Latifur Rahman

Classics

4.2  

Latifur Rahman

Classics

মিলার চিঠি (প্রেমের চিঠি)

মিলার চিঠি (প্রেমের চিঠি)

3 mins
334



মিলার চিঠি


২০০০ সালের মধ্যবর্তী সময়। মেসের জীবন। অনেকটা বেচে থাকার জন্য থাকা, বেচে থাকতে খাওয়া। প্রতিদিন দুপুরের খাবারের পরে ঘুম বলা যায় তবে শুয়ে থাকা বলে। তবে সেদিন ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার রুমমেট কবির ভাই। বছর কয়েক আগে মারা গেছে তেত্রিশ বছর বয়সে। তিনি মারা যাওয়ার একবছর পর জানতে পেরেছি। অসম্ভব ভাল মানুষ ছিলেন। সবসময়ই বই পড়তেন, নো আড্ডা, নো ঘোরাঘুরি। সিগারেট কোম্পানি তার কাছ থেকে একটা টাকাও কামাই করতে পারেনি।

আমার নাম ধরে তিনি জোরে জোরে ডাকতে থাকে।

কি হল?

তোমার চিঠি এসেছে।

চিঠি! আমার!

এটা অকল্প-নার মতো। চিঠি দিবে কে? 

মেয়ে মানুষ দিয়েছে।

বলেন কি ভাই।

কবির ভাইয়ের সেই উচ্ছ্বাস আগে কখনো দেখিনি। তিনি কাউকে ভালবাসে এমন কথা কখনো শুনিনি। জানিনা কেন এত উথলা হয়েছিল।

খাম ছিঁড়ব?

আর বাধা দেইনি।

কখনো কখনো মানুষকে বাধা দিতে নেই।

চিঠির প্রেরক মেয়েটার নাম মিলি (ছদ্দনাম)।

জীবনের প্রথম চিঠি। অনুভূতির অন্ত নেই। যেন সপ্নের মত। পনের দিন আগে পোস্ট করেছি, তার উত্তর আসবে এটা কল্পনায় ছিল না। জীবনের প্রথম চিঠি। এটার অনুভূতি কলমে প্রকাশ করার মত নয়।

যাইহোক পনের দিন আগে একটা পত্রিকায় মিলি ক লাইনের কবিতা ছাপে। কবিতার নিচে তার নাম আর ঠিকানা ছিল। তারপর অদ্ভুত একটা চিন্তা মাথায় আসে।

একটা চিঠি লিখলাম। জীবনে প্রথম চিঠি দিলাম। খুব প্রশংসায় ভাসিয়েছি তাকে। যতটা তার প্রাপ্য ছিল না।আজ তার উত্তর পেলাম। মেসের সবাই মিলে পড়েছি।অনেকবার। দশ বার লাইনের চিঠি। আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সল্প কথায় অল্প ভাবে।

এভাবেই শুরু। এখন সে আমাকে নিয়মিত চিঠি দেয়। আমি তার জবাব দেই চিঠিতে।

গতকাল একটা চিঠি পেয়েছি ।

আজ

আবার বসি তার চিঠির প্রতিউত্তর দিতে।





অদৃশ্য মিলি,

               চিঠি টা তোমার হাতে এখন, কিন্তু ততদিনে পনের টা দিন পেরিয়ে গেছে। আমার অপেক্ষার, বেদনার কথা ভেবে দেখেছ কখনো? আমার অপেক্ষা কি তাতেই শেষ বল? এরপর যদি আমাকে কিছু লেখ, আরও পনের টা দিন কিন্তু আমাকে অপেক্ষায় থাকতে হবে। কি অদ্ভুত অপেক্ষা দেখ।

তুমি কি ভেবেছ কখনো, এই অপেক্ষা আমাদের কতটা নিকটবর্তী করেছে? পথের দূরত্ব টা কি আমাদের মনের দুরবর্তী করতে পেরেছে কখনো?

এই যে, আমরা কেউ কাউকে চক্ষে দেখিনি আজও। তুমি জানিনা সুন্দর কিনা, কিনবা অসুন্দর। প্রতিদিন কল্পনায় রং তুলির আঁচড়ে তোমাকে আমার মনের মতো করে আকিঁ। তোমাকে দেখার প্রতিক্ষা, যেন তোমাকে সুন্দর করে তুলেছে।

কল্পনায় মিলি অস্মভব সুন্দর। প্রতিদিন তোমাকে কল্পনায় সাজিয়ে তুলি আলতায়,ফুটফুটে তোমার পা দুটিতে পায়েল জোড়া মানিয়েছে বেশ। বাতাসে ঘনকালো ☁ মেঘের মত চুলগুলো যখন বাতাসে উড়ে তখন কি যে এক ঘ্রাণ ভেসে বেড়ায় বাতাসে সেটা আমাকে বিমোহিত করে দেয়। কালো ছোট্ট টিপ পরে আয়নায় দাঁড়িয়েছ কখনো? আজ রাতে দেখে নিও।

আমি মিথ্যা বলছিনা মিলা। তোমার সব কথা গুলি আমি অবলীলায় সত্যি বলে মেনে নিয়েছি। আমি জানি তুমি অসত্য বলনা আমায় কখনো। আর অসত্য বলেই বা কি লাভ বল? অসত্য বলে নিজেকে নিজের সাথে প্রবঞ্চনা করা ছাড়া আর কি লাভ হবে বল? আমাদের এই সম্পর্ক টা ত একটা সময়ে ফিকে হয়ে যাবে, তুমি আমি যতই চাই না কেন। এটাই নিয়ম। চিরন্তন নিয়ম। যতটা পারি শুধু সময় টা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

সম্পর্ক টা বুজি এমনই গড়িয়ে গেছে। যাচ্ছে।

কিন্তু রক্তমাংসের মিলি যদি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, সেটা নিশ্চয়ই অদৃশ্য মিলির চেয়ে আমার মন ছুতে পারবেনা। প্রতিনিয়ত যে তুমি আমার কল্পনার সব জায়গাটুকু দখল করে রেখেছ, এটা কল্পনা করে কি পুলকিত হও-না?। তোমার নাক, চোখ, চুল আমার কল্পনায়, আমার অন্ত চোখে আকি।

আমরা বুজি এভাবেই বেশ আছি মিলি। অদৃশ্য মিলি দৃশ্যমান হলে হয়তো তোমার উপরে অবিচার করে ফেলব। মনের অনুভবের চেয়ে খু দিয়ে খু-দিয়ে শরীরটা মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে। নাক বোচা, কাল, বেটে, কপোলের তিল টা আর একটু নিচে হলে ভাল হত। কত ব্যবচ্ছেদ চলবে তোমার উপর তুমি কল্পনাই করতে পারবে না।

এখন যে তুমি আমার মনটা দখলে নিয়েছ, কই তার সীমানা নিয়ে ত আমাদের বিরোধ হয়না কখনো। তুমি এ-প্রান্ত, ওপ্রান্তে মুক্ত বিহঙ্গের মত ঘুরে বেড়াও। কই আমার মনের পাহারাদার ত পথ আগলে দাঁড়ায়নি কখনো।

অদৃশ্য, অদেখা মানুষকে মনের ভিতরে স্থান দেয়ার ক্ষমতা ক'জনের আছে বল? সেই ক্ষমতা তোমার আছে আমার আছে। এভাবেই চলতে থাকুক তোমার আর আমার পথচলা।

 ভালো থেক অবিরাম

                         প্রিয় মিলা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics