সম্পর্ক প্রথম পর্ব
সম্পর্ক প্রথম পর্ব
সম্পর্ক (শুরু)
অনিকের নতুন চাকুরী। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে। ছয় মাসের মতো হয়েছে। বাড়ি থেকে অফিস প্রায় কুড়ি কিলোমিটার এর মতো পথ। বাসে করেই যাতায়াত তার। খুবই শান্ত সুবোধ আর স্মার্ট দেখতে।
গ্রামের সব লোকের কাছে সে একজন ভদ্র আর অমায়িক হিসেবে পরিচিত। কালচারাল অনুষ্টান হলে তার ডাক থাকবেই। এলাকায় বেশ কিছু এমন অনুষ্টান তার পরিচালনায় হয়েছে। দারুণ বক্তৃতা করতে পারে। এককথায় বলতে গেলে অনেকটা গ্রামের লোকের কাছে সে চোখের মনি যেন।
আর রোববার। সপ্তাহের প্রথম অফিস। সকাল নয়টা বাজে। অনিক অফিস যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট হাতে প্রেসিডেন্ট ব্রিফকেস নিত্যদিনের সঙ্গী।
হটাৎ করে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে পাশের বাড়ির আব্বাস চাচা। প্রতিবেশী। খুব ভালো বাসে অনিক কে।
অফিস বেরুলে বুজি?
জি, চাচা কিছু বলবেন, অনিক বলে।
একটা কাজ কর ত তোমার চাচির ভাইয়ের মেয়ে, ক দিন হল এসেছে। সে বাড়ি যাবে। তুমি তাকে বাসে করে শহর পর্যন্ত নিয়ে গেলে সেখানে সে আর এক আত্মীয়ের বাড়িতে যেতে পারবে তারপর সে বাড়ি যাবে। এই কাজ টা কর ত বাবা।
জি চাচা তাকে বের হতে বলেন, আমি ত বের হলাম।
সে বের হয়ে এসেছে বাবা, বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
অনিক বাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে, সতের আঠার বছরের মতো বয়স মেয়েটার। পাতলা আর শ্যামলা। তবে বেশ চোখে ধরার মতো। খুব চঞ্চলা আর খি-প্র চাহনি। পুরুষ কে ঘায়েল এর তার চোখ জোড়া যথেষ্ট। এতটা ধারালো আর তীক্ষ্ণ তীরের ফলার মতো উজ্জ্বল। অনিক এক নজরে দেখে নিল মেয়েটিকে।
উত্তর দিকের রাস্তা ধরে একটা রিক্সা এসে দাঁড়ায় অনিক এর বাম পাশে দাঁড়ায়। মেয়েটা আগে উঠে পড়ে। অনিক ইতস্তত বোধ করতে থাকে। অপরিচিতা মেয়ের সাথে সে কখনো রিক্সায় চড়েনি তার-উপর নিজ এলাকায় । থমথম খেয়ে যায়।
মেয়েটি ইশারা দেয় অনিক কে, অনিক চড়ে রিক্সায়। দশ মিনিটের পথ। বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে রিক্সা থেকে নেমে যায় দুজনেই।
কেউ কারো সাথে কথা বলেনি এখন, যা হয়েছে শুধু চোখের ইশারায়।
তু তিন মিনিট পর বাস আসে, বাসে সীট খালি নেই। মেয়েদের সীট খালি একটা মাত্র। সেখানে গিয়ে বসে মেয়েটি। অনিক দাঁড়িয়ে আছে।
পাশের সিটের দুটো লোক মিনিট তিন পর একটা জায়গায় নেমে যায়। অনিক বসে পড়ে সেখানে। দুটো সীট সে একা। মেয়েটা বারবার তাকাচ্ছে অনিকের দিকে। অনিক বসে পড়া মাত্র, মেয়েটি ও সীট থেকে উঠে এসে অনিকের গা ঘেঁষে বসে ফাঁকা সিটে। একটা মুচকি হাসি মেয়েটির, অনিক ও মুচকি হাসে। শীতের সকাল। বেশ ঠান্ডা আর কুয়াশা। রাস্তা কুয়াশায় ঢাকা, দেখাই যাচ্ছে না। ধিরে ধিরে বাস চলছে।
আজ খুব ঠান্ডা তাই না? মেয়েটি বলে, দেখুন আমার হাত কত ঠান্ডা হয়েছে, বলেই তার ডান হাতটা দিয়ে খপ করে অনিক এর বাম হাতখানা চেপে ধরে।
অনিক থমকে যায়, এ কেমন মেয়ে বাবা, ভাবতে থাকে।
অনিক, মাথা নাড়ায়। হাতটা তিন সেকেন্ডে ছাড়িয়ে নেয়। বাস ভরা লোক। অনেক পরিচিত লোক বাসে। এটা অনিক মোটেও পছন্দ করে না। সে চরম ব্যক্তিত্ববান, এই সব বিষয় নিয়ে সে নিজেকে খুব সতর্ক করে রাখে।
বাস চলছে। প্রায় এক-ঘন্টার পথ।
কি নাম আপনার?
অনিক।
তাই। ভালো। আমি পপি। আপনার এলাকা খুব সুন্দর দেখতে। আমি অনেক আগে একবার এসেছিলাম। অনেক ছোট তখন আমি।
তাই। অনিক বলে।
আপনি কি করেন?
চাকুরী।
বাহ। ভালো। আপনি খুব সুন্দর দেখতে।
কি?
হুম। বেশ স্মার্ট দেখতে। এই যে দেখেন না। আপনি কত ফর্সা আর আমার হাত দেখেছেন, বেশ কালো। মেয়েটি বলতে থাকে। তবে কি জানেন?
কি?
আমার চোখ নাকি খুব সুন্দর। সবাই বলে। দেখেন না প্লিজ মেয়েটা জিদ ধরে।
অনিক মেয়েটির চোখের দিকে তাকায়। হুম। সত্যিই সুন্দর।
আমি তবে গান গাইতে জানি। অনেক সুন্দর গাইতে পারি। অনেক অনুষ্টান এ গেয়েছি। দু লাইন শুনবেন।
বলেই মেয়েটি গাইতে ধরে,, আরে আরে মেয়েটির মুখ চেপে ধরে অনিক। ছি ছি করছেন কি। এখানে গাওয়া যাবে না, পাবলিক বাস ত। আমি জানি আপনি ভালো গাইতে পারেন।
কিভাবে জানেন? কখনো শুনেছেন নাকি?
না শুনেই বুজেছি, অনিক মিটমিট করে হাসতে থাকে।
আপনি আমার মন খারাপ করে দিলেন কিন্তু। আমি গাইতে ধরে আর থামতে পারিনা।
খুব দুঃখিত। আর একদিন শুনব। কথা দিলাম।
আর কি আপনার সাথে আমার দেখা হবে বলুন? করুণ ভাবে মেয়েটি বলে।
কেন হবে না। ইচ্ছে থাকলে হবে। আজ ত পরিচয় হল।
আচ্ছা আমি বাড়িতে ফিরে আপনাকে ফোন করব। চিনতে পারবেন ত? ভুলে যাবেন না ত?
আরে না, তা হবে না।
আচ্ছা আপনার নাম্বার টা দিন। আমার কিন্তু মোবাইল নেই। আমার বড় বোনের ফোন আছে। দুজনেই একটা ফোন ব্যবহার করি।
অনিকের পকেট থেকে এক-চটকে কলম বের করে কাগজে অনিকের নাম্বার লিখে নেয়।
নাম্বার টা পেয়ে যেন পপির চোখে মুখে হাসি ফুটে ওঠে। খুব উজ্জ্বল হয়ে যায় তার মুখটি। তার হাসি টা অনেক সুন্দর আর খুব আবেদন ভরা।
মেয়েটি বলে অনিক কে, আপনাকে খুব ভালো লেগেছে আমার। আপনি কিন্তু আমার বন্ধু হয়ে গেলেন আজ থেকে। আবারও বললাম ভুলে যাবেন না কিন্তু। আপনার সাথে আবারও দেখা হবে, সেদিন কিন্তু গান শুনতে হবে।
আচ্ছা তাই হবে।
বাস গন্তব্য এসে যায়। মেয়েটি নেমে পড়ে। অনিক আরও সামনে নামবে। মেয়েটি নেমে হাটতে হাটতে হটাৎ থেমে যায়। পিছনে তাকায়। হাত উচিয়ে টা টা বলে, বাস চলতে থাকে, একসময় পপি চোখের আড়ালে চলে যায়।
২৬/৮/১৯
(চলবে)