Latifur Rahman

Drama Romance Tragedy

4.0  

Latifur Rahman

Drama Romance Tragedy

এভাবেই বেশ আছি অরুণ।

এভাবেই বেশ আছি অরুণ।

6 mins
219



এভাবেই বেশ আছি অরুণ


মিথিলা না কেঁদে কি আর করবে?

৷ ৷৷৷৷৷৷৷৷৷।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।প্রিয় জিনিস হারিয়ে কে কাঁদে না?

কত কষ্ট করে সে মোবাইলটা কিনেছে, এইতো প্রায় তিন মাস আগে। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একটা মোবাইল মানে যেন স্বর্গ কেনা। এখনো যেন নতুনের মত যক-যকে, চকচকে। খুব আদরের সন্তান এর মত। সবসময়ই আগলে রাখে।হাতের নাগালের বাহিরে কখনো রাখেনি।

ছোট্ট লোক কত জনেই ত বলে। তাতে কি?

অরুন কে সে এভাবেই আগলে রেখেছিল। মোবাইলটা ব্যাগে নয়তো হাতে থাকে কিন্তু অরুণ কে রেখেছিল মনের কোঠরে।

হাতের জিনিস হারিয়ে যায়, ব্যাগের জিনিস ও হারিয়ে যেতে পারে কিন্তু মনের ভিতরের জিনিস ও হারিয়ে যেতে পারে এটা মিথিলা সবে জানতে পারলো। আসলেই পৃথিবীর যেন একটা সময়ে সবকিছু হারিয়ে যায়।

এর আগে কখনো বই মেলায় যায়নি মিথিলা। বান্ধবীর জিদে প্রথম পা রাখল সেখানে। ভীষণ ভীড়। ভীড় মাড়িয়ে এগুতে এগুতে স্বপ্ন প্রকাশনীর স্টলে গিয়ে বই গুলো উল্টাতে উল্টাতে চেখে দেখে। সেখানে অরুণ ও একজন বইমেলায় বেড়াতে আসা মানুষ। মিথিলার হাত গলে একটা বই সোজা পড়ে যায় অরুনের পায়ের উপর।

উফ দুঃখিত।

না না না ঠিক আছে। অরুণ বলে। বই টা তুলে দেয় অরুনের হাতে।

যাইহোক পরিচয় টা এখানেই।

অরুণ কে প্রথম ভাল-লেগে যায় বই মেলায়। এরপর কিছুদিন পর অরুনের সাথে মিথিলার দেখা হয় ট্রেনে।

আরে আপনি, কই যাচ্ছেন? 

বোনের ননদের বাড়ি। মিথিলা বলে।

আমি ও সেদিকেই যাব।

আচ্ছা বসুন। মিথিলার পাশের সিটে বসে পড়ে অরুন। আজ পরিচয় পর্ব সেরে নেয় দুজন। প্রায় দুই ঘন্টার পথ। মিথিলা পেটের ভিতর কথা জমিয়ে রাখতে পারে না। অনেক কথা হয় দুজনের। মিথিলা অরুনের সেল ফোনের নাম্বার চেয়ে নেয়। নাম্বার দেয়া নেয়া হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এখন স্টেশনে নামার পালা। দুজনেই নেমে পড়ে।

টেক্সি, যাবে? 

জি ম্যাডাম। বসুন। মিথিলা বসে পড়ে। অবশ্যই আমাদের দেখা হবে আবারও। একটা শুকনো হাসি দেয় মিথিলা।

অরুণ শুধু মাথা নেড়ে বলে হা। দেখা হবে। মিথিলা হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়। অরুণ উত্তর দিকের প্লাটফর্ম ধরে হাটতে শুরু করে।

তারপর প্রতিনিয়ত একটুও একটুও করে ভালবাসতে শুরু করে। এখন রোজ রোজ সবসময় ফোনে কথা হয় দুজনের।

এরপর একদিন দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ে মিথিলা।

খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমাকে। মিথিলা বলে।

আমার ও তাই। ফোন কোম্পানি গুলো কি ফোনে ছবি দেওয়ার সিস্টেম চালু করতে পারে না। মিথুন বলে।

তা হয়তো হবে। তখন আর তোমার আমার দরকার থাকবে না।

হো হো করে হাসতে থাকে মিথুন। তা মিথ্যা বলনি। ভবিষ্যতে হয়তো অনেক কিছু হবে। তুমি আর আমি সেই সাক্ষী নাও হতে পারি। আচ্ছা কবে দেখা করা যায় বলত।

কবে মানে? অপেক্ষা কর আমি আসছি। মিথিলার কথা শুনে অবাক হয়ে যায় অরুণ।

এক ঘন্টার পথ। যেন বাতাসের সাথে উড়ে আসে মিথিলা।

খুব হাপাতে থাকে।

আচ্ছা বসো।

বাড়িতে কেউ নেই? 

না। একটা বিয়ের বাড়িতে গেছে আমার দুরের আত্মীয়।

হুম।

কি দেখছ?

তোমাকে। মিথিলা বলে।

এভাবে গো গ্রাসে কেউ দেখে?

অরুণ। খুব ভালবেসে ফেলেছি তোমাকে।

মেয়েরা প্রেম নিবেদন করে! অরুন অবাক হয়ে যায়।

একেবারে কখনো শুনেনি অরুণ। আজ সে নিলর্জ্জ মিথিলার মুখোমুখি। হো হো করে অরুণ হাসে।

হাসছ যে?

মেয়েরা যে ভালবাসতে শিখছে এর ত বড় প্রমাণ তুমি।

ইস মেয়েরা যদি এভাবে তাদের পছন্দের কথা, ভালবাসার কথা এভাবে হড়হড়ে বলতে পারতো, ছেলেদের খুব কষ্ট কমে যেতো।

ভালবাসার অপরাধ ছেলেরা করে, মেয়েদের অপরাধ হয়না। আইনে ও তাই বলে। পরের স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করলে ছেলেদের পাঁচ বছরের জেল হয়। কিন্তু নারীর কোন অপরাধ হয়না। কি অদ্ভুত নিয়ম বলত?

অরুণ আর মিথিলার শুরু টা এভাবেই। চলতে চলতে পাঁচ বছর হল।

প্রেমটা বুজি একটা সময়ে খুব পরিনত হয়ে যায়। অনুভূতির প্রকাশ টা আর আগের মতো থাকে না। এখন আর দুজন দেখা করার তত তাগিদ বোধ করেনা। সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়না তবে টিকে থাকে যেভাবেই হোক।

বাড়িতে অরুনের কেউ রাজি নয়। ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলে সে। আধুনিক কালে অনেকেই খুব একটা জাত বর্ণ নিয়ে বাচ গোছ করে না। কিন্তু অরুনের বাবা এলাকার সবচেয়ে নামি দামি উচ্চ বর্ণ পরিবারের লোক। উচ্চবর্ণের মানুষ নিচু কায়স্থ পরিবারের নিচু বর্ণের মেয়ে মিথিলার সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করে কিভাবে?

অরুণের পরিবারের সাফ কথা কোন নীচু পরিবারের মেয়ে কে বিয়ে করার জন্য চিন্তা মাথায় না রাখে।

পরিবারের একমাত্র ছেলে অরুণ। পরিবারের উপর তার দায়িত্ব অনেক বেশি। মা অসুস্থ অনেকদিন ধরে। মিথিলা কে ঘরে নিয়ে আসলে একটা নতুন অশান্তি যে আরম্ভ হবে সেটা নিশ্চিত।    

বাবা অনেক রাগী মানুষ। অরুণ চায় না তার কারণে তার বাবা সমাজে ছোট হয়ে যাক।

মিথিলা আর অরুণ এখন একান্ত হলেই এসব নিয়েই আলোচনা করে। কল্পনার রাজ্য জয় করে তারা এখন বাস্তবতা নিয়ে ভাবছে বেশি। ইদানিং খুব কম দেখা হয় দুজনের। বিয়ে নিয়ে দুজনেই খুব ভাবনায়।

প্রেমের পরিনতি বিয়ে হতে হবে এটা নারীপুরুষ নির্বিশেষে স্বপ্ন দেখতে থাকে। বিচ্ছেদ কে পরিনতি ভেবে প্রেমের প্রস্তাব দিলে তার কপালে আর প্রেমিক প্রেমিকা জুটবে না।

বিচ্ছেদের ফলে মানুষ পরিনত হয়। বিচ্ছেদ না হলে মানুষ প্রেমের পরিক্ষা দিবে কিভাবে? বিয়ে হলে গেলে সংসার হয়,ছেলেপুলে হয় কিন্ত প্রেম আর থাকেনা যতটা না বিচ্ছেদের ফলে হয়।

অরুণ জানে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মিথিলা ও জানে অরুণ তার পরিবারের বাহিরে কিছু করতে পারবেনা। পরিবারের প্রতি অরুনের দায়িত্ব বোধ থাকা উচিত। এটা ত মিথিলা অরুণ কে শিখিয়েছে।

রবিবার। আর অরুনের অফিস নেই। মিথিলা ফোন করে হাওড়া ব্রিজ এর উপরে আসতে বলে অরুন কে।

দুজন খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে। মেরুন রঙের শাড়ির সাথে কপালে একটা ছোট্ট টিপ। শাড়িতে মিথিলা অনেক সুন্দর। এটা শুধু অরুণ বলবে কেন। এলাকায় সবাই ত তাই বলে।

কি ব্যাপার জরুরি যে আসতে বললে?

যখন ডেকেছি, তখন ত নিশ্চয়ই বলবো মিথিলা বলে। 

ব্রিজের নিচে জলের দিকে তাকিয়ে দেখ, প্রতিনিয়ত কিছুক্ষণ পরপরই একটা করে ঢেউ উঠছে আর জলে মিশে যাচ্ছে। সেই জল আবার চলছে সামনে। আবার সেই জল নতুন ঢেউ হয়ে উঠে সামনে কোথাও। তার কি সাধ্য আছে বল পিছনে গিয়ে একই বিন্দুতে গিয়ে আবার নতুন ঢেউ তুলবার?

পারবে না।

যেখানে যে জল, যে ঢেউ একবার উঠে অনন্তকাল সেই ঘটনা আর দ্বিতীয়বার কখনো ঘটবে না। ধর বছর তিনেক আগে তখন যে অবস্থায়, যে বয়সে কাশীতে গিয়েছিলাম, যে ঘাসের উপর বসে পড়ে নদীতে জোয়ার দেখেছিলাম, আমরা শত বছরের চেষ্টা করলে ও কি আর সেইভাবে মিলিত হতে পারবো?

না।

আমাদের জীবনে যা এখনই ঘটে গেল, তা আর কখনো ঘটবে না। এটাই নিয়ম। জগতের সবচেয়ে সত্য ঘটনা।

সেই কারণে আমি আর আফসোস করিনা, অভিযোগ করিনা।

ভালবাসার প্রয়োজন একটা সময়ে খুব তাড়িত করেছিল আমাকে।

সেটা আমি পেয়েছি, পাচ্ছি। আমি চাই না ভালবাসার ছেদ ঘটুক। আমি প্রতিনিয়ত সেটা অনুভব করতে চাই।

পুরুষদের দায়িত্বশীল হতে হয়,। তার দায়িত্বের ক্ষেত্রটা নারীর চেয়ে ব্যাপক। আমি সবকিছু শুনেছি। প্রেমটা দুজনের বিষয়। কিন্তু পরিবার, সমাজ? এখানে সকলের অংশী থাকে। একটা পরিবারের ঐতিহ্য বেচে থাকে যুগের পর যুগ।

কিন্তু প্রেম কতদিন বেচে থাকে বল?প্রেমের পরিনতি যখন বিয়েতে গড়ায়, তখন কি সব স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে না? একে অপরকে হত্যা পর্যন্ত করতে দ্বিধা করছে না।

আমি স্পষ্ট করে দিতে পারি অরুণ তোমাকে বিয়ে করে যতটা না ভালবাসতে পারব তার চেয়ে বরঞ্চ তোমাকে না পেয়েই বেশী ভালবাসা যাবে।

কি বলছ তুমি মিথিলা?

অবাক হচ্ছ তাইত অরুণ?

ইতিহাস কিন্তু বলে অন্য কথা।

সাহিত্যে যত প্রেম উপাখ্যান রচিত হয়েছে তার সবই ছিল একে অপরকে না পাওয়ার ইতিহাস।

রাধা কি কৃষ্ণ কৃষ্ণের বউ ছিল? কজন হিন্দু কৃষ্ণের বউয়ের নাম জানে বল। রুক-মনি ঘরনি হওয়া ছাড়া আর কি ছিল বল?

আবারও লিখতে ধরেছ? অরুণ বলে।

কি আর করবো বল? লেখা আমাকে বাঁচতে শেখায়। আমার একাকিত্বের সঙ্গী।

আমার এই মোবাইলটা দেখছ। এটা আমার কাছে অন্যরকম কিছু। এর প্রতিটি বাটনে আমার রয়েছে মমতার ছোঁয়া।

এই যে তোমাকে নিয়ে লিখি, তোমাকে নিয়ে লিখতে আমার খুব ভাল লাগে। তুমি আমার ঘরের লোক হলে কিন্তু একদম লিখতে পারতাম না, রোজ রোজ ঝগড়া, বাচ্ছা কাচ্ছা । ধুর আমার ভাল লাগে না। এভাবেই চলছে বেশ।

এভাবেই থাকবে?

মন্দ নেই ত। তুমি আমার লেখার রসদ এর মতো। রসদ শেষ করার দুঃসাহস আমার নেই।

তুমি আমার কল্পনায় বেঁচে আছ অবিরাম।

হাওড়া ব্রিজ এর প্রান্তে এসে থামে দুজন। অরুণ তার গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। মিথিলা হাত চেপে ধরে জোরে। এরপর ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে যায়।

দশ বছরের আগের সে ঘটনায় অনেক কিছুই বদলে গেছে। অরুণ সন্তান সংসার ব্যবসায় মহা ব্যস্ত মানুষ এখন। মিথিলা কোলকাতার নামকরা লেখিকার তালিকায়। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama