STORYMIRROR

Krishna Banerjee

Romance Classics Others

3  

Krishna Banerjee

Romance Classics Others

তবু ভালোবাসি তোকে

তবু ভালোবাসি তোকে

4 mins
16


               হৃদয় ভাঙ্গার যন্ত্রণা যে ঠিক কেমন হতে পারে আমি সেদিন সেটা উপলব্ধি করেছিলাম । পরের কয়েকটা দিন যেনো আমার জীবন থেকে পৃথিবীর রংটাই বদলে গিয়েছিল । মোন হচ্ছিলো সব কিছুই কেমন যেন থেমে গিয়েছে , আমার চাওয়া পাওয়া সবটাই বোধহয় শেষ হয়ে গিয়েছে । মা হয়তো বিষয়টা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলেন , তাই সেদিন খেতে বসে আমাকে বললেন জানিস বাবা যে জিনিসটার জন্যে আমাদের পিছিয়ে পড়তে হয় , আমাদের উচিত আগে সেই জিনিসটাকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসা । হয়তো আজ ওই জিনিসটার জন্যে যেটা আমার হাতছাড়া হয়েছে , কাল যেনো ওই জিনিসটাই আমাকে তারচাইতেও বেটার কিছুর সযোগ এনে দেয় । শুধু একটা জিনিস জানবি জীবন থেকে যে সময়টা হারিয়ে যায় সেটা কিন্তু আর ফিরে আসেনা আর যারা অতীতকে নিয়ে নিজের বর্তমান কে নষ্ট করে তাদের সময় কোনদিন ক্ষমা করেনা। তাই এই পৃথিবীতে থেমে থাকার কোন জায়গা নেই । তোর বাবা চলে গিয়েছেন কতগুলো বছর হয়ে গেল কিন্তু আমরাকি কেউ থেমে থাকতে পেরেছি । যেটা যাবার সেটা যাবে যেটা আসবার সেটা আসবে কিন্তু হারিয়ে গিয়েছে বলে কষ্ট পেয়ে থেমে তাকলে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়তে হবে ।

                             সেদিন রাতে মাকে কিছুই বলতে পারলাম না , তবে পরের দিন সকালটা আমার কাছে এক নতুন জন্ম হল । এক নতুন উদ্যমে শুরু করলাম জীবনের যুদ্ধ । সেদিন রাতে বুঝেছিলাম সময়ের মূল্য । পড়াশুনা করতে করতে আরো দুটো বছরকে কাজে লাগালাম একটা সরকারি চাকরী জোটাবার আসানিয়ে । কয়েকটা পরীক্ষা দিয়ে বুঝলাম ওখানে ট্যালেন্ট নয়, এখানে বর্তমানে চাকরি পেতে হলে লাগবে চ্যানেল অথবা টাকার বিনিময়ে কিনে নিতে হবে প্যানেলের একটি লাইন । আমি টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ার বিরোধী আগা গোরাই ছিলাম । ওদিকে ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হলো । প্রতিবারের মত এবারও কলেজে প্রথম হলাম । রেজাল্ট টা হাতে নিয়ে বুঝতে পারলামনা আমি হাসবো নাকি কাঁদবো । মনে মনে বললাম হে বিধাতা এ কোন রাজ্যে জন্মালাম যেখানে রেজাল্টের মূল্য শুধুমাত্র একটা কাগজের টুকরো । যাইহোক বারিফিরে মাকে প্রণাম করে রেজাল্ট টা তার হাতে তুলে দিলাম । ওদিকে আমার কোচিং ক্লাস বেশ রম রোমিয়ে চলছে । আরও দুজন শিক্ষক রেখেছি বর্তমানে ওদের মাস মাহিনা দিয়েও নিজের একাউন্টে নাই নাই করে চল্লিশ হাজার ঢোকে । চাকরির আমার দরকার পড়েনা , কারণ আমার উপার্জন মোটেও কম নয় কিন্তু সমাজে আমার একটা পরিচিতি চাই আর এটা আমার জেদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

                              রেজাল্ট বারবার পর দিন কয়েক একটু রিলাক্সের মুটে ছিলাম । ওই কটা দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম বিস্নেজ মানেগ্ম্মেট নিয়ে পড়াশুনা করতে হবে । টুক টুক করে ব্যাংক গুলোতে গিয়ে দেখে নিলাম ঠিক কত টাকা রয়েছে আমার কাছে । দেখলাম সব মিলিয়ে লাখ পনের রয়েছে । খবর নিয়ে দেখলাম লাখ সাতেক টাকা খরচ করলে আমার পড়াটা হয়ে যাবে । তার মাঝখানে কোচিং থেকে আরো কয়েক লক্ষ টাকা এসে পড়বে তাই অসুবিধা হবেনা । হঠাৎ আমার মনে পড়ে গেলো সেই দিনটার কথা যেদিন রেশমি এসে রানার বাইকটাকে দেখিয়ে বলেছিল ওদের বাইক আছে , গাড়ি আছে । আজ তিন বছরের উপর হয়ে গিয়েছে ওর সাথে কোন যোগাযোগ নেই । ওর মা দু - একবার ওর মা আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন যে আজকাল কেনো আমি ওদের বাড়ি জাইনা। আমি বিষয়টাকে পড়াশুনার অজুহাত দেখিয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলাম । আমি সিদ্ধান্ত নিলাম একটা বাইক নেবো , রাতে খেতে বসে বিষয়টা মাকে জানালাম । এখন আমার কোচিংয়ের বিষয়টা মায়ের জানা, মা মানা করলেন না , কিন্তু একটু ভয় পেয়ে বললেন কিনতে চাইছিস কেন তবে রাস্তা ঘাটে আজকাল যা সব ঘটছে । আমি বুঝিয়ে বললাম বাড়িতে একটা গাড়ি থাকলে অনেকটা সুবিধা । আর তুমিতো জানো তোমার ছেলেকে , আমি সাথেস্ট সাবধানে গাড়ি চালাব। মা আর বাঁধা দিলেন না । পরেরদিন একলক্ষ কুড়ি হাজার টাকায় একটা বাইক কিনে নিলাম । পরেরদিন মাকে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে গেলাম একটা কালী মন্দিরে, সেখানে পুজো দিয়ে একটা দামী রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলাম মাকে । ওই দিনটা হয়তো আমার জীবনের সব থেকে আনন্দের দিন ছিলো। রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে আমার মায়ের চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো । বুঝলাম ওটা খুশির জল । আমি মায়ের চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বললাম আজকের পড়ে আর কোন কান্না কাটি নয় , আমাদের দুঃখের দিন চলে গিয়েছে মা , আজকের পর শুধু হাসবে তুমি কেমন । মা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন ।

                         বহুদিন পর পরের দিন সকালে বাইকটা নিয়ে পৌঁছে গেলাম রেসমীদের বাড়িতে । কাকা কাকিমাকে প্রণাম করলাম । রেশমী তখন ঘরেই ছিলো । ওরসথে কোন কথা হোলনা । কাকিমা - আর কাকাকে বাইরে নিয়ে এসে আমার বাইকটা দেখিয়ে বললাম , এটা কিনলাম । আবার ঘরের ভিতরে নিয়ে এলো কাকিমা এককাপ চা আর গোটা কয়েক বিস্কিট দিয়ে সামনে বসে জানতে চাইলেন E.M.I কত করে পড়ছে ওটার , আমি চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম ক্যাশে কিনেছি । একটু জোর গলাতে বললাম নিজের টাকাতে কিনেছি কাকিমা । এটা বলার কারণ শুধু মাত্র রেশমীকে কথাটা শোনানো । চা শেষ করে অনুমতি চাইলাম । আমি ঘর থেকে বেরিয়ে বাইকে চেপে বসেছি বুঝতে পারলাম রেশমী দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে । আমি বুঝেও না বোঝার ভান করে গড়তে স্টার্ট দিয়ে ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।

                                   বাকিটা আগামী পর্বে………


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance