palkstreet in night
palkstreet in night
Palkstreet in night
Doctor krishna Banerjee
27/062022
সকলে যখন ঘুমায় তখন জেগে থাকে কলকাতার প্রাণকেন্দ্র পাল্কস্ট্রীট। এখানে রাতে উড়ে বেড়ায় হাজার হাজার টাকা। উপার্যনের পথটা হয়তো অনেকের কাছেই ভূল তবে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে এই উপায়ে। পাশাপাশি হয়তো অর্থের বিনিময়ে একাকিত্ব দূরকরছে কারো, আবার কেউবা দেহের পাশবিক খুধা নিবারনের নিমিত্ব ক্রয় করছে মানবিক যন্ত্র। মহামারির পর গ্রামথেকে শহরে আসে পলাশ পরিবারকে আর্থিক অনটন থেকে বাঁচাতে। ও শুনেছে শহরে কাজ রয়েছে উপার্যনের মাধ্যম রয়েছে তাই বৃদ্ধ মা - বাবা, স্ত্রী - সন্তানের মুখে দু মুঠো ভাত তুলে দেবার তাগিদে ছুটে আসে শহরে। শিয়ালদহের কোলেমার্কেট অঞ্চলে একটি বাড়িতে পেইন গেস্ট হিসাবে রুম সেয়ার করে সে। পলাশের রুম পার্টনার মিদনাপুরের ছেলে তবে বছর পাঁচেক কোলকাতায় থাকায় তার কথাবার্তা চালচলন সবটাই পালটে গিয়েছে। পলাশের চেহারাটা বেশ সুঠাম মিসতেও পারে মানুষের সাথে তাই রুম মেটের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে তার কোন অসুবিধা হলোনা। দিনদুয়েকে মধ্যে একটা রুচি সন্মত সম্পর্ক গড়েওঠে তাদের মধ্যে। পলালের রুম মেটের নাম দিদেশ। পলাশ দিনেসকে বলে তার একটা চাকরির খুব দরকার কারন শেষ দুই বছরে তাদের সঞ্চিত অর্থ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। কথা, বার্তা, চেহারা সবি ঠিক আছে পলাশের তবে পোষাক পরিচ্ছদ আর একটু চতুর হতে হবে তাকে কারণ এটা কোলকাতা প্রথম অবস্থায় প্রচন্ড কষ্ট পেতে হয়েছে দিনেশকে সুধু মাত্র ব্যাচেলার হওয়ার ফলে সব সমস্যাকে হজম করে নিয়েছে দিনেশ কিন্তু পলাশের পরীক্ষা দেবার মতো সময় নেই তাকে তৈরি হয়েই নাবতে হবে মাঠে।
ধর্মতলার মার্কেটে নিয়েগিয়ে কিছু পোষাক পরিচ্ছদ পলাশকে কিনে দেয় দিনেশ। পলাশ পয়সা দিতে চাইলে দিনেশ বলে এখন তোর পয়সা লাগবে যখন উপার্যন করবি তখন ফিরিয়ে দিস। দিনেশ বারে ড্যান্সার সাপ্লাই করে ভালো ইনকাম। প্রথম প্রথম ওয়েটার হিসাবে জয়েন্ট করে ধিরে ধিরে লাইবাট্টা করে এখন এই লাইনটা সে ধরে নিয়েছে। সন্ধা আট্টানাগাদ কোলকাতার বিভিন্ন বারে ড্যান্সারদের ড্রপ করে দিয়ে চলে আসে, তারপর একটু এদিক ওদিক ঘুরে নতুন কিছু ধান্দার চেষ্টা করে দশটায় ঘরে ডোকে সে। প্রচন্ড ফিকিরিবাজ ছেলে তবে সবটাই শিখেছে ধাক্কা খেতে খেতে। এখন রাতের শেষে চার পাঁচ হাজার কামানো কোন বেপার নয় তারকাছে। যেদিন মন্দা যায় সেদিন ওর ইনকাম তিন হাজার। তবে একটু বেহিসাবি জীবন যাপন করে সে। রাত দুটোর মধ্যে সকল মেয়েকে তাদের বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে রুমে ফিরে আধা ঘন্টা ধরে কয়েক পেক ড্রিঙ্কস করে বেলা এগারোটা পর্যন্ত ঘুমাবে তার পর যেদিন মনে হবে ঘরে রান্নাহবে হবে নইলে কোলকাতার নামি হোটেলে তবে মাসের মধ্যে দশদিন ঘরে রান্না হয় কিনা সন্দেহ।
এই ভাবেই লেজে নিয়ে ঘুরে ঘুরে পলাশকে কোলকাতার নিয়মকানুন শেখায় সে। মাসের শেষে দশ হাজার টাকা তাকে দিয়ে বলে এটা বাড়িতে পাঠিয়ে দে। কাল সব কাজ মিটিয়ে নিবি পরশু তোকে নিয়ে যাবো কাজে। এক জাইগাই কথাবার্তা বলেছি মাসে পনেরো দেবে ঠিক ঠাক কাজ করতে পারলে আরো হাজার সাত আটেক উপরি কামাতে পারবি বুঝলি আর এই টাকাটা আমায় দুই তিন মাসের মধ্যে ফিরিয়ে দিস কেমন। দিনেশ যানতো ফিরতের কথা না বললে পলাশ টাকাটা নেবেনা, ছেলে হিসাবে খুব সৎ সে। যাই হোক অবশেষে পাল্কস্ট্রিটের একটা বারে ওয়েটার হিসাবে কাজ শুরু করে পলাশ। ভালো ব্যবহার এবং মিষ্টভাষি হওয়ার ফলে অল্পদিনের মধ্যেই প্রাই সকলের প্রিয় হয়ে ওঠে সে। বন্ধুর ঋণ দুই মাসেই মিটিয়ে ফেলে পলাশ। সহকর্মীরা তার এই সাফল্যে একটু হিংসা করতো বটে। মাস ছয়েকের মধ্যে পলাশ মালিকের খুব কাছের হয়ে ওঠে। মালিক একটা পার্টিতে বার অ্যারেজমেন্টের অওডার ধরে এবং তার সামগ্রিক দ্বায়ীত্ব বর্তায় পলাশের উপর, সুঠাম দেহের অধিকারী পলাশ চোখেপড়ে টিনা ম্যাডামের তিনি নিজের পরিচয় দেন ফ্লিম প্রডিউসার হিসাবে। তার কার্ডটা পলাশকে দিয়ে তিনি তার বাড়িতে তাকে আমন্ত্রন জানান। বাড়ি ফিরে অবশ্য বিষয়টা সে দিনেশকে জানিয়েছিল টিনার কার্ডটা দেখে চমকে ওঠে দিনেশ, পলাশকে বলে বাঁচতে যদি চাস তাহলে ভূলে যা এই মহিলার সাথে তোর আলাপ হয়েছিল। একটা ফ্লট মহিলা মিথ্যা বলে কত ছেলে মেয়ের সর্বনাশ করেছে এই মহিলা। পলাশ দিনেশকে সরাসরি কিছু বলেনা মনে মনে ভাবে দিনেশ তার উন্নতি হোক সেটা চায়না। কার্ডটা পকেটে রেখে বলে ঠিক আছে।
দিনেশ বেশ বুঝতে পারে পলাশ একটু অ্যাবসেট হয়েছে তার কথায় তবে বেশি বলতে যাওয়াটা ঠিক হবেনা তাই থেমে যায় সে। সে ভেবেছিল পলাশ হয়তো তারকথা ঠিকই বুঝবে কিন্তু পলাশ বিষয়টা বোঝবার চেষ্টাই করলোনা সে। দিনেশ যে ভয়টা পাচ্ছিল ঠিক সেটাই ঘটে গেল পলাশের জীবনে। টিনার জালে পা দিল পলাশ। প্রথম দিন তার মিষ্টত্বে বিভোর হয়ে গেল সে। বারের চাকরি সেরে টিনার অ্যাসিস্টেন্ড হয়ে যুক্ত হলো সে। বিষয়টা জানতে পেরে দিনেশ তাকে আবার বোঝাবার চেষ্টা করলো, যার ফল হলো অন্য রকম। পলাশ দিনেশকে ত্যাগ করলো।
বেশ কিছুদিন হয়ে গিয়েছে পলাশের সাথে দিনেশের কোন যোগাযোগ নেই। হঠাৎ একদিন রাতে দিনেশ মেয়েদের ড্রপ করে ফিরছে তখন ঘড়িতে সারে বারোটা বাজে। কিন্তু কিছু জিঙ্গাসা করবার আগেই একটা গাড়ি এসে থামে তার সামনে গাড়িতে উঠে চলে যায় পলাশ তবে পলাশের চোখ মুখ ভালোলাগেনা দিনেশের। সে বুঝতে পারেনা আদেও পলাশ তাকে দেখেছে কিনা। পরেরদিন সকালে সে বুঝতে পারে পলাশ তাকে দেখেছিল। সকাল বেলায় পার্টির বাড়িথেকে সোজা দিনেশের কাছে আসে সে। তবে তার সমস্যার কথা সেয়ার না করে বলে একটা উপকার করতে হবে তাকে। দিনেশ জিঙ্গেস করে সে তাকে কি সাহায্য করতে পারে। পলাশ একটা বোকার মতো জবাব দেয় তার ব্যাঙ্কের বই আর কিছু L.I.C পলেশি যে গুলো তার বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে। দিনেশ বলে এটা আবার কেমন কথা? পলাশ বলে তুই আমাকে এই উপকারটুকু করে দে তুই ফিরলে আমি তোকে সব বলবো। দিনেশ রাজি হলো। পলাশের বাড়িথেকে ফিরে সে অবাক হয়ে গেল, পলাশ আত্মহত্যা করেছে কিন্তু দিনেশ বুঝতে পারেনা সে এমনটা করলো কেন?
খবরটা শোনে ছুটে গেল সে। বাড়িতে ডোকা হলো না। পলাশের বাড়িতে খবরটা দিয়ে সোজা মর্গে চলে যায় সে। দু দিন বাড়িতে ঢোকা হয়না তার, সব কাজ মিটিয়ে দুদিন পর বাড়ি ফেরে সে। দরটা খুলতেই একটা কাগজ বেশ গোছ করা অবস্থায় তার পায়ের সামনে পড়ে। কাগজটা কুড়িয়ে খুলতেই দেখে একটা চিঠি পলাশের লেখা। চিঠিতে লেখা আছে দিনেশ পারলে আমাকে ক্ষমা করে দস, সেদিন তোরকথা না শুনে আমি যে ভূলটা করেছি তার সমাধান আমায় প্রাণ দিয়ে করতে হচ্ছে। বিশ্বাস কর দিনের পর দিন একের পর এক মেয়ের সাথে রাত কাটানো আমি আর পারছিনা। আর এই মুখনিয়ে আমি আমার পরিবারের সামনেও যেতে পারবোনা। যতটুকু সঞ্চয় আছে তাতে ওদের জীবন ভালোভাবেই কেটে যাবে কষ্ট একটাই একটা অপরাধবোধ নিয়ে পৃথিবী ছাড়তে হচ্ছে আমাকে। যদি আবার জন্মনেই তবে ভগবানের কাছে পার্থনা করবো বন্ধু হিসাবে আবার যেন তোকেই পাশে পাই, তবে আর একটা কষ্ট আমার মোরেও থাকবে। যে পাল্কস্ট্রিট আমাকে সব দিয়েছিল সেই পাল্কস্ট্রিটই আমার সব কিছু কেড়েনিলো। এখানকার গোলকধাঁদায় হাড়িয়ে গেলাম আমি। আমার লোভ আমাকে এই পরিণতির মুখমুখি এনে দাঁড় কড়িয়েছে আজ। আর কোন উপায় নেই তাই সকলের থেকে অনেক দুরে যাচ্ছি, ভালো থাকিস সাবধানে থাকিস।
ইতি…..
পলাশ
চিঠিটা শেষ করে ধপকরে বিছানায় বসে পড়ে দিনেশ। দুচোখ ছলছল করে ওঠে সে বলে ঠিক যে ভয়টা আমি পেয়েছিলাম সেটাই হলো। ঐ মহিলার কি আসে যায় আবার কাউকে শিকার বানাবে। একদিন তাকেও পৌঁছে দেবে পলাশের কাছে।
🙏 সমাপ্ত 🙏
