STORYMIRROR

Latifur Rahman

Inspirational Others

3  

Latifur Rahman

Inspirational Others

জুলাই বিপ্লবের স্বর্ণ দিনের স্মৃতি ২০২৪

জুলাই বিপ্লবের স্বর্ণ দিনের স্মৃতি ২০২৪

10 mins
12

জুলাই বিপ্লবের স্বর্ণ দিনের স্মৃতি ২০২৪


জুলাই বিপ্লবের স্বর্ণ দিনের স্মৃতি ২০২৪.

রাজনৈতিক বিশ্লেষক দের আগাম কিছু রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বার্তা দিতে না পারলে নাকি পাঠকের মনে দাগ কাটে না। এটা অসত্য নয়। আপনি কতটা কাছাকাছি রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বার্তা দিতে পারলেন সেটাই আপনার গ্রহণ যোগ্যতার পরিমাপক হিসাবে দেখা হবে।  জুলাই বিপ্লবের কালে সেই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকে সারা দেশের মানুষ। আমি সুবিধাবাদীদের কথা বলছিনা, জুলাই বিপ্লবের জয়ী দলের সঙ্গে তারা থাকবেন এটা পুর্ব পরিকল্পনামতো ছিলো এবং ভবিষ্যতে ও তাই থাকবে। এই সুবিধাবাদী মানুষ গুলো সবসময়ই সামনের চেয়ার গুলো দখল করবে সেটাও বাস্তব।  রাজনৈতিক দলের দলকানা কর্মী হয়ে না থেকে রাজনৈতিক দলের বিশ্লেষণের কাজ টা আমার অনেক পছন্দের,  এটা বলা যায় পুরনো পছন্দ যা দীর্ঘ সময় ধরে চলছে।  পত্রিকার পাতায় চোখ বুলানোর অভ্যাস টা কখনো ছাড়তে পারিনি। জুলাই বিপ্লবের ঠিক প্রথম দিক চলছে।  একটা অস্থিরতা মনস্তাপ এর ভিতর দিয়ে যেন আমি ও যাচ্ছি। দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ হয়ে থাকা আমাদের গ্রামের ক্লাব টা পুনরায় চালু করার জন্য মিটিং চলছে। আমি ক্লাবের অন্যতম সদস্য এবং সম্ভবত আওয়ামী সরকারের বিপরীত মুখী নক্ষত্রের মানুষ।  আলোচনা তখন শেষ পর্যায়ে। প্রস্তাব এলো ক্লাবের অফিসে হাছিনা ও শেখ মুজিবের ছবি ঝুলিয়ে দিতে হবে।  যদি ও অতীতে এভাবে কারো ছবি ঝুলানো হয়নি। কিন্তু সারাদেশে যে মুজিববাদের চর্চা বইছে তাতে আওয়ামী লীগের বাতাস আমাদের ক্লাবের অফিসে না প্রবেশ করিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মাথা হেট হয়ে যায়।  এই বিষয় টা আমার জন্য হজম করা সহজ ছিলো না তখন। কিন্তু একা যুদ্ধ করা সহজ ছিলো না কিন্তু মস্তিষ্ক দিয়ে যুদ্ধ করাই উত্তম পন্থা হবে তাই সিদ্ধান্ত নিলাম।  আমি প্রস্তাব দিলাম নতুন কমিটি গঠন করা হলে ছবি গুলো ঝুলে দেওয়া সহ অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হবে। এবং পরবর্তী মিটিং এর তারিখ  খানিকটা পিছিয়ে দিতে বললাম। সেটাও ছিলো একটা কৌশল মাত্র।  এই কালক্ষেপণ ছাড়া আমার পক্ষে আর কিছু করার সুযোগ ছিলো না।  আন্দোলন তখন তুঙ্গে।  আমি এক আওয়ামী লীগের নেতাকে বল্লাম। আপাতত ছবি গুলো ঝুলে দেওয়ার চিন্তা টা স্থগিত করতে হবে।  কেন জানি খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে যাচ্ছি। আন্দোলনের গতি প্রকৃতি আমার কাছে অন্য রকম মনে হচ্ছে। ধরেই নিলাম হাছিনাকে এবার চলে যেতে হবে।  ভয় দেখাচ্ছিলাম বা বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম কেন এই গন অভ্যুত্থান বিফল হবে না। 

  এরপর আরও দুদিন পেরিয়ে যায়। আমার চোখ তখন জুলাই বিপ্লবের দিকে। পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে। কেন জানি আত্মবিশ্বাসী হয়ে যাচ্ছি, এই আন্দোলন কখনো নিস্ফল হতে পারে না। আমাদের ক্লাবের আওয়ামী লীগের লোকজনরা ও দেখলাম ভীতু গলায় এখন কথা বলে।  একজন আমাকে জিজ্ঞেস করে, ছবি টাংগানোর কি করলাম। বললাম, হয়তো আর দরকার হবে না।
তাহলে কি সরকারের পতন হবে?

হ্যাঁ। কোন ভাবেই আর সরকারের টিকে থাকার সম্ভাবনা নেই।
এই কথা শুনে তিনি আরো যেন মুষড়ে পড়েছিল। তারপর আর কখনো ছবি টাংগানোর কথা আমাকে বলেনি।
আন্দোলন তখন জেলা শহর গুলোতে মাত্র শুরু হয়েছে।  অফিস আদালত ঠিক ভাবে চলছে না। সবখানেই তখন আন্দোলনের দামামা। ১৬ জুলাই সকাল থেকে রংপুর শহরের প্রায় সব স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা রাস্তায় বের হয়ে আসে। সকাল ১১ টার দিকে কাচারি বাজার এলাকায় দলে দলে জেলা স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা জড়ো হতে শুরু করে। সাধারণ মানুষের মতো আমার ও ভিতর একটা উদ্দিপন জেগে উঠে। আর থাকতে না পেরে এগিয়ে গেলাম জেলা স্কুলের সামনে। তখন ক্ষুধার্ত কিন্তু অগ্নীমুর্তি ছাত্রদের চোখে মুখে যেন দেশ জয়ের আনন্দ। কয়েক জন অভিভাবক কে দেখলাম, তাদের ছেলেদের সাহস যোগাতে। এই দৃশ্য বিরল। বাবা তোমরা ভয় পেয় না, পুলিশ তোমাদের আক্রমণ করলে আমরাও তোমাদের সাথে রাস্তায় বের হয়ে যাব। এই সাহস দেখালে দুনিয়ার কোন সন্তানকে আর আটকে রাখা যায় না। পথিমধ্যে একজন পুলিশের সাথে দেখা হলো। আমাকে বল্লো ভাই, কি এক পরিস্থিতিতে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। আমার ছেলে ও গিয়ে দেখুন জেলা স্কুলের সামনে মিছিল করছে। কথা মিথ্যা নয়। এসব ঘটনা সব সময় ঘটার নয়। এই ঘটনা দেখার সৌভাগ্য খুব কম জনের হয়। সেখানে আমিও সাহস দিচ্ছিলাম বাচ্ছাদের। রোদে গরমে পিচ ঢালা রাস্তায় বসে এই শিশুদের আন্দোলন ব্যর্থ হলে কোন জাতীর মুক্তি নেই। তারপর দুপুরের পর ঘটে গেল ইতিহাসের সেই নারকীয় ঘটনা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ কে পুলিশ গুলি করে হত্যা করলো। প্রথম শহীদের রক্তে রঞ্জিত হলো বাংলাদেশ।  মুহুর্তের মধ্যে সারা শহরে নেমে এলো প্রতিবাদের আগুন। অফিস আদালত, দোকান পাট বন্ধ হয়ে গেল। আর সেই হত্যাকাণ্ডের তীব্রতা ছড়িয়ে গেল বাংলাদেশের উপর দিয়ে।  মুলত আবু সাঈদ এর আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে বিস্ফোরণের বারুদ জ্বলে ওঠে তা আর আওয়ামী লীগের পতন ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

১৭ জুলাই ইউজিসি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয় এবং নিরাপত্তার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলা হয়। এদিন গ্রামীণফোন কোম্পানিসহ সকল মোবাইল কোম্পানীকে সরকার সকল ধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।
সকাল ১০টায় শনির আখড়ার দনিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ যাত্রাবাড়ীর স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুর ১২টার দিকে সিন্ডিকেটের বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের বিকেল ৪টার মধ্যে হল ছাড়ার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান। সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশাসনিক ভবনে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন শিক্ষার্থীরা। ভবনের উভয় ফটকে তালা ঝুলিয়ে উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁরা। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ সদস্যরা কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়েন।

আন্দোলনকারীরা ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি ঘোষণা করেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আরেক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ১৭ জুলাই রাতে আন্দোলনকারীরা ১৮ জুলাইয়ের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচির ঘোষণা করে।

১৯ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রোধ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ঢাকার সাথে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৮ জুলাইয়ের ধারাবাহিকতায় ১৯ জুলাইতেও সারাদেশে সকল ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়। এইদিনেও সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অবরোধ চলে। বেলা পৌনে ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানা ঘেরাও করলে থানার ভেতর থেকে পুলিশ সদস্যরা ছররা গুলি ছুঁড়েন, এতে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।  ঢাকার উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা পল্টনসহ কয়েকটি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সারাদিন দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মিরপুরে জুমার নামাজের পর বেলা তিনটার দিকে কাজীপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া এবং মিরপুর - ১০-এর বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় বেরিয়ে আসে। সাভারে বিকাল তিনটা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে হাজারো শিক্ষার্থী জড়ো হয়। বিকেল চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা ঢাকার রামপুরা থানা ঘেরাও করে।

বিকেল পাঁচটায় বিক্ষোভকারীরা মিরপুর ১৪ নম্বরে অবস্থিত বিআরটিএ ভবনে আগুন দেয়। নরসিংদীতে দুই হাজারের মতো উত্তেজিত জনতা নরসিংদী কারাগার ভাংচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ৩৩১ জন কয়েদী আত্মসমর্পণ করেন।  সারাদেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করে সরকার। মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে আটক করা হয়।  এছাড়া গণঅধিকার পরিষেদের সভাপতি নুরুল হক নুরকেও আটক করা হয়।  যেসময়ে নাহিদ ইসলামকে আটক করা তার কাছাকাছি সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন প্রতিনিধির সাথে সরকারের তিনজন প্রতিনিধির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় যেখানে তারা সরকারের কাছে 'আট দফা দাবি' জানান।বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্র অনুযায়ী ১৯ জুলাই শুক্রবার সারাদেশে কমপক্ষে ৫৬-৬৬ জনের মৃত্যু হয়।

সেতু ভবন ভাঙ্গচুর, রামপুরার বিটিভির ভবনে আগুন দেয়া ও বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন মামলায় পুলিশ বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নিপুণ রায় ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি পক্ষ ‘৯ দফা’ দাবি জানিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
২২ জুলাই পঞ্চম দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেট বিহীন ছিল ও তৃতীয় দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল। এক নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটি আরও একদিন (মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০২৪) বাড়ানো হয়।

২৮ জুলাই ভোরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নুসরাত ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়। বেলা ৩টা থেকে চালু করা হয় মোবাইল ইন্টারনেট। তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটকসহ বিভিন্ন সেবা বন্ধ রাখা হয়।

৩০ জুলাই সরকার ঘোষিত শোক দিবসকে প্রত্যাখ্যান করে শোকের কালো রং বাদ দিয়ে আন্দোলনকারী এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিবর্গ, সাধারণ নাগরিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশ এমনকি সাবেক সেনাপ্রধানও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাল প্রোফাইল ছবির মাধ্যমে কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে সমর্থন জানান।

১৮ জুলাই রংপুরে বিক্ষুব্ধ জনতা র‌্যাব, পুলিশ ও বিবিজি’র ৭টি গাড়ি আগুনে ভস্মীভূত করে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।
অগ্নিসংযোগ করা হয় মহাখালীতে অবস্থিত স্থাপনা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন
বনানীর সেতু ভবন ভাংচুর করা হয়।
উত্তরায় র‌্যাবের গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করা হয়েছে।
মিরপুর-১০ গোলচত্বরে ফুটওভার ব্রিজে আগুন দেওয়ায় বিকাল সাড়ে ৫টার পর মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

গোয়েন্দা শাখা, র‍্যাবসহ বাংলাদেশ পুলিশ বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে। ৩০ জুলাই পর্যন্ত সাড়ে ১০ হাজারের অধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। সরকার আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করবে না বললেও দেখা গেছে ঢাকায় গ্রেপ্তার ৮৭ শতাংশের রাজনৈতিক পরিচয় নেই এবং একই চিত্র দেশের সবখানেই। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে তাদের বাসার অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোলাগুলি ও ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে।

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ নজর রাখে রংপুরে। আবু সাঈদ কে হত্যা করলে ও উল্টো বি এন পি র স্থানীয় নেতাদের, ছাত্রদের নামে মামলা দেয়া হয়। এবং পরবর্তীতে থানায় আগুন, ভাংচুরসহ সহ পুলিশের সঙ্গে ছাত্র দের দফায় দফায় হামলা ও প্রতিরোধ কে কেন্দ্র করে বেশ কিছু মামলায় হাজার হাজার বি এন পি, জামায়াত, ছাত্রদের আসামী করে ধরপাকড়ের এক বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। বি এন পির ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা এডভোকেট বাবলু ভাই,  আইনজীবী ফোরামের সম্পাদক এডভোকেট শফি কামাল এর নামে মামলা ও  এডভোকেট সেলিম, কয়েক জন শিক্ষানবিশ আইনজীবী  কে মামলায় গ্রেফতার করা হয়। যার ফলে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে সারাদেশে এক দফা দাবির পক্ষে গনজোয়ার সৃষ্টি হয়।  বাড়িতে বাড়িতে পুলিশের তল্লাশি আর গনগ্রেফতারের মাত্রা চরম ভাবে বাড়তে থাকে। আইনজীবীদের নামে মামলা ও গ্রেফতার এর কারণে আমি নিজেও আতংকে থাকি। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহিত জড়িত কারণে আমি ও গ্রেফতার এর ভয়ে কয়েক দিন আত্মগোপনে থাকি। অন্তত ১০/১২ দিন বিভিন্ন বাড়িতে রাত্রি যাপন করেছি। মাঝে মাঝে ভয়ে ভয়ে অফিস করেছি।  দেশের এই বিভিষীকা মুহুর্তে দেশ নায়ক জনাব তারেক রহমান এর সাথে সারাদেশের আইনজীবী নেতাদের সাথে  ধাপে ধাপে গোপনে বেশ কয়েকটি জুম মিটিংয়ে আমি  অংশগ্রহণ করি। দলের অবস্থান, প্রস্তুতি, ও করনীয় নির্ধারনে নানা রকম আলোচনা করা হয়। যা ছিলো অত্যন্ত গোপনীয় ভাবে। আমি গ্রেফতার না হওয়ায় আইনজীবী ফোরামের শীর্ষ নেতাদের সাথে রংপুরের সার্বিক পরিস্থিতি, মামলার অবস্থা ও আমাদের করনীয় নির্ধারনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ চলতে থাকে। 
আগস্ট এর ৪ তারিখ।
সকাল আনুমানিক ১১ টার দিকে রংপুরে সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটে যায়। একের পর এক খবর আসতে থাকে মুখে মুখে। শহরের কেন্দ্রস্থল ও তার আশে পাশে বি এন পি অফিসের সামনে থেমে ওদিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা স্কুল থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত পুরো রাস্তা জুড়ে ছাত্র জনতার সাথে তুমুল মারামারির খবর খানিক পর পর আসছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কাজে ঠিকমতো মন দিতে পারছি না। তারপর ঠিক ১ টার পর সাহস করে প্রথম বারের মতো রাস্তায় নেমে পড়লাম। আমরা কয়েক জন আইনজীবী এড রায়হান, এড শাহীন, এড তারেক, এড মাইদুল সহ আরো জুনিয়র ১০ /১২ জন আইনজীবী। ঠিক সেদিন ও অনেক আইনজীবী যারা বর্তমানে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী বলে বড় বড় কথা বলে, যাদেরকে বিগত আওয়ামী লীগের আমলে লেজ গুটিয়ে নীরব থাকতে দেখেছি চিরকাল, যারা আওয়ামী লীগের ভয়ে গোপনে বি এন পি র প্রাথীকে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট দিতে সাহস করে নাই তারা ৪ আগস্টে ও রাস্তায় নামতে সাহস করে নাই। তারা অপেক্ষা করছিল সময়ের। তারা অপেক্ষা করছিল সুযোগের।  আমরা যখন ডিসি অফিসের সামনে হাজির হই দেখি লাঠি হাতে স্কুল কলেজের শত শত ছাত্র ছাত্রীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে আর মাত্র হাতে গোনা দু একটা পুলিশ এস পি অফিস আর ডিসি অফিসের গেটে পাহারা দিয়ে আছে। আইনজীবীদের রাস্তায় নামা দেখে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ছাত্র ছাত্রীরা মুহুর্তের মধ্যে আমাদের কে সামনে রেখে মিছিল শুরু করে দেয়। সে কি এক উন্মাদনা, কি এক সাহসীকতার সেই যাত্রা আর সেই যাত্রায় শরীক হওয়ার সার্থকতা বোধ করলাম। আমরা পকেট থেকে তাদের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে দিলাম।  আহা ইহা এক ভীষণ শান্তি।  আমরা মিছিল করতে করতে পাবলিক লাইব্রেরী সামনে হাজির হলাম।  সেখানে হাজার হাজার ছাত্র জনতার সমাবেশ।  আমরা একে একে কয়েক জন বক্তৃতা দিলাম। উজ্জীবিত করলাম।  ঠিক তার কয়েক দিন আগে ছাত্র নেতা নুর গ্রেফতার হয়েছিল। তিনি গ্রেফতার অবস্থায় বলেছিল, হাছিনার পতন ৯০ ভাগ হয়ে গেছে, আপনারা আর একটু ধাক্কা দেন তাহলে হাছিনা পড়ে যাবে। আমি ও তার সেই বক্তব্য কে পুনরাবৃত্তি করলাম জনতার সামনে। সে কি উচ্ছাস সেদিন। এই স্মৃতি কখনো ভুলে যাবার মতো নয়। সেদিনের এই সমাবেশে হাজির হওয়া আজকের বড় বড় নেতাদের সাধ্য ছিলো না। কারণ তারা সুবিধা বাদী। 
তারপর সন্ধ্যা হতে হতে লাশের সং্খ্যা বাড়তে থাকে। এক কাউন্সিলর কে হত্যা করে নাকি ঝুলিয়ে রেখেছে জনতা, আরো কয়েক জন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী কে ও হত্যা করা হয়েছে এসব গুঞ্জন আসতে থাকে। 
পরের দিন সেই কাংখিত ৫ আগস্ট।  রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর সারাক্ষণ নজর রাখতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া ভুলে যাচ্ছিলাম। ইন্টারনেট অফ। নিউজের সুত্র খুজতে গিয়ে কত মাধ্যমে চেষ্টা করছিলাম। বারবার ঢাকায় ফোন দিচ্ছিলাম। টিভিতে নজর রাখছিলাম। তারপর হাছিনার পতন ও পরবর্তী খবর সবাই জানেন। প্রথম দিকে একটা কথা দিয়ে শুরু করেছি। সেনাপ্রধান কেন জাতীর উদ্দেশ্য ভাষন দিতে দেরী করছে, মানুষের মনে এই নিয়ে নানা রকম আলোচনা চলছিল। আমি বললাম উনি এটা করবেনা বলেই দেরী করছে। এই ধারণার বিস্তৃত কারণ ছিলো আমার কাছে। যাইহোক তাই হয়েছিল।  ইউনুসের হাতে বাংলাদেশ। এই রক্তাক্ত দেশ মেরামতের কাজ এখন সবার হাতে। আবারও ফ্যাসিবাদের রক্তহিম করা ইতিহাসে পুনরাবৃত্তি জাতী দেখতে চায় না। এই গনতান্ত্রিক পথ কখনো সফল ছিলো না। বারবার হোচট খাচ্ছে। সুবিধা বাদীদের হাতে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ চলে গেলে দেশপ্রেমিক দল প্রেমিক মানুষের অমর্যাদা হয়। কারণ বিপ্লবের কালে এরা অপেক্ষা করে সময়ের আর সুযোগের।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক ঃ লতিফুর রহমান প্রামাণিক।
আইনজীবী
কবি।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational