Latifur Rahman

Fantasy Others

4.2  

Latifur Rahman

Fantasy Others

প্রিয় তিলোত্তমার শহরে (তিন )

প্রিয় তিলোত্তমার শহরে (তিন )

4 mins
447


প্রিয় তিলোত্তমার শহরে (তিন)





সমস্ত রাত্রি পেরিয়ে ভোরের আভা ফুটে উঠেছে পুর্ব আকাশে। দেখতে দেখতে ডিমের কুসুমের মতো সূর্য তরতাজা হয়ে আলোর ছড়াচ্ছে। জানালা খুলে মুগ্ধ হয়ে তাঁকিয়ে থাকলাম। রাতে ঘুম বলতে তিন চার বার চোখ বন্ধ করে থাকা মাত্র।

মুহুর্তের ভিতর আমাদের বগিতে যাত্রীদের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। তার মানে আমরা খুব এসেছি যশোর স্টেশনের। সঙ্গে সহযাত্রী মহিলা শেষ বার আরেকটা মায়াবী জালের হাসি দিয়ে তার ইয়া বড় ব্যাগটা এগিয়ে দিতে চোখের ইশারায় অনুরোধের ঢেকি গিলতে হলো আমাকে।

ট্রেন থামলো আমরা নেমে পড়ে যাত্রী রেস্ট রুমে গিয়ে তিনটি সীট দখল নিলাম। এই প্রথম যশোরের মাটিতে পা রাখলাম। ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর ৫.৩০। বুঝতে পারছি আমাদের কাছে বসে থাকা যাত্রীরাও ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবেন। এত ভোরে বের হওয়া নিরাপদ নয় তা অনেকের কানাকানি গল্পে বুঝতে পারি। হালকা চা নাস্তা আর ওয়াশরুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলো সকাল ৭.০০ টা অব্দি। স্টেশনের সামনে এসে একে একে বাস বাস দাড়িয়ে যায়। আমরাও উঠে পড়ি অন্যান্য দের সাথে। বাসে আমার পাশাপাশি বসা ৩৫ বছরের ছেলে টার শাশুড়ী ভারত যাচ্ছে। পুরুষ মানুষ সাথে না থাকায় আমাকে বেশ অনুরোধ করতে থাকে। ভাই। আমার শাশুড়ী কে একটু দেখবেন। আশা দিলাম সমস্যা নেই। বাস ছুটে চলছে গন্তব্যের দিকে। বেশ পথ আটত্রিশ কিলোমিটার সম্ভবত। মানে এক ঘন্টার পথ। যেতে যেতে ছেলেটি দৃষ্টি আকর্ষণ করা কিছু জায়গা চিনাতে থাকে আমাকে। যাইহোক প্রথম দিকে একজন গাইড পেলাম। যা কিছু দেখছি সব কিছু নতুন। তবে যত কাছে যাচ্ছি বর্ডার পার হওয়ার কথা ভেবে কিছুটা কল্পনা ভীতি কাজ করতে থাকে মনের ভিতর। তার আগেই গুগল ঘেটে এই বর্ডার নিয়ে যা জানলাম তা হলো।

বেনাপোল (বাংলা: বেনাপোল) বাংলাদেশের যশোর জেলার শার্শা উপজেলার একটি জনপদ। ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস স্টেশনটি সীমান্তের ওপারে অবস্থিত এবং 1971 সাল থেকে (কিছু সূত্র বলছে 1947), অনেক লোক বেনাপোল কাস্টমস/ল্যান্ড পোর্ট স্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত করেছে। 1965 সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় (এই সময়ে, আধুনিক বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল, যা পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত)। 1990-এর দশকে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড ধরে বেনাপোলের নগরায়ন শুরু হয়। 1971 সালের এপ্রিল মাসে, সেক্টর 8 এর অপারেশনাল এলাকা কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর এবং পটুয়াখালী জেলা নিয়ে গঠিত। মে মাসের শেষের দিকে সেক্টরটি পুনর্গঠন করা হয় এবং কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং ফরিদপুর জেলার উত্তরাংশ জেলা নিয়ে গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে বেনাপোল ৮ নম্বর সেক্টরের সদর দপ্তর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম স্থলবন্দর রয়েছে।

সামনে একটা চেকপোস্ট এ বাস থেমে যায় আমাদের। সীমান্ত রক্ষীরা বাসের মধ্যে থাকা কিছু ব্যাগ চেকা আপ করে তারপর এগিয়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন। তারপর খুব অল্প সময়েই আমরা হাজির হলাম একদম দু দেশের সীমানা দাগের কাছে। ক্ষুধার্ত সবাই। একটা হোটেলে ভাত সব্জি আর ডিম ভাজি দিয়ে খেয়ে শান্ত হলাম। আমাদের দেখা মাত্র চারদিক থেকে মৌমাছির মতো ছুটে আসে। ভাই টাকা ভাংগাবেন? ভালো রেট দেব। ওপারে তেমন ভালো রেট পাবেন না ইত্যাদি ইত্যাদি। এই যন্ত্রণা যে এখানে কত হয় তা আগে থেকে শুনেছি কিন্তু এবার তার মুখোমুখি হলাম। বন্দর পাশ কেটে নিয়ে দ্রুত কাউকে পাত্তা না দিয়ে ঢুকে পড়ি ইমিগ্রেশন অফিসের ভিতর। কত জায়গায় যে ব্যাগ আর শরীর স্ক্যান করে তা আর গুনে রাখিনি। এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টার চলছে।বেশ ঝামেলা পোহাতে হলো আমাদের। এমনটা সবার জন্য অবশ্য। আধুনিক এই যুগে ও এই সিস্টেমের উন্নয়ন না হওয়ায় অবাকই হয়েছি। এখন প্রায় সকাল ৯.০০ বাজে। তবে নিয়মের পরীক্ষা এই প্রথম বলে খানিকটা ঘাবড়ে যেতে হবে সবাইকে। এভাবে প্রায় ঘন্টা খানেক কেটে গেল তারপর পাশ। মানে এবার বাংলাদেশের মাটি ছেড়ে ভারতের মাটিতে পা রাখলাম। ভীষণ একটা অনুভূতি। স্বপ্নের মতো। বিশাল লম্বা লাইন। কিন্তু তাই বলে এত কেচো গতি! লাইন এগিয়ে যাওয়ার গতি দেখে আর দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে এক বার তো মনেই হলো তাহলে কি এসে ভুল করলাম? প্রায় তিন ঘন্টা পার হলাম ৫০ ফুট। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আলাপ চারিতা জমিয়ে ফেললাম দুজনের সাথে। একজন গুজরাটি আরেক জন অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের। এরা বাংলাদেশের মেট্রোরেল এর কাজ করে। ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছে। বাংলা বলতে পারেনা, হিন্দি ও খুব ভালো জানেনা তা কথায় বুঝতে পারি। কিন্তু ইংরেজিতে দারুণ। তাই ইংরেজি আর মাঝে মাঝে হিন্দিতে অনেক কথা হলো তাদের সাথে। বর্ডার ফর্ম টা তাদের আমি পুরন করে দিলাম। সাথে আরো কয়েক জন ও হাত বাড়িয়ে দিলে কাউকে নিরাশ করিনি।


১.০০ টা বেজে গেছে। যাইহোক অনেক্ষন পর বসার সুন্দর একটা জায়গা পেয়ে গেলাম তবুও তা বুদ্ধির জোরে। দিলীপ কাকা আমার পরের সারীতে। আরও কয়েকটি সিল আর আংগুলের স্ক্যান করে এবং সর্বশেষ ব্যাগ স্ক্যান আর পকেটে কত টাকা নিয়ে যাচ্ছি একজন বয়সী গার্ড জিজ্ঞেস করে আমাকে। আরও বল্লো এরপর এলে যেন টাকা গুলো কি যেন করে নিয়ে আসি। আমি না বুজে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। যাইহোক এই যাত্রায় তো পার হচ্ছি। এবার দম ফেললাম। আর কোন ফর্মালিটি নেই। মানে আমি এবার ভারতের মাটিতে স্বাধীন। প্রায় সাত ঘন্টায় ১৫০ মিটার জায়গা পাড়ি দেওয়ার এই অনন্য রেকর্ড যে অর্জন করলাম এটাও কম নয়। ভ্রমণে যাহাই হোক। সব কিছু অভিজ্ঞতা, সব কিছু নতুন অর্জন।

ভারতের মাটিতে পা দিয়ে মুহুর্তের ভিতর ভুলে গেলাম পিছনের ব্যথা গুলো। বুক ভরে নিশ্বাস নিলাম। প্রিয় তিলোত্তমা তোমার শহরে আমি এসেছি।





(চলবে)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy