মাঝে মাঝে ছোট ছোট হাটবাজার। চব্বিশ পরগনা এলাকাটি যে কৃষি নির্ভর তা দু পাশের চিত্র দেখে আচ করতে পারলাম। শহরের জাকজমক খুব কম চোখে পড়ে। তবে ট্রেন লাইন শহরের বাহিরের দিক দিয়ে থাকে তাই হয়তো চোখের সীমানায় পড়ছে। আমি এমনিতেই নতুন যাত্রী এই পথের তাই বিধান নগর স্টেশন কখন আসবে সেই নিয়ে সতর্ক হয়ে আছি। মাঝে মাঝে পাশের জনকে জিজ্ঞেস করছি, দাদা আর কয়টি স্টেশন পর।

দ্রুত ট্রেন যাচ্ছে আর আসছে। রেলের এই সু ব্যবস্থাপনা সত্যিই মুগ্ধ হওয়ার মতো। প্রতি স্টেশনে মাত্র মিনিট খানিক দাঁড়িয়ে আবারও ছুটে চলছে আমাদের ট্রেন। বামনগাছি, দত্তপুকুর, দমদম, বারাসাত আরও কত জায়গা। কিছু জায়গার নাম ইতিহাস আর বই পুস্তক এ পাওয়া। দমদম, বারাসাত যেন বহু আগের চেনা নাম আজ সেই এলাকার ভিতর দিয়ে যাচ্ছি এটা ভাবতে ও চমৎকার লাগে। নতুন জায়গা দেখার সুখ টা এখানেই। বিধাননগর যেন খুবই পরিচিত নাম। অজস্র ইতিহাসের এই শহর। যুগের পরিকল্পনার ফলস্বরূপ আজকের এই বিধান নগর।

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে গঙ্গার লবণাক্ত জল সমেত পলিমাটি পাম্প করে করে নিচু জায়গা ভরাট করে যে শহর গড়ে ওঠে তার নাম হয় 'লবণহ্রদ' বা 'সল্টলক'। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির নেতৃত্বে এই লবণহ্রদেই অনুষ্ঠিত হয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশন। আর সারা ভারত থেকে কংগ্রেস প্রতিনিধিরা ভারতীয় রেলের উল্টোডাঙা স্টেশনের ওপর দিয়েই আসতে থাকেন। ঘটনাচক্রে ওই সময়ই, অর্থাৎ ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে 'লবণহ্রদ' শহরের নাম পরিবর্তন করে 'বিধাননগর' রাখা হয় এবং 'উল্টোডাঙা' রেলওয়ে স্টেশনের নাম বদল করে নতুন নাম দেওয়া হয় 'বিধাননগর রোড' রেলওয়ে স্টেশন।

এই শহরটি 'সল্ট লেক' অথবা 'লবণহ্রদ' নামেও পরিচিত। কলকাতা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ কমাতে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে পরিকল্পিতভাবে এই শহরটি গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে বিধাননগর উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বিধাননগর মহকুমার অন্তর্গত একটি পৌরশহর।

১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন বসেছিল এই নবনির্মিত লবণহ্রদে। ইন্দিরা গান্ধি তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। শান্তিনিকেতনের পর্ণকুটিরের আদলে তৈরি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত তাঁর অস্থায়ী কার্যালয় থেকেই ঘোষণা করেন যে, 'লবণহ্রদ' নাম পরিবর্তন করে 'বিধননগর' করা হল। কংগ্রেস অধিবেশন চলাকালীনই ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের নামে শহরটি উৎসর্গিত হয়।

ঘড়ির কাঁটার দিকে দেখি বিকেল সাড়ে তিন বাজে। পিকু দা খানিকটা আগে ফোন করে, বললাম এই আর এসে গেছি দাদা। দেখতে দেখতে নেমে পড়ি। দিলীপ কাকা শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে পড়বে কাজেই তাদের সাথে বিচ্ছেদ হলো এই যাত্রায়। ভীষণ ব্যস্ত স্টেশন। অনেক লাইন। ভালো করে আশেপাশের এলাকা গুলো চিনে নিলাম। স্টেশন থেকে বেশ কিছু রাস্তা বেরিয়ে এসেছে। একজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম রাজারহাট যাওয়ার রাস্তা টা। 


(চলবে)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy