তবু ভালোবাসি তোকে
তবু ভালোবাসি তোকে
বাচ্চাটাকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার । দেখে মনে হচ্ছিল কতদিন না দিন বললে ভুল বলা হবে কত মাস অথবা কয়েক বছর ঠিক মত খাবার জোটেনি তাদের । রেশমীর চক্ষের তলায় একটা কালির আস্তরণ জমেছে যেন কত রাত্রি ঠিক মত ঘুমাতে পারেনি সে । গায়ের দুধে আলতা রং পুড়ে ছাই হয়েগিয়েছে । চোখে মুখে একটা পরাজিত সৈনিকের মোতো হতাশার ছাপ । খাওয়া শেষ করে বিল মিটিয়ে বললাম এবার যাওয়া যাক । রেশমী বলল তুমিতো কিছুই খেলেনা । আমি বললাম বাইরে খাবার অভ্যাস আমার নেই । এমন বহুদিন কেটেছে সকালে রান্না করেছি অথচ আর্জেন্ট কল চলে আসার ফলে খাবার ফ্রিজে রেখে বেরিয়ে যেতে হয়েছে , অফিসে দুই কাপ কফি আর এক প্যাকেট বিস্কিটেই কেটে গিয়েছে কত দিন , আরও একদিন নাহয় সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেই খেয়ে নেবো , এখন বেরনো যাক । নইলে তোমার যে জন্য আসা সেটাই তো বলা হবেনা ।
আমরা বেরিয়ে ভিক্টোরিয়ায় পৌছালাম , তিনটে টিকিট কেটে ভিতরে যেতেই সবুজ মাঠ পেয়ে আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেলো ছোট্ট মেয়েটি । মেয়েটি মাঠের মধ্যে খেলতে লাগলো , আমরা গিয়ে বসলাম একটা বেঞ্চে। কয়েক মুহূর্ত আমরা চুপচাপ বসে রইলাম , আজ প্রথমবার দেখলাম রেশমী কে মাথা নিচু করে থাকতে । অবশেষে আমি যেচে কথা বললাম যেমনটা আগেও হতো । অভিমান করাটা ওর অভ্যাস ছিলো , যদিও আজকের বিষয়টা সম্পূর্ন আলাদা । আমি বললাম হঠাৎ আমাকে মনে পড়ল কি করে । খুব দূর্বল স্বরে সে বলল অনেকদিন আগে থেকেই তোমাকে আমি খুঁজছিলাম , তোমার ফোন নম্বরটা আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম ……, আমি ওকে থামিয়ে বললাম একটু ভুল হচ্ছেনা কথাতে ? রেশমী বলল মনে ? আমি বললাম মানেটা খুবই সহজ বড়লোক বয় ফ্রেন্ডের সাথে বিয়ে হওয়ার আনন্দে তুমি তোমার জীবন থেকে এই গরীব , যুদ্ধ করে জীবন অতিবাহিত করা একটা মানুষের ফোন নম্বর কেউকি সামলে রাখে , যাইহোক ছাড়ো ঐসব কথা এখন বলো কি দরকার ? সে বলল কথা থেকে , কি ভাবে বলবো সেটাই বুঝতে পারছিনা । আমি একটা চরম বিপদে পড়ে তোমার কাছে এসেছি , তুমি চাইলে আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারো তাতে আমি দুঃখ পাবোনা কিন্তু কথাটা তোমাকে জানানো দরকার তাই আরকি । আমি বললাম হয়েছে এবার বলে ফেলুন , যদি আমার সাধ্যের মধ্যে হয় তাহলে আমি চেষ্টা করে দেখবো।
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে , একটা বড় দম নিয়ে সে বলল আমাকে একটা কাজ দেবে ? দেখো আমি আমার জন্যে কাজ চাইছি না । একটা কাজ পেলে আমি মেয়ে টাকে একটু ভালো ভাবে রাখতে পারতাম এই । আমি বললাম কেনো তোমার হাজবেন্ড কিছু করছে না ? এবার ওর দুচোখ বেয়ে জল নেমে এলো । ওর সাথে আমার সম্পর্ক নেই প্রায় তিন বছর হয়ে গেলো। আমি বললাম তোমরাতো প্রেম করে বিয়ে করেছিলে তাহলে এমন হল কেনো ? সে অনেক কথা একদিন সময় করে বলতে হবে আচ্ছা তোমার বাড়িতে কাজের লোক লাগবেনা ? তুমি যা দেবে আমি তাতেই রাজি শুধু দুই হাজার টাকা আমাকে অগ্রিম দিলে খুব উপকার হবে । আমি বললাম কি করবে দুহাজার টাকা দিয়ে । সে মাথা নিচু করে বলল বাড়িভাড়া বাবদ একহাজার আর হাজার টাকা হাতে রাখতাম এই আরকি । দুটো বাড়িতে কাজ করছিলাম গত মাসে তারা কলকাতা ছেড়ে দিল্লি সিফট করেছে ভেবেছিলাম এরমধ্যে দু - একটা বাড়িয়ে কাজ ধরে নেবো , কিন্তু হোলনা । বাবা মাঝে মধ্যে কিছু টাকা পাঠাতেন কিন্তু হঠাৎ মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় এমাসে কিছু দিতে পারেন নি তুমি কাজটা না দিলে আর এই টাকাটা না পেলে আমি খুব বিপদে পরেজাবো । আমি বিষয়টা এরিয়ে গিয়ে বললাম মেয়ের নাম কি ? ও বলল সাঁঝ , আমি ডাকলাম সাঁঝ মা এবার এদিকে এসো আমরা এখন ভিক্টোরিয়ার ভিতরে যাবো , ওখানে অনেক কিছু দেখার রয়েছে , ওগুলো দেখলে তোমার ভালো লাগবে । মেয়েটি ছুটে আসলো আমার দিকে , আমি ওকে কোলে তুলে নিয়ে তির্যক প্রশ্ন করলাম রেশমী কে ওকে পড়াশুনাটা করাচ্ছ নাকি ডকে তুলেদিয়েছো সেসব ? ও বলল একটা সরকারি স্কুলে পড়ছে । কথাটা বলে মাথাটা নিচু করে নেয় রেশমী । আমি বললাম এতে লজ্জা পাবার কি হয়েছে আমরা কি সরকারি স্কুলে পড়ে মানুষ হয়নি । চল ওকে ভিতরটা দেখিয়ে নিয়ে আসি । উঠে দাঁড়াল রেশমী মাথাটা নিচু করে বলল একটা কাজের ব্যাবস্থা …………… ! আমি বললাম ওভাবে তো বলা সম্ভব নয় , এখান থেকে তোমার বাড়িতে যাবো , সেখানে গিয়ে তোমার বাড়ীওয়ালার সাথে কথা বলে তার হতে টাকাটা দেবো , এখন চলো । সে একটু খুশি হয়ে বলল তাহলে তুমি কাজটা আমাকে দিচ্ছ ? আমি বললাম আমি সে কথা কোথায় বললাম । আগামী কাল আমি একটু বাইরে যাচ্ছি দিন সাতেক থাকচিনা কাজের বিষয়টা ওখান থেকে ফিরে দেখবো , তবে বলেছো যখন একটা ব্যাবস্থা ঠিক হয়ে যাবে । সে বলে কিন্তু এভাবে তো টাকা আমি নিতে পারবোনা । আমি বললাম দেখো এটা আমি তোমাকে ধার হিসাবে দিচ্ছি তারপর আমি ফিরি তখন তুমি না হয় আমার বাড়িতে কাজ করে শোধ দিয়ে দিও , দেখো এখন আমি প্রচন্ড প্রফেশনাল , সাত দিন থাকবোনা অথচ এখন যদি তোমাকে জয়েন্ট করাই তাহলে এই সাতদিনের টাকাটা আমার অযথা খরচ হবে , সেটা বোকা মানুষ ছাড়া কেউই করবেনা । এবার যাওয়া যাক , এবার সে চলতে চলতে বলে তুমি এত হিসাবি হয়ে গিয়েছ ? আমি বললাম আমি হয়নি এই সমাজ আর এখানকার লোকজন আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে টাকার মূল্য টা ঠিক কোথায় ? মৃত্যুর পরে যেটার এক কনাও মূল্য নেই কিন্তু মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সেই সর্ব শক্তির অধিকারী …………………………….।
চলতে থাকবে ………

