STORYMIRROR

Krishna Banerjee

Abstract Classics Others

3  

Krishna Banerjee

Abstract Classics Others

বড় একা লাগে

বড় একা লাগে

3 mins
8

   দীর্ঘ ত্রিশ বছরের যুদ্ধের এক সমাপ্তি ঘটে গেলো । আজ ঘরে ঢুকলেই ওর স্মৃতিগুলো আমাকে প্রচন্ড নারাদিয়ে তোলে। শুন্য থেকে যে যুদ্ধের সূচনা আজ পূর্ণতা পেয়েও সবকিছুই যেন আবার শুন্য হয়ে গিয়েছে । একটা যুদ্ধজে এভাবেই শেষ হয়ে যায় তা আমার কল্পনাতেও আসেনি কোনদিন । না খেতে পাওয়া একটা বস্তির ছেলে । দু - একটা বন্ধুর সহযোগিতায় না মোরে বেঁচে থাকা । মাঝে মাঝে মনে হতো এটাকি কোন জীবন ? কোন লক্ষ স্থির করে ওঠার অবকাশ নেই । বস্তির মাঝে এক কামরার একটা ছোট্ট ঘর , সামনে একটা ছোট্ট বারান্দা , ওখানেই মা রান্না বান্না করেন । খাবার জোগাড় হলে ভাড়া জোগাড় হয়না , আর ভাড়া বাঁচিয়ে রাখতে হলে আধপেটা খেয়ে দিন কাটাতে হয় । ওই বললাম আমার দু - একটা বন্ধু তাদের হাত খরচের টাকা থেকে মাঝে মধ্যেই সাহায্যের হাত বেরিয়ে দিতো। ওদের ওই ঋণ শোধ করবার ক্ষমতা আমার নেই । কারণ অর্থ চুকিয়ে ওই ঋণ শোধ দেওয়া সম্ভব নয় । আজও ওদের আমি কুর্নিশ জানাই সেই সময় আমার পাশে থাকার জন্য । হাজার অসুবিধার মধ্যেও ওরা আমাকে পড়াশুনা বন্ধ করতে দেয়নি । থিয়েটারের প্রতি আগাগোড়া একটা টান ছিল। একটা সময় এই থিয়েটার আমাকে বেশ কিছুটা সাহায্য করেছে বটে । একটা প্রবল যুদ্ধের মধ্যদিয়েই রবীন্দ্র ভারতিতে ভর্তি হলাম নাটক শেখার জন্য । উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ওখানে যাওয়া । ওখানেই আমার সাথে আলাপ হয় রঞ্জনার । আমার থেকে বেশ কিছুটা সিনিয়ার। রঞ্জনা তখন নৃত্যে M.A করছে। প্রথমে বন্ধুত্ব তারপর প্রেম । তখন আমি বস্তিতেই থাকি । পড়াশুনার পাশাপাশি অভিনয় জগতে একটা জায়গা খুঁজছি। মায়ের কষ্ট চোখে দেখা যায়না । কিন্তু খুজলেইতো হবেনা , চলচিত্র জগতে জায়গা মেলা আজকের মত অতটা সহজ ছিলোনা । রঞ্জনার বাড়ি থেকে আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিতে চায়নি কোনদিন । কারণ ওদের অবস্থা আমাদের মত দুস্থ ছিলনা । একটা নামডাক ছিলো ওদের পরিবারের । অনেক টানাপোড়েনের পর রঞ্জনা সকলের অমতে গিয়ে আমাকে বিয়ে করে আমাদের বস্তির বাড়িতে আসে । থাকার উপযুক্ত পরিবেশ সেটা নয় , তাই আমার একবন্ধু তাদের নিচের তলার দুটো ঘর আমাদের দেয় । রঞ্জনার অনেক ছাত্র - ছাত্রী , সে আমাকে দিনের পড় দিন অনুপ্রেরণা দিয়ে যেতে থাকে । বেশ কয়েকটা বছর তার উপার্জনেই পথ চলা । একটা দীর্ঘ যুদ্ধের পর তোরি তীরে ভেরে । চলচিত্র জগতে প্রথমে একটা কাজ পাই । প্রেমেন্ট খুব একটা বেশি দেবেনা ওরা । রঞ্জনা আমাকে উৎসাহ দিয়ে বলে টাকা নিয়ে না ভেবে পরিচিতি নিয়ে ভাবো, তুমি একদিন সফল হবে ।

                              জানিনা আমি কতটা সফল অভিনেতা হতে পেরেছি ? তবে যেটুকু হয়েছি রঞ্জনা আর আমার দুই বন্ধুর অনুপ্রেরণায় । তার পর থেকে খুব কম সময় আমি কর্মহীন ছিলাম । আজ আমার কাছে সব কিছু রয়েছে , রয়েছে বাড়ি , গাড়ি , দামী আসবাব কিন্তু আমার জীবনের সব চাইতে দামী জিনিসটাই আজ আর নেই । রঞ্জনা আমাকে একা করে আজ চলেজিয়েছে আর এক জগতে । জানিনা সর্গ - নরক বলে কিছু আছে কিনা ? তবে যদি থেকে থাকে তাহলে হয়তো সে আজ সর্গের আফসার কারণ ওর মত বড় মনের মানুষ মেলা ভার ।

                             সারা দিনটা শুটিং ফ্লোরে একভাবে কেটে যায় । অনেকের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাই আমি , কিন্তু এক সময় ফিরতে হয় আমার আর রঞ্জনার স্বপ্নের বাড়িতে । যখন ঘরের বেডরুমে একা থাকি তখন রঞ্জনার বেশ কিছু কথা আমার কানের সামনে বাজতে থাকে । কিছু কথা শুনেছি আবার কিছু কথা অবহেলা করে গিয়েছি কিছু কিছু সময় , সেই কথাগুলো আজ আমাকে তারা করে বেড়ায় । আজ মনেহয় ওর কথাগুলো মনকে হয়তো ভালোই হত । যখন সকালে একাগিয়ে চায়ের টেবিলে বসি মনেহয় রঞ্জনা এক্ষুনি বলবে একমিনিট দাঁড়াও আমি চা নিয়ে আসছি । না রঞ্জনা আজ আর কিছুই বলেনা, সিবুদা চা এনে টেবিলে রেখে বলে বাবু আপনার চা । রঞ্জনা তুমিকি ফিরে আসতে পারোনা? বড় একা লাগে আমার । জানি রঞ্জনা আর কোনদিনই ফিরবেনা , যারা একবার চলে যায় তারা আর কখনোই ফেরেনা। ফেরেনি আমার বাবা , ফেরেনি আমার মা । আর আজ রঞ্জানাও ফিরবেনা । শুধু থেকে যায় হারিয়ে যাওয়া মুহূর্তের স্মৃতি গুলোই । আজ রাঞ্জনাও আমার কাছে একটা কঠিন যুদ্ধের স্মৃতি হয়েই থেকেজাবে আমার জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ।

                             


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract