STORYMIRROR

Krishna Banerjee

Abstract Fantasy Others

3  

Krishna Banerjee

Abstract Fantasy Others

বনলতা তুমি হারিয়ে গিয়েছ

বনলতা তুমি হারিয়ে গিয়েছ

4 mins
14


      আমি নিখিলেশ চক্রবর্তী , বর্তমানে বয়স চল্লিশ বছর । একটা ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে চাকরি করি । আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পোলেসি তুলতে হত কিন্তু এখন আর তা করতে হয়না । নিজেই একটা এজেন্সি খুলেছি , সেখানে জনা পাঁচেক লোক কাজ করে । বাইরের কাজ কর্ম আজকাল ওরা সামলায় । হাতেগোনা দু - একটা বাড়ি ছাড়া এখন আর কোথাও যায়না । এই হাতেগোনা বাড়ির মধ্যে একটা বাড়ি হল বনলতা বিশ্বাসের । আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে ওদের বাড়িতে আমার প্রথম যাওয়া । ছোট্ট পরিবার দুই মেয়ে , বাবা - মা আর একজন রিলেটিভ থাকে ওদের বাড়িতে । সারাদিন সে কাজে কর্মে থাকে , রাতের থাকা আর খাওয়া টুকুই ওখানে করে । ওদের সাথে যখন প্রথম আলাপ হয় তখন বনলতার বয়স পনের । নবম শ্রেণীতে পড়ছে । একটা লং টার্ম পলেসি নিয়েই ওদের সাথে পথ চলা । আজ বনলতার বয়স কুড়ি। প্রথম প্রথম মাসে একবার ওদের বাড়িতে যাওয়া পড়ত। ওদের পরিবারটা মধ্যবিত্ত , বনলতার বাবা - মা অগাধ পরিশ্রম করেন একটু আর্থিক সচ্ছলতা গড়ে তোলার জন্য । এতে যদিও অপরাধ কিছু নেই , পৃথিবীতে খুব কম লোক আছে যারা বড়লোক হতে চায়না । ওনারাও হয়তো ভাবতেন পরিশ্রম করে সঞ্চয়ের মাধ্যমে ধনী হয়ে ওঠার কথা । যদিও মধ্যবিত্ত থেকে গায়ে গতরে খেটে একটা সচ্ছল অবস্থাতে আসা যায় কিন্তু ধনী হয়ে ওঠার সম্পূর্ন কপাল । যাইহোক চেষ্টা করতে ক্ষতি কি ।

                সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিলো , দেনা পাওনার লেনদেনে তারা প্রচণ্ড সৎ । বনলতার ছোটবোন সুচিত্রা , একটু গম্ভীর ধরনের তবে ছল চাতুরি তারমধ্যে ছিলোনা । দুই বোন বেড়ে উঠছিলো একে অপরের উপর অবলম্বন করে । মাস ছয়েকের মধ্যে আমিও কেমন যেন ওদের পরিবারের সাথে মিসে গিয়েছিলাম , কোন অসুবিধা হলে বনলতা ওর বাবা - মায়ের আগে আমাকে জানত । এই বিষয়টা নিয়ে দুই বোনের মধ্যে একটা টানাপড়েন চলতো তা আমি অল্প হলেও বুঝতে পারতাম । গার্লস স্কুলে পড়ার ফলে বাইরে তেমন কোন বন্ধু তাদের ছিলোনা । আবার একেবারে ছিলোনা বললেও ভুল হবে , কিছু মেয়ে বন্ধু ছিল বটে ওই গোটা তিনেক । বনলতার বন্ধুরা প্রত্যেকেই আমাকে চিনত কিন্তু আমি তাদের মধ্যে হয়তো একজনকে দেখেছি , বাকিরা আমাকে চিনলেও আমি তাদের চিনি না । যত দিন কাটতে থাকে বনলতার আবদার বাড়তে থাকে আমার কাছে । প্রথমটা আমি খুব একটা গুরুত্ব দেইনা, ধীরে ধীরে আমিও কেমন যেন বনলতায় আসক্ত হয়ে যেতে থাকলাম । ওর ব্যবহার ওর কথাবার্তা এমন একটা মাত্রা এনে দিয়েছিল যে যে কেউ দেখলে বা শুনলে ভাববে বনলতা শুধুমাত্র আমার । আমি মাঝে মাঝে ভাবতাম এটাকি আদেও সত্যি , নাকি আমার ভুল । আরও কিছুটা বুঝে নেবার চেষ্টা করলাম বনলতাকে। মাধ্যমিক পাস করে একাদশ শ্রেণীতে উঠেছে বনলতা । আমাদের মধ্যে দুরত্ব আরও কিছুটা কমলো । আগে মাঝে মধ্যে আবদার করতো এখন সামান্য থেকে সামান্য বিষয়তেই আবদার করে সে । ওর বোন হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পারায় একটু বাধ সেধেছিল মাঝখানে । সম্পর্কের গারাত্ত বাড়তে থাকলো । অন্য কারোসাথে বেশি কথা বললে বনলতা বিরক্ত হয় আজকাল । ওর বাড়িতে গেলে আমি ওর প্রপার্টি হয়ে যাই। যদি আমার বাড়িতে না ফিরি তাহলে হয়তো বনলতা সব চাইতে অধিক খুশি হয় । ওর এই ব্যবহার গুলোই হয়তো আমাকে ওকে ভালবাসতে বাধ্য করেছিল কিন্তু সেদিন আকবরের জন্যও আমি বুঝতে পারলামনা বনলতা শুধুমাত্র বয়সের নিঃসঙ্গতা কাটাতে আমাকে ব্যাবহার করছে মাত্র । হয়তো ওকে আপন করে নেওয়া কোনদিনও আমার পক্ষে সম্ভব হতনা কিন্তু সারাটা জীবন বন্ধু হয়ে ওর পাশে থাকতে পারতাম ।

              বনলতা শুধুমাত্র নিজের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য আমাকে জল হিসাবে ব্যবহার করছে সেটা বুঝতে পারলাম ওর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পড় । কলেজে ভর্তি হবার পড় থেকেই একটা আমল পরিবর্তন এলো বনলতার মধ্যে । কিছুদিন আগেও যে মেয়েটা ফোন ধরলে ছাড়তে চাইতোনা , আমি ওর মুখমুখী হলে সেখান থেকে যেতে দিতেই চাইতোনা । ওয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ সেন্ট করবার সাথে সাথে রিপ্লাই দিতো , আজ আর তার আমার কথা ভালোই লাগেনা । ম্যাসেজ দেখে বটে তবে হয়তো মাসে এক কি দুই বার , কোন উত্তর আসেনা । আমি বুঝতে পারি বনলতার যৌবন বাগানে নতুন কোনো মৌমাছির আবির্ভাব ঘটেছে । সময়ের সাথে সাথে আমিও নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকি । যে বাগানের মালি পরিবর্তন ঘটেছে সেই বাগানের ফুলের দিকে ফিরে তাকানো আমার অভ্যাসে পড়েনা । বনলতাকে মুছে ফেলেছি আমার জীবন থেকে , হারিয়ে গিয়েছে বনলতা তবে একটা বিশ্বাস আমি আজও করি , যে প্রতারনা করে সে একদিন প্রতারিত হয় । বনলতাকেও একদিন ফিরতে হবে হয়তো সেদিন ওকেনিয়ে ভাববার মত সময় থাকবেনা আমার হাতে ।

              



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract